মনজুর আহমদ
বার্নি স্যান্ডার্স। আমেরিকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পরিচিত একটি নাম। একটি সংগ্রামী নাম। এ দেশের রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী কণ্ঠ। একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। তার এ কণ্ঠ এ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, আমেরিকার ধনিক শ্রেণির বিরুদ্ধে এবং শ্রমজীবী মানুষের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে। তার সংগ্রাম আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে ‘ওয়ার্কিং ফ্যামিলি’র অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ৮৩ বছর বয়স্ক এই প্রবীণ রাজনীতিক একাই তার লড়াই শুরু করেছিলেন, একাই চালিয়ে যাচ্ছেন, উচ্চকণ্ঠে নিরলসভাবে তার কথা বলে চলেছেন। এদেশের পুঁজিবাদী সমাজের কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াননি।
নিউইয়র্কে এক ইহুদি পরিবারের সন্তান এবং এখানেই বেড়ে ওঠা সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ১৯৯০ সালে ভারমন্ট থেকে প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন। ১৬ বছর টানা হাউসের সদস্য হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকার পর ২০০৬ সালে তিনি সিনেটর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। প্রতি ছয় বছর পরপর অনুষ্ঠিত সিনেট নির্বাচনে তিনি পরবর্তী সময়ে প্রতিবার নির্বাচিত হয়ে কংগ্রেসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের এবং সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য তথ্য যেটি তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটে বিভক্ত মার্কিন রাজনীতিতে তিনি এ দুটি দলের কোনোটির সঙ্গেই নেই। প্রথম থেকেই তিনি স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে নির্বাচন করছেন এবং বিজয়ী হচ্ছেন। মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে কোনো স্বতন্ত্র সদস্য নেই। সিনেটে তাকে নিয়ে মাত্র দুই স্বতন্ত্র সদস্য রয়েছেন। অপরজন মেইন থেকে নির্বাচিত আঙ্গুস কিং। কিং নিজেকে মধ্যপন্থি স্বতন্ত্র হিসেবে দাবি করেন। সেক্ষেত্রে বার্নি স্যান্ডার্সের পরিচিতি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট হিসেবে। তবে সাধারণভাবে তাকে বামপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য সিনেটের আইন প্রণয়ন কার্যাবলি বা ভোটাভুটিতে তারা দুজনই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকেন, যদিও বহু ইস্যুতেই স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটদের ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বার্নি স্যান্ডার্স এবার এক নতুন স্লোগান নিয়ে ময়দানে নেমেছেন। এ দেশের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি এক নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন। আর এই আন্দোলনে তিনি আর একা নন, এবার তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তার পাশে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করা এক নারী অলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজকে। কর্টেজ রাজনীতিতে তুলনামূলকভাবে নবাগত। ৩৫ বছর বয়স্কা কর্টেজ ২০১৯ সালে প্রথম কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে তখন পর্যন্ত অপরিচিত ওকাসিও কর্টেজ সারা আমেরিকার দৃষ্টি কেড়েছিলেন সেই নির্বাচনে ঝানু ও প্রবীণ রাজনীতিক, দশবারের নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য, হাউসের ডেমোক্র্যাটিক ককাসের চেয়ারপারসন জোসেফ ক্রাউলিকে পরাজিত করে। নিউইয়র্কের শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ওকাসিও কর্টেজ বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন করার পর তার মাকে অর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য একটি বার-এ বারটেন্ডারের চাকরি নেন। ২০০৮ সালে লাং ক্যানসারে তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার মা গৃহ-পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বাসচালক হিসেবে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হিসেবে নিজের পরিচয় বহাল রেখেও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এসে দাঁড়িয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্সের পাশে। হাত মিলিয়েছেন ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। দুজনে মিলে এক নবজাগরণের জোয়ার তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যে রাজ্যে। তারা তাদের আন্দোলনের নাম দিয়েছেন ‘ফাইটিং অলিগার্কি’, বাংলায় যার অর্থ হতে পারে ‘গোষ্ঠী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই’। এই গোষ্ঠী আমেরিকার ধনাঢ্য গোষ্ঠী, যারা যুগ যুগ ধরে আমেরিকার শাসন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে রেখেছে।
এ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পরই বার্নি স্যান্ডার্স এই আন্দোলনের সূচনা করেন। ট্রাম্পের এই বিজয়কে স্যান্ডার্স শুধু তার একক বিজয় বলেই মনে করেন না, একে তিনি অভিহিত করেছেন আমেরিকার ধনিক শ্রেণির বিজয় হিসেবে। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম থেকেই হাত মিলিয়েছেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ ও এদেশের বড় বড় ধনাঢ্য ব্যক্তি, করপোরেট শক্তি। এই পরিস্থিতিতে স্যান্ডার্স শাসনক্ষমতার ওপর করপোরেট প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হওয়ার এই চার মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধা খর্ব করার উদ্যোগ নিয়েছে। সোশ্যাল সিকিউরিটি, চিকিৎসা সুবিধা, মেডিকেইড, খাদ্য সুবিধা প্রভৃতি যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে এদেশের নিম্ন আয়ের মানুষরা পেয়ে আসছে, সেগুলোয় তারা হাত দিতে শুরু করেছে। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া তাদের নিষ্ঠুর আচরণও নিন্দিত হচ্ছে।
‘ফাইটিং অলিগার্কি’ স্লোগান নিয়ে বার্নি স্যান্ডার্স আর আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের শহরগুলোয় যাচ্ছেন, সমাবেশ করছেন। এসব সমাবেশে তারা অভাবিত সাড়া পাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ এসব সমাবেশে যোগ দিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করছে, তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। বার্নি স্যান্ডার্স ও ওকাসিও কর্টেজ সর্বত্র আহ্বান জানাচ্ছেন আমেরিকার রাজনীতিকে ধনাঢ্য শ্রেণির প্রভাবমুক্ত করার, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক সংস্কার, সম্পদের ওপর কর ধার্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, ক্ষমতায় অংশগ্রহণে তৃণমূল পর্যায়কে জোরদার করা এবং বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য। এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এই ২ মে পর্যন্ত ওমাহা, নেব্রাস্কা, লাস ভেগাস, ডেনভার, লস এঞ্জেলেস প্রভৃতি শহরসহ অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে বড় বড় জনসমাবেশে তারা বক্তৃতা করেছেন। লস এঞ্জেলেসের গ্র্যান্ড পার্কে অনুষ্ঠিত জনসভায় সমাবেশ ঘটেছিল ৩৬ হাজার মানুষের। ক্যালিফোর্নিয়ার ফলসোমের সমাবেশে যোগ দিয়েছিল ২৬ হাজার মানুষ। এসব সমাবেশে স্যান্ডার্স আর ওকাসিওর সঙ্গে আরো অংশ নিয়েছেন শন ফেইন, গ্রেগ সেজার, নীল ইয়ং, গায়িকা জোয়ান বায়েজ, মেইগ রজার্স, সারা নেলসন প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা। জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীরা সমাবেশগুলোয় পরিবেশন করেছেন সংগীত। ‘ফাইটিং অলিগার্কি’র এই সমাবেশ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলছে। বিভিন্ন স্টেটের অন্যান্য শহরেও আয়োজন চলছে তাদের সমাবেশ অনুষ্ঠানের। ২ মে তাদের সমাবেশ হয়েছে পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গে।
‘ফাইটং অলিগার্কি’ আন্দোলন আমেরিকার জনজীবনে ব্যাপক সাড়া তুলেছে। একই সঙ্গে নাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলকে। বার্নি স্যান্ডার্স রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদেরও তীব্র সমালোচনা করছেন এসব সমাবেশে। ডেমোক্র্যাটদের রাজনীতিতে ধনিক শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা, করপোরেট প্রভাবের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা, ‘অলিগার্কি’র মূল বিয়য়টি অনুধাবনে তাদের ব্যর্থতা প্রভৃতি তার সমালোচনা থেকে বাদ যাচ্ছে না।
অবশ্যই ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ আন্দোলন বাধাহীনভাবে এগোচ্ছে না। তারা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় মহলেরই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যঙ্গ করেছেন স্যান্ডার্সের বয়স নিয়ে; বলেছেন, আর চার বছর তিনি নাও থাকতে পারেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিরুদ্ধে তার সমালোচনার জবাবে সিনেটের মাইনরিটি লিডার চাক শুমার বলেছেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে কোনো বিভাজন নেই। তাদের পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটরা গুরুত্ব দিতে না চাইলেও ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ আন্দোলন যে দেশব্যাপী সাড়া তুলেছে এ বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। পুঁজিবাদী এই দেশে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা এক অভাবনীয় ব্যাপার। এদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনায় বিস্তার করে রয়েছে সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা। মার্কসবাদ তো এদের কাছে আতঙ্ক। এমন জনগোষ্ঠীর কাছে বার্নি স্যান্ডার্স আর ওকাসিও কর্টেজের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা হচ্ছে তাদের সমাজতন্ত্রী আখ্যায়িত করে। কর্টেজকে তো এক ধাপ এগিয়ে মার্কসবাদী বলা হচ্ছে। এমন সমাজতান্ত্রিক বা তথাকথিত বাম চিন্তা-চেতনার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের গড়ে তোলা এই আন্দোলনে এত মানুষের সমাগম এবং তাদের প্রতি এত বিপুল জনসমর্থন রাজনৈতিকভাবে সবাইকে নাড়া দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন দেখার বিষয় এ আন্দোলনে তারা কতদূর যেতে পারবেন।
বার্নি স্যান্ডার্স। আমেরিকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পরিচিত একটি নাম। একটি সংগ্রামী নাম। এ দেশের রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী কণ্ঠ। একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। তার এ কণ্ঠ এ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, আমেরিকার ধনিক শ্রেণির বিরুদ্ধে এবং শ্রমজীবী মানুষের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে। তার সংগ্রাম আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে ‘ওয়ার্কিং ফ্যামিলি’র অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ৮৩ বছর বয়স্ক এই প্রবীণ রাজনীতিক একাই তার লড়াই শুরু করেছিলেন, একাই চালিয়ে যাচ্ছেন, উচ্চকণ্ঠে নিরলসভাবে তার কথা বলে চলেছেন। এদেশের পুঁজিবাদী সমাজের কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াননি।
নিউইয়র্কে এক ইহুদি পরিবারের সন্তান এবং এখানেই বেড়ে ওঠা সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ১৯৯০ সালে ভারমন্ট থেকে প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন। ১৬ বছর টানা হাউসের সদস্য হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকার পর ২০০৬ সালে তিনি সিনেটর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। প্রতি ছয় বছর পরপর অনুষ্ঠিত সিনেট নির্বাচনে তিনি পরবর্তী সময়ে প্রতিবার নির্বাচিত হয়ে কংগ্রেসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের এবং সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য তথ্য যেটি তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটে বিভক্ত মার্কিন রাজনীতিতে তিনি এ দুটি দলের কোনোটির সঙ্গেই নেই। প্রথম থেকেই তিনি স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে নির্বাচন করছেন এবং বিজয়ী হচ্ছেন। মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে কোনো স্বতন্ত্র সদস্য নেই। সিনেটে তাকে নিয়ে মাত্র দুই স্বতন্ত্র সদস্য রয়েছেন। অপরজন মেইন থেকে নির্বাচিত আঙ্গুস কিং। কিং নিজেকে মধ্যপন্থি স্বতন্ত্র হিসেবে দাবি করেন। সেক্ষেত্রে বার্নি স্যান্ডার্সের পরিচিতি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট হিসেবে। তবে সাধারণভাবে তাকে বামপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য সিনেটের আইন প্রণয়ন কার্যাবলি বা ভোটাভুটিতে তারা দুজনই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকেন, যদিও বহু ইস্যুতেই স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটদের ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বার্নি স্যান্ডার্স এবার এক নতুন স্লোগান নিয়ে ময়দানে নেমেছেন। এ দেশের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি এক নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন। আর এই আন্দোলনে তিনি আর একা নন, এবার তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তার পাশে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করা এক নারী অলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজকে। কর্টেজ রাজনীতিতে তুলনামূলকভাবে নবাগত। ৩৫ বছর বয়স্কা কর্টেজ ২০১৯ সালে প্রথম কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে তখন পর্যন্ত অপরিচিত ওকাসিও কর্টেজ সারা আমেরিকার দৃষ্টি কেড়েছিলেন সেই নির্বাচনে ঝানু ও প্রবীণ রাজনীতিক, দশবারের নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য, হাউসের ডেমোক্র্যাটিক ককাসের চেয়ারপারসন জোসেফ ক্রাউলিকে পরাজিত করে। নিউইয়র্কের শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ওকাসিও কর্টেজ বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন করার পর তার মাকে অর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য একটি বার-এ বারটেন্ডারের চাকরি নেন। ২০০৮ সালে লাং ক্যানসারে তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার মা গৃহ-পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বাসচালক হিসেবে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হিসেবে নিজের পরিচয় বহাল রেখেও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এসে দাঁড়িয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্সের পাশে। হাত মিলিয়েছেন ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। দুজনে মিলে এক নবজাগরণের জোয়ার তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যে রাজ্যে। তারা তাদের আন্দোলনের নাম দিয়েছেন ‘ফাইটিং অলিগার্কি’, বাংলায় যার অর্থ হতে পারে ‘গোষ্ঠী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই’। এই গোষ্ঠী আমেরিকার ধনাঢ্য গোষ্ঠী, যারা যুগ যুগ ধরে আমেরিকার শাসন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে রেখেছে।
এ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পরই বার্নি স্যান্ডার্স এই আন্দোলনের সূচনা করেন। ট্রাম্পের এই বিজয়কে স্যান্ডার্স শুধু তার একক বিজয় বলেই মনে করেন না, একে তিনি অভিহিত করেছেন আমেরিকার ধনিক শ্রেণির বিজয় হিসেবে। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম থেকেই হাত মিলিয়েছেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ ও এদেশের বড় বড় ধনাঢ্য ব্যক্তি, করপোরেট শক্তি। এই পরিস্থিতিতে স্যান্ডার্স শাসনক্ষমতার ওপর করপোরেট প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হওয়ার এই চার মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধা খর্ব করার উদ্যোগ নিয়েছে। সোশ্যাল সিকিউরিটি, চিকিৎসা সুবিধা, মেডিকেইড, খাদ্য সুবিধা প্রভৃতি যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে এদেশের নিম্ন আয়ের মানুষরা পেয়ে আসছে, সেগুলোয় তারা হাত দিতে শুরু করেছে। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া তাদের নিষ্ঠুর আচরণও নিন্দিত হচ্ছে।
‘ফাইটিং অলিগার্কি’ স্লোগান নিয়ে বার্নি স্যান্ডার্স আর আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের শহরগুলোয় যাচ্ছেন, সমাবেশ করছেন। এসব সমাবেশে তারা অভাবিত সাড়া পাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ এসব সমাবেশে যোগ দিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করছে, তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। বার্নি স্যান্ডার্স ও ওকাসিও কর্টেজ সর্বত্র আহ্বান জানাচ্ছেন আমেরিকার রাজনীতিকে ধনাঢ্য শ্রেণির প্রভাবমুক্ত করার, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক সংস্কার, সম্পদের ওপর কর ধার্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, ক্ষমতায় অংশগ্রহণে তৃণমূল পর্যায়কে জোরদার করা এবং বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য। এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এই ২ মে পর্যন্ত ওমাহা, নেব্রাস্কা, লাস ভেগাস, ডেনভার, লস এঞ্জেলেস প্রভৃতি শহরসহ অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে বড় বড় জনসমাবেশে তারা বক্তৃতা করেছেন। লস এঞ্জেলেসের গ্র্যান্ড পার্কে অনুষ্ঠিত জনসভায় সমাবেশ ঘটেছিল ৩৬ হাজার মানুষের। ক্যালিফোর্নিয়ার ফলসোমের সমাবেশে যোগ দিয়েছিল ২৬ হাজার মানুষ। এসব সমাবেশে স্যান্ডার্স আর ওকাসিওর সঙ্গে আরো অংশ নিয়েছেন শন ফেইন, গ্রেগ সেজার, নীল ইয়ং, গায়িকা জোয়ান বায়েজ, মেইগ রজার্স, সারা নেলসন প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা। জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীরা সমাবেশগুলোয় পরিবেশন করেছেন সংগীত। ‘ফাইটিং অলিগার্কি’র এই সমাবেশ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলছে। বিভিন্ন স্টেটের অন্যান্য শহরেও আয়োজন চলছে তাদের সমাবেশ অনুষ্ঠানের। ২ মে তাদের সমাবেশ হয়েছে পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গে।
‘ফাইটং অলিগার্কি’ আন্দোলন আমেরিকার জনজীবনে ব্যাপক সাড়া তুলেছে। একই সঙ্গে নাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলকে। বার্নি স্যান্ডার্স রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদেরও তীব্র সমালোচনা করছেন এসব সমাবেশে। ডেমোক্র্যাটদের রাজনীতিতে ধনিক শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা, করপোরেট প্রভাবের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা, ‘অলিগার্কি’র মূল বিয়য়টি অনুধাবনে তাদের ব্যর্থতা প্রভৃতি তার সমালোচনা থেকে বাদ যাচ্ছে না।
অবশ্যই ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ আন্দোলন বাধাহীনভাবে এগোচ্ছে না। তারা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় মহলেরই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যঙ্গ করেছেন স্যান্ডার্সের বয়স নিয়ে; বলেছেন, আর চার বছর তিনি নাও থাকতে পারেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিরুদ্ধে তার সমালোচনার জবাবে সিনেটের মাইনরিটি লিডার চাক শুমার বলেছেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে কোনো বিভাজন নেই। তাদের পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটরা গুরুত্ব দিতে না চাইলেও ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ আন্দোলন যে দেশব্যাপী সাড়া তুলেছে এ বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। পুঁজিবাদী এই দেশে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা এক অভাবনীয় ব্যাপার। এদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনায় বিস্তার করে রয়েছে সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা। মার্কসবাদ তো এদের কাছে আতঙ্ক। এমন জনগোষ্ঠীর কাছে বার্নি স্যান্ডার্স আর ওকাসিও কর্টেজের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা হচ্ছে তাদের সমাজতন্ত্রী আখ্যায়িত করে। কর্টেজকে তো এক ধাপ এগিয়ে মার্কসবাদী বলা হচ্ছে। এমন সমাজতান্ত্রিক বা তথাকথিত বাম চিন্তা-চেতনার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের গড়ে তোলা এই আন্দোলনে এত মানুষের সমাগম এবং তাদের প্রতি এত বিপুল জনসমর্থন রাজনৈতিকভাবে সবাইকে নাড়া দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন দেখার বিষয় এ আন্দোলনে তারা কতদূর যেতে পারবেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখন বছর অতিক্রান্ত হয়নি। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের সফট পাওয়ারগুলো সরব হয়ে উঠেছে।
১৯ ঘণ্টা আগেকবি ও গীতিকার কাইফি আজমি সিনেমার গান লেখার একটা অদ্ভুত পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে এই পদ্ধতির বেশ মিল আছে।
১৯ ঘণ্টা আগেপৃথিবীতে ভারতই একমাত্র দেশ, যে দেশটির সঙ্গে তার সব প্রতিবেশীর সম্পর্ক তিক্ততায় ভরা। শুধু তা-ই নয়, ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার এমন একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে, যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হচ্ছে সংঘাতপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া।
২ দিন আগেফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত মাসে দেওয়া এক ভাষণে হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সংগঠনটির সদস্যদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেন। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই ভাষণে তিনি অবিলম্বে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করার এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
২ দিন আগে