
ড. আবদুল লতিফ মাসুম

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে (History repeats itself)। ইতিহাসবিদরা তাদের কাল-কালান্তরের গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন, হিসাবনিকাশ করে নয়, বরং কালের আকস্মিকতায় ঘটনা-প্রতি ঘটনা পরম্পরায় গতানুগতিকভাবেই ইতিহাস ফিরে আসে বারবার কাকতালীয়ভাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণবিপ্লব যেন একই সূত্রে গাঁথা। নভেম্বর বিপ্লবে কুশীলব ছিলেন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সাধারণ সৈনিকরা। আর ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের নায়ক ছিলেন সরাসরি ছাত্র-জনতা। ৭ নভেম্বর বিদ্রোহ করেছিলেন সাধারণ সৈনিকরা। তাদের সমর্থনে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল লক্ষ জনতা। আর ২০২৪ সালের গণবিপ্লবে অনুঘটক ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। অবশেষে সাধারণ সৈনিকদের, সেনা কর্মকর্তাদের এবং সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের পক্ষে ‘দায়িত্বশীল’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান। কার্যত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই রক্তাক্ত গণবিপ্লবের উত্তরণ ঘটে। ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীর ইচ্ছার প্রতিভূ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের এই সংকটকালীন সময়ে দেশের ছাত্রসমাজ, রাজনৈতিক নেতারা এবং সেনাবাহিনী যে সমন্বিত ঐক্য প্রদর্শন করেন, পুরো জাতির ইতিহাসে তা একটি বিরল ঘটনা। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের দায়িত্বকালের প্রান্তিক সময় অতিবাহিত করছে। এই সময়কালে তারা দেশের সাধারণ প্রশাসন, প্রত্যাশিত বিচার এবং অবশেষে জাতীয় সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। সার্বিক সমন্বয়ের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশন অনেক অনেক কঠিন পঙ্কিল পথ অতিক্রম করেছে। এখন ঠিক বিজয়ের পূর্বাহ্ণে নভেম্বরের উত্তরাধিকার এবং আগস্টের অর্জনÑদুয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান এবং তা অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের রক্তঝরা অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই রক্তঝরা নভেম্বরের আলোকে পুরো জাতি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অর্ধশতাব্দী অবসানে বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর নবচেতনা এবং ৫ আগস্টের নব-অধ্যায় নিয়ে হাজির হয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলের আগে দিনটি পালিত হতো ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। এইদিন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী দেশজ শত্রু এবং সম্প্রসারণবাদী বহিঃশক্তির চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সৈনিক-জনতা এক বিরাট বিজয় অর্জন করেছিল। ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পরাজিত শক্তি প্রতিবিপ্লবের সময় ও সুযোগ খুঁজছিল। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের সুযোগে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী সেনা কর্মকর্তারা প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে ক্ষমতা গ্রহণের অপপ্রয়াস চালায়। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং লে. কর্নেল শাফায়াত জামিল সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। এটি ৩ নভেম্বর ১৯৭৫-এর ঘটনা। তিনি সামরিক আইন জারি করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদকে পদচ্যুত করেন। সব নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা ভেঙে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত করেন। দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসছেÑএই আশঙ্কায় সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকরা এবং দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ৪ নভেম্বর ১৯৭৫ খালেদ মোশাররফের বৃদ্ধ মা এবং তার ভাই আওয়ামী শাসকদলের এমপি রাশেদ মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২ ধানমন্ডি পর্যন্ত খালেদ মোশাররফের সমর্থনে একটি মৌন মিছিল বের করেন। এতে খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিল চক্রের রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশিত হয়। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন, আবদুল লতিফ মাসুম, ৭ নভেম্বরের অজানা অধ্যায় ও জিয়াউর রহমান, মেরিট ফেয়ার, বইমেলা-২০২৫)। সাধারণ জনগণ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের ফিরে আসার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের আতঙ্ক ও আশঙ্কা এবং জনগণের সংক্ষুব্ধ অবস্থার একটি অভাবনীয় ও অপ্রকাশ্য প্রতিবাদের প্রকাশ ঘটে। সেই ঘটনাটি ছিল ইতিহাসে বিরল। সেটির তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। ১. আওয়ামী ক্ষমতাচ্যুতি নিশ্চিতকরণ। ২. জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। ৩. নির্দেশের দেয়াল ভেঙে সাধারণ সৈনিক তথা সেনা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ। ইতিহাস যেন বারবার ফিরে আসে। বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে প্রাথমিক শাসক গোষ্ঠীর ব্যর্থতায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা আসে। এর ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ধস নামে। জনগণের দুর্ভোগ এবং শাসন ব্যর্থতার ফলে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে।
অভ্যুত্থানের পর মেজররা নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে সমর্পণ করলে সামরিক সদর দপ্তরে আলোচনা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান সাংবিধানিক পন্থায় উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু ততক্ষণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। সেনাবাহিনীতে দ্রুতই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়। মেজররা বঙ্গভবন থেকে এবং সিনিয়ররা সেনানিবাস থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন এবং তার ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছিল। তবে জিয়ার প্রতি মেজরদের আস্থা থাকলেও সিনিয়রদের মধ্যে হতাশা বাড়ে। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় পদাধিকারী খালেদ মোশাররফ এবং ঢাকা ব্রিগেড প্রধান কর্নেল সাফায়াত জামিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল সাফায়াত জামিল পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটান। তারা জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন এবং খালেদ মোশাররফ নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন। খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। সেনানিবাসে জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে গোপনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আশায় কর্মরত ছিলেন। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের অস্থিরতাকে তাহের বিপ্লবের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ মনে করেন। তিনি জিয়ার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তাকে মুক্ত করে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল নেন। ৭ নভেম্বর জিয়াকে মুক্ত করতে যাওয়া বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোকদের সঙ্গে শত শত সাধারণ সৈনিক যোগ দেন। তারা জিয়াকে কাঁধে বহন করে ২২ বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়ে আসেন। ফলে তাহেরের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তাহেরের লোকরা জিয়াকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইলে, জিয়া কৌশল নেন। তিনি তাহেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, ‘কর্নেল তাহের তোমাদের নেতা এবং আমারও নেতা... তাকে আবার এখানে নিয়ে আসো। তিনি এখান থেকেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন।’ তাহের এরপর ২২ ইস্ট বেঙ্গলে চলে আসেন।
৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণটি আগেই রেকর্ড করা হয়েছিল, যা তাহেরের চাপ সৃষ্টির সুযোগ নষ্ট করে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে জিয়া খুব হালকা মেজাজে তাহেরকে নিয়ে জাসদপন্থি সৈনিকদের কাছে যান। সৈনিকদের দাবির তালিকা পেশ করা হলে, জিয়া সেগুলো ন্যায্য বলে মেনে নেন এবং তাদের অন্যতম দাবি জেলে আটক জাসদ নেতা জলিল ও রবের মুক্তির নির্দেশ দেন। জিয়ার এই তীক্ষ্ণ কৌশলের কাছে তাহের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হন এবং তার সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়। সেনা অফিসারদের হত্যা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে অভিযোগ করা হয়। গোপন বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তা কার্যকর হয়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তখন ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে ছিল। ৪ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের মায়ের মিছিলে অংশগ্রহণ এই ভারতবিরোধী মনোভাবে ইন্ধন জোগায়। কর্নেল তাহের এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ সৈনিকদের বিপ্লবে আহ্বান জানান। ৬ নভেম্বর রাতে বিপ্লবের সূচনা হয়, যেখানে সৈনিকরা ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন এবং খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃঅধিষ্ঠানের আহ্বান জানান। কিন্তু রাজনীতির দ্বন্দ্বে খন্দকার মোশতাক আহমেদ পরাজিত হন। ৭ নভেম্বরের সিপাহি-বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার ভারসাম্যে আসেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
৭ নভেম্বর ৭৫-পরবর্তী অধ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রজীবনে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সামরিক বাহিনী এবং গণতন্ত্রকে একে অন্যের পরিপূরক মনে না করে এর বিপরীত মনে করা হয়। পৃথিবীর সামরিক বাহিনীর রাজনীতি ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে এটা একটি বিরল, ব্যতিক্রমধর্মী এবং অভূতপূর্ব ঘটনা যে, তিনি আওয়ামী লীগ প্রবর্তিত একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার আর একটি অনবদ্য অবদান কৃত্রিম বিভাজনে বিভক্ত, রাষ্ট্র ও সমাজে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে ৭৫-এর ৭ নভেম্বর বিপ্লবের চেতনার পুনরুজ্জীবন লক্ষ করা যায়। সেদিন মুখ্য ঘটনার অনুঘটক ছিলেন সেনাবাহিনীর সিপাহিরা। আর আজকের গণবিপ্লবের অনুঘটক হিসেবে বিপ্লবের সূত্রপাত করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ শামিল হয়েছে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে পরাজিত স্বৈরশাসক। কিন্তু অবশেষে সেনাবাহিনী স্বৈরাচারের পক্ষে অস্ত্র ধারণ করতে অস্বীকার না করলে দেশে ব্যাপক রক্তপাত ঘটতে পারত। সেনাবাহিনী প্রধান স্বৈরাচারের আত্মীয়তার সূত্রকে অস্বীকার করে দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি সেনাবাহিনীর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। সুতরাং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আদলে এই বিপ্লবটিও ছিলÑছাত্র, জনতা ও সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের সমর্থন ধন্য। আজ আরেকটি ৭ নভেম্বর আমরা অতিক্রম করছি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই নভেম্বর আমাদের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ঐক্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। নভেম্বর বিপ্লব ৭৫ এবং আগস্ট বিপ্লব ২০২৪ যেন একই প্রান্তের দুটো ফুল। সুতরাং আজকের এই সংকটময় সময়ে জিয়াউর রহমানের জাতীয় ঐক্যের রাজনীতিকে সামনে রেখে নভেম্বর ও আগস্টের চেতনায় বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের যেকোনো চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে (History repeats itself)। ইতিহাসবিদরা তাদের কাল-কালান্তরের গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন, হিসাবনিকাশ করে নয়, বরং কালের আকস্মিকতায় ঘটনা-প্রতি ঘটনা পরম্পরায় গতানুগতিকভাবেই ইতিহাস ফিরে আসে বারবার কাকতালীয়ভাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণবিপ্লব যেন একই সূত্রে গাঁথা। নভেম্বর বিপ্লবে কুশীলব ছিলেন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সাধারণ সৈনিকরা। আর ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের নায়ক ছিলেন সরাসরি ছাত্র-জনতা। ৭ নভেম্বর বিদ্রোহ করেছিলেন সাধারণ সৈনিকরা। তাদের সমর্থনে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল লক্ষ জনতা। আর ২০২৪ সালের গণবিপ্লবে অনুঘটক ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। অবশেষে সাধারণ সৈনিকদের, সেনা কর্মকর্তাদের এবং সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের পক্ষে ‘দায়িত্বশীল’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান। কার্যত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই রক্তাক্ত গণবিপ্লবের উত্তরণ ঘটে। ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীর ইচ্ছার প্রতিভূ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের এই সংকটকালীন সময়ে দেশের ছাত্রসমাজ, রাজনৈতিক নেতারা এবং সেনাবাহিনী যে সমন্বিত ঐক্য প্রদর্শন করেন, পুরো জাতির ইতিহাসে তা একটি বিরল ঘটনা। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের দায়িত্বকালের প্রান্তিক সময় অতিবাহিত করছে। এই সময়কালে তারা দেশের সাধারণ প্রশাসন, প্রত্যাশিত বিচার এবং অবশেষে জাতীয় সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। সার্বিক সমন্বয়ের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশন অনেক অনেক কঠিন পঙ্কিল পথ অতিক্রম করেছে। এখন ঠিক বিজয়ের পূর্বাহ্ণে নভেম্বরের উত্তরাধিকার এবং আগস্টের অর্জনÑদুয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান এবং তা অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের রক্তঝরা অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই রক্তঝরা নভেম্বরের আলোকে পুরো জাতি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অর্ধশতাব্দী অবসানে বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর নবচেতনা এবং ৫ আগস্টের নব-অধ্যায় নিয়ে হাজির হয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলের আগে দিনটি পালিত হতো ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। এইদিন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী দেশজ শত্রু এবং সম্প্রসারণবাদী বহিঃশক্তির চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সৈনিক-জনতা এক বিরাট বিজয় অর্জন করেছিল। ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পরাজিত শক্তি প্রতিবিপ্লবের সময় ও সুযোগ খুঁজছিল। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের সুযোগে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী সেনা কর্মকর্তারা প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে ক্ষমতা গ্রহণের অপপ্রয়াস চালায়। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং লে. কর্নেল শাফায়াত জামিল সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। এটি ৩ নভেম্বর ১৯৭৫-এর ঘটনা। তিনি সামরিক আইন জারি করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদকে পদচ্যুত করেন। সব নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা ভেঙে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত করেন। দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসছেÑএই আশঙ্কায় সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকরা এবং দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ৪ নভেম্বর ১৯৭৫ খালেদ মোশাররফের বৃদ্ধ মা এবং তার ভাই আওয়ামী শাসকদলের এমপি রাশেদ মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২ ধানমন্ডি পর্যন্ত খালেদ মোশাররফের সমর্থনে একটি মৌন মিছিল বের করেন। এতে খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিল চক্রের রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশিত হয়। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন, আবদুল লতিফ মাসুম, ৭ নভেম্বরের অজানা অধ্যায় ও জিয়াউর রহমান, মেরিট ফেয়ার, বইমেলা-২০২৫)। সাধারণ জনগণ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের ফিরে আসার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের আতঙ্ক ও আশঙ্কা এবং জনগণের সংক্ষুব্ধ অবস্থার একটি অভাবনীয় ও অপ্রকাশ্য প্রতিবাদের প্রকাশ ঘটে। সেই ঘটনাটি ছিল ইতিহাসে বিরল। সেটির তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। ১. আওয়ামী ক্ষমতাচ্যুতি নিশ্চিতকরণ। ২. জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। ৩. নির্দেশের দেয়াল ভেঙে সাধারণ সৈনিক তথা সেনা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ। ইতিহাস যেন বারবার ফিরে আসে। বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে প্রাথমিক শাসক গোষ্ঠীর ব্যর্থতায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা আসে। এর ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ধস নামে। জনগণের দুর্ভোগ এবং শাসন ব্যর্থতার ফলে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে।
অভ্যুত্থানের পর মেজররা নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে সমর্পণ করলে সামরিক সদর দপ্তরে আলোচনা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান সাংবিধানিক পন্থায় উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু ততক্ষণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। সেনাবাহিনীতে দ্রুতই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়। মেজররা বঙ্গভবন থেকে এবং সিনিয়ররা সেনানিবাস থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন এবং তার ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছিল। তবে জিয়ার প্রতি মেজরদের আস্থা থাকলেও সিনিয়রদের মধ্যে হতাশা বাড়ে। সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় পদাধিকারী খালেদ মোশাররফ এবং ঢাকা ব্রিগেড প্রধান কর্নেল সাফায়াত জামিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল সাফায়াত জামিল পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটান। তারা জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন এবং খালেদ মোশাররফ নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন। খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। সেনানিবাসে জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে গোপনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আশায় কর্মরত ছিলেন। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের অস্থিরতাকে তাহের বিপ্লবের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ মনে করেন। তিনি জিয়ার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তাকে মুক্ত করে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল নেন। ৭ নভেম্বর জিয়াকে মুক্ত করতে যাওয়া বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোকদের সঙ্গে শত শত সাধারণ সৈনিক যোগ দেন। তারা জিয়াকে কাঁধে বহন করে ২২ বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়ে আসেন। ফলে তাহেরের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তাহেরের লোকরা জিয়াকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইলে, জিয়া কৌশল নেন। তিনি তাহেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, ‘কর্নেল তাহের তোমাদের নেতা এবং আমারও নেতা... তাকে আবার এখানে নিয়ে আসো। তিনি এখান থেকেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন।’ তাহের এরপর ২২ ইস্ট বেঙ্গলে চলে আসেন।
৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন বেতার ভাষণ দেন, তখন জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহের উভয়েই বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণটি আগেই রেকর্ড করা হয়েছিল, যা তাহেরের চাপ সৃষ্টির সুযোগ নষ্ট করে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে জিয়া খুব হালকা মেজাজে তাহেরকে নিয়ে জাসদপন্থি সৈনিকদের কাছে যান। সৈনিকদের দাবির তালিকা পেশ করা হলে, জিয়া সেগুলো ন্যায্য বলে মেনে নেন এবং তাদের অন্যতম দাবি জেলে আটক জাসদ নেতা জলিল ও রবের মুক্তির নির্দেশ দেন। জিয়ার এই তীক্ষ্ণ কৌশলের কাছে তাহের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হন এবং তার সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়। সেনা অফিসারদের হত্যা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে অভিযোগ করা হয়। গোপন বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তা কার্যকর হয়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তখন ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে ছিল। ৪ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের মায়ের মিছিলে অংশগ্রহণ এই ভারতবিরোধী মনোভাবে ইন্ধন জোগায়। কর্নেল তাহের এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ সৈনিকদের বিপ্লবে আহ্বান জানান। ৬ নভেম্বর রাতে বিপ্লবের সূচনা হয়, যেখানে সৈনিকরা ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন এবং খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃঅধিষ্ঠানের আহ্বান জানান। কিন্তু রাজনীতির দ্বন্দ্বে খন্দকার মোশতাক আহমেদ পরাজিত হন। ৭ নভেম্বরের সিপাহি-বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার ভারসাম্যে আসেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
৭ নভেম্বর ৭৫-পরবর্তী অধ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রজীবনে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সামরিক বাহিনী এবং গণতন্ত্রকে একে অন্যের পরিপূরক মনে না করে এর বিপরীত মনে করা হয়। পৃথিবীর সামরিক বাহিনীর রাজনীতি ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে এটা একটি বিরল, ব্যতিক্রমধর্মী এবং অভূতপূর্ব ঘটনা যে, তিনি আওয়ামী লীগ প্রবর্তিত একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার আর একটি অনবদ্য অবদান কৃত্রিম বিভাজনে বিভক্ত, রাষ্ট্র ও সমাজে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে ৭৫-এর ৭ নভেম্বর বিপ্লবের চেতনার পুনরুজ্জীবন লক্ষ করা যায়। সেদিন মুখ্য ঘটনার অনুঘটক ছিলেন সেনাবাহিনীর সিপাহিরা। আর আজকের গণবিপ্লবের অনুঘটক হিসেবে বিপ্লবের সূত্রপাত করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ শামিল হয়েছে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে পরাজিত স্বৈরশাসক। কিন্তু অবশেষে সেনাবাহিনী স্বৈরাচারের পক্ষে অস্ত্র ধারণ করতে অস্বীকার না করলে দেশে ব্যাপক রক্তপাত ঘটতে পারত। সেনাবাহিনী প্রধান স্বৈরাচারের আত্মীয়তার সূত্রকে অস্বীকার করে দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি সেনাবাহিনীর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। সুতরাং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আদলে এই বিপ্লবটিও ছিলÑছাত্র, জনতা ও সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের সমর্থন ধন্য। আজ আরেকটি ৭ নভেম্বর আমরা অতিক্রম করছি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই নভেম্বর আমাদের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ঐক্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। নভেম্বর বিপ্লব ৭৫ এবং আগস্ট বিপ্লব ২০২৪ যেন একই প্রান্তের দুটো ফুল। সুতরাং আজকের এই সংকটময় সময়ে জিয়াউর রহমানের জাতীয় ঐক্যের রাজনীতিকে সামনে রেখে নভেম্বর ও আগস্টের চেতনায় বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের যেকোনো চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর সকাল ৮টায় কর্নেল রশীদ জিপে করে ৫৪ নম্বর আগামসি লেনের বাড়ি থেকে মুজিব সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদকে শাহবাগের রেডিও স্টেশনে নিয়ে যান। কর্নেল ফারুকসহ আরো কয়েকজন অফিসার সেখানে ছিলেন।
১ ঘণ্টা আগে
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের সাম্প্রতিককালের ইতিহাসের কয়েকটি মাইলফলক রয়েছে। এসব মাইলফলকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-১৯৪৭-এ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে আজাদি লাভ এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার আত্মাহুত
২ ঘণ্টা আগে
সেটা ছিল দমবন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। সারা বাংলাদেশ যেন থেমে গিয়েছিল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছিল সবার মধ্যে। যেন ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল সবার। তখন ঢাকায় যারা ছিলেন, তারা বুঝতে পারছিলেন সংকটের গভীরতা। এটা ছিল ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা দখল-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার
২ ঘণ্টা আগে
আধুনিক রাজনীতি শুধু ক্ষমতার কৌশল নয়, এটি আসলে এক গভীর দর্শনগত ও নৈতিক সংগ্রাম—যেখানে প্রশ্ন ওঠে, কে কথা বলবে, কে নীরব থাকবে আর কাকে কথা বলতেই দেওয়া হবে না। নিউ ইয়র্কে মামদানি বা বাংলাদেশের প্রান্তিক রাজনীতিকদের উত্থান এই মৌল প্রশ্নটিকেই নতুন করে সামনে এনেছে।
৩ ঘণ্টা আগে