জাতির কিছু মহামানব ধারণা করছেন, তাদের বুদ্ধি ছাড়া সারা জাতি অচল! তারা আমাদের জানাচ্ছেন, পশ্চিমা দেশগুলো হলো ‘স্বাধীনতার স্বর্গরাজ্য’। সেখানে ধর্ম, মূল্যবোধ বা সেন্টিমেন্টের কোনো গুরুত্ব নেই—সবই নাকি বাকস্বাধীনতার নামে উন্মুক্ত; কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।
আলোচনার শুরুতেই তাই বিলাতে ব্লাসফেমি আইনের বিবর্তন ও বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে একটু আলোচনা সেরে নিচ্ছি।
বিলাতে যে একটা ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা) আইন রয়েছে, সে সম্পর্কে প্রথম আমরা জানতে পারি সালমান রুশদির বিরুদ্ধে করা মামলাটির প্রেক্ষাপটে! বিলাতের মুসলিম কমিউনিটি এই আইনের আওতায় সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে জানানো হয়, এই আইনটি শুধু খ্রিষ্টান ধর্মের বেলায় প্রযোজ্য, ইসলাম বা অন্য ধর্মের বেলায় প্রযোজ্য নয়! বিষয়টি গ্লোবাল বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে একটা মারাত্মক শক ওয়েভ সৃষ্টি করে!
যুক্তরাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতি অবমাননা বা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোকে কেন্দ্র করে ব্লাসফেমি আইন বহু শতাব্দী ধরে কার্যকর ছিল। ১৬৭৬ সালে প্রথম এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে আরো স্পষ্ট হয়, কোনো ধর্মীয় প্রতীক, ধর্মীয় গ্রন্থ, বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ২০০৮ সালে ব্লাসফেমির ঐতিহাসিক আইনি ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হলেও religious hatred, incitement ও public order-এর আওতায় আজও ধর্ম অবমাননা বা ধর্মকে আঘাত করে সহিংসতায় প্ররোচনা দেওয়া গুরুতর অপরাধ।
অর্থাৎ, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সেই স্বাধীনতা শর্তহীন নয়—সেটা অন্যের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে খোঁচা দেওয়ার স্বাধীনতা নয়।
তাই বহুবার দেখা গেছে, কোনো শিল্পী, লেখক বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে ব্রিটিশ আদালত কঠোর ব্যবস্থা নেয়। গণমাধ্যমও সেখানে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ‘খেলা’ করে না, কারণ ব্রিটিশ সমাজ জানে, ধর্মকে অপমান করা মানে সমাজের স্থিতি, শান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে বিপন্ন করা।
ইংরেজিতে একটা নীতিকথা প্রচলিত রয়েছে—‘Your freedom ends at the tip of my nose.’ অর্থাৎ তোমার হাত নাড়ানোর স্বাধীনতা আমার নাকের ডগার আগ পর্যন্ত! এ কথাটি পশ্চিমা সভ্য সমাজের অধিকাংশ সদস্য এবং তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র হুবহু অনুসরণ করে। ফলে সেইসব সমাজে অটোমেটিক একটা নিয়ন্ত্রণ কাজ করে! সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র এসব বুদ্ধিবৃত্তিক ইতরামির বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে। আমাদের মতো জনগণকে রাস্তায় নেমে এসব বুদ্ধিবৃত্তিক ইতরদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে বাধ্য হতে হয় না!
পশ্চিমা বিশ্বে আপনি এরকম কোনো আরজ আলী মাতব্বর কিংবা আবুল সরকার পাবেন না, যারা তাদের ধর্মবিশ্বাসকে এভাবে খুঁচিয়েছেন এবং তাদের মূলধারার মিডিয়া তাদের মহামানব বানিয়েছে এবং তাদের সমাজের সুশীল তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা মহা হইচই বাধিয়েছে!
এদেশে কেন সাংস্কৃতিক ইতরামি বাড়ছে?
এখানে কিছু গোষ্ঠী নিজেদের ‘প্রগতিশীল’ বা ‘সাংস্কৃতিক কর্মী’ পরিচয়ে ইচ্ছামতো ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম, জাতীয় মূল্যবোধ—সবকিছুতে আঘাত করাকে তাদের জন্মগত অধিকার মনে করে। শিল্পের নামে পর্নোগ্রাফি, সংস্কৃতির নামে কুরুচিপূর্ণ আচরণ, মুক্তচিন্তার নামে ধর্মবিদ্বেষ—সবই আজ কোনো এক অদ্ভুত কারণবশত ‘সাহসিকতা’ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদের বড় শক্তি—বিদেশি ফান্ডিং, এনজিও এজেন্ডা এবং পশ্চিমা বিশ্বাসী মিডিয়ার সুরক্ষা। অথচ যাদের দেশকে তারা অনুসরণ করার কথা বলেন, সেই পশ্চিমেই এসব আচরণকে সীমাহীন স্বাধীনতা বলা হয় না।
সোজা কথা, তারা নিজেদের দেশে ধর্ম, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর; কিন্তু আমাদের দেশে এসে ঠিক উল্টো তত্ত্ব শোনায়।
বাউলশিল্পী আবুল সরকারের বক্তব্য: ধর্ম অবমাননা ও বাউলসংগীত—দুটি ভিন্ন বাস্তবতা
বাউলদর্শনের মূলকথা হলো, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্তর্গত সাধনা, ভালোবাসা ও অহিংসা। কিন্তু আবুল সরকারের মন্তব্যে দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো মানসিকতা—অশ্লীলতা, অবমাননা, ও স্পষ্ট ইসলামবিদ্বেষ। কারও ব্যক্তিগত বিকৃতি, নীচতা বা বিদ্বেষ বাউল-ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং এটি একজন মানুষের ব্যক্তিগত অপরাধ, ঐতিহ্য বা দর্শন তার দায় বহন করবে কেন? সাম্প্রতিক সময়ে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের জঘন্য ভাষায় করা মন্তব্য পুরো সমাজে নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এমন মন্তব্য বা গালাগালকে ‘বাউলসংগীতের অংশ’ বলা শুধু ভুল নয়, এটি বাউল-ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননা।
এই প্রক্রিয়ায় বাউলগানকে রক্ষার নামে ইসলামোফোবিয়াকে যেভাবে প্রশ্রয় ও পুরা পানি ঘোলাটে করার যে আয়োজন দেখা যাচ্ছে, তা একটি সামাজিক বিপদ ও বুদ্ধিবৃত্তিক আপদ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে! প্রথম আলোসহ কয়েকটি চিহ্নিত গণমাধ্যম তাদের কাজে নেমে পড়েছে। ‘বাউল-ফকিরদের ওপর নিপীড়ন সাংস্কৃতিক প্রতিবিপ্লবের সংকেত’ তাদের এ রকম শিরোনাম দেখেই মতলব আন্দাজ করা যাচ্ছে! একই ঘরানার টিভি চ্যানেলে বসে বাউলদের নিয়ে রাষ্ট্রের কর্তব্য সম্পর্কে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান প্রসব করে যাচ্ছেন হাল আমলের অন্যতম বুদ্ধিজীবীরা। এদের মতলববাজি মন্তব্য শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য হুমকি। বাউলসংগীত ও ধর্ম অবমাননা—এ দুটিকে একই বাক্যে আনা যায় না। বাউলগান রক্ষা করা মানে বাউলের আধ্যাত্মিকতা রক্ষা করা—এটা কোনোভাবেই যেন ইসলামোফোবিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়ে না পড়ে, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে!
সৃষ্টিকর্তাকে কারা গালি দেয়? কারা হয়ে ওঠে নাস্তিক?
বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্কতার নামে কিংবা বিজ্ঞানের দোহাই যারা নাস্তিকতার ঢেউ তোলে, তাদের দিকে লক্ষ করলে একটি বৈপরীত্য চোখে পড়ে—এই ব্যক্তিদের অধিকাংশই বিজ্ঞানের ছাত্র নন; বরং তাদের বেশিরভাগই বাংলা, ইতিহাস, দর্শন, সাংবাদিকতা বা অনুরূপ বিভাগের শিক্ষার্থী। আর তাদের বড় একটি অংশ নিজ নিজ ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার, যারা জ্ঞানের গভীরে প্রবেশের ধৈর্য বা অভ্যাস কোনোটিতেই খুব সফল নয়। এমনকি এদের মাঝে বহুজনেরই মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে, যা থেকে বের হয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ায় গিয়ে তারা ধর্মবিদ্বেষী হয়ে ওঠে।
অপরদিকে আপনি দেশের চিকিৎসক সমাজ বা প্রকৃত বিজ্ঞানীদের মাঝে প্রায় কোনো নাস্তিকতা খুঁজে পাবেন না। কেননা একজন ডাক্তার যখন মানবদেহের সূক্ষ্ম গঠন, অসংখ্য প্রক্রিয়ার সমন্বয় ও নিখুঁত ভারসাম্য পর্যবেক্ষণ করেন, তখন তিনি বিস্ময়ে আবিষ্কার করেন, এত সুনির্মিত এই জীববৈচিত্র্যের পেছনে এক মহান স্রষ্টার অদৃশ্য শক্তি ছাড়া কিছুই কল্পনা করা সম্ভব নয়। একইভাবে একজন প্রকৃত বিজ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞানের ছাত্র মহাবিশ্বের বিশালতা, তার নিয়ম, রহস্য এবং পরম সূক্ষ্ম সমন্বয় দেখে আরো বেশি অবনত হয়ে যান সৃষ্টিকর্তার মহিমার সামনে।
যারা সহজভাবে বিশ্বাস হারায়, তারা সাধারণত হয় আরজ আলী মাতব্বর ধাঁচের ‘ক্লাস টু পাস দার্শনিক’, নয়তো বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মতো অল্পশিক্ষিত কটুভাষী। তাদের সঙ্গে থাকে কিছু কথিত সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবী, যাদের আলোচনায় গভীরতা নেই, গবেষণার অভ্যাস নেই—শুধু শোরগোল আছে।
এসব নাস্তিক যুক্তি দেয়, ‘চোখে দেখি না, তাই বিশ্বাস করি না।’ অথচ তারা ভুলে যায়, মানুষের চোখ কয়েক মাইল দূরের বস্তুও সঠিকভাবে ধরতে পারে না। সেই চোখ দিয়ে কী করে তারা পুরো মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে দেখতে চায়? মহাবিশ্বের যে অংশটুকুর নাম আমরা জানি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, তার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত আলো পৌঁছাতেই লাগে এক লাখ আলোকবর্ষ! আর এই মিল্কিওয়ে শুধু মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র দানা মাত্র।
এমন মহাজাগতিক বিস্তৃতি, এত নিখুঁত ভারসাম্য—এসব দেখে যে হৃদয় নম্র হয় না, যে চিত্ত বিস্ময়ে নত হয় না, সেই কেবল স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে।
আমি আমার বহু লেখায় এই সৃষ্টিজগতের বিশালতা, জটিলতা এবং এর পেছনের স্রষ্টার প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। প্রতিটি গবেষণা, প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি অণু—সবই সাক্ষ্য দেয় এক মহাশক্তির অস্তিত্বের।
ভূমিকম্প দিয়ে কি ঊর্ধ্বতন জগৎ কোনো সতর্ক সংকেত পাঠাচ্ছে?
ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের পুরো দেশবাসীর মনে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে । আমরা যারা প্রবাসে আছি, তারাও কেন যেন ঘুমাতে পারছি না। ছেলে ও তার পরিবারকে দেখতে কানাডার ভ্যানকুভারে অবস্থান করছি। রাত এখন ৪টা, ঘুম আসছে না। স্ত্রীকে রেখে আলগোছে ড্রয়িংরুমে বসে বসে লিখছি! কারণ ভূমিকম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও তার অনেক কার্যকারণ মানুষের নলেজে এবং অভিজ্ঞতায় চলে এসেছে! ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও আমরা পাগলের মতো সারা দেশের মানুষ খালি ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোয় একত্র হচ্ছি এবং আকাশের দিকে ইমারতের উচ্চতা বাড়াচ্ছি। আমার গত সপ্তাহের কলামে উপকূল অঞ্চলে ১০০টি মেরিন সিটি ও দেশের সব নদীর দুপাশে পরিকল্পিত গৃহায়ন ও বনায়নের যে প্রস্তাব রেখেছি, সেটা একটা চমৎকার সমাধান হতে পারে! এটি হতে পারে আগামী ৫০ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা!
জাতির পুরো খাসলত খারাপ হয়ে গেছে! আমরা চাপ অনুভব করলেই টয়লেট খোঁজা শুরু করি! কেউ বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানাচ্ছি না। আর অতি লাভ এবং অতিলোভের বশবর্তী হয়ে আমাদের ব্যবসায়িক শ্রেণি সিমেন্টে ছাই মিশিয়েছেন! এক ভদ্রলোককে জানি, যিনি হংকংয়ে বসে সিমেন্টে ছাই মেশানোর এই কাজটি করতেন! জানি না, এরকম সিমেন্ট বা নিম্নমানের মালামাল দিয়ে এ ধরনের কতগুলো বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। এরকম শত শত অনিয়মের গল্প জানি। এটাও জানি, রিখটার স্কেলের ৯ মাপের একটা ভূমিকম্প যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে! এই সব ডেটা যখন একটি মগজে ইনপুট করা থাকে, সেই বডির মধ্যকার মনটি শান্ত থাকে কীভাবে?
আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় মেশিনারিজ কিংবা অলিগার্কদের হাতে অসহায় বনে গেছি । সবাই একেকটা মৃত্যুকূপে নিজেদের দেহটি ঢুকিয়ে অপেক্ষায় রয়েছি! আমরা এটাও জানি, পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণেই এসব ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ যার হাতে রয়েছে, তাকে আমরা চিনি না, চিনতেও চাই না। সদা জাগ্রত সেই সত্তা, যিনি এই পৃথিবীর একটি পাতার নড়াচড়াও নিয়ন্ত্রণ করেন, সেই তিনি আমাদের প্রতি মহানুভব হয়ে যদি এই প্লেটের নড়াচড়া একটু ধীর করে দেন, তবে কারো কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না! স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির এই পরিচয় ও জানাশোনাকেই ড. জাফর ইকবালরা বলেন কুসংস্কার! যখন ড. জাফর ইকবাল জীবিত ছিলেন (সজাগ বা সক্রিয় ছিলেন), তখন তিনি জনগণকে ভূমিকম্প নিয়ে এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন! তার সেই অভয় নিয়ে ২০১৩ সালে দৈনিক আমার দেশ-এ একটি কলাম লিখেছিলাম! লেখার সেই বিষয়বস্ত এখানে উদ্ধৃত করে লেখাটি শেষ করব।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বিজ্ঞান কমিটি নাসার তখনকার প্রধান চার্লস বোল্ডেনকে তলব করেছিলেন! কারণ এর আগের মাসে ১৭ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কের আকাশে বিস্ফোরিত হয় ,যার শক ওয়েভে এ এলাকার বহু জানালা ভেঙে যায় এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জনবিরল সেই জায়গায় ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়। এটা কিন্তু পৃথিবীতে হিট করেনি, শুধু সেখানকার বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরিত হয়েছিল!
এ কারণেই আমেরিকাবাসীর মনেও ভয় ঢুকে যায়! ঠিক একই দিনে আরেকটি গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করে—মাত্র ১৭ হাজার ২০০ মাইল দূর দিয়ে, যা পৃথিবীকে বেষ্টনকারী টেলিভিশন ও আবহাওয়া উপগ্রহগুলোর কক্ষপথের চেয়েও খুব নিকটবর্তী ছিল। টেক্সাসের তখনকার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান লামার স্মিথ এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এই শুনানির আয়োজন করেন! সংসদীয় কমিটি যখন বোল্ডেনকে জিজ্ঞেস করেন, যদি একটি বৃহৎ গ্রহাণু নিউইয়র্ক সিটির দিকে ধেয়ে আসে, তখন আমরা কী করতে পারি? তখন নাসার চিফ বলেছিলেন, সেজদায় লুটিয়ে পড়ুন (Just Pray)।
বিপরীত দিকে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া সামান্য একটু বৃদ্ধি পেলেই যখন কবরখানা হওয়ার আতঙ্কে সারা দেশ, তখন বাংলার এই নিউটন দেশবাসীকে সব কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে বলেছিলেন, ‘ডরাইয়েন না!’
আমরা সবাই একটা কথা বলি, শেখ হাসিনার সঙ্গে বায়তুল মোকাররমের খতিবও পালিয়েছিলেন; কিন্তু তার সঙ্গে যে তন্তরমন্তর ঘরের প্রধান বিজ্ঞানীও পালিয়েছিলেন, সেই কথাটি কেন যেন স্মরণ করি না!
লেখক: কলামিস্ট

