
হাম্মাদুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের পরাজয় ডেমোক্রেটিক পার্টিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি কংগ্রেসের দুই কক্ষের নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে এক বছর পরে গত ৪ নভেম্বর দেশটির স্থানীয় পর্যায়ের তিনটি নির্বাচনি লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের বিজয় দলটির নেতাকর্মীদের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এই জয়ে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন তারা।
এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহর নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনটি। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি ছিল এই নির্বাচনের দিকে। একই সঙ্গে নজর ছিল আফ্রিকার খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী মাহমুদ মামদানি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার দম্পতির ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উদীয়মান মুসলিম যুবনেতা জোহরান মামদানির (৩৪) দিকেও। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী মামদানির বিজয় যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন মামদানি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সাড়াজাগানো ও তুমুল আলোচিত এই মেয়র নির্বাচনে মামদানিকে ইহুদিবাদ, পুঁজিবাদ, ধর্মীয় বর্ণবাদ ও আধিপত্যবাদের সীমাহীন প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে হয়েছে। কারণ এই শক্তিগুলো মামদানির বিজয় ঠেকাতে অর্থ, পেশিশক্তি ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এক মামদানির কাছেই এই শক্তিগুলোর করুণ পরাজয় হয়েছে। মামদানির এই বিজয় ছিল বৈশ্বিক পুঁজিবাদের প্রভাব, বর্ণবাদী আর্থিক উপকরণ, ইহুদিবাদী দায়মুক্তি ও ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে নীরবতার বিরুদ্ধে।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ও পুঁজিসমৃদ্ধ স্থানগুলোর একটি হলো নিউ ইয়র্ক। সেখানে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী মামদানির এই বিজয়কে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সমালোচনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তার এই বিজয়কে বিবেচনা করা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী উদারনীতির দুর্গের মধ্যে একটি বিদ্রোহ হিসেবে। তার প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল কঠোরতাবিরোধী রাজনীতি, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি এবং কয়েক দশক ধরে আমেরিকার জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে আসা করপোরেট যুক্তিগুলোকে ভেঙে ফেলা। ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্বায়ন’ হিসেবে যাকে ‘পুঁজিবাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ শক্তি’ অভিহিত করা হয়, তার ওপর এটি ছিল সরাসরি একটি আঘাত।
গাজায় অমানবিক অবরোধ বা বর্ণবাদী নীতি অনুসরণের জন্য বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের সমালোচনা করা বা রাজনৈতিকভাবে তিরস্কার যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়েছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদের যেকোনো নৈতিক সমালোচনাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হতো এবং এসব সমালোচনাকে নানাভাবে নীরব করে দেওয়া হয়েছে। মামদানির ক্ষেত্রেও এই পরিচিত স্ক্রিপ্টটি ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তার গায়ে ‘হামাসপন্থি’, ‘ইহুদিবিরোধী’ এবং ‘চরমপন্থি’ লেবেল ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু এবার আর এটি কোনো কাজে আসেনি।
নিউ ইয়র্কের মানুষ, যারা বহু জাতিগত পরিচয় বহন করেন, যাদের অধিকাংশই তরুণ এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তারা চাপিয়ে দেওয়া এই ট্যাগ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরোনো বাগ্মিতার বা বাগাড়ম্বরের এই অস্ত্র এখন আর কোনো কাজে আসছে না। গাজায় ইসরাইল যে গণহত্যা চালিয়েছে এবং অবরোধের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, সেটাকে হলোকস্টের করুণ কাহিনির ওপর নির্মিত ইহুদিবাদী বয়ান দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না।
ইহুদিবাদীদের নৈতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের বর্তমান সময়ের ভয়াবহ আচরণের কারণে ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত—সমবেদনা পাওয়ার এই ঐতিহাসিক ঢাল এখন ভেঙে গেছে। তবে তা হলোকস্ট ভুলে যাওয়ার কারণে নয়, বরং তাদের উপনিবেশবাদী সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিতে হলোকস্টকে নৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণেই এটা ঘটছে।
নোয়াম চমস্কি, নরম্যান ফিনকেলস্টাইন এবং ইলান পাপ্পের মতো বিশিষ্ট ইহুদি পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবীরা ইহুদিবাদের এই নৈতিক বৈষম্য সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো এতে কান না দিয়ে বরং আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নগর-শহরের সড়কগুলো ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে প্রকম্পিত হলেও এসব দেশের সরকারের নীতিতে এখনো তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণ মানুষের অনুভূতি এবং ক্ষমতাশালী অভিজাতদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে রাস্তায় নামা জনগণের এই সহানুভূতির রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে বানোয়াট সম্মতি এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ভিন্নভাবে তুলে ধরে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। মামদানির মনোনয়ন এটাই ইঙ্গিত দেয়, ইহুদিবাদী মিডিয়া ও শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সত্ত্বেও জনগণ নির্বাচনি চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশের একটি উপায় বের করে নিতে পারে।
ভারতের সঙ্গে মামদানির সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করে দেশটির তথাকথিত উদারপন্থি বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থিরা বিরল ঐক্য গড়ে তুলেছে। তারা মামদানির বিজয়ে খুশি নয়। কিন্তু কেন তাদের এই ঐক্য? এর বড় কারণ হচ্ছে, মামদানি নিজেকে দৃঢ়ভাবে একজন মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেন। তাছাড়া তিনি হিন্দুত্ববাদ ও ইহুদিবাদকে সমানভাবে চ্যালেঞ্জ করেন। কারণ তিনি ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তার পরিচয় লালন করেন না।
অথচ ভারতের এই তথাকথিত উদারপন্থি বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থিরা যুক্তরাষ্ট্রে কমলা হ্যারিস এবং যুক্তরাজ্যে ঋষি সুনাকের নির্বাচনি সাফল্যকে উদ্যাপন করতে যথেষ্টই তৎপর ছিলেন। কারণ তারা ভিন্ন দুটি ঘরানার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কালচারে সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তারা মামদানির বিজয়কে মেনে নিতে নারাজ। কারণ মামদানি দেশটির বিরাজমান ব্যবস্থার মধ্যে নিজেকে সঁপে না দিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাই তিনি বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
মামদানির ব্যাপারে এটা কেবল ভারতের কট্টর ডানপন্থিদের পক্ষপাত নয়, বরং এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অভিজাতদের মধ্যেও গভীর ইসলামবিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ। এই শ্রেণির লোকেরা সামাজিক কাঠামো রক্ষা করার জন্য নিজেদের গর্বিত মনে করে। কিন্তু যখন মুসলিমদের বিজয় পুঁজিবাদী উদারনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না, তখন তারা সেটাকে এড়িয়ে যায়। মামদানির বেলায় সেটাই ঘটেছে। কারণ মামদানি তাদের জন্য অসুবিধাজনক। তিনি খুব বেশি রাজনৈতিক ও অনেক বেশি মুসলিম। তিনি এই গোষ্ঠীর খুব সমালোচনা করেন। কাজেই তার বিজয় উদ্যাপন করে তাকে উৎসাহ দেওয়া যাবে না।
বিশ্বে যখন অন্ধকার নেমে আসার অনুভূতি প্রবল হচ্ছে, সেই সময়ে মামদানির মনোনয়ন আলোকচ্ছটার একটি বিরল মুহূর্তকে সামনে নিয়ে আসে। আলোকচ্ছটাটি হচ্ছে—সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী ও ইহুদি বর্ণবাদীদের আয়নায় ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। আধিপত্যবাদী শক্তি এখনো আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তাকে অবশ্যই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। প্রতিরোধ ও ভাঙন ছাড়াই তার সাফল্য আসবে না। যারা ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য জাহরান মামদানির মনোনয়ন ও বিশাল বিজয় একটি আশার আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছে।
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে ভাষান্তর : মোতালেব জামালী

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের পরাজয় ডেমোক্রেটিক পার্টিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি কংগ্রেসের দুই কক্ষের নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে এক বছর পরে গত ৪ নভেম্বর দেশটির স্থানীয় পর্যায়ের তিনটি নির্বাচনি লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের বিজয় দলটির নেতাকর্মীদের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এই জয়ে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন তারা।
এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহর নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনটি। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি ছিল এই নির্বাচনের দিকে। একই সঙ্গে নজর ছিল আফ্রিকার খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী মাহমুদ মামদানি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার দম্পতির ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উদীয়মান মুসলিম যুবনেতা জোহরান মামদানির (৩৪) দিকেও। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী মামদানির বিজয় যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন মামদানি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সাড়াজাগানো ও তুমুল আলোচিত এই মেয়র নির্বাচনে মামদানিকে ইহুদিবাদ, পুঁজিবাদ, ধর্মীয় বর্ণবাদ ও আধিপত্যবাদের সীমাহীন প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে হয়েছে। কারণ এই শক্তিগুলো মামদানির বিজয় ঠেকাতে অর্থ, পেশিশক্তি ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এক মামদানির কাছেই এই শক্তিগুলোর করুণ পরাজয় হয়েছে। মামদানির এই বিজয় ছিল বৈশ্বিক পুঁজিবাদের প্রভাব, বর্ণবাদী আর্থিক উপকরণ, ইহুদিবাদী দায়মুক্তি ও ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে নীরবতার বিরুদ্ধে।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ও পুঁজিসমৃদ্ধ স্থানগুলোর একটি হলো নিউ ইয়র্ক। সেখানে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী মামদানির এই বিজয়কে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সমালোচনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তার এই বিজয়কে বিবেচনা করা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী উদারনীতির দুর্গের মধ্যে একটি বিদ্রোহ হিসেবে। তার প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল কঠোরতাবিরোধী রাজনীতি, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি এবং কয়েক দশক ধরে আমেরিকার জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে আসা করপোরেট যুক্তিগুলোকে ভেঙে ফেলা। ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্বায়ন’ হিসেবে যাকে ‘পুঁজিবাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ শক্তি’ অভিহিত করা হয়, তার ওপর এটি ছিল সরাসরি একটি আঘাত।
গাজায় অমানবিক অবরোধ বা বর্ণবাদী নীতি অনুসরণের জন্য বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের সমালোচনা করা বা রাজনৈতিকভাবে তিরস্কার যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়েছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশবাদের যেকোনো নৈতিক সমালোচনাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হতো এবং এসব সমালোচনাকে নানাভাবে নীরব করে দেওয়া হয়েছে। মামদানির ক্ষেত্রেও এই পরিচিত স্ক্রিপ্টটি ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তার গায়ে ‘হামাসপন্থি’, ‘ইহুদিবিরোধী’ এবং ‘চরমপন্থি’ লেবেল ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু এবার আর এটি কোনো কাজে আসেনি।
নিউ ইয়র্কের মানুষ, যারা বহু জাতিগত পরিচয় বহন করেন, যাদের অধিকাংশই তরুণ এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তারা চাপিয়ে দেওয়া এই ট্যাগ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরোনো বাগ্মিতার বা বাগাড়ম্বরের এই অস্ত্র এখন আর কোনো কাজে আসছে না। গাজায় ইসরাইল যে গণহত্যা চালিয়েছে এবং অবরোধের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, সেটাকে হলোকস্টের করুণ কাহিনির ওপর নির্মিত ইহুদিবাদী বয়ান দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না।
ইহুদিবাদীদের নৈতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের বর্তমান সময়ের ভয়াবহ আচরণের কারণে ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত—সমবেদনা পাওয়ার এই ঐতিহাসিক ঢাল এখন ভেঙে গেছে। তবে তা হলোকস্ট ভুলে যাওয়ার কারণে নয়, বরং তাদের উপনিবেশবাদী সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিতে হলোকস্টকে নৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণেই এটা ঘটছে।
নোয়াম চমস্কি, নরম্যান ফিনকেলস্টাইন এবং ইলান পাপ্পের মতো বিশিষ্ট ইহুদি পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবীরা ইহুদিবাদের এই নৈতিক বৈষম্য সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো এতে কান না দিয়ে বরং আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নগর-শহরের সড়কগুলো ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে প্রকম্পিত হলেও এসব দেশের সরকারের নীতিতে এখনো তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণ মানুষের অনুভূতি এবং ক্ষমতাশালী অভিজাতদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে রাস্তায় নামা জনগণের এই সহানুভূতির রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে বানোয়াট সম্মতি এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ভিন্নভাবে তুলে ধরে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। মামদানির মনোনয়ন এটাই ইঙ্গিত দেয়, ইহুদিবাদী মিডিয়া ও শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সত্ত্বেও জনগণ নির্বাচনি চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশের একটি উপায় বের করে নিতে পারে।
ভারতের সঙ্গে মামদানির সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করে দেশটির তথাকথিত উদারপন্থি বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থিরা বিরল ঐক্য গড়ে তুলেছে। তারা মামদানির বিজয়ে খুশি নয়। কিন্তু কেন তাদের এই ঐক্য? এর বড় কারণ হচ্ছে, মামদানি নিজেকে দৃঢ়ভাবে একজন মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেন। তাছাড়া তিনি হিন্দুত্ববাদ ও ইহুদিবাদকে সমানভাবে চ্যালেঞ্জ করেন। কারণ তিনি ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তার পরিচয় লালন করেন না।
অথচ ভারতের এই তথাকথিত উদারপন্থি বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থিরা যুক্তরাষ্ট্রে কমলা হ্যারিস এবং যুক্তরাজ্যে ঋষি সুনাকের নির্বাচনি সাফল্যকে উদ্যাপন করতে যথেষ্টই তৎপর ছিলেন। কারণ তারা ভিন্ন দুটি ঘরানার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কালচারে সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তারা মামদানির বিজয়কে মেনে নিতে নারাজ। কারণ মামদানি দেশটির বিরাজমান ব্যবস্থার মধ্যে নিজেকে সঁপে না দিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাই তিনি বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
মামদানির ব্যাপারে এটা কেবল ভারতের কট্টর ডানপন্থিদের পক্ষপাত নয়, বরং এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অভিজাতদের মধ্যেও গভীর ইসলামবিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ। এই শ্রেণির লোকেরা সামাজিক কাঠামো রক্ষা করার জন্য নিজেদের গর্বিত মনে করে। কিন্তু যখন মুসলিমদের বিজয় পুঁজিবাদী উদারনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না, তখন তারা সেটাকে এড়িয়ে যায়। মামদানির বেলায় সেটাই ঘটেছে। কারণ মামদানি তাদের জন্য অসুবিধাজনক। তিনি খুব বেশি রাজনৈতিক ও অনেক বেশি মুসলিম। তিনি এই গোষ্ঠীর খুব সমালোচনা করেন। কাজেই তার বিজয় উদ্যাপন করে তাকে উৎসাহ দেওয়া যাবে না।
বিশ্বে যখন অন্ধকার নেমে আসার অনুভূতি প্রবল হচ্ছে, সেই সময়ে মামদানির মনোনয়ন আলোকচ্ছটার একটি বিরল মুহূর্তকে সামনে নিয়ে আসে। আলোকচ্ছটাটি হচ্ছে—সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী ও ইহুদি বর্ণবাদীদের আয়নায় ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। আধিপত্যবাদী শক্তি এখনো আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তাকে অবশ্যই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। প্রতিরোধ ও ভাঙন ছাড়াই তার সাফল্য আসবে না। যারা ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য জাহরান মামদানির মনোনয়ন ও বিশাল বিজয় একটি আশার আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছে।
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে ভাষান্তর : মোতালেব জামালী

আজকের গুলশান, বনানীর বাসিন্দাদের মধ্যে খুব কম লোকই জানেন এই প্লটগুলোর আদি মালিকের অনেককেই জোর করে প্লটগুলো গছিয়ে দিয়েছিলেন গুলাম আহমেদ মাদানি। প্রাক্তন এই আইসিএস অফিসার ছিলেন ১৯৬০-এর দশকে ডিআইটির (ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) প্রথম চেয়ারম্যান, যিনি শুধু মাদানি নামেই বহুল পরিচিত।
৪ ঘণ্টা আগে
আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ, তৎকালীন পাকিস্তান কিংবা এই উপমহাদেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের এক অবিসংবাদিত অগ্নিপুরুষ ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার জীবনটাই ছিল একটা সামগ্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা।
৪ ঘণ্টা আগে
সেটি আদালতের বিচার্য বিষয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল মামলাটির যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করেছে, প্রমাণাদি দেখেছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিদের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কও শুনে
৪ ঘণ্টা আগে
সৃষ্টির শুরু থেকেই জীবজগতে ছোট-বড় প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের অলিখিত লড়াই চলছে। বিরামহীন এই লড়াইয়ে সবল প্রাণীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের হারিয়ে ক্রমে এই গ্রহে নিজেদের দখল নিশ্চিত করেছে।
১ দিন আগে