জাকারিয়া পলাশ
নাফ নদীর ওপারে বাংলাদেশের নতুন প্রতিবেশীর আত্মপ্রকাশ প্রায় নিশ্চিত। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের ডি-ফ্যাক্টো নিয়ন্ত্রক এখন আরাকান আর্মি। বিষয়টি একেবারে হঠাৎ ঘটেনি। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের পূর্বকোণে শক্তিসঞ্চার করছিল তারা। কূটনীতির ভাষায় যাকে বলে ‘ডেভেলপমেন্ট’ বা অগ্রগতি। সীমান্ত ঘেঁষে এমন অগ্রগতিতেও বাংলাদেশ নীরবতাকেই সঠিক মনে করে আসছিল।
জাতিগত সংঘাতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিয়ানমার। নানা জাতির সহাবস্থান সৃষ্টি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে ব্যর্থ দেশটি। একটি জাতিকে ‘আপন’ আর অন্যকে ‘পর’ করার নীতি কঠোর বাস্তবায়ন করেছিল মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার।
তারই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী (যারা টাটমাদো নামে পরিচিত) সরাসরি জাতিগত নিধনে নিয়োজিত হয়। কয়েক ধাপে আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জাতিগত নিধনের শিকার হয়। ২০১৬-১৭ সময়কালে সর্বাধিক প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারের কুতুপালং ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়। অবশ্য আরাকানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায় তখন অনেকটা আনুকূল্যই পেয়ে আসছিল টাটমাদোর।
রোহিঙ্গারা দেশছাড়া হলেও বৌদ্ধ ধর্মানুসারী রাখাইন গোষ্ঠী টাটমাদো বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সীমিত পরিসরে সংগ্রাম করছিল। ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল আরাকান আর্মি নামে একটি সশস্ত্র বাহিনীও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তবে এই গোষ্ঠীর তৎপরতা ২০১৮-১৯ নাগাদ প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু চলতি বছরে তারা হঠাৎই মানচিত্র বদলে দেওয়ার মতো দুর্জয় রূপ নিয়েছে।
বলে রাখা ভালো, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ও বার্মা অ্যাক্ট; আর বিপরীত দিকে চায়নার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে ঘিরে আরাকান অঞ্চল ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের নিরাপত্তা ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলের বিনিয়োগ নিরাপদ করার স্বার্থে সক্রিয় রয়েছে ইন্ডিয়াও। এই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আরাকান রাজ্যকে ঘিরে আরাকান আর্মিসহ বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার ছিল এক দশক ধরে।
মিয়ানমারের মূল সেনাবাহিনীতে (টাটমাদো) আগে থেকেই আরাকানের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বিপুল প্রতিনিধিত্ব ছিল। ফলে আরাকান আর্মি গঠিত হওয়ার পর তাতে টাটমাদো থেকে অবসর পাওয়া ও পালিয়ে আসা অনেক প্রশিক্ষিত সদস্যের সংযোগ ঘটেছিল বলে নানা বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত আরাকানিদের বিপুল অর্থসহায়তাও পেয়ে আসছে তারা। ফলে তারা দ্রুতই বিপুল শক্তিসঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত টটমাদো বাহিনী নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে আরাকান আর্মি সশস্ত্র প্রতিরোধে দ্রুত অগ্রসর হতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, গত সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে বান্দরবান পর্যন্ত যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত মিয়ানমারের সঙ্গে ছিল, তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এমনকি আরাকানের প্রধান জেলাগুলোর প্রায় সবগুলোই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সামনে শুধু আকিয়াব (আরাকানের রাজধানী) বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বাকি।
অবশ্য এখনও সব আন্তর্জাতিক বিচারে আরাকান আর্মি ও তার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ভূখণ্ড একটি অরাষ্ট্রীয় শক্তি। রাষ্ট্র হিসেবে এখনও তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। মিয়ানমারের টাটমাদো বাহিনীও আত্মসমর্পণ করেনি। ফলে ভবিষ্যৎ বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের করণীয় ঠিক করার সময় এখনই।
পূর্বদিগন্তের সীমানা ঘেঁষে সৃষ্টি হওয়া এ অবস্থা বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, সম্ভাব্য নতুন শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের আলোচনায় এ সপ্তাহের শুরুতেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে হলেও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অবশ্য আরও আগে থেকেই ‘অরাষ্ট্রীয়’ নানা পক্ষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার এক বক্তৃতায় আরাকান আর্মিকে ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠী’ বলেই উল্লেখ করেছেন। অবশ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর সীমান্ত পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট করেছেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সে দেশের সরকার ও আরাকান আর্মিÑ উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বাংলাদেশ।’
প্রসঙ্গটি এখানে আরেকটু স্পষ্ট বিশ্লেষণ প্রয়োজন। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই বলে আসছে, আরাকানে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারকে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো নিজেরাই উৎখাত হয়েছে। সেখানকার ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ কার্যত এখন আরাকার আর্মির।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশের পক্ষে আরাকান আর্মির যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ ছিল না; যেহেতু তাদের রাজনৈতিক স্ট্যাটাস ‘অরাষ্ট্রীয়’Ñ রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি এখনো হয়নি। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ছাত্ররা অবগত আছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ মিয়ানমারের ‘রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার’ বিরোধী এবং যা, ‘অহস্থক্ষেপনীতি’ লঙ্ঘন হওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে। ফলে অন্য কোনো দেশেরই নীতিগতভাবে এমনটি করা ‘উচিত নয়’।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ভূরাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলোর যেকোনো কিছু করা বা না করার মূল অনুপ্রেরণা হলো ‘জাতীয় স্বার্থ’। কাজেই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই এ ইস্যুতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আগে চিহ্নিত করতে হবে নাফ নদীর ওপারে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ আসলে কী। দৃশ্যত, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন করে, সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিরাপদ পূর্বাঞ্চল নিশ্চিত করা বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। আরাকানে শান্তি বিনষ্ট হলে, কিংবা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি দেশহীন জাতিতে অবদমিত করা হলে, তা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে বিপন্ন করে ফেলতে পারে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ হচ্ছে আরাকানের সম্ভাব্য নতুন মানচিত্রের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী। ফলে নিকটতা বিবেচনায় দেশের নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি অত্যন্ত অপরিহার্য। এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা আরাকান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়।
অধিকন্তু, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল হওয়ায় আরাকান এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উভয় অর্থে একই রকম ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ধারণ করে। সে জন্যই আরাকান আর্মির সঙ্গে একটি সক্রিয় যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক নানা চ্যানেলে যোগাযোগ খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তা ছাড়া কূটনীতিতে নন-ট্র্যাক বা মাল্টি ট্র্যাক ডিপ্লোমেসির ব্যবহার করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দিকে বাংলাদেশের তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
মনে রাখার বিষয়, ইন্ডিয়া ও চায়না বরাবরই মিয়ানমারের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললেও, ইতোমধ্যে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে বলে খবর আসছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী সত্ত্বেও যদি বিলম্ব করে, তাহলে অনেক কৌশলগত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
তা ছাড়া প্রতিবেশীকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করে শত্রু বাড়ানো ভূরাজনীতির জন্য ভালো কৌশল নয়। এমন কৌশল যারা নিয়েছে, তারা বন্ধুহীন হয়েছে, এ উদাহরণ আমাদের পাশেই বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক মোড়লের সহযোগী হিসেবে সংযোগ না করে, নিকটতম অংশীজন হিসেবে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার বিষয় ভাবা প্রয়োজন।
পরে বাস্তবতায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি হলো, আরাকান আর্মি কিংবা আন্তর্জাতিক যেকোনো পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের বয়ান কী হওয়া প্রয়োজন। সে জন্য আগে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, বর্তমানে বাংলাদেশের বয়ান কী?
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রধান দায়ী স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিবেচনা করেছে। এত দিন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকার এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ দুয়ের বাইরে তৃতীয় কোনো গোষ্ঠীকে পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু আরাকান আর্মি দৃশ্যত আরাকান ভূখণ্ডের মুখ্য দাবিদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বলা বাহুল্য, টাটমাদো বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির এই সশস্ত্র তৎপরতায় রোহিঙ্গাদের অবস্থান এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।
নানা সূত্রে জানা গেল, জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরসা, আরএসওসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন নতুন আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য নিজ ভূমিতে ফেরার প্রশ্নকে আরও জটিল করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, আরাকান আর্মিকে এই প্রশ্নে রাজি করানো যে, আরাকানের গ্রামগুলোয় বৌদ্ধ রাখাইনদের পাশাপাশি মুসলিম রোহিঙ্গাদেরও হিস্যা আছে।
সম্ভাব্য নতুন মানচিত্র যেন রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবিক মর্যাদায় আশ্রয়যোগ্য হতে পারে; তা যেন সত্যিই একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের পাশে বিরাজ করতে পারে, সে আলোচনার দিকে যেতে হবে। নতুন এই ভূখণ্ড যদি দেশ হয়ে ওঠে; যদি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়, তাদের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাই নির্দেশ করবে, তারা বাংলাদেশের জন্য কেমন প্রতিবেশী হবে। মিয়ানমারের মতো সেনাশাসিত কিংবা ইন্ডিয়ার মতো সম্প্রসারণবাদী প্রতিবেশীর চেয়ে গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থি প্রতিবেশী নিশ্চয়ই বহুগুণে কাম্য হবে বাংলাদেশের।
এ ক্ষেত্রে আরাকান ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের হিস্যা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ তাদের চিহ্নিত করেছে ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের মানুষ বা এফডিএমএন’ পরিচয়ে। এই পরিচয় মিয়ানমারের মানচিত্রে রোহিঙ্গাদের হিস্যার দাবি বহন করে বটে। তবে তাদের আরাকানি পরিচয় স্পষ্ট হয় না।
ফলে আরাকানে কোনো দেশ গড়ে উঠলে তারা যেন রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় তাদের অবস্থা হতে পারে ‘বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের মতো’ আজীবন রাষ্ট্র-পরিচয়হীন। এ জন্য রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকেও দ্রুত ইতিবাচকভাবে সমঝোতা ও সহাবস্থানের জন্য প্রস্তুত করারও শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি বিরাজ কর্মযজ্ঞ।
লেখক: গবেষক ও ভূরাজনীতি বিশ্লেষক
zpolashju@gmail.com
নাফ নদীর ওপারে বাংলাদেশের নতুন প্রতিবেশীর আত্মপ্রকাশ প্রায় নিশ্চিত। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের ডি-ফ্যাক্টো নিয়ন্ত্রক এখন আরাকান আর্মি। বিষয়টি একেবারে হঠাৎ ঘটেনি। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের পূর্বকোণে শক্তিসঞ্চার করছিল তারা। কূটনীতির ভাষায় যাকে বলে ‘ডেভেলপমেন্ট’ বা অগ্রগতি। সীমান্ত ঘেঁষে এমন অগ্রগতিতেও বাংলাদেশ নীরবতাকেই সঠিক মনে করে আসছিল।
জাতিগত সংঘাতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিয়ানমার। নানা জাতির সহাবস্থান সৃষ্টি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে ব্যর্থ দেশটি। একটি জাতিকে ‘আপন’ আর অন্যকে ‘পর’ করার নীতি কঠোর বাস্তবায়ন করেছিল মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার।
তারই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী (যারা টাটমাদো নামে পরিচিত) সরাসরি জাতিগত নিধনে নিয়োজিত হয়। কয়েক ধাপে আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জাতিগত নিধনের শিকার হয়। ২০১৬-১৭ সময়কালে সর্বাধিক প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারের কুতুপালং ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়। অবশ্য আরাকানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায় তখন অনেকটা আনুকূল্যই পেয়ে আসছিল টাটমাদোর।
রোহিঙ্গারা দেশছাড়া হলেও বৌদ্ধ ধর্মানুসারী রাখাইন গোষ্ঠী টাটমাদো বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সীমিত পরিসরে সংগ্রাম করছিল। ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল আরাকান আর্মি নামে একটি সশস্ত্র বাহিনীও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তবে এই গোষ্ঠীর তৎপরতা ২০১৮-১৯ নাগাদ প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু চলতি বছরে তারা হঠাৎই মানচিত্র বদলে দেওয়ার মতো দুর্জয় রূপ নিয়েছে।
বলে রাখা ভালো, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ও বার্মা অ্যাক্ট; আর বিপরীত দিকে চায়নার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে ঘিরে আরাকান অঞ্চল ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের নিরাপত্তা ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলের বিনিয়োগ নিরাপদ করার স্বার্থে সক্রিয় রয়েছে ইন্ডিয়াও। এই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আরাকান রাজ্যকে ঘিরে আরাকান আর্মিসহ বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার ছিল এক দশক ধরে।
মিয়ানমারের মূল সেনাবাহিনীতে (টাটমাদো) আগে থেকেই আরাকানের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বিপুল প্রতিনিধিত্ব ছিল। ফলে আরাকান আর্মি গঠিত হওয়ার পর তাতে টাটমাদো থেকে অবসর পাওয়া ও পালিয়ে আসা অনেক প্রশিক্ষিত সদস্যের সংযোগ ঘটেছিল বলে নানা বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত আরাকানিদের বিপুল অর্থসহায়তাও পেয়ে আসছে তারা। ফলে তারা দ্রুতই বিপুল শক্তিসঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত টটমাদো বাহিনী নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে আরাকান আর্মি সশস্ত্র প্রতিরোধে দ্রুত অগ্রসর হতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, গত সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে বান্দরবান পর্যন্ত যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত মিয়ানমারের সঙ্গে ছিল, তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এমনকি আরাকানের প্রধান জেলাগুলোর প্রায় সবগুলোই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সামনে শুধু আকিয়াব (আরাকানের রাজধানী) বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বাকি।
অবশ্য এখনও সব আন্তর্জাতিক বিচারে আরাকান আর্মি ও তার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ভূখণ্ড একটি অরাষ্ট্রীয় শক্তি। রাষ্ট্র হিসেবে এখনও তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। মিয়ানমারের টাটমাদো বাহিনীও আত্মসমর্পণ করেনি। ফলে ভবিষ্যৎ বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের করণীয় ঠিক করার সময় এখনই।
পূর্বদিগন্তের সীমানা ঘেঁষে সৃষ্টি হওয়া এ অবস্থা বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, সম্ভাব্য নতুন শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের আলোচনায় এ সপ্তাহের শুরুতেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে হলেও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অবশ্য আরও আগে থেকেই ‘অরাষ্ট্রীয়’ নানা পক্ষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার এক বক্তৃতায় আরাকান আর্মিকে ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠী’ বলেই উল্লেখ করেছেন। অবশ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর সীমান্ত পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট করেছেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সে দেশের সরকার ও আরাকান আর্মিÑ উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বাংলাদেশ।’
প্রসঙ্গটি এখানে আরেকটু স্পষ্ট বিশ্লেষণ প্রয়োজন। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই বলে আসছে, আরাকানে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারকে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো নিজেরাই উৎখাত হয়েছে। সেখানকার ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ কার্যত এখন আরাকার আর্মির।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশের পক্ষে আরাকান আর্মির যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ ছিল না; যেহেতু তাদের রাজনৈতিক স্ট্যাটাস ‘অরাষ্ট্রীয়’Ñ রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি এখনো হয়নি। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ছাত্ররা অবগত আছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ মিয়ানমারের ‘রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার’ বিরোধী এবং যা, ‘অহস্থক্ষেপনীতি’ লঙ্ঘন হওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে। ফলে অন্য কোনো দেশেরই নীতিগতভাবে এমনটি করা ‘উচিত নয়’।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ভূরাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলোর যেকোনো কিছু করা বা না করার মূল অনুপ্রেরণা হলো ‘জাতীয় স্বার্থ’। কাজেই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই এ ইস্যুতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আগে চিহ্নিত করতে হবে নাফ নদীর ওপারে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ আসলে কী। দৃশ্যত, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন করে, সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিরাপদ পূর্বাঞ্চল নিশ্চিত করা বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। আরাকানে শান্তি বিনষ্ট হলে, কিংবা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি দেশহীন জাতিতে অবদমিত করা হলে, তা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে বিপন্ন করে ফেলতে পারে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ হচ্ছে আরাকানের সম্ভাব্য নতুন মানচিত্রের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী। ফলে নিকটতা বিবেচনায় দেশের নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি অত্যন্ত অপরিহার্য। এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা আরাকান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়।
অধিকন্তু, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল হওয়ায় আরাকান এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উভয় অর্থে একই রকম ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ধারণ করে। সে জন্যই আরাকান আর্মির সঙ্গে একটি সক্রিয় যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক নানা চ্যানেলে যোগাযোগ খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তা ছাড়া কূটনীতিতে নন-ট্র্যাক বা মাল্টি ট্র্যাক ডিপ্লোমেসির ব্যবহার করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দিকে বাংলাদেশের তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
মনে রাখার বিষয়, ইন্ডিয়া ও চায়না বরাবরই মিয়ানমারের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললেও, ইতোমধ্যে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে বলে খবর আসছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী সত্ত্বেও যদি বিলম্ব করে, তাহলে অনেক কৌশলগত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
তা ছাড়া প্রতিবেশীকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করে শত্রু বাড়ানো ভূরাজনীতির জন্য ভালো কৌশল নয়। এমন কৌশল যারা নিয়েছে, তারা বন্ধুহীন হয়েছে, এ উদাহরণ আমাদের পাশেই বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক মোড়লের সহযোগী হিসেবে সংযোগ না করে, নিকটতম অংশীজন হিসেবে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার বিষয় ভাবা প্রয়োজন।
পরে বাস্তবতায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি হলো, আরাকান আর্মি কিংবা আন্তর্জাতিক যেকোনো পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের বয়ান কী হওয়া প্রয়োজন। সে জন্য আগে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, বর্তমানে বাংলাদেশের বয়ান কী?
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রধান দায়ী স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিবেচনা করেছে। এত দিন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকার এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ দুয়ের বাইরে তৃতীয় কোনো গোষ্ঠীকে পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু আরাকান আর্মি দৃশ্যত আরাকান ভূখণ্ডের মুখ্য দাবিদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বলা বাহুল্য, টাটমাদো বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির এই সশস্ত্র তৎপরতায় রোহিঙ্গাদের অবস্থান এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।
নানা সূত্রে জানা গেল, জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরসা, আরএসওসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন নতুন আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য নিজ ভূমিতে ফেরার প্রশ্নকে আরও জটিল করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, আরাকান আর্মিকে এই প্রশ্নে রাজি করানো যে, আরাকানের গ্রামগুলোয় বৌদ্ধ রাখাইনদের পাশাপাশি মুসলিম রোহিঙ্গাদেরও হিস্যা আছে।
সম্ভাব্য নতুন মানচিত্র যেন রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবিক মর্যাদায় আশ্রয়যোগ্য হতে পারে; তা যেন সত্যিই একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের পাশে বিরাজ করতে পারে, সে আলোচনার দিকে যেতে হবে। নতুন এই ভূখণ্ড যদি দেশ হয়ে ওঠে; যদি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়, তাদের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাই নির্দেশ করবে, তারা বাংলাদেশের জন্য কেমন প্রতিবেশী হবে। মিয়ানমারের মতো সেনাশাসিত কিংবা ইন্ডিয়ার মতো সম্প্রসারণবাদী প্রতিবেশীর চেয়ে গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থি প্রতিবেশী নিশ্চয়ই বহুগুণে কাম্য হবে বাংলাদেশের।
এ ক্ষেত্রে আরাকান ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের হিস্যা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ তাদের চিহ্নিত করেছে ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের মানুষ বা এফডিএমএন’ পরিচয়ে। এই পরিচয় মিয়ানমারের মানচিত্রে রোহিঙ্গাদের হিস্যার দাবি বহন করে বটে। তবে তাদের আরাকানি পরিচয় স্পষ্ট হয় না।
ফলে আরাকানে কোনো দেশ গড়ে উঠলে তারা যেন রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় তাদের অবস্থা হতে পারে ‘বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের মতো’ আজীবন রাষ্ট্র-পরিচয়হীন। এ জন্য রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকেও দ্রুত ইতিবাচকভাবে সমঝোতা ও সহাবস্থানের জন্য প্রস্তুত করারও শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি বিরাজ কর্মযজ্ঞ।
লেখক: গবেষক ও ভূরাজনীতি বিশ্লেষক
zpolashju@gmail.com
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে