
জালাল উদ্দিন ওমর

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যায় এবং এখন ভারতেই অবস্থান করছে। ফলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রভাবের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়। বাংলাদেশে রচিত হয় অবিশ্বাস্য এক ইতিহাস। পরে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তারা এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কাজ করছেন। এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রয়োজন। রাজনৈতিক ঐক্য আজ অপরিহার্য ও অনিবার্য।
ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আন্দোলন দমাতে সরকারি এবং আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এবং বিশ হাজার মানুষ আহত হয়। অঙ্গ হারিয়ে অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। আন্দোলনে অনেক অল্পবয়সি তরুণ-তরুণী জীবন দিয়েছে। আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হওয়ায় তা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং দমাতে ব্যর্থ হয়। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় এবং সরকারের পতন হয়। অতীতের আন্দোলনগুলো আওয়ামী লীগ সরকার হামলা-মামলা চালিয়ে দমন করতে সক্ষম হলেও এবার পারেনি। কারণ এবারের আন্দোলন সুদৃঢ় এবং আন্দোলনকারীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল। কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন, তেমনি বিপ্লবকে অর্জনের চেয়ে অর্জিত বিপ্লবকে রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। পরাজিত শক্তি কখনো বসে থাকে না। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়, ষড়যন্ত্র করে এবং বিপ্লবকে ব্যর্থ করে ক্ষমতায় ফিরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। প্রতিবিপ্লব ঘটাতে তারা সব সময় সক্রিয় থাকে। বিপ্লববিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তি এতে সমর্থন এবং সহযোগিতা করে। বিপ্লবীদের অনৈক্যের কারণে বিভিন্ন দেশে বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। মিসর, তিউনিসিয়া তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বিপ্লবীদের তাই আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ, তৎপর এবং সচেতন থাকতে হয়। তা না হলে প্রতিবিপ্লবে বিপ্লব ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিপ্লবীদের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। বিপ্লবের স্বপ্ন তখন অনন্তকালের জন্য হারিয়ে যায় ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঐতিহাসিক অর্জন, যা কয়েক শতাব্দীতেই একবার ঘটে। গণঅভ্যুত্থান সহজে অর্জনের বিষয় নয়। হাজারো জীবনের বিনিময়ে ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে অর্জিত বিপ্লবকে রক্ষা এবং শক্তিশালী করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। না হয় সর্বনাশ হয়ে যাবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, জাতীয় পার্টি (পার্থ, জাফর), হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এলডিপি, এবি পার্টি, এনডিএম, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জাগপা, মুসলিম লীগ, গণফোরাম, জাতীয় নাগরিক কমিটি, আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই ঐক্যসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্রশক্তি, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সব ছাত্র সংগঠনকে এক থাকতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, লেখক, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, আলেম সমাজ, অভিনয় এবং সংগীতশিল্পীসহ সব পেশাজীবীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সমর্থনকারী সবাইকে এক হতে হবে এবং এক থাকতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই আন্দোলন সফল এবং স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপিকেই এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয় বড় দল হিসেবে জামায়াতেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রাজনীতিবিদরা এক হলে জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং বিভক্ত হলে বিভক্তি হয়। রাজনীতিবিদরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠে। তাই রাজনৈতিক ঐক্য গড়তেই হবে। আশা করি, সবাই একতার গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচি এক নয়। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র-মানবাধিকার-আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রগতি ইস্যু সবার কাছেই সমান। জুলাই সনদ, গণভোট, নির্বাচন এবং সরকার গঠনসহ সব জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতিবিদদের এক হতে হবে। মতপার্থক্যগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে । যার রাজনীতি সে করবে, কিন্তু মৌলিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ঐক্যে প্রতিষ্ঠায় কিছু মৌলিক কাজ করতে হবে। সবাইকে সবার প্রতি সম্মান জানাতে হবে এবং ঐক্য বিনষ্টে কোনো কাজ করা যাবে না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বক্তব্য এবং কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের লোকজন নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে, যা দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সমন্বয় হিসেবে কাজ করবে। কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলÑসবখানেই এই কমিটি থাকবে এবং ঐক্য বজায়ে কাজ করবে। ঐক্যেই শক্তি, ঐক্যেই শান্তি। বিভেদে কখনো মিলে না মুক্তি। ঐক্যে অর্জন ও অনৈক্য ধ্বংস। ইউরোপের ২৭টি দেশ এক হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করেছে। তারা বিভক্ত হয়নি, ফলে উন্নত হয়েছে এবং তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থেকেছে। তারাই পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো এক না হয়ে বিভক্ত হয়েছে। ফলে তারা দুর্বল হয়েছে, পিছিয়ে পড়েছে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। ঐক্য করতে ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়। প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে, যা কেউ ভাঙতে পারবে না। সংকটে সবাইকে এক থাকতে হবে এবং একতাবদ্ধ হয়েই সংকটের সমাধান করতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না। রাজনৈতিক শক্তি বিভক্ত হলে, বিভক্তির ফাঁক দিয়ে শত্রুপক্ষ ঢুকে পড়বে। তারা বিপ্লব এবং দেশপ্রেমিক শক্তিকে ধ্বংস করবে।
দেশটা সবার, দেশের স্বার্থ সবকিছুর ওপরে। ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে একতা, সাম্য এবং সমতা বজায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। যার ধর্ম সে পালন করবে, কিন্তু সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করবে। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু বলতে কিছুই নেই। ধর্ম যার যার, দেশটা সবার। সবাইকে বাংলাদেশি পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না এবং সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে মিলে-মিশে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পরাজিত শক্তি এবং তাদের দেশি-বিদেশি সহযোগীরা কিন্তু বসে নেই। তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে বিপ্লব ধ্বংস করতে প্রস্তুত। দেশপ্রেমিক শক্তির সুদৃঢ় ঐক্যই শুধু পরাজিত শক্তির সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারে। ঐক্যই শুধু বিপ্লব এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবে। আসুন দেশের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং ঐক্যবদ্ধ থাকি। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ এবং আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে রাজনৈতিক ঐক্য অনিবার্য ও অপরিহার্য।
লেখক : প্রকৌশলী ও রাষ্ট্রচিন্তক
ই-মেইল : omar_ctg123@yahoo.com.

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যায় এবং এখন ভারতেই অবস্থান করছে। ফলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রভাবের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়। বাংলাদেশে রচিত হয় অবিশ্বাস্য এক ইতিহাস। পরে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তারা এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কাজ করছেন। এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রয়োজন। রাজনৈতিক ঐক্য আজ অপরিহার্য ও অনিবার্য।
ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আন্দোলন দমাতে সরকারি এবং আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এবং বিশ হাজার মানুষ আহত হয়। অঙ্গ হারিয়ে অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। আন্দোলনে অনেক অল্পবয়সি তরুণ-তরুণী জীবন দিয়েছে। আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হওয়ায় তা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং দমাতে ব্যর্থ হয়। ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় এবং সরকারের পতন হয়। অতীতের আন্দোলনগুলো আওয়ামী লীগ সরকার হামলা-মামলা চালিয়ে দমন করতে সক্ষম হলেও এবার পারেনি। কারণ এবারের আন্দোলন সুদৃঢ় এবং আন্দোলনকারীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল। কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন, তেমনি বিপ্লবকে অর্জনের চেয়ে অর্জিত বিপ্লবকে রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। পরাজিত শক্তি কখনো বসে থাকে না। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়, ষড়যন্ত্র করে এবং বিপ্লবকে ব্যর্থ করে ক্ষমতায় ফিরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। প্রতিবিপ্লব ঘটাতে তারা সব সময় সক্রিয় থাকে। বিপ্লববিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তি এতে সমর্থন এবং সহযোগিতা করে। বিপ্লবীদের অনৈক্যের কারণে বিভিন্ন দেশে বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। মিসর, তিউনিসিয়া তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বিপ্লবীদের তাই আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ, তৎপর এবং সচেতন থাকতে হয়। তা না হলে প্রতিবিপ্লবে বিপ্লব ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিপ্লবীদের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। বিপ্লবের স্বপ্ন তখন অনন্তকালের জন্য হারিয়ে যায় ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঐতিহাসিক অর্জন, যা কয়েক শতাব্দীতেই একবার ঘটে। গণঅভ্যুত্থান সহজে অর্জনের বিষয় নয়। হাজারো জীবনের বিনিময়ে ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে অর্জিত বিপ্লবকে রক্ষা এবং শক্তিশালী করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। না হয় সর্বনাশ হয়ে যাবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, জাতীয় পার্টি (পার্থ, জাফর), হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এলডিপি, এবি পার্টি, এনডিএম, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জাগপা, মুসলিম লীগ, গণফোরাম, জাতীয় নাগরিক কমিটি, আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই ঐক্যসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্রশক্তি, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সব ছাত্র সংগঠনকে এক থাকতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, লেখক, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, আলেম সমাজ, অভিনয় এবং সংগীতশিল্পীসহ সব পেশাজীবীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সমর্থনকারী সবাইকে এক হতে হবে এবং এক থাকতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই আন্দোলন সফল এবং স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপিকেই এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয় বড় দল হিসেবে জামায়াতেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রাজনীতিবিদরা এক হলে জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং বিভক্ত হলে বিভক্তি হয়। রাজনীতিবিদরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে ওঠে। তাই রাজনৈতিক ঐক্য গড়তেই হবে। আশা করি, সবাই একতার গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচি এক নয়। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র-মানবাধিকার-আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রগতি ইস্যু সবার কাছেই সমান। জুলাই সনদ, গণভোট, নির্বাচন এবং সরকার গঠনসহ সব জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতিবিদদের এক হতে হবে। মতপার্থক্যগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে । যার রাজনীতি সে করবে, কিন্তু মৌলিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ঐক্যে প্রতিষ্ঠায় কিছু মৌলিক কাজ করতে হবে। সবাইকে সবার প্রতি সম্মান জানাতে হবে এবং ঐক্য বিনষ্টে কোনো কাজ করা যাবে না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বক্তব্য এবং কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের লোকজন নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে, যা দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সমন্বয় হিসেবে কাজ করবে। কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলÑসবখানেই এই কমিটি থাকবে এবং ঐক্য বজায়ে কাজ করবে। ঐক্যেই শক্তি, ঐক্যেই শান্তি। বিভেদে কখনো মিলে না মুক্তি। ঐক্যে অর্জন ও অনৈক্য ধ্বংস। ইউরোপের ২৭টি দেশ এক হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করেছে। তারা বিভক্ত হয়নি, ফলে উন্নত হয়েছে এবং তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থেকেছে। তারাই পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো এক না হয়ে বিভক্ত হয়েছে। ফলে তারা দুর্বল হয়েছে, পিছিয়ে পড়েছে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। ঐক্য করতে ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়। প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে, যা কেউ ভাঙতে পারবে না। সংকটে সবাইকে এক থাকতে হবে এবং একতাবদ্ধ হয়েই সংকটের সমাধান করতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না। রাজনৈতিক শক্তি বিভক্ত হলে, বিভক্তির ফাঁক দিয়ে শত্রুপক্ষ ঢুকে পড়বে। তারা বিপ্লব এবং দেশপ্রেমিক শক্তিকে ধ্বংস করবে।
দেশটা সবার, দেশের স্বার্থ সবকিছুর ওপরে। ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে একতা, সাম্য এবং সমতা বজায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। যার ধর্ম সে পালন করবে, কিন্তু সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করবে। সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু বলতে কিছুই নেই। ধর্ম যার যার, দেশটা সবার। সবাইকে বাংলাদেশি পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না এবং সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে মিলে-মিশে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পরাজিত শক্তি এবং তাদের দেশি-বিদেশি সহযোগীরা কিন্তু বসে নেই। তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে বিপ্লব ধ্বংস করতে প্রস্তুত। দেশপ্রেমিক শক্তির সুদৃঢ় ঐক্যই শুধু পরাজিত শক্তির সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারে। ঐক্যই শুধু বিপ্লব এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবে। আসুন দেশের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং ঐক্যবদ্ধ থাকি। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ এবং আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে রাজনৈতিক ঐক্য অনিবার্য ও অপরিহার্য।
লেখক : প্রকৌশলী ও রাষ্ট্রচিন্তক
ই-মেইল : omar_ctg123@yahoo.com.

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ইতিহাসের নজিরবিহীন এই ঘটনায় দলীয় নেতাসহ তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এদিকে দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় হবে সহসাই। তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডজন ডজন মামলা বিচারাধীন।
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে, অতি অল্পসংখ্যক অভিজাত গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এই দেশটিকে শাসন করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আচরণে স্বৈরাচারী। সংস্কারের বুলি তোলে, কিন্তু সংস্কার করে শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।
২ ঘণ্টা আগে
বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ভার্জিয়া উল্ফ ‘Shakespeare’s Sister’ প্রবন্ধে একটি কাল্পনিক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, কীভাবে নারীর সৃজনশীলতা অবদমিত হয়, কীভাবে সাহিত্যচর্চা থেকে তারা বঞ্চিত হয় এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান কীভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
২ ঘণ্টা আগে
সমাধান একটাই, রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার বদলাতে হবে। তাই বিদেশি সহায়তার অপেক্ষা না করে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদী ঘিরে পানির অভাব ও ভাঙনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে, পাশাপাশি নদীর অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক গুরুত্ব পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা
১ দিন আগে