
সরদার ফরিদ আহমদ

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে, অতি অল্পসংখ্যক অভিজাত গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এই দেশটিকে শাসন করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আচরণে স্বৈরাচারী। সংস্কারের বুলি তোলে, কিন্তু সংস্কার করে শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। সংস্কারে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বাধা দেয়। ইতিহাসের প্রতিটি মোড়ে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের জাগরণে এই শ্রেণি কিছুদিনের জন্য উৎখাত হয়, তারপর আবার নানা কৌশলে ফিরে আসে ক্ষমতার মঞ্চে। বাংলাদেশের মানুষ বারবার এটি দেখেছে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল এই প্রথাগত চক্র ভাঙার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। এটি শুধু দুর্নীতি বা স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন ছিল না, বরং সাধারণ মানুষ ঘোষণা করেছিল, আর নয় নীরবতা। রাজপথে নেমেছিল ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক এমন সব মুখ, যারা বহুদিন ধরে প্রান্তিক হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস বলে, বিপ্লবের পরই শুরু হয় আসল পরীক্ষা। যখন পুরোনো শক্তিগুলো নতুন পোশাক পরে ফিরে আসেÑসংস্কারক, বিশেষজ্ঞ বা মধ্যস্থতাকারী সেজে। আজ আমরা ঠিক সেই দৃশ্যই দেখছি।
সমাজবিজ্ঞানী সি. রাইট মিলস তার বই The Power Elite-এ বলছেন, ‘সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা প্রায়ই ক্ষমতার আসনে একে অন্যের স্থান বদল করে, ফলে পরিবর্তনের ছদ্মবেশে ক্ষমতা থাকে একই গোষ্ঠীর হাতে। ‘বাংলাদেশের রাজনীতিও আজ তারই প্রতিধ্বনি দেখছি। বেসামরিক সরকার হোক বা তথাকথিত নিরপেক্ষ প্রশাসন ক্ষমতার লাগাম বারবার গিয়েছে সেই একই গোষ্ঠীর হাতে, যাদের আছে অর্থ, যোগাযোগ আর প্রভাবের জোর।
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ রবার্ট মিশেলস এই বাস্তবতাকে বলেছিলেন আইরন ল অব অলিগার্কি (Iron Law of Oligarchy) অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোও শেষ পর্যন্ত গুটিকয়েক মানুষের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে ফেলে। বাংলাদেশের বেলায় এটি আরো নির্মম, কারণ আমাদের অভিজাতরা শুধু ক্ষমতায় থাকে না; তারা নিজেদের পুনরুৎপাদন করেÑনতুন নামে, নতুন চেহারায়; কিন্তু একই উদ্দেশ্যে।
চব্বিশের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষ মনে করেছিল হয়তো এবার চক্রটা ভাঙবে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা গেল, সেই পুরোনো শক্তি আবার সংগঠিত হচ্ছে, নিজেদের নতুন রূপে সাজাচ্ছে কেউ বিশেষজ্ঞ, কেউ বা ‘নিরপেক্ষ’ মধ্যস্থতাকারী। স্লোগান বদলেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য বদলায়নি।
তবু এবার একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। আজকের বাংলাদেশ আগের বাংলাদেশ নয়। নতুন এক প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। যারা সচেতন ও নির্ভীক। তারা এখন সহজেই চিনে ফেলতে পারে কে জনগণের ভাষায় কথা বলে আর কে কৌশলে জনগণকে ব্যবহার করতে চায়। তারা দেখেছে কীভাবে অভিজাতরা কখনো জাতীয়তাবাদ, কখনো সংস্কৃতি, কখনো পররাষ্ট্রনীতি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভক্ত করে রাখে।
এই তরুণ প্রজন্ম অর্জন করেছে আন্তোনিও গ্রামশির ভাষায় বলা ‘সমালোচনামূলক চেতনা’—ক্ষমতার আসল চরিত্র বোঝার ক্ষমতা। তারা আর কোনো ত্রাণকর্তার অপেক্ষায় নেই; তারা বিশ্বাস করে অংশগ্রহণে, জবাবদিহিতে ও প্রক্রিয়ায়।
তরুণদের এই যে চেতনা এটাই এখন আশার উৎস। তরুণরাই হয়ে উঠেছে জাতির চোখ ও কান। তারা নজর রাখে, প্রশ্ন করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের হাতে নেই অস্ত্র বা পতাকা, কিন্তু আছে এক অমূল্য অস্ত্র-সংশয়। আর গণতন্ত্রে সংশয়ই জ্ঞানের সূচনা।
গণতন্ত্রের সারবত্তা হলোÑজনগণ যেন তাদের মতামত নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। কে জিতল, কে হারলÑসেটি নয়, আসল প্রশ্ন হলো ভোটাররা সত্যিই কি ভোট দিতে পারলেন? রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ল্যারি ডায়মন্ড যেমন বলেন, ‘গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়; গণতন্ত্র হলো সেই জবাবদিহি, যা নির্বাচনের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার কথা।’
সুতরাং ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় এটি জাতির রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরীক্ষা।
বাংলাদেশে বহুবার দেখা গেছেÑনির্বাচন ব্যবহৃত করা হয়েছে ক্ষমতা বৈধ করার অনুষ্ঠানে, পরিবর্তনের উপায় হিসেবে নয়। ব্যালট বাক্সে হাত পড়েছে, প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে, ভোটারকে ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু এবার সেদিন আর আগের মতো নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নাগরিক সাংবাদিকতা ও বৈশ্বিক নজরদারিÑসব মিলিয়ে সত্য গোপন রাখা কঠিন।
এখনকার ভোটার অনেক বেশি সচেতন, আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়। চেক নেতা ভ্যাকলাভ হাভেল একবার বলেছিলেন, ‘মানুষ একবার তার শক্তি চিনে ফেললে আর কখনো তা ভুলে যেতে পারে না।’ বাংলাদেশ এখন সেই মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে।
যদি আবার অভিজাত শ্রেণি জনগণের রায় বিকৃত করতে চায়, তবে সেটিই হবে তাদের রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি। জনমনে এখন একটাই সুর আর নয় প্রতারণা, আর নয় ছদ্মবেশী শাসন।
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন তার বই দ্য থার্ড ওয়েভে (The Third Wave) বলেছেন, একবার যখন নাগরিক সচেতনতা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তখন কোনো সমাজে স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন সেই সীমারেখা অতিক্রম করছে। মানুষ বুঝে ফেলেছে, ‘নিরপেক্ষ’ প্রশাসনের আড়ালে কিংবা ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’-এর ভাষার ভেতরে কীভাবে লুকিয়ে থাকে, একই ক্ষমতার লোভ। তবে এবার প্রতিরোধ আসবে ভিন্নভাবেÑস্লোগানে নয়, নজরদারিতে। নাগরিকরা নিজেরাই হবে ভোটের পাহারাদার, অনিয়মের সাক্ষী ও স্বচ্ছতার দাবি। মানুষ অনেক কিছু ক্ষমা করতে পারে; কিন্তু আরেকটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন ক্ষমা করবে না। মানবে না। প্রতিরোধ করবে।
শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র মানে শুধু বিজয় বা পরাজয় নয়; এর প্রাণশক্তি নিহিত আছে প্রক্রিয়ার সততায়। যদি জনগণের রায় সত্যিকারভাবে প্রতিফলিত হয়, তবে যারা হারে তারাও সেই ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারে পরেরবার নতুনভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
কিন্তু যখন ক্ষমতাবানরা ফল বিকৃত করে, তখন তারা শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করে নাÑতারা মানুষের শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের বিশ্বাসকেও ধ্বংস করে। সেই শূন্যতায় জন্ম নেয় চরমপন্থা। তাই ব্যালটের মর্যাদা রক্ষা করা শুধু রাজনৈতিক দায় নয়, এটি নৈতিক দায়িত্ব।
জন ডিউই একবার বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের অসুখের একমাত্র ওষুধ হলো আরো বেশি গণতন্ত্র।’ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই কথাটির ওপর। নাগরিকরা, বিশেষ করে তরুণরা, তাদের জাগরণকে শুধু আবেগে নয়, প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে পারে কি না।
বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত সাধারণ মানুষের ইতিহাসÑযারা বারবার অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধ হোক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হোক, চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব হোকÑপ্রতিটি পুনর্জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছে সাধারণ মানুষ, অভিজাত শ্রেণি নয়। অভিজাতরা হয়তো ইতিহাসের প্রথম খসড়া লেখে, কিন্তু শেষ অধ্যায় লেখে সাধারণ মানুষই।
আজ, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে, রাজপথ থেকে একটাই আহ্বান উঠছে : আর নয় মুষ্টিমেয় কয়েকজনের শাসন। এবার সিদ্ধান্ত নেবে জনগণÑস্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে, মর্যাদার সঙ্গে।
এটাই গণতন্ত্র। এটাই ন্যায়।
লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে, অতি অল্পসংখ্যক অভিজাত গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এই দেশটিকে শাসন করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আচরণে স্বৈরাচারী। সংস্কারের বুলি তোলে, কিন্তু সংস্কার করে শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। সংস্কারে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বাধা দেয়। ইতিহাসের প্রতিটি মোড়ে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের জাগরণে এই শ্রেণি কিছুদিনের জন্য উৎখাত হয়, তারপর আবার নানা কৌশলে ফিরে আসে ক্ষমতার মঞ্চে। বাংলাদেশের মানুষ বারবার এটি দেখেছে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল এই প্রথাগত চক্র ভাঙার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। এটি শুধু দুর্নীতি বা স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন ছিল না, বরং সাধারণ মানুষ ঘোষণা করেছিল, আর নয় নীরবতা। রাজপথে নেমেছিল ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক এমন সব মুখ, যারা বহুদিন ধরে প্রান্তিক হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস বলে, বিপ্লবের পরই শুরু হয় আসল পরীক্ষা। যখন পুরোনো শক্তিগুলো নতুন পোশাক পরে ফিরে আসেÑসংস্কারক, বিশেষজ্ঞ বা মধ্যস্থতাকারী সেজে। আজ আমরা ঠিক সেই দৃশ্যই দেখছি।
সমাজবিজ্ঞানী সি. রাইট মিলস তার বই The Power Elite-এ বলছেন, ‘সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা প্রায়ই ক্ষমতার আসনে একে অন্যের স্থান বদল করে, ফলে পরিবর্তনের ছদ্মবেশে ক্ষমতা থাকে একই গোষ্ঠীর হাতে। ‘বাংলাদেশের রাজনীতিও আজ তারই প্রতিধ্বনি দেখছি। বেসামরিক সরকার হোক বা তথাকথিত নিরপেক্ষ প্রশাসন ক্ষমতার লাগাম বারবার গিয়েছে সেই একই গোষ্ঠীর হাতে, যাদের আছে অর্থ, যোগাযোগ আর প্রভাবের জোর।
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ রবার্ট মিশেলস এই বাস্তবতাকে বলেছিলেন আইরন ল অব অলিগার্কি (Iron Law of Oligarchy) অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোও শেষ পর্যন্ত গুটিকয়েক মানুষের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে ফেলে। বাংলাদেশের বেলায় এটি আরো নির্মম, কারণ আমাদের অভিজাতরা শুধু ক্ষমতায় থাকে না; তারা নিজেদের পুনরুৎপাদন করেÑনতুন নামে, নতুন চেহারায়; কিন্তু একই উদ্দেশ্যে।
চব্বিশের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষ মনে করেছিল হয়তো এবার চক্রটা ভাঙবে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা গেল, সেই পুরোনো শক্তি আবার সংগঠিত হচ্ছে, নিজেদের নতুন রূপে সাজাচ্ছে কেউ বিশেষজ্ঞ, কেউ বা ‘নিরপেক্ষ’ মধ্যস্থতাকারী। স্লোগান বদলেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য বদলায়নি।
তবু এবার একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। আজকের বাংলাদেশ আগের বাংলাদেশ নয়। নতুন এক প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। যারা সচেতন ও নির্ভীক। তারা এখন সহজেই চিনে ফেলতে পারে কে জনগণের ভাষায় কথা বলে আর কে কৌশলে জনগণকে ব্যবহার করতে চায়। তারা দেখেছে কীভাবে অভিজাতরা কখনো জাতীয়তাবাদ, কখনো সংস্কৃতি, কখনো পররাষ্ট্রনীতি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভক্ত করে রাখে।
এই তরুণ প্রজন্ম অর্জন করেছে আন্তোনিও গ্রামশির ভাষায় বলা ‘সমালোচনামূলক চেতনা’—ক্ষমতার আসল চরিত্র বোঝার ক্ষমতা। তারা আর কোনো ত্রাণকর্তার অপেক্ষায় নেই; তারা বিশ্বাস করে অংশগ্রহণে, জবাবদিহিতে ও প্রক্রিয়ায়।
তরুণদের এই যে চেতনা এটাই এখন আশার উৎস। তরুণরাই হয়ে উঠেছে জাতির চোখ ও কান। তারা নজর রাখে, প্রশ্ন করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের হাতে নেই অস্ত্র বা পতাকা, কিন্তু আছে এক অমূল্য অস্ত্র-সংশয়। আর গণতন্ত্রে সংশয়ই জ্ঞানের সূচনা।
গণতন্ত্রের সারবত্তা হলোÑজনগণ যেন তাদের মতামত নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। কে জিতল, কে হারলÑসেটি নয়, আসল প্রশ্ন হলো ভোটাররা সত্যিই কি ভোট দিতে পারলেন? রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ল্যারি ডায়মন্ড যেমন বলেন, ‘গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়; গণতন্ত্র হলো সেই জবাবদিহি, যা নির্বাচনের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার কথা।’
সুতরাং ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় এটি জাতির রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরীক্ষা।
বাংলাদেশে বহুবার দেখা গেছেÑনির্বাচন ব্যবহৃত করা হয়েছে ক্ষমতা বৈধ করার অনুষ্ঠানে, পরিবর্তনের উপায় হিসেবে নয়। ব্যালট বাক্সে হাত পড়েছে, প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে, ভোটারকে ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু এবার সেদিন আর আগের মতো নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নাগরিক সাংবাদিকতা ও বৈশ্বিক নজরদারিÑসব মিলিয়ে সত্য গোপন রাখা কঠিন।
এখনকার ভোটার অনেক বেশি সচেতন, আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়। চেক নেতা ভ্যাকলাভ হাভেল একবার বলেছিলেন, ‘মানুষ একবার তার শক্তি চিনে ফেললে আর কখনো তা ভুলে যেতে পারে না।’ বাংলাদেশ এখন সেই মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে।
যদি আবার অভিজাত শ্রেণি জনগণের রায় বিকৃত করতে চায়, তবে সেটিই হবে তাদের রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি। জনমনে এখন একটাই সুর আর নয় প্রতারণা, আর নয় ছদ্মবেশী শাসন।
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন তার বই দ্য থার্ড ওয়েভে (The Third Wave) বলেছেন, একবার যখন নাগরিক সচেতনতা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তখন কোনো সমাজে স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন সেই সীমারেখা অতিক্রম করছে। মানুষ বুঝে ফেলেছে, ‘নিরপেক্ষ’ প্রশাসনের আড়ালে কিংবা ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’-এর ভাষার ভেতরে কীভাবে লুকিয়ে থাকে, একই ক্ষমতার লোভ। তবে এবার প্রতিরোধ আসবে ভিন্নভাবেÑস্লোগানে নয়, নজরদারিতে। নাগরিকরা নিজেরাই হবে ভোটের পাহারাদার, অনিয়মের সাক্ষী ও স্বচ্ছতার দাবি। মানুষ অনেক কিছু ক্ষমা করতে পারে; কিন্তু আরেকটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন ক্ষমা করবে না। মানবে না। প্রতিরোধ করবে।
শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র মানে শুধু বিজয় বা পরাজয় নয়; এর প্রাণশক্তি নিহিত আছে প্রক্রিয়ার সততায়। যদি জনগণের রায় সত্যিকারভাবে প্রতিফলিত হয়, তবে যারা হারে তারাও সেই ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারে পরেরবার নতুনভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
কিন্তু যখন ক্ষমতাবানরা ফল বিকৃত করে, তখন তারা শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করে নাÑতারা মানুষের শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের বিশ্বাসকেও ধ্বংস করে। সেই শূন্যতায় জন্ম নেয় চরমপন্থা। তাই ব্যালটের মর্যাদা রক্ষা করা শুধু রাজনৈতিক দায় নয়, এটি নৈতিক দায়িত্ব।
জন ডিউই একবার বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের অসুখের একমাত্র ওষুধ হলো আরো বেশি গণতন্ত্র।’ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই কথাটির ওপর। নাগরিকরা, বিশেষ করে তরুণরা, তাদের জাগরণকে শুধু আবেগে নয়, প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে পারে কি না।
বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত সাধারণ মানুষের ইতিহাসÑযারা বারবার অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধ হোক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হোক, চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব হোকÑপ্রতিটি পুনর্জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছে সাধারণ মানুষ, অভিজাত শ্রেণি নয়। অভিজাতরা হয়তো ইতিহাসের প্রথম খসড়া লেখে, কিন্তু শেষ অধ্যায় লেখে সাধারণ মানুষই।
আজ, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে, রাজপথ থেকে একটাই আহ্বান উঠছে : আর নয় মুষ্টিমেয় কয়েকজনের শাসন। এবার সিদ্ধান্ত নেবে জনগণÑস্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে, মর্যাদার সঙ্গে।
এটাই গণতন্ত্র। এটাই ন্যায়।
লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যায় এবং এখন ভারতেই অবস্থান করছে। ফলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রভাবের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ইতিহাসের নজিরবিহীন এই ঘটনায় দলীয় নেতাসহ তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এদিকে দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় হবে সহসাই। তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডজন ডজন মামলা বিচারাধীন।
৩ ঘণ্টা আগে
বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ভার্জিয়া উল্ফ ‘Shakespeare’s Sister’ প্রবন্ধে একটি কাল্পনিক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, কীভাবে নারীর সৃজনশীলতা অবদমিত হয়, কীভাবে সাহিত্যচর্চা থেকে তারা বঞ্চিত হয় এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান কীভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
৩ ঘণ্টা আগে
সমাধান একটাই, রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার বদলাতে হবে। তাই বিদেশি সহায়তার অপেক্ষা না করে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদী ঘিরে পানির অভাব ও ভাঙনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে, পাশাপাশি নদীর অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক গুরুত্ব পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা
১ দিন আগে