আবদুল লতিফ মাসুম
গত সপ্তাহটি অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও ঘটনা-দুর্ঘটনায় ভরপুর। অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছিল জুলাই সনদের স্বাক্ষরতার মধ্য দিয়ে। অবশেষে বিমানবন্দরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে গোটা সপ্তাহটি নানা ধরনের আলামতে অতিবাহিত হলো। সপ্তাহের শুরুতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে সব রাজনৈতিক দল সই করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে অতি জরুরি বৈঠক ডাকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আগের অনড় অবস্থানই তুলে ধরে রাজনৈতিক দলগুলো—বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন নির্দিষ্ট দিন, অর্থাৎ শুক্রবারেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে। একইসঙ্গে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিশ্চিত করেন।
এদিকে নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা দলিল ‘জুলাই সনদ ২০২৫’। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি এ সনদে গত শুক্রবার সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। আগেই বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি অনুষ্ঠানে যায়নি, স্বাক্ষরও করেনি। এছাড়া চারটি বাম দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘটে আরেকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন শতাধিক মানুষ। তারা রাতেই প্রাচীর টপকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা রাত থেকে তাদের অনেক বোঝানোর পরও তারা সরছিলেন না। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর তারা মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান, ভাঙচুর করেন এবং কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ‘জুলাইযোদ্ধা সনদ’-এর নামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের শহীদ এবং আহতদের জুলাইযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। দাবি না মানলে পরদিন তারা প্রতিটি জেলায় বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো, শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং আহতদের নিরাপত্তার জন্য আইনি সহায়তা। তারা দাবি জানান, জুলাই সনদে এসব বিষয়ের পুরোপুরি উল্লেখ থাকতে হবে।
জুলাইযোদ্ধাদের এ আচরণ নিয়ে রাজনৈতিক দলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ তাদের স্বৈরাচারের দোসর বলায় ক্ষিপ্ত হয়েছে এনসিপি। গত শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সুযোগটা জাতীয় সংসদের সেই সাউথ প্লাজায় কিছু কিছু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিয়েছে। তারা নাম ধারণ করেছে জুলাইযোদ্ধা। জুলাইযোদ্ধা নাম দিয়ে নামটা তারা সুযোগে ব্যবহার করেছে। এই সেই ফ্যাসিস্ট বাহিনী শুক্রবারের অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য—পারলে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেছে।’ এ বিষয়ে পরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন সাহেব গতকালকের ঘটনায় জুলাইযোদ্ধা, যারা গতকাল আহত হয়েছে, তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ এদিকে জুলাই সনদ সই করার দিনে জুলাইযোদ্ধাদের বিক্ষোভ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাহাসের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধাদের স্বৈরাচারের দোসর বলাটা গুরুতর অসৌজন্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ গত শনিবার বিকালে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে এ কথা বলেন জামায়াতের আমির। ওই পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘দয়া করে দায়িত্বশীল কোনো জায়গা থেকে আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করা জাতির গর্বিত লোকগুলোর ব্যাপারে এমন কথা বলব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেউ এমন আচরণ করলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা আমরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, ইনশাআল্লাহ।’
এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও অরাজকতার পর এবার শুনতে হচ্ছে আরেক দুর্ভাগ্যের কথা, দুর্যোগের কথা, তথা অগ্নিকাণ্ডের কথা; দুর্ভাগ্য যেন পিছু হটছে না। গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের রূপনগরে ঘটে এক নির্মম অগ্নিকাণ্ড। সেখানে রাসায়নিক গুদামে লাগা আগুনে পুড়ে অন্তত ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এই দুঃসংবাদের পর আরও দুঃসংবাদ আসে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে। সেখানে তোয়ালে ও মেডিকেল সরঞ্জাম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাততলা ভবনের সপ্তম তলায় অবস্থিত গুদামে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পুরো কারখানায় তা ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ অক্টোবর বেলা ২টায় আগুনের সূত্রপাত হয়।
আগুন যেন গোটা জাতির দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দুটো অগ্নিকাণ্ডের পর সর্বনাশ ঘটে দেশের প্রধান বিমানবন্দরে—ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গত ১৮ অক্টোবর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। বিমানবন্দরের পণ্য রাখার স্থানে অগ্নিকাণ্ড রহস্যময় একটি ব্যাপার। তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল একই ধরনের ইঙ্গিত করে বিষয়টি সরকারকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন।
পরপর তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড জনমনে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটনার গভীরতা স্বীকার করে বলেছে, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করবে। নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। সরকার জনগণকে এই বলে নিশ্চিত করেছে, কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না। গত সপ্তাহের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিঃসন্দেহে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। সেটি খানিকটা অরাজকতার দিকেও এগিয়েছে। পরপর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। এগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা না কি দেশবিরোধী বড় কোন ষড়যন্ত্রের অংশ তা জরুরিভিত্তিতে খতিয়ে দেখতে হবে।
লেখক: রাজনীতি, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
গত সপ্তাহটি অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও ঘটনা-দুর্ঘটনায় ভরপুর। অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছিল জুলাই সনদের স্বাক্ষরতার মধ্য দিয়ে। অবশেষে বিমানবন্দরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে গোটা সপ্তাহটি নানা ধরনের আলামতে অতিবাহিত হলো। সপ্তাহের শুরুতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে সব রাজনৈতিক দল সই করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে অতি জরুরি বৈঠক ডাকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আগের অনড় অবস্থানই তুলে ধরে রাজনৈতিক দলগুলো—বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন নির্দিষ্ট দিন, অর্থাৎ শুক্রবারেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে। একইসঙ্গে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিশ্চিত করেন।
এদিকে নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা দলিল ‘জুলাই সনদ ২০২৫’। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি এ সনদে গত শুক্রবার সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। আগেই বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি অনুষ্ঠানে যায়নি, স্বাক্ষরও করেনি। এছাড়া চারটি বাম দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘটে আরেকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন শতাধিক মানুষ। তারা রাতেই প্রাচীর টপকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা রাত থেকে তাদের অনেক বোঝানোর পরও তারা সরছিলেন না। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর তারা মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান, ভাঙচুর করেন এবং কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ‘জুলাইযোদ্ধা সনদ’-এর নামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের শহীদ এবং আহতদের জুলাইযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। দাবি না মানলে পরদিন তারা প্রতিটি জেলায় বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো, শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং আহতদের নিরাপত্তার জন্য আইনি সহায়তা। তারা দাবি জানান, জুলাই সনদে এসব বিষয়ের পুরোপুরি উল্লেখ থাকতে হবে।
জুলাইযোদ্ধাদের এ আচরণ নিয়ে রাজনৈতিক দলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ তাদের স্বৈরাচারের দোসর বলায় ক্ষিপ্ত হয়েছে এনসিপি। গত শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সুযোগটা জাতীয় সংসদের সেই সাউথ প্লাজায় কিছু কিছু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিয়েছে। তারা নাম ধারণ করেছে জুলাইযোদ্ধা। জুলাইযোদ্ধা নাম দিয়ে নামটা তারা সুযোগে ব্যবহার করেছে। এই সেই ফ্যাসিস্ট বাহিনী শুক্রবারের অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য—পারলে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেছে।’ এ বিষয়ে পরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন সাহেব গতকালকের ঘটনায় জুলাইযোদ্ধা, যারা গতকাল আহত হয়েছে, তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ এদিকে জুলাই সনদ সই করার দিনে জুলাইযোদ্ধাদের বিক্ষোভ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাহাসের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধাদের স্বৈরাচারের দোসর বলাটা গুরুতর অসৌজন্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ গত শনিবার বিকালে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে এ কথা বলেন জামায়াতের আমির। ওই পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘দয়া করে দায়িত্বশীল কোনো জায়গা থেকে আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করা জাতির গর্বিত লোকগুলোর ব্যাপারে এমন কথা বলব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেউ এমন আচরণ করলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা আমরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, ইনশাআল্লাহ।’
এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও অরাজকতার পর এবার শুনতে হচ্ছে আরেক দুর্ভাগ্যের কথা, দুর্যোগের কথা, তথা অগ্নিকাণ্ডের কথা; দুর্ভাগ্য যেন পিছু হটছে না। গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের রূপনগরে ঘটে এক নির্মম অগ্নিকাণ্ড। সেখানে রাসায়নিক গুদামে লাগা আগুনে পুড়ে অন্তত ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এই দুঃসংবাদের পর আরও দুঃসংবাদ আসে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে। সেখানে তোয়ালে ও মেডিকেল সরঞ্জাম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাততলা ভবনের সপ্তম তলায় অবস্থিত গুদামে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পুরো কারখানায় তা ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ অক্টোবর বেলা ২টায় আগুনের সূত্রপাত হয়।
আগুন যেন গোটা জাতির দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দুটো অগ্নিকাণ্ডের পর সর্বনাশ ঘটে দেশের প্রধান বিমানবন্দরে—ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গত ১৮ অক্টোবর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। বিমানবন্দরের পণ্য রাখার স্থানে অগ্নিকাণ্ড রহস্যময় একটি ব্যাপার। তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল একই ধরনের ইঙ্গিত করে বিষয়টি সরকারকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন।
পরপর তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড জনমনে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটনার গভীরতা স্বীকার করে বলেছে, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করবে। নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। সরকার জনগণকে এই বলে নিশ্চিত করেছে, কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না। গত সপ্তাহের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিঃসন্দেহে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। সেটি খানিকটা অরাজকতার দিকেও এগিয়েছে। পরপর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। এগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা না কি দেশবিরোধী বড় কোন ষড়যন্ত্রের অংশ তা জরুরিভিত্তিতে খতিয়ে দেখতে হবে।
লেখক: রাজনীতি, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১৯ ঘণ্টা আগেযখন অনুন্নত দেশের যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিরা উন্নত দেশে স্থানান্তরিত হন, তখন এ ঘটনাকে ‘মেধা পাচার’ বা ‘ব্রেইন ড্রেন’ বলা হয়। নানা কারণে দেশ ত্যাগ করার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ক্ষেত্রে। অথচ জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ‘বিশ্ব জনসংখ্যার অবস্থা প্রতিবেদন-২০২৫’-এ বাংলাদেশকে বর্তমান
১৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের অনেক গুণ থাকলেও, যে গুণটির বড্ড অভাব, তা হলো আত্মপর্যালোচনার অভ্যাস। কিন্তু এর জন্য পুরোপুরি তাদের দায়ী করা চলে না। কারণ, তাদের কর্মকাণ্ডের যারা দর্শক-শ্রোতা তথা (সু)ফলভোগী, অর্থাৎ আমাদের মতো আমজনতা, আমরা তাদের কাজকে সেটা ভুল হোক, ভালো হোক হাততালি দিয়ে আর প্রশংসায় ভ
১৯ ঘণ্টা আগেভারতও এই নিয়মের বাইরে নয়। তাই আমি আবার সেই প্রশ্নে ফিরে যাই : আমরা কি মুসলিম, নাকি মুজরিম (অপরাধী)? কেন আমাদের প্রতিদিন আসামির মতো বাঁচতে হবে, যখন খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়? কেন আমাদের শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা মিডিয়া থেকে গায়েব করে ফেলা হয়, অথচ রাষ্ট্র স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’ উদযাপন করে?
১৯ ঘণ্টা আগে