শাহীদ কামরুল
কিছুদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে হরদম একটা কথা খুবই চাউর হচ্ছে, যা আমি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ঠাহর করলাম, এমনকি হট ও কোল্ড মিডিয়ায় এবং সাংবাদিকদের দেখি প্রশ্ন করতে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের, এ সরকারের মেয়াদ কত দিন বা এ সরকারের বৈধতা কী? তখন মনে হলো যে এ বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা দরকার। তা ছাড়া কিছু মানুষ অবরে-সবরে, গোচরে-অগোচরে, বুঝে-না বোঝে এই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছেন, এটা একেবারেই ভুল সম্বোধন, এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। এটা হলো বিপ্লব-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার, যা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে সংহতি জানিয়ে এই সরকারকে সম্মতি দিয়েছেন, এটা অনির্বাচিত সরকার নয় এবং অবৈধও নয়। যারা বলেন এ সরকার নির্বাচিত না, তাদের একটু স্মরণ করে দিতে চাই, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের সরকারও নির্বাচিত ছিল না। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সরকার কখনো সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, জনগণের রক্তের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করে এবং তাদের বৈধতা আসে। এ সরকার যতদিন চাইবে, ততদিন মসনদে থাকতে পারবে, যদি ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে, যখন মনে করবে যে বাংলাদেশে একটা নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব হঠাৎ করে ঘটে গেছে। আসলে এ কথাটি সঠিক নয়। জগদ্বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক হেগেল বলেছেন, বিপ্লব কখনো হঠাৎ করে ঘটে না, এর জন্য একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি দরকার হয়। আসলে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই একটা বিপ্লবের অবস্থা বিরাজমান ছিল, যা ২০২৪ সালের ৩৬ আগস্টে ঘটে বাংলাদেশকে হাসিনাৎসি, বাকশিয়াল ও তাদের প্রভুদের গোলামির জিঞ্জির থেকে আজাদি দিল।
পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিপ্লব দেখেছি, যেমন— ১৭৭৯ ফরাসি বিপ্লব, ১৭৭৬ আমেরিকান বিপ্লব, ১৯১৭ রুশ বিপ্লব, ১৯৭৯ ইরান বিপ্লব, ১৯১০ আরব বসন্ত, সবশেষ আমাদের ২০২৪ আগস্ট বিপ্লব, বিপ্লবগুলোর সময় যে সরকার গঠিত হয়েছিল, ওই সরকারগুলো নিজেরাই একটা সংবিধান প্রণয়ন করেছিল। তবে কিছু কিছু সরকার এমনও দেখা গেছে, যারা প্রচলিত সংবিধানের কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমেও নতুন সংবিধান প্রবর্তন করেছিল।
বস্তুত, গণঅভ্যুত্থান বিদ্যমান সংবিধানকে অকার্যকর করে দেয়। তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। দুনিয়ার বহু দেশে এমন ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ গাঠনিক ক্ষমতায় (constituent power) রূপান্তরিত হতে থাকে, যার আইনি-রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক। এই গাঠনিক ক্ষমতার বলেই জনগণ নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে থাকে। তাহলে ইন্টেরিম সরকারের আইনি ভিত্তি কী? অন্তর্বর্তী পর্যায়ে দৈনন্দিন কাজ বিদ্যমান আইনি বিধান মোতাবেকই চলতে পারে। তবে বিদ্যমান আইনের যেসব ধারা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো অটোমেটিকলি বাতিল হয়ে যাবে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের আগে এমন বিধান প্রণয়নের নজির রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার গণক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে। আর গণক্ষমতাই নতুন আইনি ও গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর বৈধতার ভিত্তি।
আদতে, গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান দুনিয়ায় নেই। কাজেই গণঅভ্যুত্থানকে সংবিধান দেখিয়ে লাভ নেই। আসলে ‘সংবিধান’ হলো জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা (Collective Will) বা অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা ও অভিপ্রায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার সামনে লিখিত সংবিধান তেমন কিছুই নয়। কাজেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে শুধুই প্রতিবিপ্লবী শক্তি।
আর অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থী-জনতার কাছে হাসিনা পদত্যাগ না করার মানেই হলো গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পতন ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটার মানে হলো সংবিধান অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর। বাংলাদেশে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হবে।
নতুন সরকারের বৈধতার ভিত্তি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত গণঅভিপ্রায় ও ইচ্ছা; সংবিধান নয়। শপথগ্রহণের পরের বক্তৃতায় বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট।’
মানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা দিয়ে এ সরকারকে বোঝা যাবে না, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত গণরায়কে আমলে নিতে হবে। কারণ শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে এই সংবিধানেরও পতন ঘটেছে। তবুও যারা আইন, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে ফ্যাটিশে ভোগেন; ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দেওয়া মাত্র কুপোকাত হয়ে যান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে আসছে। কারণ ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংসদীয় ব্রুট মেজরিটির দ্বারা আদালতকে দিয়ে সংবিধানে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তখন বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরো দুটি সংসদ নির্বাচন হতে পারে, সাতজন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে চারজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তা আমলে নেননি।
কাজেই গায়ের জোরে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে দিয়ে সরকার ‘অসাংবিধানিক’ কাজ করেছিল। অর্থাৎ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা আওয়ামী লীগ সরকার তখন থেকেই অবৈধ ও অসাংবিধানিক।
সংবিধান জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। কার্যকর ও অবিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র। ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি কি খোদ ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বদলে দিতে পারে? না, পারে না। কিন্তু এতদিন তাই করা হয়েছে।
অর্থাৎ, সংসদের আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যা আবার ভোট পার্সেন্টেজে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বলে সংবিধান সংশোধন করা একটা অসাংবিধানিক ও গণবিরোধী কাজ। সে হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনী তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাটা ছিল অসাংবিধানিক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের শপথ-পরবর্তী বক্তব্য খেয়াল করুন : ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট।’ আগেই বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান নেই। গণঅভ্যুত্থান নতুন সংবিধানের বৈধতার ভিত্তিও বটে।
কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে নির্বাচন চাচ্ছেন। চাইতেই পারেন, কারণ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটু ধৈর্য ধারণ করা উচিত। আপনাদের সমস্যাগুলো দেশের সচেতন নাগরিকরা মালুম করতে পারছেন বলে মনে করি। আবার কোনো কোনো দলের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে ফোবিয়া দেখতে পাচ্ছি। তারা নির্বাচন নিয়ে খুবই বেকারার হয়ে আছে। কারণ তারা অনুধাবন করতে পারছে যে নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, তাদের দলের ভোট তত কমতে থাকবে এবং ভোটের যে তরঙ্গ এখন আছে, সেটা আর হয়তো থাকবে না, যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আর তা ছাড়া জনগণ বিগত বছরগুলোয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শাসন দেখেছে এবং তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছে। এমনকি ট্র্যাডিশনাল রাজনীতিবিদরা ভয় পাচ্ছেন যে তাদের রাজনীতি আয়েন্দা দিনগুলোয় অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। আর তা ছাড়া সারা পৃথিবীতে ড. ইউনূসের একটা উচ্চমাত্রার ফেস ভ্যালুও রয়েছে, তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে ইউরোপ-আমেরিকা তথা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন। আর তার সরকার যদি আরো ভালো করতে থাকে, তাহলে দেশের মানুষও সমর্থন দিতে থাকবে, যা ইতোমধ্যে দিবালোকের মতো প্রতীয়মান ও সূর্যালোকের মতো প্রস্ফুটিত হয় উঠেছে।
এ সরকার ইতোমধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শী ও নিপুণতার পরিচয় দিয়ে দেশের মানুষের প্রশংসায় ভাসছে। দেশের বহু পত্রিকা রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া ২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত আসার পথে। গভর্নর যদি সফল হন, এটা হবে এ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তা ছাড়া চোর-বাটপার-আলা হজরতদের চেহারা মোবারকও জাতির সামনে উন্মুক্ত হবে। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এত দ্রুত রিজার্ভের অর্ধেকেরও বেশি পাচার করে ফেলেছে। ফলে রিজার্ভ নেমে এসেছিল প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ৫ আগস্টের পর ড. ইউনূস সরকারের সময় এত আন্দোলন, এত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে স্থিতিশীল ছিল এবারের রমজানের বাজার। শান্তিপূর্ণ ছিল ঈদে ঘরে ফেরা। তবে সবচেয়ে বড় কামিয়াবি আসছে আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে, যার ফলে আমরা জিল্লতি থেকে আজাদ হয়ে তাজিম পাচ্ছি।
তবে টানেলের শেষ প্রান্তে একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এটিই এখন আমাদের ভরসা। এ সরকারকে আমাদের আরো সময় দিতে হবে। দেখতে হবে সত্যি সত্যি তারা পারে কি না? অন্যদের তো অদল-বদল করে আমরা অনেকবার দেখলাম। বারবার তারা আমাদের একটা বিষাক্ত বৃত্তে আটকে ফেলে আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে রেখেছিল। আর নয়। আমাদের আর ভুল করার সময় নেই। পৃথিবী এখন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
আদতে আমরা একটা বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের এখন ভাবতে হবে আমরা কি পুরোনো সেই ট্র্যাকে চলে যাব, নাকি ভিন্ন একটা ট্র্যাকে উঠতে কোশেশ করব। কিছু দলকে তো উল্টে-পাল্টে অনেকবার দেখেছি, তারা কোনো দিন তাদের খাসলত বদলাবে বলে মনে হয় না। আবার ক্ষমতায় গেলে এরা সেই একই কাজ করবে। আমাদের কাছে বিশেষ ফুরসত এসেছে নতুন কিছুর জন্য চেষ্টা করার, কারণ আগামীকাল নির্বাচন দিলে যে বা যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা কি বিশ্বের কথা তো দূর কি বাথ, ভারতের চাপ সামলাতে পারবে? পারবে না, আগের মতো নতজানু হয়েই দেশ পরিচালনা করবে, যার নজির ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি এদের কায়কারবার দেখে।
একটা কথা আমাদের ইয়াদ রাখা জরুরি বলে মনে করি, জুলাইয়ের আন্দোলনে জনতা ও পলিটিক্যাল পার্টির সদস্যদের বিপুল অংশগ্রহণ সত্ত্বেও এটি ছাত্রদেরই অভ্যুত্থান, কোনো দলের অভ্যুত্থান নয়। গণতান্ত্রিক মোর্চা তৈরির মাধ্যমে ছাত্রদের এই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলের অভ্যুত্থান হলে আগস্টেই বড় বাংলার সিংহাসনে তাদের আসীন দেখা যেত; কিন্তু তা হয়নি। এতে জনগণের অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন দলের সদস্যদের অংশগ্রহণ ছিল দলনিরপেক্ষ। অর্থাৎ ছাত্রদের নেতৃত্ব স্বীকার করেই অন্যদের অংশগ্রহণ ছিল। কাজেই এই অভ্যুত্থানকে চাইলেই কোনো দলের অভ্যুত্থান বলার ফুরসত নেই। অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের এখন যদি অমান্য করেন বিভিন্ন দলের সদস্যরা, সেটা হঠকারিতা, প্রতি-অভ্যুত্থান বা দলীয় স্বার্থের রাজনীতি ছাড়া বৈ কি।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং হাসিনাৎসি ও বাকশিয়ালদের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে, তাদের অনেক আশা- আকাঙ্ক্ষা আছে এ সরকারের কাছে। সুতরাং এ সরকার অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো করতে পারবে না। এ কাজগুলোর যবনিকার জন্য এ সরকারের আর কিছু সময়ের জরুরত আছে। অভ্যুত্থান এখনো চলমান, কারণ এই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য রাজনৈতিক বিপ্লব। তা সরকার গঠনেই শেষ হওয়ার না। সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার আগে অভ্যুত্থান সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। দলের লোক দলে ফিরে গেলেই অভ্যুত্থান শেষ হয় না।
কার্ল মার্কসের কথা দিয়েই ইতি টানতে চাই, তিনি বলেন পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলা এবং নতুন সামাজিক ব্যবস্থার জন্মের মাধ্যমে ইতিহাস অগ্রসর হয়। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার পুরো কাঠামো বদল করে নতুন একটা স্কেলেটন তৈরি করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো হেকমতি সিস্টেম বদলে নতুন আদলে রাজনীতি করার কোশেশ করে। মনে রাখতে হবে, এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ, সেকেলে রাজনীতি এখন তাবৎ দুনিয়াতেই অচল। সুতরাং, আপনারা বদলান, না হয় জনগণই আপনাদের বদলে ফেলবে। সাবধান!!
লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক
ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি
কিছুদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে হরদম একটা কথা খুবই চাউর হচ্ছে, যা আমি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ঠাহর করলাম, এমনকি হট ও কোল্ড মিডিয়ায় এবং সাংবাদিকদের দেখি প্রশ্ন করতে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের, এ সরকারের মেয়াদ কত দিন বা এ সরকারের বৈধতা কী? তখন মনে হলো যে এ বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা দরকার। তা ছাড়া কিছু মানুষ অবরে-সবরে, গোচরে-অগোচরে, বুঝে-না বোঝে এই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছেন, এটা একেবারেই ভুল সম্বোধন, এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। এটা হলো বিপ্লব-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার, যা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে সংহতি জানিয়ে এই সরকারকে সম্মতি দিয়েছেন, এটা অনির্বাচিত সরকার নয় এবং অবৈধও নয়। যারা বলেন এ সরকার নির্বাচিত না, তাদের একটু স্মরণ করে দিতে চাই, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের সরকারও নির্বাচিত ছিল না। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সরকার কখনো সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, জনগণের রক্তের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করে এবং তাদের বৈধতা আসে। এ সরকার যতদিন চাইবে, ততদিন মসনদে থাকতে পারবে, যদি ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে, যখন মনে করবে যে বাংলাদেশে একটা নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব হঠাৎ করে ঘটে গেছে। আসলে এ কথাটি সঠিক নয়। জগদ্বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক হেগেল বলেছেন, বিপ্লব কখনো হঠাৎ করে ঘটে না, এর জন্য একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি দরকার হয়। আসলে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই একটা বিপ্লবের অবস্থা বিরাজমান ছিল, যা ২০২৪ সালের ৩৬ আগস্টে ঘটে বাংলাদেশকে হাসিনাৎসি, বাকশিয়াল ও তাদের প্রভুদের গোলামির জিঞ্জির থেকে আজাদি দিল।
পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিপ্লব দেখেছি, যেমন— ১৭৭৯ ফরাসি বিপ্লব, ১৭৭৬ আমেরিকান বিপ্লব, ১৯১৭ রুশ বিপ্লব, ১৯৭৯ ইরান বিপ্লব, ১৯১০ আরব বসন্ত, সবশেষ আমাদের ২০২৪ আগস্ট বিপ্লব, বিপ্লবগুলোর সময় যে সরকার গঠিত হয়েছিল, ওই সরকারগুলো নিজেরাই একটা সংবিধান প্রণয়ন করেছিল। তবে কিছু কিছু সরকার এমনও দেখা গেছে, যারা প্রচলিত সংবিধানের কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমেও নতুন সংবিধান প্রবর্তন করেছিল।
বস্তুত, গণঅভ্যুত্থান বিদ্যমান সংবিধানকে অকার্যকর করে দেয়। তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। দুনিয়ার বহু দেশে এমন ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ গাঠনিক ক্ষমতায় (constituent power) রূপান্তরিত হতে থাকে, যার আইনি-রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক। এই গাঠনিক ক্ষমতার বলেই জনগণ নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে থাকে। তাহলে ইন্টেরিম সরকারের আইনি ভিত্তি কী? অন্তর্বর্তী পর্যায়ে দৈনন্দিন কাজ বিদ্যমান আইনি বিধান মোতাবেকই চলতে পারে। তবে বিদ্যমান আইনের যেসব ধারা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো অটোমেটিকলি বাতিল হয়ে যাবে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের আগে এমন বিধান প্রণয়নের নজির রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার গণক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে। আর গণক্ষমতাই নতুন আইনি ও গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর বৈধতার ভিত্তি।
আদতে, গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান দুনিয়ায় নেই। কাজেই গণঅভ্যুত্থানকে সংবিধান দেখিয়ে লাভ নেই। আসলে ‘সংবিধান’ হলো জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা (Collective Will) বা অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা ও অভিপ্রায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার সামনে লিখিত সংবিধান তেমন কিছুই নয়। কাজেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে শুধুই প্রতিবিপ্লবী শক্তি।
আর অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থী-জনতার কাছে হাসিনা পদত্যাগ না করার মানেই হলো গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পতন ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটার মানে হলো সংবিধান অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর। বাংলাদেশে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হবে।
নতুন সরকারের বৈধতার ভিত্তি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত গণঅভিপ্রায় ও ইচ্ছা; সংবিধান নয়। শপথগ্রহণের পরের বক্তৃতায় বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট।’
মানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা দিয়ে এ সরকারকে বোঝা যাবে না, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত গণরায়কে আমলে নিতে হবে। কারণ শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে এই সংবিধানেরও পতন ঘটেছে। তবুও যারা আইন, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে ফ্যাটিশে ভোগেন; ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দেওয়া মাত্র কুপোকাত হয়ে যান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে আসছে। কারণ ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংসদীয় ব্রুট মেজরিটির দ্বারা আদালতকে দিয়ে সংবিধানে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তখন বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরো দুটি সংসদ নির্বাচন হতে পারে, সাতজন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে চারজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তা আমলে নেননি।
কাজেই গায়ের জোরে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে দিয়ে সরকার ‘অসাংবিধানিক’ কাজ করেছিল। অর্থাৎ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা আওয়ামী লীগ সরকার তখন থেকেই অবৈধ ও অসাংবিধানিক।
সংবিধান জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। কার্যকর ও অবিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র। ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি কি খোদ ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বদলে দিতে পারে? না, পারে না। কিন্তু এতদিন তাই করা হয়েছে।
অর্থাৎ, সংসদের আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যা আবার ভোট পার্সেন্টেজে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বলে সংবিধান সংশোধন করা একটা অসাংবিধানিক ও গণবিরোধী কাজ। সে হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনী তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাটা ছিল অসাংবিধানিক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের শপথ-পরবর্তী বক্তব্য খেয়াল করুন : ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট।’ আগেই বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান নেই। গণঅভ্যুত্থান নতুন সংবিধানের বৈধতার ভিত্তিও বটে।
কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে নির্বাচন চাচ্ছেন। চাইতেই পারেন, কারণ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটু ধৈর্য ধারণ করা উচিত। আপনাদের সমস্যাগুলো দেশের সচেতন নাগরিকরা মালুম করতে পারছেন বলে মনে করি। আবার কোনো কোনো দলের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে ফোবিয়া দেখতে পাচ্ছি। তারা নির্বাচন নিয়ে খুবই বেকারার হয়ে আছে। কারণ তারা অনুধাবন করতে পারছে যে নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, তাদের দলের ভোট তত কমতে থাকবে এবং ভোটের যে তরঙ্গ এখন আছে, সেটা আর হয়তো থাকবে না, যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আর তা ছাড়া জনগণ বিগত বছরগুলোয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শাসন দেখেছে এবং তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছে। এমনকি ট্র্যাডিশনাল রাজনীতিবিদরা ভয় পাচ্ছেন যে তাদের রাজনীতি আয়েন্দা দিনগুলোয় অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। আর তা ছাড়া সারা পৃথিবীতে ড. ইউনূসের একটা উচ্চমাত্রার ফেস ভ্যালুও রয়েছে, তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে ইউরোপ-আমেরিকা তথা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন। আর তার সরকার যদি আরো ভালো করতে থাকে, তাহলে দেশের মানুষও সমর্থন দিতে থাকবে, যা ইতোমধ্যে দিবালোকের মতো প্রতীয়মান ও সূর্যালোকের মতো প্রস্ফুটিত হয় উঠেছে।
এ সরকার ইতোমধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শী ও নিপুণতার পরিচয় দিয়ে দেশের মানুষের প্রশংসায় ভাসছে। দেশের বহু পত্রিকা রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া ২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত আসার পথে। গভর্নর যদি সফল হন, এটা হবে এ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তা ছাড়া চোর-বাটপার-আলা হজরতদের চেহারা মোবারকও জাতির সামনে উন্মুক্ত হবে। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এত দ্রুত রিজার্ভের অর্ধেকেরও বেশি পাচার করে ফেলেছে। ফলে রিজার্ভ নেমে এসেছিল প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ৫ আগস্টের পর ড. ইউনূস সরকারের সময় এত আন্দোলন, এত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে স্থিতিশীল ছিল এবারের রমজানের বাজার। শান্তিপূর্ণ ছিল ঈদে ঘরে ফেরা। তবে সবচেয়ে বড় কামিয়াবি আসছে আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে, যার ফলে আমরা জিল্লতি থেকে আজাদ হয়ে তাজিম পাচ্ছি।
তবে টানেলের শেষ প্রান্তে একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এটিই এখন আমাদের ভরসা। এ সরকারকে আমাদের আরো সময় দিতে হবে। দেখতে হবে সত্যি সত্যি তারা পারে কি না? অন্যদের তো অদল-বদল করে আমরা অনেকবার দেখলাম। বারবার তারা আমাদের একটা বিষাক্ত বৃত্তে আটকে ফেলে আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে রেখেছিল। আর নয়। আমাদের আর ভুল করার সময় নেই। পৃথিবী এখন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
আদতে আমরা একটা বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের এখন ভাবতে হবে আমরা কি পুরোনো সেই ট্র্যাকে চলে যাব, নাকি ভিন্ন একটা ট্র্যাকে উঠতে কোশেশ করব। কিছু দলকে তো উল্টে-পাল্টে অনেকবার দেখেছি, তারা কোনো দিন তাদের খাসলত বদলাবে বলে মনে হয় না। আবার ক্ষমতায় গেলে এরা সেই একই কাজ করবে। আমাদের কাছে বিশেষ ফুরসত এসেছে নতুন কিছুর জন্য চেষ্টা করার, কারণ আগামীকাল নির্বাচন দিলে যে বা যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা কি বিশ্বের কথা তো দূর কি বাথ, ভারতের চাপ সামলাতে পারবে? পারবে না, আগের মতো নতজানু হয়েই দেশ পরিচালনা করবে, যার নজির ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি এদের কায়কারবার দেখে।
একটা কথা আমাদের ইয়াদ রাখা জরুরি বলে মনে করি, জুলাইয়ের আন্দোলনে জনতা ও পলিটিক্যাল পার্টির সদস্যদের বিপুল অংশগ্রহণ সত্ত্বেও এটি ছাত্রদেরই অভ্যুত্থান, কোনো দলের অভ্যুত্থান নয়। গণতান্ত্রিক মোর্চা তৈরির মাধ্যমে ছাত্রদের এই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলের অভ্যুত্থান হলে আগস্টেই বড় বাংলার সিংহাসনে তাদের আসীন দেখা যেত; কিন্তু তা হয়নি। এতে জনগণের অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন দলের সদস্যদের অংশগ্রহণ ছিল দলনিরপেক্ষ। অর্থাৎ ছাত্রদের নেতৃত্ব স্বীকার করেই অন্যদের অংশগ্রহণ ছিল। কাজেই এই অভ্যুত্থানকে চাইলেই কোনো দলের অভ্যুত্থান বলার ফুরসত নেই। অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের এখন যদি অমান্য করেন বিভিন্ন দলের সদস্যরা, সেটা হঠকারিতা, প্রতি-অভ্যুত্থান বা দলীয় স্বার্থের রাজনীতি ছাড়া বৈ কি।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং হাসিনাৎসি ও বাকশিয়ালদের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে, তাদের অনেক আশা- আকাঙ্ক্ষা আছে এ সরকারের কাছে। সুতরাং এ সরকার অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো করতে পারবে না। এ কাজগুলোর যবনিকার জন্য এ সরকারের আর কিছু সময়ের জরুরত আছে। অভ্যুত্থান এখনো চলমান, কারণ এই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য রাজনৈতিক বিপ্লব। তা সরকার গঠনেই শেষ হওয়ার না। সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার আগে অভ্যুত্থান সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। দলের লোক দলে ফিরে গেলেই অভ্যুত্থান শেষ হয় না।
কার্ল মার্কসের কথা দিয়েই ইতি টানতে চাই, তিনি বলেন পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলা এবং নতুন সামাজিক ব্যবস্থার জন্মের মাধ্যমে ইতিহাস অগ্রসর হয়। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার পুরো কাঠামো বদল করে নতুন একটা স্কেলেটন তৈরি করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো হেকমতি সিস্টেম বদলে নতুন আদলে রাজনীতি করার কোশেশ করে। মনে রাখতে হবে, এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ, সেকেলে রাজনীতি এখন তাবৎ দুনিয়াতেই অচল। সুতরাং, আপনারা বদলান, না হয় জনগণই আপনাদের বদলে ফেলবে। সাবধান!!
লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক
ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে