মাহমিয়া আলম শান্তা
গণমাধ্যমকে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছে দিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। সত্য উদ্ঘাটন ও প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তবে বর্তমান বিশ্বে ভুয়া খবর, অপতথ্য ও মিডিয়া দখলের মতো চ্যালেঞ্জ গণমাধ্যমের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, সেখানে দুর্নীতি কম এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় (ব্যারোনেটি ও ওয়েডার; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দুর্নীতি : একটি বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষণ, ২০০৩)। গণমাধ্যম দুর্নীতি ও অনিয়ম উদ্ঘাটন করতে পারে, যা সমাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
২০১৭ সালে ‘পানামা পেপারস’ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস করে। এটি ছিল দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণা ও অনুসন্ধানের ফল, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে।
বাংলাদেশেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের দুটি সংবাদমাধ্যম স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি উদ্ঘাটন করে, যা পরবর্তী সময়ে সরকারকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহিত করে (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০২৩)।
ডিজিটাল যুগে ভুয়া তথ্য ও অপপ্রচার গণমাধ্যমের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪৮টি ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৭১ শতাংশ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত (ডিসমিসল্যাব; বাংলাদেশে ভুয়া তথ্যের প্রবাহ: একটি বিশ্লেষণ, ২০২৩)। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশের দুটি প্রধান ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বুম বাংলাদেশ ও ফ্যাক্টওয়াচ নিয়মিত ভুয়া তথ্য যাচাই করার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে নিয়মিত তথ্য যাচাই করা হয়, সেখানে রাজনৈতিক অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের প্রভাব কমে যায় এবং জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে (নিহান ও রেইফলার; তথ্য যাচাই ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০১৫)।
গণমাধ্যম নাগরিকদের সচেতন করার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় হতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে সংবাদমাধ্যম শক্তিশালী, সেখানে গণতন্ত্র কার্যকর থাকে (নরিস; গণতন্ত্রকে চালিত করা: ক্ষমতা ভাগাভাগির কাঠামোর কার্যকারিতা, ২০০৮)।
বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ নাগরিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের রাজনৈতিক মতামত গঠন করে (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবস্থা, ২০২৩)। এর মাধ্যমে দেখা যায়, সংবাদমাধ্যমের তথ্য জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়। গণমাধ্যম দখল বা নিয়ন্ত্রণের ফলে সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে সত্য উন্মোচনে ব্যর্থ হন। গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যম দখল হলে দুর্নীতির হারও বৃদ্ধি পায় (করোনেল; উন্নয়নশীল বিশ্বে মিডিয়া দখল: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান, ২০১০)। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন এবং সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক প্রযুক্তির বিকাশ সত্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে তৈরি হওয়া ৪০ শতাংশ ভুয়া রাজনৈতিক ভিডিও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে (এআই এথিক্স ল্যাব; ডিপফেক ও সত্যের জন্য হুমকি : ২০২৩ সালের বিশ্লেষণ, ২০২৩)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য সত্যের তুলনায় ছয়গুণ বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে (ভোসুগি, রয় ও আরাল; অনলাইনে সত্য ও মিথ্যার বিস্তার, ২০১৮)। বাংলাদেশে ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মানুষ অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে ভুল তথ্যের প্রভাব: একটি গবেষণা প্রতিবেদন, ২০২২)। এটির মাধ্যমে দেখা যায়, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধের জন্য গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সত্য উন্মোচনে গণমাধ্যমের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সাংবাদিকদের তথ্য যাচাই ও গবেষণার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের যথার্থতা বাড়াতে সাংবাদিকদের তথ্য যাচাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া শক্তিশালী হলে ভুয়া তথ্যের বিস্তার কমে যায় এবং সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় (নিহান ও রেইফলার, তথ্য যাচাই ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০১৫)। এ ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কমানো দরকার।
স্বাধীন সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে করা অহেতুক মামলার সংখ্যা হ্রাস করতে হবে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি (করোনেল; উন্নয়নশীল বিশ্বে মিডিয়া দখল : চ্যালেঞ্জ ও সমাধান, ২০১০)। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সাংবাদিকদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তথ্য বিশ্লেষণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা সহজেই ভুয়া খবর ও ডিপফেক ভিডিও চিহ্নিত করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাংবাদিকদের তথ্য বিশ্লেষণের দক্ষতা বাড়ালে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায় (এআই এথিক্স ল্যাব; ডিপফেক ও সত্যের জন্য হুমকি : ২০২৩ সালের বিশ্লেষণ, ২০২৩)।
গণমাধ্যম শুধু তথ্য প্রচার নয়, বরং জনগণকে সচেতন ও সত্যের সন্ধান দিতে সাহায্য করে। এজন্য জনগণকে ভুয়া তথ্য চিনতে শেখানো এবং তথ্য যাচাইয়ের কৌশল সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে জনগণ তথ্য যাচাইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানে, সেখানে ভুয়া তথ্যের প্রচার ৪২ শতাংশ কম হয় (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে ভুল তথ্যের প্রভাব: একটি গবেষণা প্রতিবেদন, ২০২২)। তাই গণমাধ্যমের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোরও তথ্য যাচাই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গণমাধ্যম সত্য উদ্ঘাটনের সবচেয়ে কার্যকর ও আধুনিক মাধ্যম। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, তথ্য যাচাই ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি দুর্নীতি হ্রাস, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে ভুয়া তথ্যের বিস্তার, মিডিয়া দখল ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তথ্য যাচাই পদ্ধতির উন্নয়ন করা জরুরি। গণমাধ্যমের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গণমাধ্যমকে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছে দিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। সত্য উদ্ঘাটন ও প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তবে বর্তমান বিশ্বে ভুয়া খবর, অপতথ্য ও মিডিয়া দখলের মতো চ্যালেঞ্জ গণমাধ্যমের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, সেখানে দুর্নীতি কম এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় (ব্যারোনেটি ও ওয়েডার; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দুর্নীতি : একটি বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষণ, ২০০৩)। গণমাধ্যম দুর্নীতি ও অনিয়ম উদ্ঘাটন করতে পারে, যা সমাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
২০১৭ সালে ‘পানামা পেপারস’ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস করে। এটি ছিল দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণা ও অনুসন্ধানের ফল, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে।
বাংলাদেশেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের দুটি সংবাদমাধ্যম স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি উদ্ঘাটন করে, যা পরবর্তী সময়ে সরকারকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহিত করে (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০২৩)।
ডিজিটাল যুগে ভুয়া তথ্য ও অপপ্রচার গণমাধ্যমের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪৮টি ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৭১ শতাংশ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত (ডিসমিসল্যাব; বাংলাদেশে ভুয়া তথ্যের প্রবাহ: একটি বিশ্লেষণ, ২০২৩)। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশের দুটি প্রধান ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বুম বাংলাদেশ ও ফ্যাক্টওয়াচ নিয়মিত ভুয়া তথ্য যাচাই করার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে নিয়মিত তথ্য যাচাই করা হয়, সেখানে রাজনৈতিক অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের প্রভাব কমে যায় এবং জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে (নিহান ও রেইফলার; তথ্য যাচাই ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০১৫)।
গণমাধ্যম নাগরিকদের সচেতন করার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় হতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে সংবাদমাধ্যম শক্তিশালী, সেখানে গণতন্ত্র কার্যকর থাকে (নরিস; গণতন্ত্রকে চালিত করা: ক্ষমতা ভাগাভাগির কাঠামোর কার্যকারিতা, ২০০৮)।
বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ নাগরিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের রাজনৈতিক মতামত গঠন করে (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবস্থা, ২০২৩)। এর মাধ্যমে দেখা যায়, সংবাদমাধ্যমের তথ্য জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়। গণমাধ্যম দখল বা নিয়ন্ত্রণের ফলে সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে সত্য উন্মোচনে ব্যর্থ হন। গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যম দখল হলে দুর্নীতির হারও বৃদ্ধি পায় (করোনেল; উন্নয়নশীল বিশ্বে মিডিয়া দখল: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান, ২০১০)। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন এবং সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক প্রযুক্তির বিকাশ সত্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে তৈরি হওয়া ৪০ শতাংশ ভুয়া রাজনৈতিক ভিডিও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে (এআই এথিক্স ল্যাব; ডিপফেক ও সত্যের জন্য হুমকি : ২০২৩ সালের বিশ্লেষণ, ২০২৩)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য সত্যের তুলনায় ছয়গুণ বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে (ভোসুগি, রয় ও আরাল; অনলাইনে সত্য ও মিথ্যার বিস্তার, ২০১৮)। বাংলাদেশে ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মানুষ অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে ভুল তথ্যের প্রভাব: একটি গবেষণা প্রতিবেদন, ২০২২)। এটির মাধ্যমে দেখা যায়, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধের জন্য গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সত্য উন্মোচনে গণমাধ্যমের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সাংবাদিকদের তথ্য যাচাই ও গবেষণার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের যথার্থতা বাড়াতে সাংবাদিকদের তথ্য যাচাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া শক্তিশালী হলে ভুয়া তথ্যের বিস্তার কমে যায় এবং সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় (নিহান ও রেইফলার, তথ্য যাচাই ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে সাংবাদিকতার ভূমিকা, ২০১৫)। এ ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কমানো দরকার।
স্বাধীন সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে করা অহেতুক মামলার সংখ্যা হ্রাস করতে হবে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি (করোনেল; উন্নয়নশীল বিশ্বে মিডিয়া দখল : চ্যালেঞ্জ ও সমাধান, ২০১০)। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সাংবাদিকদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তথ্য বিশ্লেষণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা সহজেই ভুয়া খবর ও ডিপফেক ভিডিও চিহ্নিত করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাংবাদিকদের তথ্য বিশ্লেষণের দক্ষতা বাড়ালে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায় (এআই এথিক্স ল্যাব; ডিপফেক ও সত্যের জন্য হুমকি : ২০২৩ সালের বিশ্লেষণ, ২০২৩)।
গণমাধ্যম শুধু তথ্য প্রচার নয়, বরং জনগণকে সচেতন ও সত্যের সন্ধান দিতে সাহায্য করে। এজন্য জনগণকে ভুয়া তথ্য চিনতে শেখানো এবং তথ্য যাচাইয়ের কৌশল সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে জনগণ তথ্য যাচাইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানে, সেখানে ভুয়া তথ্যের প্রচার ৪২ শতাংশ কম হয় (গভর্ন্যান্স স্টাডিজ সেন্টার; বাংলাদেশে ভুল তথ্যের প্রভাব: একটি গবেষণা প্রতিবেদন, ২০২২)। তাই গণমাধ্যমের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোরও তথ্য যাচাই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গণমাধ্যম সত্য উদ্ঘাটনের সবচেয়ে কার্যকর ও আধুনিক মাধ্যম। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, তথ্য যাচাই ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি দুর্নীতি হ্রাস, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে ভুয়া তথ্যের বিস্তার, মিডিয়া দখল ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তথ্য যাচাই পদ্ধতির উন্নয়ন করা জরুরি। গণমাধ্যমের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৪ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৪ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে