ব্রি. জে. (অব.) ড. একেএম শামছুল ইসলাম
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী শুধু একটি সামরিক বাহিনী নয়, বরং এটি একটি জাতির আত্মার প্রতিফলন এবং একটি আদর্শ রূপায়ণ ও বাস্তবায়নের অন্যতম পথিকৃৎ। সেই আদর্শ হলো ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এমন একটি দর্শন, যা কিনা জনগণের সার্বভৌমত্ব, ধর্মীয় সহনশীলতা, গণতান্ত্রিক চেতনা ও আত্মমর্যাদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্য, হোক সে একজন সিপাহি বা একজন জেনারেল, এই আদর্শে বিশ্বাসী বলেই তারা দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, জাতীয় সংগ্রাম এবং একজন মহান নেতার দূরদর্শী নেতৃত্ব থেকে, যিনি হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশের জন্ম কোনো সহজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়নি। দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানি শাসন এবং বাঙালি জাতির ওপর বঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭১ সালে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। এই মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। একাত্তরের সাহসী সৈনিকরা রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছিল; আর সেই আত্মত্যাগ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় চেতনার এক অবিনাশী ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালে নানা সংকট, ষড়যন্ত্র ও কূটচাল পেরিয়ে আজও বাংলাদেশের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে টিকে আছে। এই চেতনার নামই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে একটি বিশেষ মহল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং এর পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ও ক্যু-কাউন্টার ক্যু’র মধ্য দিয়ে জাতি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তখন চরম হতাশা, অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ঠিক সেই সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়। জনগণের আস্থা, সেনাবাহিনীর সমর্থন ও একটি আদর্শিক ভিত্তি নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম সেনাবাহিনীকে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেননি।
শহীদ জিয়া তার ভাষণে বারবার উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা একটি আদর্শভিত্তিক জাতি গঠন করব, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী হবে জনগণের বাহিনী।’ এই চিন্তা থেকেই সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, ব্যক্তিবন্দনার সংস্কৃতি ও মতাদর্শিক বিভাজন থেকে মুক্ত করে একটি জাতীয় চেতনানির্ভর কাঠামোয় পুনর্গঠিত করা হয়। শহীদ জিয়ার কৌশল ছিল সোজাসাপ্টা—‘জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, পেশাগত দক্ষতা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিষ্ঠা।’ এ লক্ষ্যেই তিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি স্তরে পুনর্গঠন, পেশাগত মানোন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের চেতনা প্রোথিত করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি দেশের ভেতরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জঙ্গি দমন ও অবকাঠামো উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি এই বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে যখন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কিছু গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যকে ব্যবহারের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলুষিত করেছে, তখন জাতি মর্মাহত হয়েছে। এই অপচেষ্টা কখনোই মূল সেনা কাঠামোর নীতির প্রতিফলন নয়। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্য, আত্মত্যাগ ও আদর্শিক ভিত্তিকে অসম্মান করে।
এরপরও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তার মূল বিশ্বাস ও আদর্শ থেকে সরে যায়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে দেশব্যাপী গণআন্দোলন শুরু হলে জনগণের বিপুল সমর্থনে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই গণআন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক ছিল না, বরং এটি ছিল একটি আদর্শিক জাগরণ—বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান। এই পুনরুত্থানে সশস্ত্র বাহিনী আবার তাদের প্রকৃত পরিচয়ে ফিরে আসে—একটি জাতীয় বাহিনী, যারা জনগণের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে, কোনো ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের পক্ষে নয়।
এই ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। তারা নিরপেক্ষ থেকেও জনতার পক্ষ নিয়েছে, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে সহায়তা করেছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই পুনর্জাগরণ ছিল মূলত সেই আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান ভূমিকার মূল্যায়ন করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। একবিংশ শতাব্দীতে যখন প্রযুক্তির উৎকর্ষ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকট, আঞ্চলিক অস্থিরতা ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে জাতির নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তখন একটি আদর্শিকভাবে সুসংহত ও প্রফেশনাল সেনাবাহিনী ছাড়া দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়। এই আদর্শিক ভিত্তি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, যা বাহিনীর মনন, চরিত্র ও কর্তব্যবোধে প্রোথিত।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আজ কেবল একটি বাহিনী নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ধারক ও বাহক। এই বাহিনী শুধু অস্ত্রচালনায় নয়, বরং নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও প্রফেশনালিজম—এই চারটি মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই নৈতিক অবস্থান তাদের পরিণত করেছে জাতির গর্ব ও জাতির ভরসায়। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের সাফল্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের সাহসিকতা, অবকাঠামো নির্মাণে তাদের দক্ষতা এবং রাজনৈতিক সংকটে তাদের পেশাগত নিরপেক্ষতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুসংগঠিত ও আদর্শিকভাবে শক্তিশালী বাহিনী।
তবে এই অর্জন কেবল বাহিনীর নিজের নয়; এটি জাতির, এটি সেই চেতনাগুলোর যা মহান মুক্তিযুদ্ধে জন্ম নিয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও সক্রিয়তায় দৃঢ় ভিত্তি পেয়েছিল। আজ যখন নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে, তখন তাদের বুঝতে হবে—সশস্ত্র বাহিনীর শৌর্য-বীর্য কেবল বাহ্যিক শক্তিতে নয়, আদর্শিক ভিত্তির মধ্যেই নিহিত।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব থেকে শুরু করে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এই আদর্শিক চেতনা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ, জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাই বাহিনীর মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন নৈতিক নেতৃত্ব, আদর্শিক দৃঢ়তা ও গণতান্ত্রিক চেতনা। এই প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তিনটি প্রধান স্তম্ভকে আরো সুদৃঢ় করা অপরিহার্য।
প্রথমত, বাহিনীর অভ্যন্তরে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শিক শিক্ষাকে আরো সুসংহত করা। এটি একটি মূল্যবোধভিত্তিক সামরিক সংস্কৃতির জন্ম দেবে, যেখানে প্রতিটি সদস্য জানবে, তার শপথ কেবল একটি সরকারের প্রতি নয়, বরং দেশের সংবিধান, জনগণ ও দেশের স্বাধীনতার প্রতি।
দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব নির্বাচনে আদর্শ, দক্ষতা ও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া। রাজনীতিকীকরণ, গোষ্ঠীবাদ বা আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়, বরং মেধা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে নেতৃত্ব বিকাশ করলেই সশস্ত্র বাহিনী আরো পেশাদার ও জনমুখী হয়ে উঠবে।
তৃতীয়ত, বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সংযোগ সুদৃঢ় করা। জনগণই সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির উৎস। একটি বাহিনী যতই আধুনিক হোক, যদি জনগণের আস্থা না থাকে, তবে সেটি একটি অন্তঃসারশূন্য কাঠামোয় পরিণত হয়। সেজন্য জনগণের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর দায়বদ্ধতা, সহানুভূতি ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখা জরুরি।
বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যখনই জাতি সংকটে পড়েছে সশস্ত্র বাহিনীই তার নির্ভরযোগ্য আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই নির্ভরতার পেছনে রয়েছে একটি আদর্শিক কাঠামো, একটি বিশ্বাস, যার নাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এই চেতনাই সশস্ত্র বাহিনীকে করেছে জনগণের বাহিনী, শাসকের নয়। এই চেতনাই ৭ নভেম্বরকে দিয়েছে ইতিহাসে স্থায়ী স্থান এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্টকে করেছে এক নতুন জাগরণের সূচক।
ভবিষ্যতের দিনগুলোয় দেশকে আরো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক মহামারি, সাইবার যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—সবই আমাদের জন্য হুমকি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জাতির প্রত্যাশা আরো বেড়ে যাবে। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে তখনই যখন বাহিনী থাকবে নৈতিকভাবে দৃঢ়, পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত ও আদর্শিকভাবে জাতীয়তাবাদী।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে, তবে তার মূল আদর্শ বদলায়নি এবং সেটি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
শহীদ জিয়াউর রহমান এই বাহিনীকে যেভাবে রচনা করেছিলেন, তারেক রহমান সেই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ কেবল ভূখণ্ড হিসেবে নয়, একটি আদর্শিক জাতিসত্তা হিসেবেই টিকে থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে এই চেতনা জাগ্রত থাকুক—এই হোক আমাদের কামনা।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী শুধু একটি সামরিক বাহিনী নয়, বরং এটি একটি জাতির আত্মার প্রতিফলন এবং একটি আদর্শ রূপায়ণ ও বাস্তবায়নের অন্যতম পথিকৃৎ। সেই আদর্শ হলো ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এমন একটি দর্শন, যা কিনা জনগণের সার্বভৌমত্ব, ধর্মীয় সহনশীলতা, গণতান্ত্রিক চেতনা ও আত্মমর্যাদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্য, হোক সে একজন সিপাহি বা একজন জেনারেল, এই আদর্শে বিশ্বাসী বলেই তারা দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, জাতীয় সংগ্রাম এবং একজন মহান নেতার দূরদর্শী নেতৃত্ব থেকে, যিনি হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশের জন্ম কোনো সহজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়নি। দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানি শাসন এবং বাঙালি জাতির ওপর বঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭১ সালে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। এই মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। একাত্তরের সাহসী সৈনিকরা রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছিল; আর সেই আত্মত্যাগ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় চেতনার এক অবিনাশী ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালে নানা সংকট, ষড়যন্ত্র ও কূটচাল পেরিয়ে আজও বাংলাদেশের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে টিকে আছে। এই চেতনার নামই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে একটি বিশেষ মহল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং এর পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ও ক্যু-কাউন্টার ক্যু’র মধ্য দিয়ে জাতি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তখন চরম হতাশা, অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ঠিক সেই সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়। জনগণের আস্থা, সেনাবাহিনীর সমর্থন ও একটি আদর্শিক ভিত্তি নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম সেনাবাহিনীকে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেননি।
শহীদ জিয়া তার ভাষণে বারবার উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা একটি আদর্শভিত্তিক জাতি গঠন করব, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী হবে জনগণের বাহিনী।’ এই চিন্তা থেকেই সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, ব্যক্তিবন্দনার সংস্কৃতি ও মতাদর্শিক বিভাজন থেকে মুক্ত করে একটি জাতীয় চেতনানির্ভর কাঠামোয় পুনর্গঠিত করা হয়। শহীদ জিয়ার কৌশল ছিল সোজাসাপ্টা—‘জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, পেশাগত দক্ষতা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিষ্ঠা।’ এ লক্ষ্যেই তিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি স্তরে পুনর্গঠন, পেশাগত মানোন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের চেতনা প্রোথিত করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি দেশের ভেতরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জঙ্গি দমন ও অবকাঠামো উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি এই বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে যখন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কিছু গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যকে ব্যবহারের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলুষিত করেছে, তখন জাতি মর্মাহত হয়েছে। এই অপচেষ্টা কখনোই মূল সেনা কাঠামোর নীতির প্রতিফলন নয়। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্য, আত্মত্যাগ ও আদর্শিক ভিত্তিকে অসম্মান করে।
এরপরও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তার মূল বিশ্বাস ও আদর্শ থেকে সরে যায়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে দেশব্যাপী গণআন্দোলন শুরু হলে জনগণের বিপুল সমর্থনে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই গণআন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক ছিল না, বরং এটি ছিল একটি আদর্শিক জাগরণ—বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান। এই পুনরুত্থানে সশস্ত্র বাহিনী আবার তাদের প্রকৃত পরিচয়ে ফিরে আসে—একটি জাতীয় বাহিনী, যারা জনগণের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে, কোনো ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের পক্ষে নয়।
এই ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। তারা নিরপেক্ষ থেকেও জনতার পক্ষ নিয়েছে, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে সহায়তা করেছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই পুনর্জাগরণ ছিল মূলত সেই আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান ভূমিকার মূল্যায়ন করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। একবিংশ শতাব্দীতে যখন প্রযুক্তির উৎকর্ষ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকট, আঞ্চলিক অস্থিরতা ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে জাতির নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তখন একটি আদর্শিকভাবে সুসংহত ও প্রফেশনাল সেনাবাহিনী ছাড়া দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়। এই আদর্শিক ভিত্তি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, যা বাহিনীর মনন, চরিত্র ও কর্তব্যবোধে প্রোথিত।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আজ কেবল একটি বাহিনী নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ধারক ও বাহক। এই বাহিনী শুধু অস্ত্রচালনায় নয়, বরং নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও প্রফেশনালিজম—এই চারটি মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই নৈতিক অবস্থান তাদের পরিণত করেছে জাতির গর্ব ও জাতির ভরসায়। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের সাফল্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের সাহসিকতা, অবকাঠামো নির্মাণে তাদের দক্ষতা এবং রাজনৈতিক সংকটে তাদের পেশাগত নিরপেক্ষতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুসংগঠিত ও আদর্শিকভাবে শক্তিশালী বাহিনী।
তবে এই অর্জন কেবল বাহিনীর নিজের নয়; এটি জাতির, এটি সেই চেতনাগুলোর যা মহান মুক্তিযুদ্ধে জন্ম নিয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও সক্রিয়তায় দৃঢ় ভিত্তি পেয়েছিল। আজ যখন নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে, তখন তাদের বুঝতে হবে—সশস্ত্র বাহিনীর শৌর্য-বীর্য কেবল বাহ্যিক শক্তিতে নয়, আদর্শিক ভিত্তির মধ্যেই নিহিত।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব থেকে শুরু করে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এই আদর্শিক চেতনা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ, জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাই বাহিনীর মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন নৈতিক নেতৃত্ব, আদর্শিক দৃঢ়তা ও গণতান্ত্রিক চেতনা। এই প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তিনটি প্রধান স্তম্ভকে আরো সুদৃঢ় করা অপরিহার্য।
প্রথমত, বাহিনীর অভ্যন্তরে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শিক শিক্ষাকে আরো সুসংহত করা। এটি একটি মূল্যবোধভিত্তিক সামরিক সংস্কৃতির জন্ম দেবে, যেখানে প্রতিটি সদস্য জানবে, তার শপথ কেবল একটি সরকারের প্রতি নয়, বরং দেশের সংবিধান, জনগণ ও দেশের স্বাধীনতার প্রতি।
দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব নির্বাচনে আদর্শ, দক্ষতা ও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া। রাজনীতিকীকরণ, গোষ্ঠীবাদ বা আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়, বরং মেধা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে নেতৃত্ব বিকাশ করলেই সশস্ত্র বাহিনী আরো পেশাদার ও জনমুখী হয়ে উঠবে।
তৃতীয়ত, বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সংযোগ সুদৃঢ় করা। জনগণই সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির উৎস। একটি বাহিনী যতই আধুনিক হোক, যদি জনগণের আস্থা না থাকে, তবে সেটি একটি অন্তঃসারশূন্য কাঠামোয় পরিণত হয়। সেজন্য জনগণের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর দায়বদ্ধতা, সহানুভূতি ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখা জরুরি।
বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যখনই জাতি সংকটে পড়েছে সশস্ত্র বাহিনীই তার নির্ভরযোগ্য আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই নির্ভরতার পেছনে রয়েছে একটি আদর্শিক কাঠামো, একটি বিশ্বাস, যার নাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এই চেতনাই সশস্ত্র বাহিনীকে করেছে জনগণের বাহিনী, শাসকের নয়। এই চেতনাই ৭ নভেম্বরকে দিয়েছে ইতিহাসে স্থায়ী স্থান এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্টকে করেছে এক নতুন জাগরণের সূচক।
ভবিষ্যতের দিনগুলোয় দেশকে আরো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক মহামারি, সাইবার যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—সবই আমাদের জন্য হুমকি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জাতির প্রত্যাশা আরো বেড়ে যাবে। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে তখনই যখন বাহিনী থাকবে নৈতিকভাবে দৃঢ়, পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত ও আদর্শিকভাবে জাতীয়তাবাদী।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে, তবে তার মূল আদর্শ বদলায়নি এবং সেটি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
শহীদ জিয়াউর রহমান এই বাহিনীকে যেভাবে রচনা করেছিলেন, তারেক রহমান সেই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ কেবল ভূখণ্ড হিসেবে নয়, একটি আদর্শিক জাতিসত্তা হিসেবেই টিকে থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে এই চেতনা জাগ্রত থাকুক—এই হোক আমাদের কামনা।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে