কাজী সালাহউদ্দীন
সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ-আইনের শাসন, মূল্যবোধ এবং চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যিনি রেখে গেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ কবি মনীষী এডমন্ড বার্ককে, তার অকুতোভয় উচ্চকণ্ঠে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য। উনিশ শতকে এ উপমহাদেশে সৈয়দ আমির আলীর মতো মহান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে। সিন্ধুতটের রুস্তম কায়ানির মতো নির্ভীক বিচারপতি ইতিহাসের কিংবদন্তি হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। প্রজ্ঞা, বিবেক এবং মুক্ত বুদ্ধি দিয়ে এরা অন্ধকার-অবরুদ্ধ যুগে আলো জ্বালিয়েছিলেন। বিচারপতি মোরশেদ তাদেরই একজন উজ্জ্বল উত্তরাধিকারী। জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কুর্ট হাইমল বলেছিলেন, বিচারপতি মোরশেদ ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিচারক।
মূলত আপাদমস্তক তিনি ছিলেন এক মূল্যবোধের প্রতীক। তৎকালীন পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী দোর্দণ্ড প্রতাপের কাছে বিচারকের ন্যায়দণ্ডকে একটি মুহূর্তের জন্যেও অবনত বা ক্ষীণবল হতে দেননি। ষাটের দশকের সেই চরম অবক্ষয়ের যুগেও তিনি বিচারকের আসনকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বিচারপতি মোরশেদের ব্যক্তিত্বের প্রভা বিচারালয়ের চার দেয়ালের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রগাঢ় মানবতাবোধসম্পন্ন আলোকিত মানুষ ছিলেন তিনি। যুদ্ধোত্তর (১৯৪৩) ব্রিটিশ-ভারতে মানবতার সেবায় ‘আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম সংস্থাটির মাধ্যমে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। দেশভাগের আগে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ও দাঙ্গা নিরসনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা আফজালুননেসা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বোন। বাবা সৈয়দ আবদুস সালিক ছিলেন তৎকালীন বিসিএস (বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তা। এক সময় বগুড়া ও দিনাজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯২৬ সালে রাজশাহী বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সব প্রার্থীর মধ্যে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ (অনার্স) পাস করেন। পর্যায়ক্রমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৫ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যান। ওই সময়ে তিনিই একমাত্র ভারতীয় ছাত্র ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকাকালীন কলেজ সংকলনের প্রথম মুসলমান সম্পাদক ছিলেন তিনি। কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৩৮ সালে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন।
কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেওয়ার পর যেসব মামলায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তার মধ্যে হাল বাগানের অগ্নিকাণ্ডের মামলা, দমদম বিমানবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র মামলা এবং ভবানীপুর ব্যাংক ডাকাতি মামলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন দক্ষ আইনজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তিনি ছিলেন আইনবিষয়ক পরামর্শদাতা।
১৯৩৯ সালের ১১ অক্টোবর সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ কলকাতার মেয়র এ কে এম জাকারিয়ার মেয়ে লায়লা আরজুমান্দ বানুকে বিয়ে করেন। শ্বশুর জাকারিয়ার নামানুসারে কলকাতায় ‘জাকারিয়া স্ট্রিট’ এখনো বিদ্যমান। আইন পেশার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন তিনি।
১৯৫১ সালে ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন তিনি। রাজনীতির ক্ষেত্রে ওই সময়টা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং সধারণ নির্বাচন- বিচারকের আসনে বসেও জনগণের আশা পূরণের লক্ষ্যে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন সব ধরনের বিতর্তের ঊর্ধ্বে থেকে। অথচ তিনি সক্রিয় ছিলেন না রাজনীতির ক্ষেত্রে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়নে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডহক কমিটির বিচারপতি। ১৯৬৪ সালের ১৫ মে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। তার বিচারিক জীবনে বাদী, বিবাদী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের যেমন ছিল অসংখ্য মামলা, তেমনি ছিল সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে। একবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মন্তব্য করেছিলেন, ‘তিনিই একমাত্র বলিষ্ঠ ন্যায়বিচারক এবং নির্ভরশীল উদার ও উচ্চমানের বিচারক।’
১৯৬৭ সালের ১১ নভেম্বর আইযুব সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন, যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন আইয়ুব সরকার কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করলে মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষে বিচারপতি মোরশেদ সমর্থন জানান। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ১২ দফা কর্মসূচি প্রণয়নে তার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়।
ধর্মে অনুরক্ত হয়েও তিনি ছিলেন সব ধরনের গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে। প্রখ্যাত আইনবিদ বিরেন সরকার একবার বলেছিলেন, তিনিই একমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ন্যায্য দাবি আদায়ের ব্যাপারে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ ছিল অভ্যন্ত দুর্গম এবং কণ্টকাকীর্ণ। এই দুর্গম পথের অন্যতম কান্ডারি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ। পরিতাপের বিষয়, আমরা তার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা এবং মূল্যায়ন এখনো করতে পরিনি। অথচ তিনি ছিলেন কুৎসিতের বিরুদ্ধে সুন্দরের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’!
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেন তিনি। রেখে গেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি আমাদের চেতনার উজ্জ্বল বাতিঘর। আজ জন্মদিনে তার স্মৃতি ও আত্মার প্রতি জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা।
লেখক : কবি, মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ স্মৃতি সংসদ
সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ-আইনের শাসন, মূল্যবোধ এবং চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যিনি রেখে গেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ কবি মনীষী এডমন্ড বার্ককে, তার অকুতোভয় উচ্চকণ্ঠে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য। উনিশ শতকে এ উপমহাদেশে সৈয়দ আমির আলীর মতো মহান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে। সিন্ধুতটের রুস্তম কায়ানির মতো নির্ভীক বিচারপতি ইতিহাসের কিংবদন্তি হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। প্রজ্ঞা, বিবেক এবং মুক্ত বুদ্ধি দিয়ে এরা অন্ধকার-অবরুদ্ধ যুগে আলো জ্বালিয়েছিলেন। বিচারপতি মোরশেদ তাদেরই একজন উজ্জ্বল উত্তরাধিকারী। জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কুর্ট হাইমল বলেছিলেন, বিচারপতি মোরশেদ ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিচারক।
মূলত আপাদমস্তক তিনি ছিলেন এক মূল্যবোধের প্রতীক। তৎকালীন পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী দোর্দণ্ড প্রতাপের কাছে বিচারকের ন্যায়দণ্ডকে একটি মুহূর্তের জন্যেও অবনত বা ক্ষীণবল হতে দেননি। ষাটের দশকের সেই চরম অবক্ষয়ের যুগেও তিনি বিচারকের আসনকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বিচারপতি মোরশেদের ব্যক্তিত্বের প্রভা বিচারালয়ের চার দেয়ালের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রগাঢ় মানবতাবোধসম্পন্ন আলোকিত মানুষ ছিলেন তিনি। যুদ্ধোত্তর (১৯৪৩) ব্রিটিশ-ভারতে মানবতার সেবায় ‘আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম সংস্থাটির মাধ্যমে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। দেশভাগের আগে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ও দাঙ্গা নিরসনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা আফজালুননেসা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বোন। বাবা সৈয়দ আবদুস সালিক ছিলেন তৎকালীন বিসিএস (বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তা। এক সময় বগুড়া ও দিনাজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯২৬ সালে রাজশাহী বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সব প্রার্থীর মধ্যে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ (অনার্স) পাস করেন। পর্যায়ক্রমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৫ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যান। ওই সময়ে তিনিই একমাত্র ভারতীয় ছাত্র ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকাকালীন কলেজ সংকলনের প্রথম মুসলমান সম্পাদক ছিলেন তিনি। কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৩৮ সালে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন।
কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেওয়ার পর যেসব মামলায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তার মধ্যে হাল বাগানের অগ্নিকাণ্ডের মামলা, দমদম বিমানবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র মামলা এবং ভবানীপুর ব্যাংক ডাকাতি মামলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন দক্ষ আইনজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তিনি ছিলেন আইনবিষয়ক পরামর্শদাতা।
১৯৩৯ সালের ১১ অক্টোবর সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ কলকাতার মেয়র এ কে এম জাকারিয়ার মেয়ে লায়লা আরজুমান্দ বানুকে বিয়ে করেন। শ্বশুর জাকারিয়ার নামানুসারে কলকাতায় ‘জাকারিয়া স্ট্রিট’ এখনো বিদ্যমান। আইন পেশার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন তিনি।
১৯৫১ সালে ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন তিনি। রাজনীতির ক্ষেত্রে ওই সময়টা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং সধারণ নির্বাচন- বিচারকের আসনে বসেও জনগণের আশা পূরণের লক্ষ্যে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন সব ধরনের বিতর্তের ঊর্ধ্বে থেকে। অথচ তিনি সক্রিয় ছিলেন না রাজনীতির ক্ষেত্রে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়নে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডহক কমিটির বিচারপতি। ১৯৬৪ সালের ১৫ মে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। তার বিচারিক জীবনে বাদী, বিবাদী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের যেমন ছিল অসংখ্য মামলা, তেমনি ছিল সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে। একবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মন্তব্য করেছিলেন, ‘তিনিই একমাত্র বলিষ্ঠ ন্যায়বিচারক এবং নির্ভরশীল উদার ও উচ্চমানের বিচারক।’
১৯৬৭ সালের ১১ নভেম্বর আইযুব সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন, যা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন আইয়ুব সরকার কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করলে মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষে বিচারপতি মোরশেদ সমর্থন জানান। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ১২ দফা কর্মসূচি প্রণয়নে তার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়।
ধর্মে অনুরক্ত হয়েও তিনি ছিলেন সব ধরনের গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে। প্রখ্যাত আইনবিদ বিরেন সরকার একবার বলেছিলেন, তিনিই একমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ন্যায্য দাবি আদায়ের ব্যাপারে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ ছিল অভ্যন্ত দুর্গম এবং কণ্টকাকীর্ণ। এই দুর্গম পথের অন্যতম কান্ডারি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ। পরিতাপের বিষয়, আমরা তার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা এবং মূল্যায়ন এখনো করতে পরিনি। অথচ তিনি ছিলেন কুৎসিতের বিরুদ্ধে সুন্দরের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’!
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেন তিনি। রেখে গেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি আমাদের চেতনার উজ্জ্বল বাতিঘর। আজ জন্মদিনে তার স্মৃতি ও আত্মার প্রতি জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা।
লেখক : কবি, মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ স্মৃতি সংসদ
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে