যে সংস্কার জরুরি
সায়ন্থ সাখাওয়াৎ
রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক কাজে অংশ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। যদিও যারা যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাদের সেই প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। সেই বিধিবিধানে যদি সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে, তবে তা মানতে বাধ্য ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা। কিন্তু বাংলাদেশে এই বিধিনিষেধ না মানার জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কৃত হওয়ার নজিরও আছে। ১৯৯৬ সালে ‘জনতার মঞ্চ’খ্যাত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চে অংশ নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা ম. খা আলমগীর সচিব থেকে পরে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশে পেশাজীবী সংগঠনের ছড়াছড়ি। আর পেশাজীবী সংগঠন মানেই রাজনৈতিক সংগঠন। চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ যেকোনো পেশাজীবী সংগঠনের দিকে তাকালে পেশাজীবী দেখতে পাবেন না। দেখতে পাবেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ কোনো না কোনো রাজনৈতিক চেহারা। আবার একই দলের মধ্যেও ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে একই পেশার একাধিক সংগঠন বিদ্যমান। এসব সংগঠনের কোথাও পেশার সদস্যদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো অবস্থান নিতে দেখা যায় না।
১৬ বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে যত অনাচার হয়েছে, তার মূলে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ- স্বাচিপ। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থি, এমনকি দলনিরপেক্ষ চিকিৎসকরা ছিল চরম অবহেলিত। শুধু রাজনৈতিক কারণে পদ-পদোন্নতিবঞ্চিত অনেক যোগ্য চিকিৎসকের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দেশের মানুষ। অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ দেশ ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ অতিপ্রতিক্রিয়াশীল অ্যাগ্রেসিভ দল ও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে ১৬ বছর ধরে নজিরবিহীন নৈরাজ্য করেছে। কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য যে বিএনপি আমলেও আওয়ামী লীগপন্থিরা অনেক ক্ষেত্রে ছিল বঞ্চিত। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের পরও ১৬ বছরের বঞ্চনা পুষিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য খাতের অনেক কিছুই দখলে নিয়েছেন। এভাবেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে একপক্ষ একক আধিপত্য নিয়ে আবির্ভূত হয় এবং আরেকপক্ষ প্রান্তিক হয়ে যায়। ক্ষমতাসীনদের পক্ষের শক্তি সব ভোগ করবে আর বাকিরা বঞ্চিত হবে, এ ধরনের ‘অল অর নান ল’ টাইপের পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার পেছনে মূল কারণ চিকিৎসকদের সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া।
ঠিক একইভাবে সাংবাদিকদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার ফলে সাংবাদিকদের অন্যতম সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে আলাদা হয়ে ব্র্যাকেটে ‘একাংশ’ লিখতে হচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণও সরকারপন্থিদের কবজায় চলে যায়। বিট সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো পর্যন্ত দলীয় পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তার কমিটি করার সময় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে প্রণীত কালো আইন রোধ ও সংবাদকর্মীদের স্বার্থরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সাংবাদিকদের সব সংগঠনকে একযোগে কাজ করতে দেখা যায় না। আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নেও আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর তৎপরতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
শিক্ষকরাও সাদা, নীল, গোলাপি কত কী বর্ণ ধারণ করেন! একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষক পরিচয়ে থাকেন না। তিনি হয়ে যান আওয়ামী শিক্ষক, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক বা জামায়াতি শিক্ষক। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা সংস্কার, শিক্ষক ও ছাত্রদের অধিকার রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি প্রকট আকারে ধরা দেয়। এর পেছনেও মূল কারণ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্য। নিজ সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের জীবন সরকারি দলের গুন্ডামির কারণে হুমকির মুখে পড়লেও তাদের রক্ষা করার উদ্যোগ নেয় না সরকারপন্থি শিক্ষকদের সংগঠনগুলো।
আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও চিত্র অভিন্ন। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক অবস্থান চিকিৎসক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের মতোই বিভক্ত করে রেখেছে আইনজীবীদেরও। এই আইনজীবীরাই দলীয় স্বার্থ মাথায় রেখে বিচারকের দরজায় লাথি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। এই আইনজীবীদের মধ্য থেকেই যখন বিচারক নিয়োগ করা হয়, তখন সেই বিচারক তার দলীয় মানসিকতা থেকে কতটুকু উঠে আসতে পারেন, সে প্রশ্নটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ে রাজনৈতিক প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদসহ কোনো পেশার সদস্যরাই এই বিভাজনের বাইরে নেই। খুব ছোটখাটো সাধারণ পেশার সদস্য থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কৃষিবিদÑ প্রত্যেকেই রাজনৈতিক মেরূকরণের মধ্যে ঢুকে গেছেন। ফলে এরা ক্ষেত্রবিশেষে মোর রোমান দ্যান দ্য পোপের মতোই আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় আওয়ামী বা বিএনপির চেয়ে বড় বিএনপি হয়ে ওঠেন।
পেশাজীবীদের এই রাজনৈতিক প্রকট বিভাজনের ফলে সরকারপন্থি পেশাজীবীরা ও রাজনৈতিক দলগুলো কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত হলেও সামগ্রিকভাবে পেশার সব সদস্য ও দেশের সেবাগ্রহীতারা উপকৃত হন না। তাই পেশাজীবীরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাজনীতি করার প্রচলিত ধারায় থাকবেন, নাকি এ ধারার সংস্কার করা দরকার, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত।
বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, যিনি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, তিনিই আবার রাজনৈতিক দলেরও কোনো না কোনো কমিটিতে পদধারী নেতা। ফলে পেশাজীবীদের কোনো ন্যায়সংগত দাবি যদি তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলের স্বার্থ পরিপন্থী হয়, তখন ওই নেতারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না। তারা পেশাজীবীদের সংগঠনকে দলের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে পেশার সদস্যদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন।
সরকার-সমর্থিত সংগঠনগুলোর সদস্যরা পদ-পদবি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন বলে তারা পেশাজীবীদের এই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কিছু বলতে চান না। আবার সরকারি দল এই পেশাজীবীদের সরকারি অন্যায়-অনৈতিক ভূমিকার সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে তারা কখনোই চায় না এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হোক। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পেশাজীবীদের মাঠে নামাতে পারে বলে তারাও চান না পেশাজীবীরা দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসে পেশাজীবীদের কল্যাণে স্বতন্ত্র সংগঠন করুক।
এই কঠিন চক্র থেকে পেশাজীবীদের বের করে এনে সত্যিকারের পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা কোনো রাজনৈতিক সরকারের বা দলের দ্বারা সম্ভব নয় এটা পরিষ্কার। তাই পেশাজীবীদের সংগঠনের রূপরেখা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সংস্কার ভাবনা ও তার বাস্তবায়নের সঠিক সময় এখনই।
লেখক : কবি, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক কাজে অংশ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। যদিও যারা যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাদের সেই প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। সেই বিধিবিধানে যদি সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে, তবে তা মানতে বাধ্য ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা। কিন্তু বাংলাদেশে এই বিধিনিষেধ না মানার জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কৃত হওয়ার নজিরও আছে। ১৯৯৬ সালে ‘জনতার মঞ্চ’খ্যাত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চে অংশ নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা ম. খা আলমগীর সচিব থেকে পরে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশে পেশাজীবী সংগঠনের ছড়াছড়ি। আর পেশাজীবী সংগঠন মানেই রাজনৈতিক সংগঠন। চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ যেকোনো পেশাজীবী সংগঠনের দিকে তাকালে পেশাজীবী দেখতে পাবেন না। দেখতে পাবেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ কোনো না কোনো রাজনৈতিক চেহারা। আবার একই দলের মধ্যেও ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে একই পেশার একাধিক সংগঠন বিদ্যমান। এসব সংগঠনের কোথাও পেশার সদস্যদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো অবস্থান নিতে দেখা যায় না।
১৬ বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে যত অনাচার হয়েছে, তার মূলে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ- স্বাচিপ। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থি, এমনকি দলনিরপেক্ষ চিকিৎসকরা ছিল চরম অবহেলিত। শুধু রাজনৈতিক কারণে পদ-পদোন্নতিবঞ্চিত অনেক যোগ্য চিকিৎসকের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দেশের মানুষ। অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ দেশ ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ অতিপ্রতিক্রিয়াশীল অ্যাগ্রেসিভ দল ও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে ১৬ বছর ধরে নজিরবিহীন নৈরাজ্য করেছে। কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য যে বিএনপি আমলেও আওয়ামী লীগপন্থিরা অনেক ক্ষেত্রে ছিল বঞ্চিত। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের পরও ১৬ বছরের বঞ্চনা পুষিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য খাতের অনেক কিছুই দখলে নিয়েছেন। এভাবেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে একপক্ষ একক আধিপত্য নিয়ে আবির্ভূত হয় এবং আরেকপক্ষ প্রান্তিক হয়ে যায়। ক্ষমতাসীনদের পক্ষের শক্তি সব ভোগ করবে আর বাকিরা বঞ্চিত হবে, এ ধরনের ‘অল অর নান ল’ টাইপের পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার পেছনে মূল কারণ চিকিৎসকদের সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া।
ঠিক একইভাবে সাংবাদিকদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার ফলে সাংবাদিকদের অন্যতম সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে আলাদা হয়ে ব্র্যাকেটে ‘একাংশ’ লিখতে হচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণও সরকারপন্থিদের কবজায় চলে যায়। বিট সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো পর্যন্ত দলীয় পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তার কমিটি করার সময় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে প্রণীত কালো আইন রোধ ও সংবাদকর্মীদের স্বার্থরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সাংবাদিকদের সব সংগঠনকে একযোগে কাজ করতে দেখা যায় না। আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নেও আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর তৎপরতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
শিক্ষকরাও সাদা, নীল, গোলাপি কত কী বর্ণ ধারণ করেন! একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষক পরিচয়ে থাকেন না। তিনি হয়ে যান আওয়ামী শিক্ষক, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক বা জামায়াতি শিক্ষক। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা সংস্কার, শিক্ষক ও ছাত্রদের অধিকার রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি প্রকট আকারে ধরা দেয়। এর পেছনেও মূল কারণ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্য। নিজ সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের জীবন সরকারি দলের গুন্ডামির কারণে হুমকির মুখে পড়লেও তাদের রক্ষা করার উদ্যোগ নেয় না সরকারপন্থি শিক্ষকদের সংগঠনগুলো।
আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও চিত্র অভিন্ন। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক অবস্থান চিকিৎসক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের মতোই বিভক্ত করে রেখেছে আইনজীবীদেরও। এই আইনজীবীরাই দলীয় স্বার্থ মাথায় রেখে বিচারকের দরজায় লাথি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। এই আইনজীবীদের মধ্য থেকেই যখন বিচারক নিয়োগ করা হয়, তখন সেই বিচারক তার দলীয় মানসিকতা থেকে কতটুকু উঠে আসতে পারেন, সে প্রশ্নটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ে রাজনৈতিক প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদসহ কোনো পেশার সদস্যরাই এই বিভাজনের বাইরে নেই। খুব ছোটখাটো সাধারণ পেশার সদস্য থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কৃষিবিদÑ প্রত্যেকেই রাজনৈতিক মেরূকরণের মধ্যে ঢুকে গেছেন। ফলে এরা ক্ষেত্রবিশেষে মোর রোমান দ্যান দ্য পোপের মতোই আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় আওয়ামী বা বিএনপির চেয়ে বড় বিএনপি হয়ে ওঠেন।
পেশাজীবীদের এই রাজনৈতিক প্রকট বিভাজনের ফলে সরকারপন্থি পেশাজীবীরা ও রাজনৈতিক দলগুলো কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত হলেও সামগ্রিকভাবে পেশার সব সদস্য ও দেশের সেবাগ্রহীতারা উপকৃত হন না। তাই পেশাজীবীরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাজনীতি করার প্রচলিত ধারায় থাকবেন, নাকি এ ধারার সংস্কার করা দরকার, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত।
বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, যিনি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, তিনিই আবার রাজনৈতিক দলেরও কোনো না কোনো কমিটিতে পদধারী নেতা। ফলে পেশাজীবীদের কোনো ন্যায়সংগত দাবি যদি তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলের স্বার্থ পরিপন্থী হয়, তখন ওই নেতারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না। তারা পেশাজীবীদের সংগঠনকে দলের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে পেশার সদস্যদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন।
সরকার-সমর্থিত সংগঠনগুলোর সদস্যরা পদ-পদবি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন বলে তারা পেশাজীবীদের এই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কিছু বলতে চান না। আবার সরকারি দল এই পেশাজীবীদের সরকারি অন্যায়-অনৈতিক ভূমিকার সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে তারা কখনোই চায় না এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হোক। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পেশাজীবীদের মাঠে নামাতে পারে বলে তারাও চান না পেশাজীবীরা দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসে পেশাজীবীদের কল্যাণে স্বতন্ত্র সংগঠন করুক।
এই কঠিন চক্র থেকে পেশাজীবীদের বের করে এনে সত্যিকারের পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা কোনো রাজনৈতিক সরকারের বা দলের দ্বারা সম্ভব নয় এটা পরিষ্কার। তাই পেশাজীবীদের সংগঠনের রূপরেখা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সংস্কার ভাবনা ও তার বাস্তবায়নের সঠিক সময় এখনই।
লেখক : কবি, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৭ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে