মিনার রশীদ
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটি অদ্ভুতভাবে গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সব পরিমিতিবোধ হারিয়ে ফেলি! রাজনৈতিক নেতা এবং ধর্মীয় আলেম—উভয়ের ক্ষেত্রে বিশেষণের বাড়াবাড়ি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে পীরদের নামের আগে এই বিশেষণ অত্যধিক লম্বা হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে এই বিশেষণ পীরদের মতো এত লম্বা না হলেও উচ্চতায় আকাশ ছুঁয়ে যায়।
প্রয়াত জিল্লুর রহমান তার নেত্রী শেখ হাসিনাকে সক্রেটিস, এরিস্টটলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং এরই নগদ প্রতিদান হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনটি অলংকৃত করেছিলেন! এই কথাটি বলার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার নেত্রী যদি ভুল করে, তখন কী বলবেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আমার নেত্রী কোনো ভুল করতে পারেন না। জিল্লুর রহমান নামটি এ কারণেই তৈলুর রহমান হয়ে পড়ে! শেখ হাসিনার আশপাশে এ রকম তৈলুর রহমান অসংখ্য ছিল। এসব তৈল-মর্দনকে তিনি কতটুকু উপভোগ করতেন, তা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনগুলোয় বোঝা যেত! শেখ হাসিনার বাবাও ওই তৈলের একই সমঝদার ছিলেন। যদিও মুখে বলতেন, চাটার দল চেটে সব খেয়ে ফেলছে। কিন্তু সেই চাটার দল কিংবা চোরের দল কারো কাছ থেকেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে যাননি!
এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি সুন্দর নজির স্থাপন করেছেন! নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার নামের সঙ্গে আপনারা বিভিন্ন বিশেষণ ব্যবহার করেন, দয়া করে এগুলো ব্যবহার করবেন না।’ এর আগেও কয়েকবার তিনি এই নির্দেশটি দিয়েছেন এবং তিনি যে এতে বিব্রত হন, সেই অভিব্যক্তিও তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।
নিজের সমালোচকদের প্রতিও তিনি এ যাবৎ নমনীয়তা দেখিয়ে গেছেন। তবে তার কাজের এই প্রতিফলনটি দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ছাত্রলীগে গ্রুমিং হওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণের হুমকি খুবই উদ্বেগজনক ঠেকছে।
ওনাদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে পদ-পদবির কারণে বিএনপিতে যোগ দিলেও বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক আচরণকে এখনো সম্যক আত্মস্থ করতে পারেননি! বরং আগের বাকশালী খাসলত অনেকটা রয়ে গেছে। ওনারা বিএনপির অ্যাসেট না, বরং অনেকটা লায়াবিলিটিজ হয়ে পড়ছেন।
শেখ হাসিনা মুখ খুললেই আওয়ামী লীগের ভোট কমে যেত। এ কারণে বেগম খালেদা জিয়া বলতেন, তাকে কথা বলতে দেন। কারণ ও মুখ খুললেই আমাদের সুবিধা। একই পলিটিক্যাল বেনিফিট বোধহয় এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ পাচ্ছে গুটিকয় মধ্যমসারির নেতা-নেত্রীর কারণে।
বিষয়টির প্রতি বিএনপির টপ নেতৃত্বের আশু মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তা না হলে লাভের গুড় এই পিঁপড়ারাই খেয়ে ফেলবে।
আমার গত সপ্তাহের কলামটিতে বিএনপির ‘আইডিওলজিক্যাল শিফটিং’ সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণটি তুলে ধরেছিলাম। ‘ডানপন্থাকে দক্ষিণপন্থা বলে ডাকা হলেও বামপন্থাকে কেন উত্তরপন্থা বলে ডাকা হয় না’—এ রকম একটা প্রশ্নও রেখেছিলাম। এই ‘উত্তরপন্থা’ শব্দটি কলামটির জন্য একটি বিশেষ ইনডিকেটিভ শব্দ ছিল! সেই উত্তরপন্থা শব্দটি প্রথমবারের মতো সালাহউদ্দিন উচ্চারণ করেছেন ৭ আগস্ট, লেখাটি প্রকাশের পরের দিনটিতে! সেখানে তিনি বিএনপির অবস্থান খোলাসা করেছেন, ‘আমরা দক্ষিণপন্থাও না, উত্তরপন্থাও না। আমরা বাংলাদেশের পন্থা, মধ্যপন্থায় বিশ্বাস করি। সে জন্য সব রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তি এবং জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছি।’
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি! বেগম খালেদা জিয়া আরো পরিষ্কার করে বলেছিলেন, আমরা ডানের বামে আর বামের ডানে। কিন্তু ইদানীং বিএনপিকে ‘ডানের বামে’ দেখা গেলেও ‘বামের ডানে’ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না বলে জোর অভিযোগ উঠেছে।
নিজের মধ্যপন্থি পরিচয়টুকু স্পষ্ট করার নিমিত্তে বিএনপি ডানপন্থিদের সঙ্গে একটু দূরত্ব তৈরি করলেও বামপন্থি জোটটির সঙ্গে (গণতন্ত্র মঞ্চ) সখ্য অটুট রেখেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সর্বশেষ যে মিটিংটি হয়েছে, সেখানেও বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটেছে, তা ঠেকাতে পাল্টা ‘রাজনৈতিক বয়ান’ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন মঞ্চের নেতারা। এতে বিএনপিও একমত পোষণ করেছে বলে জানা গেছে। এই লেখাটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সেই সংবাদটির বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি।
অথচ কথিত দক্ষিণপন্থা তো উত্তরপন্থাদের সমস্যা, বিএনপির সমস্যা নহে।
কারণ ফ্যাসিবাদ উৎখাতে ডান-বাম-মধ্যপন্থিরা এক হয়ে কাজ করেছে! এই আন্দোলনের সফলতায় ডানদের চেয়ে বামদের অবদান খুব বেশি ছিল না যে তাদের এখন বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি কোনো আন্তর্জাতিক কিংবা ইন্ডিয়ান ফায়দা বিএনপি কিংবা তদীয় জোটের জন্য জোগাড় করতে পারেনি। অথচ এ রকম একটি আশা বুকে বেঁধেই ড. কামাল হোসেনকে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি বলয়ের নতুন ইমাম বানানো হয়েছিল! ড. কামাল হোসেন আগেকার জোটের কিছু কিছু নমশূদ্রের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে এই পৌরোহিত্য গ্রহণ করেছিলেন!
ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রবকে মনে হতো গরিব শ্বশুরের ঘরে মারাত্মক ধনী জামাইয়ের মতো। তাদের আপ্যায়ন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব তখন তটস্থ থাকত। বিএনপির তখন দুই জোট—একজোটে ব্রাহ্মণকুল এবং অন্য জোটে নমঃশূদ্রকুল। এ দুই কুল নিয়ে তখন বিএনপি ছিল সত্যিই বেকুল! এই দুই কুল তখন আক্ষরিক অর্থেও এক টেবিলে বসতেন না।
জাতীয়তাবাদী বলয়ের নেতৃত্বটি এই মারাত্মক ধনী জামাইয়ের পদতলে সমর্পণ করা হলেও অনেক হাতে-পায়ে ধরেও কখনোই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামটি উচ্চারণ করানো সম্ভব হয়নি। তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেকবার নিজেদের বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করেছিলেন! তখন মারাত্মক গরিব ও উপায়হীন শ্বশুরের মতো বিএনপিকে এসব অবজ্ঞা হজম করতে হয়েছিল মেয়ের (দেশটির ও দেশটির গণতন্ত্রের) সুখের চিন্তায়! ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের সুলতান মুহাম্মদ মনসুর সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এবং বিএনপির পাঁচ-ছয়জন কুমিরছানাকে সংসদে টেনে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
যে পাঁচ-ছয়জন কুমিরছানা তখন বিএনপিকে নাকে খত দিয়ে সেই সংসদকে বৈধতা দিতে বাধ্য করেছিলেন তাদেরই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের হারুন অর রশিদ, যিনি ইদানীং বিএনপির পক্ষে ফাইটিংয়ে একজন সিপাহসালারের ভূমিকায় রয়েছেন।
তখন অনেকে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, খারাপ কী, সংসদে কয়েকজন থাকলেও জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে সরকারকে ফেলতে পারলে মন্দ কী? এসবের জবাবে তখন বাংলা সিনেমার এক ভিলেনকে উদ্দেশ্য করে জনৈকা নায়িকার ডায়ালগটি আমার পেজে পোস্ট করেছিলাম, ‘হে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি তো মন পাবি না!’
শ্বশুরের ইজ্জতের বারোটা বাজলেও মেয়ের কপালে সুখ জোটেনি। মহামূল্যবান জামাইদের প্রতি বিএনপির তোয়াজ একটুও কমেনি, বরং অনেক বেড়ে গেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তাছাড়া প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিএনপি যে জটিলতায় আটকে আছে, সেখানে নিজের ঔরসের সন্তানদের বঞ্চিত করে কাগুজে বাঘ সেসব অতি মূল্যবান জামাইদের জায়গা করে দিতে হবে!
সেই মহামূল্যবান জামাইদের প্রতিনিধি হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির ঘাড়ে জেকে বসেছে। বিএনপিকে মধ্যপন্থি হিসেবে তুলে ধরতে এখনো এদের কদর বিএনপি মহলে রয়ে গেছে কিংবা এদের মুরব্বিরা বিএনপিকে সেভাবেই কনভিন্স করে ফেলেছে। এ যেন সেন্টের সুঘ্রাণ দিয়ে আতরের গন্ধ ঢেকে দেওয়ার মতো অবস্থা।
বিএনপি আজ রাজনৈতিকভাবে এমন দেউলিয়া হয়ে গেল যে বয়ান তৈরির কাজ বামদের হাতে সাব-কন্ট্রাক্টিং দিতে হয়, গণতন্ত্র মঞ্চের কাছ থেকে গণতন্ত্রের সবক নিতে হয়? আপনাদের হয়তো স্মরণে আছে, গণভবনের এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার একটি ঘরের ভেতরের কথা বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। মাইক্রোফোনটি যে অন-এয়ার মোডে ছিল, তা খেয়াল করেনি। ইনুকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এখন কমিউনিস্টদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে? কমিউনিস্টদের সম্পর্কে স্বয়ং শেখ হাসিনার এই ধারণা থাকলে দেশের অন্যান্য মানুষের কী ধারণা থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়!
কাজেই শ্রদ্ধেয় সালাহউদ্দিন ভাই, কয়েক দিন আগে আপনার পক্ষে দুটি কলাম লিখে অনেক গালমন্দ খেয়েছি। আপনাদের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা থেকেই এখন কিছু কথা না বলে থাকতে পারছি না! সম্ভবত আপনারা দলটিকে একটি চরম আদর্শিক ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন! আপনারা কী বলছেন, সেটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে কী করছেন, সেটিও জনগণ মনিটর করছে। আপনি সম্প্রতি দেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ শুরু করেছেন, টুপি-পাঞ্জাবি পরে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন।
সঙ্গে সঙ্গে বামদের সঙ্গে করে রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন! ছাত্রদলের শুরু থেকেই আপনি সঙ্গে আছেন, সংগঠনটির সহ সভাপতি ছিলেন, কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজেই সেই আপনাকে আমার মতো নগণ্যের জিয়ার রাজনীতি শেখানো এক চরম ধৃষ্টতা হবে। তারপরও বলতে হয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কখনোই পাঞ্জাবি-টুপি পরে রাজনীতি করতে হয়নি; কিংবা তা করে মুসলিম মেজরিটি দেশের জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হয়নি।
ম্যাডাম খালেদা জিয়াকেও প্রতিপক্ষের মতো নির্বাচনের আগে মাথায় পট্টি পরে রাজনীতি করতে হয়নি। একজন মডারেট নারী হয়েও দেশের আলেম-ওলামাদের সমর্থন পেতে সমস্যা হয়নি। মূল কারণ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ম্যাডাম খালেদা জিয়া উভয়েই ডান ও বাম সবাইকে ব্যবহার করেছেন কিন্তু বিএনপির রাজনৈতিক বয়ান তৈরির দায়িত্ব কারো কাছে সাব-কন্ট্রাক্টিং দেননি। ডান ও বাম ঘরানার কারো সহায়তায় নয়—বিএনপি নিজেই তার রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করেছে।
এটাই ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যপন্থার রাজনীতি। এই মধ্যপন্থার গ্যাঁড়াকলে পড়ে আবার সুবিধাপন্থি হননি, একজন বিশ্বাসী হিসেবে নিজেদের ঠোঁটে কুলুপ আঁটেননি । যখন প্রয়োজন পড়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বোধ-বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়াতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেননি।
সমস্যা হলো, এই অতি মূল্যবান জামাইদের সঙ্গে মাখামাখির কারণে বিএনপির মধ্যেও তাদের আতঙ্ক ভর করেছে। অথচ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে একটু-আধটু আল্লাহ-খোদার নাম নিলে কিংবা সেটাকে নিজেদের কাজে লাগালে বিএনপির লিবারেল রাজনীতির কোনো ক্ষতি হতো না।
আমাদের ছাত্রজীবনের শেষদিকে একটা করুণ কাহিনি মনে পড়ছে। তখন আমাদের এলাকার এমপি পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সম্ভবত আইসিইউতে ছিলেন। এ খবর শুনে সেকেন্ড ইন কমান্ড মিষ্টি বিতরণ শুরু করে দিলেন। এ খবরটি শুনে টোটাল রাজনীতির ওপরই মনটি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে! নিজের শত্রু না, একই দলের একই মতের একজন মৃত্যুপথের যাত্রী আর সেটি উদযাপন করছেন তারই এক কমরেড। জানি না—এই মানসিকতা কতটুকু বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে গেছে! মানুষের মনের এই জায়গায় কাজ করতে পারে একমাত্র ধর্ম। সেই ধর্মের দরজাকে আমাদের মুখের ওপর বন্ধ করে রেখেছে এই মহামূল্যবান জামাইরা।
বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী। অথচ দেখেন এর একটি চমৎকার সমাধান ইসলামে ছিল। নেতৃত্ব কেউ চাইতে পারবে না।
ইসলামে পদ চেয়ে নেওয়া স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। সহিহ মুসলিমে এসেছে—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘তুমি আমাদের কাছে দায়িত্বের পদ চেয়ো না। যদি তুমি চাও, তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তোমার নিজের ওপর ছেড়ে দিয়ে; কিন্তু যদি তুমি না চাও, আমরা তোমাকে সাহায্য করব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৩৩) অন্য এক হাদিসে (বোখারি ও মুসলিম) তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কাউকে দায়িত্ব দিইনি, যে তা চায় বা লোভ করে।’
এই হাদিস দুটি চর্চা করে আমাদের দেশে কেউ কেউ ফায়দা পেয়েছেন। বিএনপি তার নিজের অবয়ব বহাল রেখেও এই হাদিসের চর্চা করে ফায়দা নিতে পারত। কিন্তু আফসোস। জাতির মহামূল্যবান জামাই বাবাজিরা তা হতে দেবে না!
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটি অদ্ভুতভাবে গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সব পরিমিতিবোধ হারিয়ে ফেলি! রাজনৈতিক নেতা এবং ধর্মীয় আলেম—উভয়ের ক্ষেত্রে বিশেষণের বাড়াবাড়ি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে পীরদের নামের আগে এই বিশেষণ অত্যধিক লম্বা হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে এই বিশেষণ পীরদের মতো এত লম্বা না হলেও উচ্চতায় আকাশ ছুঁয়ে যায়।
প্রয়াত জিল্লুর রহমান তার নেত্রী শেখ হাসিনাকে সক্রেটিস, এরিস্টটলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং এরই নগদ প্রতিদান হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনটি অলংকৃত করেছিলেন! এই কথাটি বলার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার নেত্রী যদি ভুল করে, তখন কী বলবেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আমার নেত্রী কোনো ভুল করতে পারেন না। জিল্লুর রহমান নামটি এ কারণেই তৈলুর রহমান হয়ে পড়ে! শেখ হাসিনার আশপাশে এ রকম তৈলুর রহমান অসংখ্য ছিল। এসব তৈল-মর্দনকে তিনি কতটুকু উপভোগ করতেন, তা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনগুলোয় বোঝা যেত! শেখ হাসিনার বাবাও ওই তৈলের একই সমঝদার ছিলেন। যদিও মুখে বলতেন, চাটার দল চেটে সব খেয়ে ফেলছে। কিন্তু সেই চাটার দল কিংবা চোরের দল কারো কাছ থেকেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে যাননি!
এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি সুন্দর নজির স্থাপন করেছেন! নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার নামের সঙ্গে আপনারা বিভিন্ন বিশেষণ ব্যবহার করেন, দয়া করে এগুলো ব্যবহার করবেন না।’ এর আগেও কয়েকবার তিনি এই নির্দেশটি দিয়েছেন এবং তিনি যে এতে বিব্রত হন, সেই অভিব্যক্তিও তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।
নিজের সমালোচকদের প্রতিও তিনি এ যাবৎ নমনীয়তা দেখিয়ে গেছেন। তবে তার কাজের এই প্রতিফলনটি দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ছাত্রলীগে গ্রুমিং হওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণের হুমকি খুবই উদ্বেগজনক ঠেকছে।
ওনাদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে পদ-পদবির কারণে বিএনপিতে যোগ দিলেও বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক আচরণকে এখনো সম্যক আত্মস্থ করতে পারেননি! বরং আগের বাকশালী খাসলত অনেকটা রয়ে গেছে। ওনারা বিএনপির অ্যাসেট না, বরং অনেকটা লায়াবিলিটিজ হয়ে পড়ছেন।
শেখ হাসিনা মুখ খুললেই আওয়ামী লীগের ভোট কমে যেত। এ কারণে বেগম খালেদা জিয়া বলতেন, তাকে কথা বলতে দেন। কারণ ও মুখ খুললেই আমাদের সুবিধা। একই পলিটিক্যাল বেনিফিট বোধহয় এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ পাচ্ছে গুটিকয় মধ্যমসারির নেতা-নেত্রীর কারণে।
বিষয়টির প্রতি বিএনপির টপ নেতৃত্বের আশু মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তা না হলে লাভের গুড় এই পিঁপড়ারাই খেয়ে ফেলবে।
আমার গত সপ্তাহের কলামটিতে বিএনপির ‘আইডিওলজিক্যাল শিফটিং’ সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণটি তুলে ধরেছিলাম। ‘ডানপন্থাকে দক্ষিণপন্থা বলে ডাকা হলেও বামপন্থাকে কেন উত্তরপন্থা বলে ডাকা হয় না’—এ রকম একটা প্রশ্নও রেখেছিলাম। এই ‘উত্তরপন্থা’ শব্দটি কলামটির জন্য একটি বিশেষ ইনডিকেটিভ শব্দ ছিল! সেই উত্তরপন্থা শব্দটি প্রথমবারের মতো সালাহউদ্দিন উচ্চারণ করেছেন ৭ আগস্ট, লেখাটি প্রকাশের পরের দিনটিতে! সেখানে তিনি বিএনপির অবস্থান খোলাসা করেছেন, ‘আমরা দক্ষিণপন্থাও না, উত্তরপন্থাও না। আমরা বাংলাদেশের পন্থা, মধ্যপন্থায় বিশ্বাস করি। সে জন্য সব রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তি এবং জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছি।’
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি! বেগম খালেদা জিয়া আরো পরিষ্কার করে বলেছিলেন, আমরা ডানের বামে আর বামের ডানে। কিন্তু ইদানীং বিএনপিকে ‘ডানের বামে’ দেখা গেলেও ‘বামের ডানে’ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না বলে জোর অভিযোগ উঠেছে।
নিজের মধ্যপন্থি পরিচয়টুকু স্পষ্ট করার নিমিত্তে বিএনপি ডানপন্থিদের সঙ্গে একটু দূরত্ব তৈরি করলেও বামপন্থি জোটটির সঙ্গে (গণতন্ত্র মঞ্চ) সখ্য অটুট রেখেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সর্বশেষ যে মিটিংটি হয়েছে, সেখানেও বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটেছে, তা ঠেকাতে পাল্টা ‘রাজনৈতিক বয়ান’ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন মঞ্চের নেতারা। এতে বিএনপিও একমত পোষণ করেছে বলে জানা গেছে। এই লেখাটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সেই সংবাদটির বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি।
অথচ কথিত দক্ষিণপন্থা তো উত্তরপন্থাদের সমস্যা, বিএনপির সমস্যা নহে।
কারণ ফ্যাসিবাদ উৎখাতে ডান-বাম-মধ্যপন্থিরা এক হয়ে কাজ করেছে! এই আন্দোলনের সফলতায় ডানদের চেয়ে বামদের অবদান খুব বেশি ছিল না যে তাদের এখন বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি কোনো আন্তর্জাতিক কিংবা ইন্ডিয়ান ফায়দা বিএনপি কিংবা তদীয় জোটের জন্য জোগাড় করতে পারেনি। অথচ এ রকম একটি আশা বুকে বেঁধেই ড. কামাল হোসেনকে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি বলয়ের নতুন ইমাম বানানো হয়েছিল! ড. কামাল হোসেন আগেকার জোটের কিছু কিছু নমশূদ্রের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে এই পৌরোহিত্য গ্রহণ করেছিলেন!
ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রবকে মনে হতো গরিব শ্বশুরের ঘরে মারাত্মক ধনী জামাইয়ের মতো। তাদের আপ্যায়ন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব তখন তটস্থ থাকত। বিএনপির তখন দুই জোট—একজোটে ব্রাহ্মণকুল এবং অন্য জোটে নমঃশূদ্রকুল। এ দুই কুল নিয়ে তখন বিএনপি ছিল সত্যিই বেকুল! এই দুই কুল তখন আক্ষরিক অর্থেও এক টেবিলে বসতেন না।
জাতীয়তাবাদী বলয়ের নেতৃত্বটি এই মারাত্মক ধনী জামাইয়ের পদতলে সমর্পণ করা হলেও অনেক হাতে-পায়ে ধরেও কখনোই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামটি উচ্চারণ করানো সম্ভব হয়নি। তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেকবার নিজেদের বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করেছিলেন! তখন মারাত্মক গরিব ও উপায়হীন শ্বশুরের মতো বিএনপিকে এসব অবজ্ঞা হজম করতে হয়েছিল মেয়ের (দেশটির ও দেশটির গণতন্ত্রের) সুখের চিন্তায়! ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের সুলতান মুহাম্মদ মনসুর সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এবং বিএনপির পাঁচ-ছয়জন কুমিরছানাকে সংসদে টেনে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
যে পাঁচ-ছয়জন কুমিরছানা তখন বিএনপিকে নাকে খত দিয়ে সেই সংসদকে বৈধতা দিতে বাধ্য করেছিলেন তাদেরই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের হারুন অর রশিদ, যিনি ইদানীং বিএনপির পক্ষে ফাইটিংয়ে একজন সিপাহসালারের ভূমিকায় রয়েছেন।
তখন অনেকে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, খারাপ কী, সংসদে কয়েকজন থাকলেও জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে সরকারকে ফেলতে পারলে মন্দ কী? এসবের জবাবে তখন বাংলা সিনেমার এক ভিলেনকে উদ্দেশ্য করে জনৈকা নায়িকার ডায়ালগটি আমার পেজে পোস্ট করেছিলাম, ‘হে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি তো মন পাবি না!’
শ্বশুরের ইজ্জতের বারোটা বাজলেও মেয়ের কপালে সুখ জোটেনি। মহামূল্যবান জামাইদের প্রতি বিএনপির তোয়াজ একটুও কমেনি, বরং অনেক বেড়ে গেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তাছাড়া প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিএনপি যে জটিলতায় আটকে আছে, সেখানে নিজের ঔরসের সন্তানদের বঞ্চিত করে কাগুজে বাঘ সেসব অতি মূল্যবান জামাইদের জায়গা করে দিতে হবে!
সেই মহামূল্যবান জামাইদের প্রতিনিধি হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির ঘাড়ে জেকে বসেছে। বিএনপিকে মধ্যপন্থি হিসেবে তুলে ধরতে এখনো এদের কদর বিএনপি মহলে রয়ে গেছে কিংবা এদের মুরব্বিরা বিএনপিকে সেভাবেই কনভিন্স করে ফেলেছে। এ যেন সেন্টের সুঘ্রাণ দিয়ে আতরের গন্ধ ঢেকে দেওয়ার মতো অবস্থা।
বিএনপি আজ রাজনৈতিকভাবে এমন দেউলিয়া হয়ে গেল যে বয়ান তৈরির কাজ বামদের হাতে সাব-কন্ট্রাক্টিং দিতে হয়, গণতন্ত্র মঞ্চের কাছ থেকে গণতন্ত্রের সবক নিতে হয়? আপনাদের হয়তো স্মরণে আছে, গণভবনের এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার একটি ঘরের ভেতরের কথা বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। মাইক্রোফোনটি যে অন-এয়ার মোডে ছিল, তা খেয়াল করেনি। ইনুকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এখন কমিউনিস্টদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে? কমিউনিস্টদের সম্পর্কে স্বয়ং শেখ হাসিনার এই ধারণা থাকলে দেশের অন্যান্য মানুষের কী ধারণা থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়!
কাজেই শ্রদ্ধেয় সালাহউদ্দিন ভাই, কয়েক দিন আগে আপনার পক্ষে দুটি কলাম লিখে অনেক গালমন্দ খেয়েছি। আপনাদের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা থেকেই এখন কিছু কথা না বলে থাকতে পারছি না! সম্ভবত আপনারা দলটিকে একটি চরম আদর্শিক ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন! আপনারা কী বলছেন, সেটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে কী করছেন, সেটিও জনগণ মনিটর করছে। আপনি সম্প্রতি দেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ শুরু করেছেন, টুপি-পাঞ্জাবি পরে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন।
সঙ্গে সঙ্গে বামদের সঙ্গে করে রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন! ছাত্রদলের শুরু থেকেই আপনি সঙ্গে আছেন, সংগঠনটির সহ সভাপতি ছিলেন, কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজেই সেই আপনাকে আমার মতো নগণ্যের জিয়ার রাজনীতি শেখানো এক চরম ধৃষ্টতা হবে। তারপরও বলতে হয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কখনোই পাঞ্জাবি-টুপি পরে রাজনীতি করতে হয়নি; কিংবা তা করে মুসলিম মেজরিটি দেশের জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হয়নি।
ম্যাডাম খালেদা জিয়াকেও প্রতিপক্ষের মতো নির্বাচনের আগে মাথায় পট্টি পরে রাজনীতি করতে হয়নি। একজন মডারেট নারী হয়েও দেশের আলেম-ওলামাদের সমর্থন পেতে সমস্যা হয়নি। মূল কারণ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ম্যাডাম খালেদা জিয়া উভয়েই ডান ও বাম সবাইকে ব্যবহার করেছেন কিন্তু বিএনপির রাজনৈতিক বয়ান তৈরির দায়িত্ব কারো কাছে সাব-কন্ট্রাক্টিং দেননি। ডান ও বাম ঘরানার কারো সহায়তায় নয়—বিএনপি নিজেই তার রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করেছে।
এটাই ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যপন্থার রাজনীতি। এই মধ্যপন্থার গ্যাঁড়াকলে পড়ে আবার সুবিধাপন্থি হননি, একজন বিশ্বাসী হিসেবে নিজেদের ঠোঁটে কুলুপ আঁটেননি । যখন প্রয়োজন পড়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বোধ-বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়াতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেননি।
সমস্যা হলো, এই অতি মূল্যবান জামাইদের সঙ্গে মাখামাখির কারণে বিএনপির মধ্যেও তাদের আতঙ্ক ভর করেছে। অথচ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে একটু-আধটু আল্লাহ-খোদার নাম নিলে কিংবা সেটাকে নিজেদের কাজে লাগালে বিএনপির লিবারেল রাজনীতির কোনো ক্ষতি হতো না।
আমাদের ছাত্রজীবনের শেষদিকে একটা করুণ কাহিনি মনে পড়ছে। তখন আমাদের এলাকার এমপি পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সম্ভবত আইসিইউতে ছিলেন। এ খবর শুনে সেকেন্ড ইন কমান্ড মিষ্টি বিতরণ শুরু করে দিলেন। এ খবরটি শুনে টোটাল রাজনীতির ওপরই মনটি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে! নিজের শত্রু না, একই দলের একই মতের একজন মৃত্যুপথের যাত্রী আর সেটি উদযাপন করছেন তারই এক কমরেড। জানি না—এই মানসিকতা কতটুকু বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে গেছে! মানুষের মনের এই জায়গায় কাজ করতে পারে একমাত্র ধর্ম। সেই ধর্মের দরজাকে আমাদের মুখের ওপর বন্ধ করে রেখেছে এই মহামূল্যবান জামাইরা।
বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী। অথচ দেখেন এর একটি চমৎকার সমাধান ইসলামে ছিল। নেতৃত্ব কেউ চাইতে পারবে না।
ইসলামে পদ চেয়ে নেওয়া স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। সহিহ মুসলিমে এসেছে—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘তুমি আমাদের কাছে দায়িত্বের পদ চেয়ো না। যদি তুমি চাও, তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তোমার নিজের ওপর ছেড়ে দিয়ে; কিন্তু যদি তুমি না চাও, আমরা তোমাকে সাহায্য করব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৩৩) অন্য এক হাদিসে (বোখারি ও মুসলিম) তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কাউকে দায়িত্ব দিইনি, যে তা চায় বা লোভ করে।’
এই হাদিস দুটি চর্চা করে আমাদের দেশে কেউ কেউ ফায়দা পেয়েছেন। বিএনপি তার নিজের অবয়ব বহাল রেখেও এই হাদিসের চর্চা করে ফায়দা নিতে পারত। কিন্তু আফসোস। জাতির মহামূল্যবান জামাই বাবাজিরা তা হতে দেবে না!
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৭ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে