মতাদর্শের বুদ্‌বুদে নাভিশ্বাসের ঘরবসতি

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩

বাংলাদেশের বর্তমান বিভাজন, বিষোদগার, ট্যাগিং আর কুৎসার রাজনীতি বোঝার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে সহজ পথ আছে প্রত্নতত্ত্ব আর বাণিজ্য শাখার পাঠে। যারা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক, তাদের কাছে কনটেক্সট তথা প্রেক্ষিত বিচ্ছিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাদানের জটিলতা তুলনামূলক কম। কারণ এর সঙ্গে কোনো কোনো আন্তঃসম্পর্ক কিংবা মিল-অমিলের ব্যাখ্যা দিতে হয় না। শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে নথিভুক্ত করলেই দায়সারাভাবে কাজটা শেষ করা যেতে পারে। তবে সাইট, অন--সাইট ও ননসাইট প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডের বিশ্লেষণের কাজগুলো এক অর্থে কম জটিল নয়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী কিংবা গবেষকদের কাছে মার্কেট সেগমেন্টেশন (Market segmentation) তথা বাজার বিভাজন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কৌশল, যার মাধ্যমে একটি বৃহৎ বাজারকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা হয়, যা প্রত্যেকটি অংশের নির্দিষ্ট চাহিদা, পছন্দ এবং বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। এটি ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলো বিশেষ করে লক্ষ্যযুক্ত গ্রাহক গোষ্ঠীর প্রতি কার্যকরভাবে পোঁছানোর সুযোগ দেয়। বাজার বিভাজনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন জনগণের জন্য উপযুক্ত এবং মানানসই পণ্য তৈরি করতে পারে, যা গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং বিক্রয় বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে। সাধারণত, বাজার বিভাজন করা হয় ভৌগোলিক, জাতিগত, আয়ের স্তর, বয়স, জীবনধারা বা মনোবৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা হয়ে গেছে অনেকটা প্রত্নতত্ত্বের প্রেক্ষিত বিচ্ছিন্নতা, তথা বাণিজ্য অনুষদের মার্কেট সেগমেন্টেশনের মতো। আর সে ক্ষেত্রে পক্ষে-বিপক্ষে যারা হাত-পা নেড়ে গর্দভতুল্য উন্মাদনায় পানি ঘোলা করার কাজে দিনরাত্রি এক করছেন, তারা সবাই কমবেশি চেনাজানা ‘অনলাইন তালেবর’। গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং বিক্রয় বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়ে মার্কেট সেগমেন্টেশন যেভাবে কাজ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভিন্ন বিষয় এখন সক্রিয়।

জুলাইয়ের পর বেশির ভাগ মানুষ নানা সেগমেন্টে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এখানে তাদের সম্মিলিত চিন্তা, চেতনা, মতাদর্শ কিংবা আদর্শ বলতে কিছুই আর বাস্তবে টিকেনি। পরিস্থিতি এমন হয়েছে সবাই সবকিছু একসঙ্গে চাইছেন আর যা কিছু চাইছেন তার সবকিছু হতে হবে একান্ত নিজের মতো করে। আর এখানে থেমে গেলেই হতো। কিন্তু না থেকে প্রতিটি সেগমেন্টের অনুসারী তথা ফলোয়াররা বাকিদের জোর করে ঘাড় ধরে নিজেদের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। আর সেটা না পারলে অন্যদের নানা ট্যাগিংয়ের মুখে ফেলে যথারীতি ফ্যাসিবাদী স্টাইলে ডিহিউম্যানাইজ তথা বিমানবীকরণ করা হচ্ছে।

শুরুতে বলা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতিরিক্ত লম্পঝাম্পের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের সত্তাতাত্ত্বিক দিক, এমনকি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে বসছে অনেক অনলাইন তালেবর। সেগমেন্ট হিসেবে অনেকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের সেই চিরচেনা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভের ফেরিওয়ালা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তার বিপরীতে আরেকটি বিধ্বংসী সেগমেন্টের আবির্ভাব হয়েছে। তারা নিজস্ব বুদবুদে বাস করে এর বাইরের মানুষকে সাধারণ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও কার্পণ্যবোধ করে। তারা নিজেদের চিন্তাধারার বাইরের মানুষকে ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের মতো উনমানুষ হিসেবে পুরোপুরি হত্যাযোগ্য ও নিশ্চিহ্নকরণের ডিসকোর্সে বিশ্বাস করে।

অভিন্ন উক্তি যেখানে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষের কাছে হাস্যরসের খোরাক, সেখানে তাদের বিশ্বাস রয়ে যাচ্ছে অটুট। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর বক্তব্য দিয়ে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে এই বিশেষ ধারণাটি। এ সম্পর্কে শুরুতেই আমলে নেওয়া হোক চরমোনাই পীরের বিখ্যাত ‘জাহাজ ও বাইম মাছের কেচ্ছাটি’। জনৈক বক্তা সুরের সুরে বলছেন ‘ও বাইম মাছ আয় আয় আয়....। কিন্তু কিছুতেই জেলে সেই মাছটি ধরতে পারেননি। পরে ‘পীর ছাহেব’ হুজুরের নাম নিয়ে টেঁটা ছুড়তেই সেই মাছ টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়ে।

আপাতদৃষ্টিতে এই গল্পটি অন্যদের কাছে হাস্যরসের খোরাক হলেও ‘চরমোনাই বাবলে’ বসবাসকারীদের জন্য এটি জ্বলন্ত বাস্তব। তারা অনেকেই চোখ বন্ধ করে ‘পীর ছাহেব’ হুজুরের নাম নিয়ে টেঁটা নিক্ষেপ করে। অনেক সময় ভাগ্যগুণে দু-একটি মাছ টেঁটাবিদ্ধ হয়ে তাদের বিশ্বাস আর বাস্তবতার মেলবন্ধন তৈরি করে। একইভাবে ‘চরমোনাই জাহাজ’ সম্পর্কিত ওয়াজ অনেকের হাস্যরসের কারণ হলেও কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করে। তারা চিন্তা করে কিয়ামতের দিন ওই জাহাজে ওঠাই তাদের জীবনের সুনির্ধারিত গন্তব্য।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা মিথ্যাচার কীভাবে এর ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে, এটি নিয়ে কমবেশি অনেকেই লিখেছেন। বাংলাদেশের ভেতরে থেকে বদরুদ্দীন উমর, বাইরে থেকে এসে শর্মিলা বোস কিংবা নয়নিকা মুখার্জি অথবা ওরিয়ানা ফাল্লাচির লেখাগুলো পড়লে যেকোনো বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষের মাথা চক্কর দিয়ে উঠতে পারে। তারপরও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলছে মিথ্যাচার আর বানানো গল্পের পসরা।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভরযোগ্য সূত্রের আলোকে লেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, দেশবাসীর আত্মত্যাগ আর অর্জনের আলেখ্য আমাদের হৃদয়ে ঝংকার তুলতে পারত সহজেই। কিন্তু সেগুলো না করে যথারীতি ফ্যাসিবাদী আমলের গালগল্প আর নির্জলা মিথ্যাচারের নির্লজ্জতা থেকে মুক্তি মেলেনি। ৫ আগস্টের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আড়াল করা গালগল্প বলার ক্ষেত্রে হেরোডোটাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জনৈক ফজলু উকিল।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের কাল্ট ফিগারগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছিল, ঠিক সেভাবেই নিজের ইমেজ তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফজলু। তিনি এ জন্য নেটিজেনদের কাছে বিশ্রিভাবে ট্রলের শিকার হলেও তার একশ্রেণির ভক্তকুলও জন্মেছে। তারা ফজলুর সব কর্ম-অপকর্মের ইনডেমনিটি দিচ্ছে। ফল হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে এই ‘মুজিব বাহিনী কমান্ডার’ যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ না থাকার পরও গলাবাজি করে যাচ্ছেন সদম্ভে। এমনকি তিনি এটাও বলছেন, ‘ফজলু কমান্ডো আসিতেছে’ এটা শোনার পর ওই এলাকা থেকে পাকিস্তানি আর্মি আর রাজাকাররা পালিয়ে যেত।

কিন্তু পাকিস্তানি আর্মিদের জন্য তিনি কোন ভাষায় বলেছেন আর রাজাকারদের জন্য এই হুমকি তিনি কোন ভাষায় দিয়েছেন, এই প্রশ্নটা করার মতো বোধশক্তিও তার ভক্তকুলের নেই। ফজলুর বক্তব্যের বিপরীতে যৌক্তিক সমালোচনা না হয়ে একটি পক্ষ শুধু সে মুক্তিযোদ্ধা এই কারণে তাকে বেইজ্জতি করাকে বিরাট কাজ বলে মনে করছে। আরেকটি পক্ষ মনে করছে, সে যে মুক্তিযোদ্ধা আর সে জন্য তার বলা সব মিথ্যাকেও সত্য বলে মেনে নিতে হবে। বুদবুদের বাসিন্দাদের এই এক জ্বালা। তারা নিজেদের চিন্তা, পেরিফেরি আর ক্যাচমেন্টের বাইরে নতুন কিংবা ভিন্ন কিছু একেবারেই সহ্য করতে পারে না।

বিনোদন জগৎ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিটি ক্ষেত্রে মিলিয়ন মিলিয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফলোয়ারওলাদের বাস্তব চরিত্র অভিন্ন। তাদের ভক্তকুলের নির্দিষ্ট একটি অংশ পুরোপুরি একটি বাবল তথা বুদবুদের মধ্যে বাস করে। তাদের জগৎ বলতে এটুকুই। এর বাইরে তারা নিজে যেমন চিন্তা করতে পারে না, তেমনি অন্য কেউ চিন্তা করতে গেলে তারা তাদের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করতে চায়। আর সে জন্য তারা বেছে নেয় ট্যাগিংয়ের নিকৃষ্টতম পথ। বিশ্বাসের বুদবুদে থাকা একটি দল যেমন তার বাইরের সবাইকে নাস্তিক-মুর্তাদ আর হত্যাযোগ্য মনে করে। তেমনি অবিশ্বাসের বুদবুদে বাস করা কথিত প্রগতিশীল ইসলামোফোবদের চিন্তাও অভিন্ন। তারাও প্রতিটি বিশ্বাসী মানুষকে সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি দিতে নারাজ। পারলে তারাও কথিত ওয়ার অন টেররের স্টেকহোল্ডার হিসেবে ময়দান-ই জঙ্গে নেমে ভিন্ন মতাদর্শের জঙ্গিদের হত্যা করে।

অদ্ভুতুড়ে নানা কাজ করা বিশ্বকবি রোদ্দুর রায়ের অনুসারীরা যেমন তার সব কাজকে মোক্সা হিসেবে জায়েজ করে। তেমনি হিরো আলম, কিরিম আপা, পিনাকী ভট্টাচার্য, ডা. জাহেদ, শাহেদ কিংবা ইলিয়াসের ভক্তকুল তাদের সব কাজকর্মকে সঠিক মনে করে। বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌনঃপুনিকভাবে নপুংসক হিসেবে নাম উচ্চারিত হয় একজন নায়কের। কিন্তু তিনি যে নায়িকার সঙ্গে কিছুদিনের জন্যও সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তার কোল আলো করে সন্তান নিয়ে এসে জানান দিয়েছেন বাস্তবতা।

বিশ্বাসের বাবল তথা বুদবুদে বাস করা ব্যক্তিদের জন্য আরেক দুরন্ত উদাহরণ হতে পারেন মাওলানা তারেক মুনাওয়ার। তিনি সরাসরি ওয়াজের মধ্যে মাইক বাজিয়ে গলা উঁচিয়ে বলেছেন তার রকেটে আরোহণের গল্প, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মকথা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ফুটবল খেলার কথা, কবি নজরুলকে স্বপ্নে দেখার কেচ্ছা কিংবা আইফোন কোম্পানির মালিক বেলগেডের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কল্পকাহিনির মতো আরো কতকিছু। সবাই তাকে নিয়ে ট্রল করলেও অজস্র মানুষ আছে, তার কথা বিশ্বাস করে। অনেকে তাকে একনজর দেখবে বলে এখনো মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে ওয়াজ শুনতে আসে।

আরেকজন অবাক ব্যক্তি মাওলানা আমীর হামজা। তিনি সম্প্রতি ওয়াজ করতে গিয়ে বলেছেন দক্ষিণ ভারতের নায়িকা রাশমিকা মান্দানার গল্প। তিনি এও দাবি করেছেন, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা নাকি ঘুম থেকে উঠে মদ দিয়ে কুলি করে আর গাঞ্জা খায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে নাকি দীর্ঘ কয়েক বছর আজান হয়নি। অথচ সেই হলের মসজিদ ছাপিয়ে প্রাঙ্গণেও অজস্র শিক্ষার্থীর জুমা পড়ার ছবি অনলাইনে ভাইরাল হচ্ছে। তার ক্ষেত্রেও অনেকে যেমন হাসাহাসি করছে, অনেকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে তাকেই।

মতাদর্শের বাবলের মধ্যে আটকা পড়লে সমস্যা হচ্ছে ব্যারিস্টার ফুয়াদের মতো অনেকে দাবি করে ছাত্রদলের ছেলেপেলে দেখলে গুন্ডাপান্ডা লাগে। তাদের গাঁজাখোরের মতো লাগে। পাশাপাশি তারা জুলাই জনযুদ্ধ থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে ছাত্রদলের বিপ্লবী ভূমিকা আর আত্মত্যাগকে পুরোপুরি অস্বীকার করে। ওদিকে বিএনপিপন্থি নিলুফার চৌধুরী মণি টকশোতে গিয়ে চিৎকার করে শহীদ আবরার ফাহাদকে মেরেছে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগ নয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদের হয়ে শিক্ষক রাজনীতি করা জনৈক শিক্ষিকাও এই সুযোগে টকশোতে গিয়ে এক চিমটি চেতনা আর এক বালতি একাত্তর বিক্রি করে আসছেন। জনৈক অনলাইন তালেবরের পক্ষ থেকে প্রচারের পর জামায়াতে ইসলামী আর ছাত্রশিবিরের অনেকেই বিএনপির সব থেকে নম্র-ভদ্র আর যোগ্য নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে মনে করতে শুরু করে ‘র’-এর এজেন্ট।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে অনেকেই নানা এজেন্ডা নিয়ে মাঠে সক্রিয়। কেউ তাদের আপা ফিরে আসবে দ্রুতই এমন একটা বাবলে বাস করে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ, বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির-বাগছাসের সম্মিলিত আক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে মিছিল দিচ্ছে। ওদিকে একদল বিশ্বাস করছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকায় কে? আরেক দল মনে করছে, কিয়ামতের আগে আর আওয়ামী লীগের ফেরার চান্স নেই। তাই বাকিদের নেই করে দিতে পারলে তারা রাজত্ব দখল করতে পারবে। বাস্তবে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সফলতা অনেকেই মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। তারা ভাবছেন বিপ্লব হচ্ছে হাতের মোয়া চাইলেই পাওয়া যায়, কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও দিয়েই বিপ্লব করে ফেলা যায়।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত অনলাইন তালেবর হিসেবে পরিচিত যারা তাদের বেশির ভাগ বাস করেন দেশের বাইরে। স্বভাবতই দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিতান্ত নাজুক। তাই তারা নিজেদের চারপাশে যে বাবল তথা বলয় তৈরি করে রেখেছেন, এর বাইরে বের হতে পারেন না। তাই তারা নিজের লোককে চোখ-কান বন্ধ করে যেমন রক্ষা করতে চায়, তেমনি অন্যদের রাক্ষস-খোক্কসের মতো ছিঁড়েখুঁড়ে খেতে চায়। আর তাদের পৌনঃপুনিক আস্ফালন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে। বাংলাদেশকে নিরাপদ করতে হলে বিভিন্ন সেগমেন্টে তৈরি হওয়া বাবলগুলোকে ভাঙতে হবে। তারপর সবাই মিলেমিশে দেশ গঠন এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। নয়তো এরা সবাই বিভিন্ন সেগমেন্টে তৈরি বাবলগুলো থেকে বাংলাদেশকে আবার এক গহিন অন্ধকারের দিকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবে। তাই নানা মতাদর্শের বুদবুদে এদের যে নাভিশ্বাসের ঘরবসতি, তা থেকে দ্রুত শাপমুক্তি পাক মানবতা। মুক্ত হোক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত