সাহরির মেহমানখানা

ওমর শাহেদ
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১১: ০৭

এই আয়োজনটি একেবারেই অন্যরকম। একটি পাঠাগার রাতে সাহরির আয়োজন করে। নাম শামসুল হক ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার। তাদের দেয়ালে নোটিশ টাঙানো আছে—‘রান্নার অসুবিধার জন্য যারা সাহরি করতে পারেন না, তাদের জন্য এবং ছিন্নমূল মানুষের জন্য আমাদের এই আয়োজন। আপনি নিঃসংকোচে আমাদের মেহমানখানায় সাহরি করতে পারবেন। বি.দ্র.: যারা সাহরি করতে চান, তাদের এক দিন আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। মোবাইল : ০১৯৮২৭১১৮৭০।’

বিজ্ঞাপন

পাঠকমেলার সদস্য সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘রোববার আমরা টোকেন বিলিয়েছিলাম ৪৮টি, কিন্তু এসেছেন ৬০ জনের বেশি। মুরগির মাংসের সঙ্গে আলু, দুধ, কলা ও সাদা ভাতের আয়োজন ছিল।’ তাদের এই অসহায়দের খাওয়ানোর ব্যবস্থাটির নাম হলো মেহমানখানা। আর খাবারগুলো তারা খাওয়ান শামসুল হক ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগারের সামনে। ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা ১ নম্বর গেটের পাশে আছে এই পাঠাগার। রোববার ৬০ জনকে সাহরি খাওয়ানোর জন্য তাদের খরচ হয়েছে ছয়-সাত হাজার টাকা। আর সোমবারের জন্য উঠেছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। এই টাকায় কেনা খাবারগুলো একটি মেসের বাবুর্চি ও তার হেলপার মিলে রান্না করে দেন। তাদের মজুরি ৫০০ টাকা। রান্না শুরু করতে হয় রাত ১১টা নাগাদ। শেষ হতে হতে ১টা বেজে যায়। ২টা নাগাদ পাঠাগারে এনে সব গোছানো হয়। রমজানে অসহায়দের খাওয়ানোর জন্য তারা ৩৬টি মেলামাইনের প্লেট, ১৭টি গ্লাস, দুটি পানির জার ও একটি গ্যালন কিনেছেন। এসব প্লেট ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলেন সাড়ে ৩টার মধ্যে। ৪টা থেকে খাবার বিতরণ শুরু হয়ে যায়। বাইরে চেয়ারগুলো রেখে দেন, যাতে দূর থেকে মানুষের চোখে পড়ে এবং তারা অভুক্ত অবস্থায় রোজা না রাখেন। যারা এখানে সাহরি করেন তাদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী মানুষ; পাশাপাশি রিকশাচালক, ভ্যানচালক, লেগুনাচালক ও এলাকার নাইট গার্ডরা এখানে সাহরি করতে আসেন। সোমবার সাহরি করিয়েছেন রুই মাছ ও টমেটোর ঝোল, ভাত, দুধ ও কলা। রোববার সাহরি করতে মোট ৯ কেজি চাল প্রয়োজন হয়েছে, সোমবার সাহরি করতে সাত কেজি চাল কিনে রেখেছেন।

আলিফ আহম্মেদ অনিকের মা রান্নার সময় বাবুর্চিদের সবকিছু দেখিয়ে দেন, তাদের রান্নার দেখভাল করেন। আর সাইফুলের মা সকালের রুই মাছকে কেটে সুন্দর করে ফ্রিজে রেখেছেন। সাইফুল জানালেন, আমাদের ইচ্ছা আছে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পুরো রমজান মাসই সাহরি করাব।

এক সপ্তাহের সাহরি করানোর টাকা আছে তাদের কাছে। আরিফ ভাই, সাজ্জাদ, রাতুল, জাহিদ, লিখন, সাইফুল ও মাহিন এ কাজে অনেক সাহায্য করছেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকায় তারা সাহরি করান।

আরো অনেক কাজ আছে। দুটি বড় ও দুটি ছোট পাতিল চালের জন্য আছে। সেগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়, বাজার করতে হয় এবং মাছ-মাংস কেটে রেডি করতে হয়। মাছ যাত্রাবাড়ী আড়ত থেকে কিনে এনে কাটার পর ফ্রিজে রাখতে হয়। তারপরও তাদের ক্লান্তি নেই কোনো। বরং জানালেন, সাহায্য-সহযোগিতা ভালো পেলে আমরা আরো কয়েকটি স্পটে সাহরি করানো শুরু করব।

বিষয়:

সাহরী
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত