ঢাকা আলিয়ার উদ্যোগে ‘সিরাত জলসা’

তাসনীম আলম
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৩

ঢাকা আলিয়ার উদ্যোগে এবং আমার দেশ পাঠকমেলার আয়োজনে আল্লামা কাশগরি হলে অনুষ্ঠিত হলো একটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান ‘সিরাত জলসা’। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ, তাঁর সুন্নাহ এবং রেখে যাওয়া সিরাতকে ভিত্তি করে মুমিন জীবনের পথচলা কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়কে সামনে রেখেই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর জীবনধারা কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়; বরং তা বাস্তব জীবনের চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার এক অনন্য নির্দেশনা। একবিংশ শতাব্দীর অশান্ত পৃথিবীতে, যেখানে মানুষের অন্তরে দুশ্চিন্তা, বিভ্রান্তি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় বিরাজমান, সেখানে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহই আত্মশুদ্ধি ও সঠিক দিকনির্দেশনার একমাত্র আলোকবর্তিকা।’

বিজ্ঞাপন

আলোচনা চক্রে আমার দেশ পাঠকমেলা ঢাকা আলিয়ার সদস্যবৃন্দ ও মাদরাসা ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে এনে আলোচনা করেন।

প্রথমত, মুমিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হলো আত্মশুদ্ধি। বক্তারা বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর আয়নায় নিজের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। তাঁর আদর্শ অনুযায়ী চরিত্র গঠন করাই প্রকৃত সাফল্যের পথ।’

দ্বিতীয়ত, বিশ্বে অশান্তি, হিংসা-বিদ্বেষ এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামের সুমহান আদর্শের কার্যকারিতা মানুষের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর প্রিয় নবী (সা.) সেই শান্তির দূত। তাই তাঁর আদর্শকে ধারণ করেই মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

তৃতীয়ত, জাতীয় জীবনে রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শকে বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেওয়া হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা জাতীয় জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তা ৫৩টি ধারার মতো পূর্ণাঙ্গ এক জীবনবিধান হয়ে উঠবে, যা ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।’

চতুর্থত, মৌলিক ইবাদাতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজের মতো ইবাদত শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি সমাজে ন্যায়-ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।

পঞ্চমত, দাওয়াতি কার্যক্রমকে সংঘবদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা আরো বলেন, ‘দাওয়াত শুধু ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হওয়া উচিত। সমাজে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত উদ্যোগ সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মনোমুগ্ধকর কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হয় এই অংশ। এরপর আতাউল্লাহ আফফানের পরিচালনায় সুমধুর কণ্ঠে হামদ ও নাত পরিবেশন করেন আলিয়া সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা। পরিবেশনার প্রতিটি ধাপে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা গভীর আবেগ ও অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি শেখ আরিফুল ইসলাম ও আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ আফফান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক ভূঁইয়া ও হাবিবুল বাসার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জুনায়েদ সরকার, দপ্তর সম্পাদক মো. নোমান উদ্দিন, সাহিত্য সম্পাদক শরিফ উদ্দিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তাহমিদ লাজিম, সহকারী প্রচার সম্পাদক তানিম ফরাজী, অর্থ সম্পাদক মাহাবুব আলম, সমাজসেবা সম্পাদক আফনান সাবিক এবং পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক।

কার্যকরী সদস্য হিসেবে ছিলেন আজিজুল ইসলাম নাফিজ, মোজাহিদুল ইসলাম, তাসনিম আলম, শোয়াইব হাসান, আবু তালেব, মো. মুসফিক, ইলিয়াস হোসাইন, আল মোজাহিদ হাসান নাঈম, ইমরান ফয়সাল ও মিরাজুল ইসলাম।

শেষে এক আবেগঘন দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে। মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণের তাওফিক কামনা করা হয়।

‘সিরাত জলসা’ অনুষ্ঠানটি শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশই ছিল না, বরং এটি ছিল জীবনাদর্শ পুনরাবিষ্কারের এক অনন্য প্রয়াস। উপস্থিত অতিথিরা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের আয়োজন মানুষের মাঝে নবীর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে এবং সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত