আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাফেজ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ

ত্বহা মাহমুদ
হাফেজ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ

পাঠকমেলার সদস্য মাত্র ১৮ বছরের তরুণ প্রাণ হাফেজ মো. আশরাফুল ইসলামের হঠাৎ প্রয়াণ যেন সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। জামিয়া দারুল উলূমের (মিরপুর, ঢাকা) নাহবেমীর জামাতের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য আশরাফুল ইসলাম ১২ সেপ্টেম্বর আকস্মিক স্ট্রোকে ইন্তেকাল করেন। পড়াশোনায় মেধাবী, চলনে ভদ্র ও স্বভাবগতভাবে দায়িত্বশীল এই ছাত্রের অকাল মৃত্যু শিক্ষক, সহপাঠী, পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের অন্তরে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদের সভাপতি মুফতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল ছিলেন সবার স্নেহ ও ভালোবাসায় ধন্য ছাত্র, যিনি শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। তার সততা, দায়িত্ববোধ ও কর্মঠ মানসিকতা সবার কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা ইমরান হুসাইন আবেগভরে স্মৃতিচারণ করেন—‘মৃত্যুর দিন সকালেও তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করেছিলেন। অথচ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্ট্রোকে ইন্তেকাল করলেন। শেষ মুহূর্তে মায়ের কোলে শুয়ে তার তিনবার কালিমা পাঠ করে চলে যাওয়ার দৃশ্যটি আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ করেছে।’

এজিএস মাওলানা ত্বহা মাহমুদ জানান, “আশরাফুল সর্বদা কর্মকাণ্ডে উৎসাহী থাকতেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আন্দোলনের ময়দানে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। একবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি নিজের ট্রেনের টিকিটও বাতিল করেছিলেন। দেয়ালিকা লেখার কাজে রাত জাগার সময়ও বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘কাজটা দিনে দিলে ভালো হতো।’ অভিযোগ থাকলেও তিনি হাসিমুখেই তা মেনে নিতেন। তার আন্তরিকতা, পরিশ্রম ও সরলতা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

ভিপি মাওলানা আব্দুল্লাহ আহমাদ আনাসের ভাষায়—‘তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল ও মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা, সহপাঠীদের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা এবং পড়াশোনার প্রতি অনুরাগ তাকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলেছিল।’

শাইখুল হাদীস মুফতি ফয়সাল আহমাদ যাকারিয়া বলেন, ‘আশরাফুল ছিলেন নম্র, শান্তশিষ্ট ও আদর্শনিষ্ঠ ছাত্র। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ তাকে জান্নাতের পাখি হিসেবে কবুল করুন।’

আশরাফুলের বড় ভাই মাওলানা রাকিবুল ইসলাম জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই আশরাফ নম্র, ভদ্র ও মেধাবী ছিল। মোবাইলের নেশা থেকে দূরে থেকে কিতাব পড়াতেই মগ্ন থাকত। মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলত, মুরুব্বিদের সম্মান দিত। তার মৃত্যু শুধু পরিবারের নয়, পুরো ছাত্রসমাজের জন্যও এক বিরাট ক্ষতি।’

তাদের প্রতিবেশী মাওলানা জুবায়ের আহমাদ বলেন, ‘আশরাফ সর্বদা বিনয়ী আচরণ করত। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার এবং সততা তাকে বিশেষভাবে আলাদা করে তুলেছিল।’

বন্ধু নাহিদ ও নুমান আবেগঘন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আশরাফ ছিল আমাদের আড্ডা, ভ্রমণ আর হাসিখুশি মজার সঙ্গী। আজ সে নেই, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে তার অভাব আমাদের তাড়া করে। আমরা সত্যিই একজন অমূল্য বন্ধুকে হারালাম। সহপাঠীদের কাছে তার শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি।’

জামিয়া দারুল উলূম ছাত্র সংসদের নেতারা বলেন, ‘আশরাফুলের প্রয়াণ শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং পুরো ছাত্রসমাজের জন্য গভীর বেদনার সংবাদ।’ তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আশরাফুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবন আমাদের শিখিয়ে গেল—কীভাবে বিনয়, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতা দিয়ে সবার প্রিয় হয়ে ওঠা যায়। তার স্মৃতি আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন