সাঁওতাল পল্লীতে সুমিত্রা-কাজুলি ও সৃষ্টির সঙ্গে জারার দেখা

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১: ৪৩

দিনাজপুরের সাঁওতাল পল্লীতে সুমিত্রা, কাজুলি ও সৃষ্টির সঙ্গে দেখা হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার।

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে তাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন এনসিপির এই নেত্রী।

ওই পোস্টে ডা. তাসনিম জারা লিখেছেন, দিনাজপুরের সাঁওতাল পল্লীতে দেখা হল সুমিত্রা, কাজুলি, ও সৃষ্টির সাথে। সবাই বয়সে কিশোরী। সুমিত্রা পড়ে নবম শ্রেণিতে, কাজুলি সপ্তম শ্রেণিতে আর সৃষ্টি ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বড় হয়ে কী হতে চাও?" তিনজনই উত্তর দিল, “নার্স।” আমি হেসে বললাম, “তোমরা তিনজনই এক জিনিস হতে চাও? কেন?” জানলাম যে ওদেরই একজন কিছুদিন আগে নার্স হয়েছে। তিনিই ওদের মধ্যে প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র নার্স। এখন ঢাকার এক ক্লিনিকে কাজ করেন।

এটাই হচ্ছে visualisation এর শক্তি। যে দেখতে আমার মতো, আমার ভাষায় কথা বলে, আমার এলাকায় মানুষ হয়েছে, সে যখন কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়, তখন সেই পথটা নিজের জন্য কল্পনা করা সহজ হয়ে যায়।

আমি ওদের বললাম যে যদি কেউ কোনোদিন বলে, “তুমি পারবে না,” তাহলে সেই কথা শুনে মন খারাপ করার দরকার নেই, কাজটা করে দেখিয়ে দেবে। সুমিত্রা সাথে সাথেই বলে উঠল, “অনেকেই বলে যে আমি পারবো না, কিন্তু আমি শুনি না। যদি ওদের কথা শুনি, তাহলে তো সামনে যেতে পারব না!” এত স্পষ্টভাষী ও আত্মবিশ্বাসী এই মেয়েরা!

তবে ওদের এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের জন্য কেবল আত্মবিশ্বাস যথেষ্ট নয়। ওদের পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানলাম আর্থিক সঙ্কটের কথা, নিজেদের যেহেতু কোনো জমি নেই, শ্রমের টাকায় সংসার চালাতে হয়। ভয়টা এখানেই। যদি অর্থের সংকট হয়, তাহলে মেয়েগুলোর পড়াশোনা থেমে যাবে, হয়ত বিয়েও হয়ে যাবে অল্প বয়সে। আরেকটা সমস্যা হল জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি উঠে যায়। যা সামান্য আছে, সেটুকুও ডুবে যায়।

আমরা যদি সত্যিই দেশের উন্নয়ন চাই, তাহলে আমাদেরকে প্রান্তিক মানুষের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো শুনতে হবে এবং আন্তরিকভাবে সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ করতে হবে। শিক্ষা, বাসস্থান, ও নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে সেসব জনগোষ্ঠীর জন্য, যাদের গল্প এতদিন রাষ্ট্রের মূলধারার বাইরে রয়ে গেছে।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সুমিত্রা, কাজুলি আর সৃষ্টিদের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। নিশ্চিত করতে হবে যেন আমাদের রাষ্ট্র তাদের কথা শোনে, পলিসিমেকিং-এ তাদেরকে মনে রাখে ও নাগরিক অধিকারে কোন বৈষম্য না করে।

বিষয়:

এনসিপি
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত