সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা শিবিরের গুমকৃত ৭ জনকে ফিরিয়ে দেওয়াসহ সব মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে ছাত্রসমাজসহ আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
শিবির নেতারা আরো বলেন, আজ আমরা এমন একটি সময়ে এই দিবসটি পালন করছি, যখন দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুদ্ধবিরতির পরেও গাজায় ইসরায়েলি সন্ত্রাসীদের বর্বরতা থেমে নেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর অন্তত ৩৫০–৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলা গৃহযুদ্ধ ও সহিংসতার কারণে দেশটি মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী সেখানে তিন হাজার ৩৮৪ জন নিহত হলেও প্রকৃত সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক এবং বাস্তুচ্যুত প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ। মায়ানমার, কাশ্মীরেও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
তারা চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিনের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনে সংঘটিত গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ভয়াবহতা কাটতে না কাটতেই জনগণ আবারও নতুন নির্যাতন, অবিচার ও অসহিষ্ণুতার মুখোমুখি হচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে একটি নির্দিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের হাতে কমপক্ষে ২০৯ জন নিহত হয়েছে; আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। সংবিধানস্বীকৃত মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত হামলা চলছে, কুরআন তালিম ও বিভিন্ন সামাজিক-শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমও টার্গেট হচ্ছে, এমনকি নারীরাও হামলা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯০ জন সাংবাদিক হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে অসংখ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ পুলিশের হামলা ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন।
শিবির নেতারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ছাত্রশিবিরের ওপর যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তা ছিল নজিরবিহীন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ছাত্রশিবির আয়োজিত প্রায় সকল মিছিল, সমাবেশ, র্যালি ও ঘরোয়া আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। শুধু মিছিল-মিটিং নয়, বিনা উসকানিতে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক মেস, বাসা ও অফিসেও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই সময়ে ৬ হাজার ২২৩টি ও দলীয় সন্ত্রাসীরা ২ হাজার ৫২৪ স্থানে তথাকথিত অভিযানের নামে ছাত্রশিবিরের নিরপরাধ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা পরিচালনা করে।
তারা বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ৩৮ হাজার ৩৩৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ১০৩ জনকে শহীদ করা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৭ জন এখনও গুম অবস্থায় রয়েছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরে থেকে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা থেমে নেই। সংগঠনের সেবামূলক কার্যক্রমে অব্যাহতভাবে বাধা প্রদান, হামলা ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। অথচ এ ব্যাপারেও প্রশাসন কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করছে।

