পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দায় বিএনপির ওপর চাপাতে সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ‘আইজিপি বাহারুল আলমকে অনতিবিলম্বে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নাসিমা আক্তার বলেন, নাসিরুদ্দিন পিন্টু ছিলেন এমন একজন নেতা যিনি দল ও দেশের স্বার্থে কখনো পিছপা হননি, কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল অটুট। দলের স্বার্থে যা করণীয়—তিনি দ্বিধাহীনভাবে তা করে যেতেন। তাঁর সংগঠন দক্ষতা, জনপ্রিয়তা ও কর্মীদের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে জনগণের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পিন্টুকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আটক করে। ডিবি পুরো হাইকোর্ট এলাকা ঘিরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ দিন তাঁকে রিমান্ডে রেখে নির্যাতন করা হয়, আদালতে হাজিরের সময় তাঁর শারীরিক অবস্থাই নির্যাতনের নির্মমতা প্রকাশ করেছিল। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পিন্টু কখনোই মিথ্যা বক্তব্যে রাজি হননি।
এসময় আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বলেন, শহীদ পিন্টু নিজের জীবনের ঝুঁকি জেনেও একটি মিথ্যা কথা ও একটি মিথ্যা স্বীকারোক্তিও দেননি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দায় দিয়ে দিবে। সেজন্য পিন্টুকে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করেছিল। এতে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়। জীবন দিলেও বিএনপির ও অসহায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লড়াই করে গেছেন।
এসময় তার পরিবারের উপর কীভাবে তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতন, হুমকি ও হয়রানি নেমে আসে তা বর্ণনা করেন নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে যাওয়া, শারীরিক নির্যাতন, মামলা দিয়ে হয়রানি, বাড়ি-ব্যবসা স্থাপনায় চাপ—সবকিছু মিলিয়ে জীবনকে অসহনীয় করে তোলা হয়েছিল। এসময় সন্তানদের পড়াশোনার টাকাও এনবিআর থেকে জব্দ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় তিনি দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলনে যেসব নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, জুলাই বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছেন -তাদের সবার জন্য বিচার চান। পাশাপাশি নাসিরুদ্দিন পিন্টুর হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তির দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। নাসিমা আক্তার বলেন, এই কমিশন স্বাধীন কমিশন। এই কমিশনের প্রতিবেদনে যেহেতু বর্তমান আইজিপি বাহারুলের নাম রয়েছে অতএব তাকে অপসারণ করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
পিন্টুর সন্তান নাহাম আহমেদ বলেন, তাঁর বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এবং ১৭ বছর ধরে পরিবারটি নির্যাতন, চাপ ও অর্থকষ্ট সহ্য করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বাবার মনোবল ভাঙতে না পেরে তাঁকে অবিচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। নাহাম বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। শহীদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। এসময় পিতার সাথে হওয়া অন্যায় ও এর সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব দলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম বলেন, আমরা ভেবেছিলাম -আমাদের দাবি তোলার আগেই বাহারুল আলম নিজে থেকে পদত্যাগ করবে। আরও ভেবেছিলাম ড. ইউনুস সাহেব অন্তত নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে তার পদত্যাগের কথা বলবেন। কিন্তু আমরা স্মারকলিপি প্রদান করার পরও এবং এত বৃহৎ জনদাবির পরও যদি কারও ঘুম না ভাঙে -তাহলে আর কী পরিমাণ আন্দোলন দরকার, সেটি তাদেরই ভাবতে হবে। দ্রুতই বাহারুলের পদত্যাগের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা রাজপথ থেকে আমরাই জনগণ ও নেতাকর্মীরা এর বিচার আদায় করে নেব।
তিনি আরো বলেন, মনে রাখবেন -এখনও হাজার হাজার নেতাকর্মী নামেনি। সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নিন, নইলে আমরা রাজপথেই সিদ্ধান্ত নিব। বাহারুলকে সরে যেতে হবে, মিথ্যা রিপোর্টের দায় নিতে হবে -আর প্রয়োজন হলে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী দিনে শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বলে আশাবাদী। আমরা সে কর্মসূচী শতভাগ সফল করব ইনশা-আল্লাহ।
শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক রফিক আহমেদ ডলারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, নাসির উদ্দিন পিন্টুর সন্তান নাহাম আহমেদ, শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সেলিম, এস এম সায়েম, এম এ গাফফার, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভা চলাকালীন উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘দূর্দিনের পিন্টু ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, ‘পিন্টু ভাইয়ের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’ ‘বাহারুলের চামড়া, তুলে নিব আমরা’ ও ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, বাহারুলের ফাঁসি চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলমের ছবি সম্বলিত প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড-এ জুতা মারতে দেখা যায় কয়েকজনকে। প্রতিবাদ সভাটি থেকে বক্তারা পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাম আসা সকল অপরাধীসহ আইজিপির গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

