লুটেরা ও আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং তার রাজনৈতিক পাহারাদারদের কারণে শিক্ষা খাত অবহেলিত বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে গড়ে ওঠা এক লুটেরা ও আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং তার রাজনৈতিক পাহারাদাররা। এই ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার গুরুত্ব বারবার অবহেলিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি। ফলে প্রশ্ন ওঠে -এই লুটেরা অর্থনীতি আমাদেরকে আর কত দূর নিয়ে যেতে পারে? আজকের অবস্থায় এটা স্পষ্ট যে এই অর্থনৈতিক মডেল বাংলাদেশের জন্য কোনো ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারছে না।
শিক্ষার পুনর্গঠন ছাড়া নতুন অর্থনীতি বাস্তবে দাঁড়াবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের দুরবস্থার মাঝে একীভূত করে এটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উন্নতির পরিবর্তে স্থবিরতা -সবই প্রমাণ করে যে একটি নতুন উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কাঠামো জরুরি। কিন্তু একমাত্র শিক্ষার পুনর্গঠন ছাড়া নতুন অর্থনীতি বাস্তবে দাঁড়াবে না। তাই শিক্ষা পুনর্গঠনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এসময় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার জোর তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি উৎপাদনশীল অর্থনীতি তৈরি করা, যেখানে সমতার ভিত্তিতে সম্পদের বণ্টন হবে এবং শিক্ষার মাধ্যমে এটি সম্ভব হবে। এটি একদিনে সম্ভব না হলেও সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে সুস্পষ্ট নীতি, বাজেট ও কাঠামো তৈরীর মাধ্যমেই সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই নানা রাজনৈতিক শক্তি জিডিপির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু বাজেটই সবকিছু নয়, সঠিক নীতি ছাড়া বাজেট অপচয় হয়ে যেতে পারে। তাই দরকার নীতির মৌলিক পরিবর্তন।
দলটির এই প্রধান সমন্বয়কারী আরো বলেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক, যারা সমাজের দায়িত্বশীল অংশ। তবে শিক্ষকরা ন্যায্য মর্যাদা ও সুযোগ না পেলে মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল, নিয়মিত দক্ষতা মূল্যায়ন এবং অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ জরুরি। এসব বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা শুধু উন্নত হবে না, বরং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের যদি ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, তাঁদের আয় বাড়তো। এটি শুধু সামাজিক নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন এই নেতা। তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা রাজনৈতিক আনুগত্য দিয়ে নির্ধারণ করা হলে গবেষণা, স্বাধীনতা এবং মান -সব নষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখার জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, ড. রিজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, শফিক ইসলাম প্রমুখ।

