আ.লীগের লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞের ১৯ বছর

স্টাফ রিপোর্টার

আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবের ১৯তম বার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ২০০৬ সালের এ দিনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রাজধানীর পল্টন এলাকায় লগি-বৈঠা আর অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের ওপর। শেখ হাসিনার নির্দেশে দিন-দুপুরে পিটিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, লাশের ওপর নৃত্য-উল্লাসে মেতে ওঠে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা।
সেদিন শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদন থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিভীষিকাময় ঘটনায় জাতিসংঘসহ দেশে-বিদেশে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে মামলা হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করে ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ওই ঘটনার শিকার জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা আন্দোলনের ডাক দেয় আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। খোদ দলীয়প্রধান হাসিনা নেতাকর্মীদের অস্ত্রসজ্জিত হয়ে মিছিলে যোগ দিতে নির্দেশ দেন। তারই নির্দেশে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও
অস্ত্র হাতে মুক্তাঙ্গন-পল্টন এলাকায় অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা ও অস্ত্র হাতে নিয়ে জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। পল্টনের গলিতে ঢুকে নিরস্ত্র জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পেটাতে শুরু করে। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও কর্মী জসীম উদ্দিনসহ ছয়জন ওইদিন নিহত হন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতে থাকে। পল্টন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে হামলা করতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনী।
বিকালে জামায়াত ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে পাশের র্যাংগস টাওয়ারের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করা হয়। দফায় দফায় ছোড়া হয় গুলি। পরবর্তী দুই দিনও সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর তাণ্ডব চলে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জামায়াত ছাড়াও সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের এবং তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
তার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর পল্টনের সমাবেশে শেখ হাসিনা লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকা অবরোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর রাত থেকেই দেশজুড়ে ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা চালানো হয়। পরদিন ২৮ অক্টোবর চালায় পৈশাচিকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ। পরে এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ সরকার আসে এবং দেশ দুই বছর গণতন্ত্রহীন থাকে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবিরের ওপর আক্রমণের জন্য সুধাসদন থেকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের কথা জানান শেখ হাসিনার তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেন। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবিষয়ক এক কলামে তিনি লেখেন, ‘…হঠাৎ জাহাঙ্গীর কবির নানক (তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান) ভাইয়ের ফোন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, আমাদের ‘খাবার’ শেষ। পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে খাবার লাগবে। বুঝতে সামান্য সময় নিলাম। আদিষ্ট হলাম, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
তিনি লিখেছেন, ‘সুধাসদনের চারদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক ঘোরাফেরা করছে। চিন্তা করছি, কীভাবে ‘খাবার’ পাঠাব? সুধাসদনের মূল ফটকের সামনে একটি টিভি চ্যানেলের গাড়ি। রিপোর্টারের খোঁজ নিয়ে জানলাম, শামিম আহমেদ, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তাকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলে সহযোগিতা চাইলাম। তিনি রাজি হলেন। তার গাড়িতে কয়েক শত পানি ভর্তি বোতল এবং এর নিচে শত্রু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ‘খাবার’ দিলাম। শামিম আহমেদ পল্টন মোড়ে নানক ভাইয়ের কাছে সব ‘খাবারের সরঞ্জামাদি’ হস্তান্তর করলেন। ‘খাবার’ পেয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল বেড়ে গেল। নতুন উদ্যমে শত্রুর মোকাবিলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের পরদিন পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়, যেখানে শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে। ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৭ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে নিহতদের পরিবারগুলো এখনো বিচার প্রত্যাশায় দিন গুনছে। ২৮ অক্টোবরের নির্মম হামলায় মারা যাওয়া সিপনের বড় ভাই ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাই হত্যার বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। দিনদুপুরে নির্মমভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। বিচার শুরু হলে ভেবেছিলাম ভাইকে ফিরে না পেলেও অন্তত ন্যায়বিচার পাব। তৎকালীন সরকারি সিদ্ধান্তে সব আসামিকে অব্যাহতি দিলে আমাদের সে আশাও ধুলিসাৎ হয়ে যায়।
পল্টনের ওই ঘটনায় নিহত সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের বাবা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ছেলেকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। সে হত্যার বিচার পেলাম না। বরং বিচার চাইতে গিয়ে কারাগারে যেতে হলো আমাকে। এখন চাওয়া একটাইÑমৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।
এ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মুজাহিদ, মাসুম, সিপন, ফয়সাল, রফিক, হাবিব ও জসিমকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরো অনেকেই। এ ঘটনায় সিরাজুল হক বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
তদন্ত শেষে হাসিনাসহ ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র সিএমএম আদালতে দাখিল করা হয়; আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েলসহ ২৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; এ অব্যাহতির বিরুদ্ধে একটি নারাজি পিটিশনও ছিল এবং আদালত তা গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে তৎকালীন ঢাকা মহানগর পিপি মামলাটি প্রত্যাহার করার আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট দিলারা চন্দনা তার অনুকূলে আদেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম, কোনো বিচার পাইনি। এখন মামলার নথি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা চলছে। নথি পর্যালোচনার পরে এ বছরই উচ্চ আদালতে আপিল করে মামলাটি সচল করার চেষ্টা করব; আশা করছি উচ্চ আদালত এ বিষয়ে সুযোগ দেবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও আবেদন করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আইনে পুনরায় বিচার করার সুযোগ আছে। এই মামলা রাজনৈতিক নির্যাতনমূলক বা গায়েবি ধরনের ছিল না; তাই সরকার চাইলে এসব মামলায় বিচারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ওই দিনের ধারাবাহিকতায় তারা দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা করে, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
তিনি দাবি করেন, তৎকালীন সরকার মামলাগুলো প্রত্যাহার করে খুনিদের রক্ষা করেছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের পর দেশ ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশা জাগছে। তিনি ২৮ অক্টোবরের ঘটনার দায়ীদের বিরুদ্ধে
মামলা পুনরায় সচল করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।

আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবের ১৯তম বার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ২০০৬ সালের এ দিনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রাজধানীর পল্টন এলাকায় লগি-বৈঠা আর অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের ওপর। শেখ হাসিনার নির্দেশে দিন-দুপুরে পিটিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, লাশের ওপর নৃত্য-উল্লাসে মেতে ওঠে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা।
সেদিন শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদন থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিভীষিকাময় ঘটনায় জাতিসংঘসহ দেশে-বিদেশে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে মামলা হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করে ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ওই ঘটনার শিকার জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা আন্দোলনের ডাক দেয় আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। খোদ দলীয়প্রধান হাসিনা নেতাকর্মীদের অস্ত্রসজ্জিত হয়ে মিছিলে যোগ দিতে নির্দেশ দেন। তারই নির্দেশে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও
অস্ত্র হাতে মুক্তাঙ্গন-পল্টন এলাকায় অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা ও অস্ত্র হাতে নিয়ে জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। পল্টনের গলিতে ঢুকে নিরস্ত্র জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পেটাতে শুরু করে। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও কর্মী জসীম উদ্দিনসহ ছয়জন ওইদিন নিহত হন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতে থাকে। পল্টন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে হামলা করতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনী।
বিকালে জামায়াত ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে পাশের র্যাংগস টাওয়ারের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করা হয়। দফায় দফায় ছোড়া হয় গুলি। পরবর্তী দুই দিনও সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর তাণ্ডব চলে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জামায়াত ছাড়াও সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের এবং তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
তার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর পল্টনের সমাবেশে শেখ হাসিনা লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকা অবরোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর রাত থেকেই দেশজুড়ে ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা চালানো হয়। পরদিন ২৮ অক্টোবর চালায় পৈশাচিকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ। পরে এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ সরকার আসে এবং দেশ দুই বছর গণতন্ত্রহীন থাকে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবিরের ওপর আক্রমণের জন্য সুধাসদন থেকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের কথা জানান শেখ হাসিনার তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেন। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবিষয়ক এক কলামে তিনি লেখেন, ‘…হঠাৎ জাহাঙ্গীর কবির নানক (তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান) ভাইয়ের ফোন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, আমাদের ‘খাবার’ শেষ। পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে খাবার লাগবে। বুঝতে সামান্য সময় নিলাম। আদিষ্ট হলাম, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
তিনি লিখেছেন, ‘সুধাসদনের চারদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক ঘোরাফেরা করছে। চিন্তা করছি, কীভাবে ‘খাবার’ পাঠাব? সুধাসদনের মূল ফটকের সামনে একটি টিভি চ্যানেলের গাড়ি। রিপোর্টারের খোঁজ নিয়ে জানলাম, শামিম আহমেদ, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তাকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলে সহযোগিতা চাইলাম। তিনি রাজি হলেন। তার গাড়িতে কয়েক শত পানি ভর্তি বোতল এবং এর নিচে শত্রু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ‘খাবার’ দিলাম। শামিম আহমেদ পল্টন মোড়ে নানক ভাইয়ের কাছে সব ‘খাবারের সরঞ্জামাদি’ হস্তান্তর করলেন। ‘খাবার’ পেয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল বেড়ে গেল। নতুন উদ্যমে শত্রুর মোকাবিলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের পরদিন পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়, যেখানে শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে। ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৭ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে নিহতদের পরিবারগুলো এখনো বিচার প্রত্যাশায় দিন গুনছে। ২৮ অক্টোবরের নির্মম হামলায় মারা যাওয়া সিপনের বড় ভাই ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাই হত্যার বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। দিনদুপুরে নির্মমভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। বিচার শুরু হলে ভেবেছিলাম ভাইকে ফিরে না পেলেও অন্তত ন্যায়বিচার পাব। তৎকালীন সরকারি সিদ্ধান্তে সব আসামিকে অব্যাহতি দিলে আমাদের সে আশাও ধুলিসাৎ হয়ে যায়।
পল্টনের ওই ঘটনায় নিহত সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের বাবা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ছেলেকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। সে হত্যার বিচার পেলাম না। বরং বিচার চাইতে গিয়ে কারাগারে যেতে হলো আমাকে। এখন চাওয়া একটাইÑমৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।
এ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মুজাহিদ, মাসুম, সিপন, ফয়সাল, রফিক, হাবিব ও জসিমকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরো অনেকেই। এ ঘটনায় সিরাজুল হক বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
তদন্ত শেষে হাসিনাসহ ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র সিএমএম আদালতে দাখিল করা হয়; আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েলসহ ২৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; এ অব্যাহতির বিরুদ্ধে একটি নারাজি পিটিশনও ছিল এবং আদালত তা গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে তৎকালীন ঢাকা মহানগর পিপি মামলাটি প্রত্যাহার করার আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট দিলারা চন্দনা তার অনুকূলে আদেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম, কোনো বিচার পাইনি। এখন মামলার নথি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা চলছে। নথি পর্যালোচনার পরে এ বছরই উচ্চ আদালতে আপিল করে মামলাটি সচল করার চেষ্টা করব; আশা করছি উচ্চ আদালত এ বিষয়ে সুযোগ দেবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও আবেদন করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আইনে পুনরায় বিচার করার সুযোগ আছে। এই মামলা রাজনৈতিক নির্যাতনমূলক বা গায়েবি ধরনের ছিল না; তাই সরকার চাইলে এসব মামলায় বিচারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ওই দিনের ধারাবাহিকতায় তারা দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা করে, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
তিনি দাবি করেন, তৎকালীন সরকার মামলাগুলো প্রত্যাহার করে খুনিদের রক্ষা করেছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের পর দেশ ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশা জাগছে। তিনি ২৮ অক্টোবরের ঘটনার দায়ীদের বিরুদ্ধে
মামলা পুনরায় সচল করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে বলতেছে আওয়ামী লীগ ছাড়া এদেশে নির্বাচন হবে না। একথা বলার সাহস তারা কোথা থেকে পায়। সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
২১ মিনিট আগে
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০টি সংসদীয় আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে শীঘ্রই একক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে বিএনপি।
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপির উদ্দেশে ড. গালিব লেখেন— গতকালকে আমার সঙ্গে একটা টকশোতে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে বিএনপি পরিবর্তন হয়ে যাবে, ভালো লোকেরা বিএনপি করতে পারবে তখন। খুবই সুন্দর আশাবাদ। কিন্তু পাইলট প্রজেক্টিং-এর দিক থেকে আমরা দেখতে চাইব, তারেক রহমান যতদিন লন্ডনে আছেন; ততদিন লন্ডন বিএনপির কি
১৪ ঘণ্টা আগে
ঢাকা সফররত জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নয়ন ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জোহান সাথফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
১৫ ঘণ্টা আগে