বাংলাদেশে পবিত্র মাহে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৩৩

আগামী ২ মার্চ থেকে বাংলাদেশে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির গবেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আগামী ৩১ জানুয়ারি শাবান মাস শুরু হতে পারে। এছাড়া আগামী ১ মার্চ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে রমজান মাস শুরু হতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আগামী ২ মার্চ থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র মঙ্গলবার মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে জানিয়েছে, তাদের জ্যোতির্বিদ্যা হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি শাবানের প্রথম দিন হবে।

আমিরাত জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র শাবান মাস শুরু হওয়ার ব্যাপারে বলেছে, ২৯ জানুয়ারি হিজরি সনের রজব মাসের ২৯তম দিন। কিন্তু এদিন সূর্যাস্তের সময় বা আগে চাঁদ অস্ত যাবে। ফলে এ দিন ইসলামিক বিশ্বে শাবানের চাঁদ দেখা অসম্ভব হবে। এতে, এসব দেশে রজব মাসটি ৩০দিন পূর্ণ করবে এবং ৩১ জানুয়ারি হবে শাবানের প্রথম দিন।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সব মুসলিশ দেশ, দক্ষিণ ইউরোপ, আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে খালি চোখে চাঁদ দেখা যাবে। যার অর্থ হলো যেসব দেশে বৃহস্পতিবার ২৯ রজব হবে সেসব দেশেও ৩১ জানুয়ারি শাবান শুরু হবে। যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, বাংলাদেশ, মরক্কো, ক্যামেরুন ও আলবেনিয়া। তবে রমজান শুরুর বিষয়টি চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রোজা, ঈদ, কোরবানির দিন তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ দেখার পর। প্রকৃতভাবে চাঁদের হিসাব বের করা খুবই জটিল না হলেও সাধারণ বলা যাবে না। কোরআন-হাদিস আর বিজ্ঞানে যা খুবই সাবলীলভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।

চাঁদ নিয়ে পবিত্র কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা রয়েছে, নাম আল কামার। এ ছাড়া চাঁদ সম্পর্কে সুরা ফুসিলাতের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এটা আমার একটি নিদর্শন।’ আরও ২৫ বারের অধিক আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন আয়াতে চাঁদের কথা বলেছেন। চাঁদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ নেয়, এ কথা বলা আছে সূরা আল ইনশিকাকের ১৮ নম্বর আয়াতে।

হাদিসেও এসেছে চাঁদের কথা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা শুরু করো, চাঁদ দেখেই ঈদ করো, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে শাবান মাস ত্রিশদিন পূর্ণ করো।’ -সহিহ বোখারি: ১৯০০

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার সূর্যের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়ে থাকলেও হিজরি ক্যালেন্ডারে মাসের হিসাবটা হয় চাঁদের আবর্তনকে অনুসরণ করে। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পশ্চিমের দেশগুলোর দিন আমাদের পরে শুরু হয়। যেমন আমরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা, ইউরোপ থেকে গড়ে ৬ ঘণ্টা এবং আমেরিকা থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা এগিয়ে আছি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, সৌর হিসেবে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা হলেও চন্দ্রের হিসেবে সৌদি আরব ও আমাদের পার্থক্য ২১ ঘণ্টার।

ফলে আমরা সৌদি আরব থেকে ৩ ঘণ্টা সূর্যের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও, চাঁদের হিসেবে ২১ ঘণ্টা পিছিয়ে আছি। অর্থাৎ আমরা প্রায় একদিন পিছিয়ে আছি। সে জন্য সৌর বছরের হিসেবে একদিন পরে চাঁদ দেখি। সেই হিসাবে সৌদি আরবে একদিন আগে ঈদ হয়।

এদিকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, নতুন চাঁদের জন্ম হওয়ার পরে সময়ের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আকাশে তার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থিত দেশগুলোর আকাশে পরে আবির্ভাব ঘটে বলে কিছুটা পরিপক্ক চাঁদের দেখা পাওয়া যায়। আবার সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া আরব বিশ্বের মতো করেই ঈদ পালন কর। তাদের অনুসরণ করে আফ্রিকার কিছু মুসলিম দেশও।

ফিকাহ শাস্ত্রে (ইসলামী আইন ও বিধান) চাঁদ দেখা নিয়ে দু’টি মতবাদ পাওয়া যায়। এক. উদয়স্থলের অভিন্নতা, দুই. স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা। ইসলামের চার ইমাম হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)সহ প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও শরিয়তের ব্যাখ্যাকারীরারা সবাই রোজা রাখা আর ঈদ উদযাপনের জন্য স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর একমত পোষণ করেছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত