আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

এনএসসির অব্যবস্থাপনায় বন্ধ টেবিল টেনিস

স্পোর্টস রিপোর্টার
এনএসসির অব্যবস্থাপনায় বন্ধ টেবিল টেনিস

একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনকে। ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্বহীনতার কারণে উন্মুক্ত প্রেসিডেন্ট র‌্যাংকিং ও প্রাইজমানি টুর্নামেন্ট স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে টেবিল টেনিস ফেডারেশন। স্পন্সর থেকে শুরু করে এ টুর্নামেন্ট আয়োজনের সবকিছু চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু ঢাকার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামের এয়ার কন্ডিশন (এসি) সিস্টেম অচল ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় টুর্নামেন্টটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ টুর্নামেন্টটির আয়োজন চূড়ান্ত করার দুই মাস আগেই ভেন্যুর ব্যাপারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়েছিল টেবিল টেনিস ফেডারেশন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলোচনাও করেন ফেডারেশনটির সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এএম মাকসুদ আহমেদ। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রীড়া পরিষদ থেকে জানানো হয়, ভেন্যুর এসি সিস্টেম সচল করে দিতে পারবে না তারা। টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে আছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল হাসান কচি আমার দেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সেক্রেটারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে কথা বলেছেন, চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, ক্রীড়া পরিষদ থেকে মৌখিকভাবে এসি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা পরে জানায় যে, এখন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। অনেক টাকার বাজেট। সময় লাগবে, এত সহজে হচ্ছে না। তাই আমরা টুর্নামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন অন্য কোনো ভেন্যুতে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় কি না- সেটি দেখছি আমরা।’ আগামী ১৫ থেকে ১৯ মে এ টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া টেবিল টেনিসের সামনে রয়েছে আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্ট। তা নিয়েও শঙ্কিত ফেডারেশন।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামের এসি সমস্যা দীর্ঘদিনের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেবিল টেনিসের এই ভেন্যুটির অবস্থা খুবই নাজুক। ভেতরে প্রবেশ করার পর যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম! সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থান করলে প্রচণ্ড গরমে ঘামে পুরো শরীর ভিজে যাবে। বদ্ধ এক বৈরী পরিবেশ। এমন পরিবেশে খেলা কষ্টকর। এই পরিবেশে খেললে খেলোয়াড়দের শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি থাকবে। বাইরে থেকে ভেতরে আলো-বাতাস আসারও কোনো সুযোগ নেই। জানা যায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অব্যবস্থাপনার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দফায় এসিগুলো সার্ভিসিং করানো হলেও কয়েক মাস যাওয়ার পর সেই পুরোনো অবস্থায় ফিরে যায় এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম। আর কাজ করে না। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আমার দেশকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সাপোর্ট দিতে পারছি না। তারা আমাদেরকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু আমরা এসি ঠিক করতে পারিনি। কারণ আমাদের হাতে এত বেশি অর্থ নেই। অন্তত ১২ কোটি টাকার প্রয়োজন। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে ক্রীড়া কাঠামো সংস্কার ও মেরামতবাবদ ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমরা অর্থ বিভাগকে বিষয়টি জানাবো। যদি আমরা টাকা পাই, তাহলে কাজ শুরু করতে পারব।’ বর্তমান সৃষ্ট সমস্যার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্থায়ী জনবলের নির্দিষ্ট সংখ্যক একটি অংশকে দায়ী করে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি বেশি দিন হয়নি। এখানে যারা স্থায়ী জনবল (নির্দিষ্ট কয়েকজন) তাদের এই অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। কারণ তারা এর জন্য দায়ী।’

বিজ্ঞাপন

দুই মাস আগে চিঠি দিয়েছে টেবিল টেনিস ফেডারেশন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থ না থাকার কারণে আমরা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারিনি। বাজেট এলে আমরা সমস্যার সমাধান করে দেব।’

অদক্ষ কর্মকাণ্ডের জন্য যেমন খবরের শিরোনাম হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, তেমনি নানা ইস্যুতেও বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থাটি।

সম্প্রতি হকির ব্যর্থতা উদঘাটনের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে এনএসসি। যদিও এই কমিটিকে তদন্ত কমিটি বলতে নারাজ ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম। ক্রীড়া পরিষদের এই আকস্মিক উদ্যোগে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেননা অন্য খেলার ব্যর্থতা তদন্ত না করে হঠাৎ হকির ব্যর্থতার কারণ খুঁজছে এনএসসি! হকির ব্যর্থতা অনুসন্ধানে যেসব ব্যক্তিকে ডাকা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবার আছেন ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা। শুধু কমিটি বিতর্কই নয়, সার্চ কমিটির দেওয়া অ্যাডহক কমিটি পরিবর্তন করে ঘোষণা দিয়ে পরে আবার সংশোধনী এনে বিজ্ঞপ্তি দেয় এনএসসি।

এনএসসি ক্রমশ অকার্যকর সংস্থা হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে হাস্যাস্পদ হয়ে উঠছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সহকারী পরিচালক (ক্রীড়া) সাজিয়া আফরিন গত রোববার একটি চিঠি ইস্যু করেন। সেখানে বিষয়ভিত্তিক জায়গায় লেখা রয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘জায়গা হয়নি জিমির, এশিয়া কাপেও নেই বাংলাদেশ, ব্যর্থতার দায় কার’ শীর্ষক সংবাদ শিরোনামে অভিযোগ তদন্ত সংক্রান্ত। উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এনএসসির পরিচালকের (ক্রীড়া) অফিস কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এই তদন্ত কাজের জন্য পাঁচজনকে প্রাপক হিসেবে চিঠি দেওয়া হয়। এই পাঁচজন হলেন হকি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল হাসান, হকি কোচ মামুনুর রশিদ, হকির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আদেল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স ও শেষ জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া সাবেক অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি।

শেষের যে তিনজনকে এই তদন্ত কাজে হকির ‘স্টেক হোল্ডার’ হিসেবে রাখা হয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্তি রহস্য এবং হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তালিকার দুজন সাবেক হকি কর্মকর্তা বিতর্কিত এবং হকি অঙ্গনে তুমুল সমালোচিত ব্যর্থ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। এই তালিকায় থাকা সাজেদ আদেলকে মাঠে বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য ২০২৪ সালে হকি খেলা ও স্টেডিয়াম অঙ্গনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আরেক সংগঠক আরিফুল হক প্রিন্সকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সেই বছরই হকি খেলা ও স্টেডিয়ামে চার বছরের জন্য অবাঞ্ছিত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অথচ এমন ব্যক্তিদের এখন হকির একটি আসরে ব্যর্থতার জন্য পরামর্শ শোনার জন্য ডেকেছিল এনএসসি।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন