জাভেদ ওমরের ‘নতুন ইনিংস’

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ০০

পথশিশু কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো সাধারণত তাদের খাদ্য ও শিক্ষার বিষয়ে থাকে বেশ মনোযোগী। তবে খেলাধুলা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবে এমন উদ্যোগ চোখেই পড়ে না। এবার সেই উদ্যোগটাই নিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম। রাজধানীর মিরপুরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘জাভেদ ওমর বেলিম ইনিশিয়েটিভ’ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেন তিনি। এর মাধ্যমেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান জাভেদ ওমর বেলিম। আপাতত প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এতিমখানায় শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুরে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের নামে এই ইনিশিয়েটিভের উদ্বোধন করেন জাভেদ ওমর বেলিম। সেখানে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল-হাবিবুল বাশার সুমন। জাভেদ ওমর বেলিমের চাওয়া সবার আগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা। কেন মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছেন সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমার মতো ম্যাচিউরড ও এস্টাবলিশ মানুষও একসময় কোনো এক কারণে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। আমরা সব সময় বাচ্চাদের চিৎকার করে বলি, ‘এই পড়ো না কেন?’ এটা বলে মা-বাবা মারে। অনেকে আবার আত্মহত্যা করে। এরপরেই ভাবলাম, এটা নিয়ে আমি কাজ করব। শিক্ষা তো আছেই, আগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করব।”

বিজ্ঞাপন

তার বিশ্বাস খেলাধুলায় শিশুদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হলে কমে আসবে মানসিক অসুস্থতা। তবে বর্তমান বাস্তবতায় মাঠের অভাবে শিশুদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুরো বাংলাদেশের সব জায়গায় একসঙ্গে কাজ শুরু করতে পারবেন না সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে আপাতত ছোট পরিসরে শিশুদের খেলাধুলায় নিয়মিত সম্পৃক্ত করতে চান তিনি। জাভেদ ওমর বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশুনিবাসগুলোতে ছোট ছোট মাঠ আছে। তবে তাদের বাজেট কম থাকায় দেখা যায় খেলাধুলার সরঞ্জাম সব সময় তারা দিতে পারে না বা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন করে কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণে আমরা আপাতত সেসব জায়গায় খেলাধুলার সরঞ্জাম সরবরাহ করব। প্রয়োজনমতো ব্যাট-বল কিনে দেব। আমি চাই টেনিস ব্যাট-বলেও হলেও শিশুরা ক্রিকেট খেলুক। চার থেকে পাঁচ বছর বয়স থেকে খেলুক। তাদের পেশাদার ক্রিকেট খেলতে হবে ব্যাপারটা তেমন নয়। তারা খেলুক সেটাই চাওয়া। ১৪-১৫ বছর বয়সে শরীরে হরমোনাল কিছু পরিবর্তন আসে। তখন যদি কেউ ক্রিকেটে আসে, তখন সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমার মূল লক্ষ্য, তারা যেন খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে।’

জাভেদ বলছিলেন, ‘আপাতত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা নিয়ে কাজ করা হবে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে হলে অনেক অর্থের দরকার। আপাতত সেই সুযোগ নেই। এটার জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।’

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার এই উদ্যোগে পাশে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে পাচ্ছেন জাভেদ ওমর বেলিম। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যে ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে জাভেদ, আমি মনে করি যাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব আমাদের আরো অনেক আসা উচিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘আজকে (গতকাল) জাভেদ যা শুরু করেছে এর মেইনটেন্যান্স অনেক কঠিন। যাই হোক, বোর্ড প্রেসিডেন্ট নয়, তুমি আসলে আমাকে পাবে খেলোয়াড় হিসেবে। যেভাবে আজকে (গতকাল) আমরা এসেছি। আমরা সবাই চেষ্টা করব এটা যেন থেমে না যায়।’

টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ার জাভেদ ওমর শুরু করেছিলেন ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস দিয়ে। সেই দুই ইনিংসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন নটআউট। ক্রিকেট ছাড়ার পর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে জাভেদ ওমরের নতুন এই মহতী ইনিংসও যেন তেমনই নটআউটের মর্যাদা পায়।

শুভকামনা জাভেদ ওমর বেলিম।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত