নারী ফুটবলের সাফল্যময় সময়

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯: ০০
শিরোপা উৎসবে মেতেছেন দেশের চ্যাম্পিয়ন কন্যারা

হামজা চৌধুরী-শমিত সোমদের আগমনে বাংলাদেশের ফুটবল নতুন করে জেগে উঠেছে। তবে দেশের নারী ফুটবলে বিপ্লব ঘটেছে অনেক আগে থেকেই। ২০১৫ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক শিরোপা জয়ের মাধ্যমে নারী ফুটবলে সাফল্যের যাত্রা শুরু। এরপর বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র দলের ধারাবাহিক সাফল্যে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা অবস্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশকে আবার গৌরবময় সাফল্য উপহার দিয়েছেন নারী খেলোয়াড়রা। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতে সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করেছে তারা। অনেকটা বলে-কয়ে ২০২৩ সালে অর্জিত শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে জয়ী হলো বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা।

বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে নজর কাড়েন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের মেয়ে মোসাম্মৎ সাগরিকা। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন এই ফরোয়ার্ড। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফেও সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন সাগরিকা।
চার দেশের অংশগ্রহণে টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ নারী দলকে কেউই হারাতে পারেনি। ছয় ম্যাচ খেলে সবকটিতে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।

এ নিয়ে বয়সভিত্তিক সাফে বাংলাদেশ পঞ্চম শিরোপা জিতল। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে টানা দুবার (২০২১ ও ২০২৪) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফেও জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টের পরের আসরে (২০২২) ভারতের চেয়ে গোলগড়ে পিছিয়ে না থাকলে বয়সভিত্তিক সাফে আরো একটি শিরোপা থাকত বাংলাদেশের। নারী ফুটবলে চলতি বছরটি দারুণ কাটছে বাংলাদেশের। বয়সভিত্তিক সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে মিয়ানমারে গিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ সিনিয়র নারী দল।

প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ইতিহাস গড়ে তারা। এশিয়ান কাপে বাছাই পর্বেও তাদেরকে কেউ হারাতে পারেনি। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাছাই পর্ব শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর র‌্যাংকিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষেও ২-১ গোলের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে নারী দল। শেষে তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপের সেরা দল হিসেবেই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে নাম লেখায় তারা।

আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপে খেলে এবার বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখছে নারী দল। এ সাফল্যের আগে গত মে-জুনে ত্রিদেশীয় সিরিজে শক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকা স্বাগতিক জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ড্র করার নৈপুণ্য দেখায় তারা। গত বছরও সাফল্যময় সময় ছিল বাংলাদেশের। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উড়িয়ে ধরেছে নারী দল।


দেশে নারী ফুটবলারদের গল্পটা পুরোপুরি ভিন্ন। তাদের জীবনের গল্প সবসময় হৃদয়কে নাড়া দেয়। সমাজের যে পর্যায় থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবান্বিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন নারী ফুটবলাররা, সেটি ভাবলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে। নারী ফুটবলে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন তারা। মাঠের লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অদমনীয় মনোভাব, জয়ের ক্ষুধা আর সাফল্য পাওয়ার তাড়না- নারী ফুটবলারদের অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছেন, তাদের পক্ষে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। খেলার প্রতি যে প্রচণ্ড আবেগ আর ভালোবাসা, সেটিই নারী ফুটবলারদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত