জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ বুধবার আরো একটি ঘরোয়া দাবা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে আয়োজিত দাবা টুর্নামেন্টে বুধবার এক রাউন্ড বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৩ বছর বয়সি এই দাবাড়ু। শেষ পর্যন্ত ৭ রাউন্ডে সবকটি ম্যাচই জিতেছে তিতাস ক্লাবের ফিদেমাস্টার।
এ টুর্নামেন্টে সাকলাইন হারিয়েছে তারচেয়ে বেশি রেটিংয়ের শক্তিশালী তিন প্রতিপক্ষ মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ, সুব্রত বিশ্বাস ও তাহসিন তাজওয়ারকে। বাংলাদেশের দাবায় প্রতিভাবান অনেক দাবাড়ুই এসেছিল। কিন্তু সেই প্রতিভার মূল্যায়ন কি আদৌ হয়? হয় না বলেই ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের আক্ষেপ ঘুরেফিরে আসে দাবাঙ্গনে। বাংলাদেশের সর্বশেষ গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব। ২০০৮ সালে তিনি পেয়েছিলেন জিএম নর্ম। এরপর প্রায় ১৭ বছর কেটে গেলেও আরেকজন গ্র্যান্ডমাস্টার তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন। সাকলাইন হতে চায় সেই ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার। কিন্তু কোনো অনুশীলন ছাড়াই কি সেটা সম্ভব? অথচ গত কয়েক বছর যেসব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে সাকলাইন, এর সবগুলোই কোচ ও কোনো অনুশীলন ছাড়াই। ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, এমনকি গত জুনে সর্বশেষ দুবাই ওপেনেও সে খেলেছে কোচ ও অনুশীলন ছাড়াই। অথচ অনুশীলন ছাড়াই খেলে দুবাইয়ের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ হয়ে জেতে ১০০০ ইউএস ডলার পুরস্কার।
সাকলাইনের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলছিলেন, ‘ও যথেষ্ট মেধাবী। ওর যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো ট্রেনিং। অন্তত ছয় মাসের ট্রেনিংও যদি করানোর ব্যবস্থা করা যেত!’ একই আক্ষেপ সাকলাইনের কণ্ঠেও, ‘আমার ট্রেনিংয়ের খুব প্রয়োজন। ট্রেনিং করে কোথাও খেলতে গেলে খুব ভালো রেজাল্ট হতো। আমি আসলে নিজের চেষ্টায় খেলে যাচ্ছি। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা একা একা অনুশীলন করি। এটা কিন্তু যথেষ্ট নয়।’ সাকলাইনের বর্তমান ফিদে রেটিং স্ট্যান্ডার্ড ২২০৪। প্রথমে আন্তর্জাতিক মাস্টার, এরপর ধাপে ধাপে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সে, ‘আমি এখন দেশের ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাই।’
কিন্তু চাইলেই কি সম্ভব? পাশের দেশ ভারতে দিব্যা দেশমুখ সম্প্রতি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার উদাহরণ টেনে সাকলাইন বলেন, ‘ওরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়। ওদের স্পনসরও থাকে। ওদের মতো সুযোগ-সুবিধা ও ট্রেনিং পেলে আমিও দ্রুতই গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারব।’ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে বেশিরভাগ সময় স্পনসর জটিলতায় ভোগে সাকলাইন। তবে সর্বশেষ টুর্নামেন্টে দুবাই যেতে তাকে সহযোগিতা করেন তিতাস ক্লাবের কর্মকর্তা কাজী সাইদ হাসান। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রের একটাই স্বপ্ন- গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। সাকলাইন বলে, ‘ফেডারেশন সাপোর্ট করলে দ্রুতই হয়তো জিএম হতে পারব।’ দাবা ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কি সাকলাইনদের মতো তরুণ প্রতিভার কথা শুনতে পায়?

