কোপা দেল রে

তিন লালকার্ড ও ৫ গোলের থ্রিলার, বিতর্ক, নাটক আর রোমাঞ্চ শেষে শ্রেষ্ঠত্ব বার্সার

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২২: ৪৮
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬: ৩৫

ফুটবল দুনিয়ার ভেসে যাওয়ার কথা ছিল ফাইনালের রোমাঞ্চে। লড়াইটা যে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার; কিন্তু সে জায়গাটি দখল করে নিয়েছিল রেফারি বিতর্ক। স্পেনের রেফারিরা নাকি সব সময় রিয়ালের বিরুদ্ধে। লস ব্লাঙ্কোস শিবির নিজেদের টিভি চ্যানেল আরএমটিভিতে এ নিয়ে যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছে, তাতে করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ে রিয়ালের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে একরকম দাঁড়িয়ে যান রেফারিরাও। নৈতিকতার দিক থেকে না হলেও মনের দিক থেকে তা তো অবশ্যই।

বিজ্ঞাপন

রিয়ালের এ অন্যায্য অভিযোগ কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি কোপা দেল রে’র ফাইনালের ম্যাচ রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচিয়া। প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে ভিএআর পাবলো গঞ্জালেসের পাশে বসে কেঁদেছেনও বেনগোচিয়া। এ নিয়ে যেন আগুন লেগে যায় মাঠের বাইরে। ফাইনালের ভেন্যু সেভিয়ার ঘরের মাঠ এস্তাদিও দে লা কার্তুজার বাইরে রীতিমতো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বার্সা-রিয়াল সমর্থকরা।


রিয়ালের ফাইনাল বর্জনের খবরও ছড়িয়ে পড়েছিল। বাস্তবে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার মতো কিছু অবশ্য ঘটেনি। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলন আর অনুশীলন ঠিকই বর্জন করেছিল তারা। তার ওপর মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে ছিল কোচ কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। আগের দুই এল ক্লাসিকোতে (লিগে ৪-০ ও স্প্যানিশ সুপার কাপে ৫-২ গোলে জেতে বার্সা) হেরে এবারও পিছিয়ে ছিল মানসিকভাবে। তাইতো রেফারিদের কাঁদিয়ে মোটেই সুবিধা করতে পারেনি রিয়াল। আইনি জটিলতা আর শাস্তির নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সঙ্গে সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে তেমন কিছু করেনি তারা।

তবে বারুদে পোরা ম্যাচে তীব্র লড়াই জমিয়ে তুললেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি স্পেনের রাজধানীর ক্লাবটি। ‘মন থেকে ছেড়ে দেওয়া’ ম্যাচটিতে জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। যেখানে রিয়াল ধরেই নিয়েছিল রেফারিরাও তাদের বিরুদ্ধে, সেখানে মনোবল ধরে রাখতে পারেনি ইউরোপের রাজারা। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ৩-২ গোলে জিতে কোপা দেল রে’র শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিয়েছে বার্সা। পাঁচ গোলের থ্রিলার শেষে ভেতরে ভেতরে ঠিকই কেঁদেছে রিয়াল শিবিরই। কেননা, স্প্যানিশ সুপার কাপের পর এবার কোপা দেল রে’র ট্রফিও তুলে দিতে হলো বার্সার হাতে।


এর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতলেও বার্সার কোচ হিসেবে হ্যান্সি ফ্লিকের এটাই প্রথম কোনো মেজর ট্রফি। আগামী ১১ মে’র এল ক্লাসিকোর আগে দারুণ প্রস্তুতিও সারল তার শিষ্যরা। লা লিগার শিরোপার ভাগ্য যে ওই ম্যাচেই নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এর আগে যত মহারণের এল ক্লাসিকো মঞ্চস্থ হয়েছে, বিরতির আগে লিড নেওয়া ক্লাবই শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেছে। অলিখিত সেই রীতির ব্যত্যয় ঘটল না এবারও। সেভিয়ার মাঠে বার্সা শোকেসে তুলল ৩২তম কোপা দেল রে’র শিরোপা। ২০২১ সালের পর প্রথম টুর্নামেন্টটিতে চ্যাম্পিয়ন হলো কাতালানরা। ১৯৯০ সালের পর এ আসরের ফাইনালে রিয়ালকে এই প্রথম হারের তেতো স্বাদ হজম করতে বাধ্য করল বার্সা।


মাঠের বাইরের আগুনটা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল মাঠের লড়াইয়েও। আগুনে পারফরম্যান্সে ম্যাচের ২৮ মিনিটের মাথায় বার্সাকে লিড এনে দেন পেদ্রি। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বদলি হিসেবে পেয়ে জ্বলে ওঠে রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটে দলকে সমতায় ফিরিয়ে লড়াই জমিয়েও তোলেন ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ড। বদলে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। পরে ৭৭ মিনিটে তো আউরেলিয়েন চুয়ামেনির গোলে এবার এগিয়ে যায় রিয়াল। তবে কাতালানদের ৮৪ মিনিটে সমতাসূচক গোল এনে দেন ফেরান তোরেস। নির্ধারিত সময় শেষে স্কোর ২-২ গোলের সমতা থাকায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।


খেলা এক্সট্রা টাইমে গড়ানোয় ফুটবল অনুরাগীরা অপেক্ষা করছিলেন টাইব্রেকারের রোমাঞ্চ উপভোগের। কিন্তু ১১৬ মিনিটে সে আশায় ছেদ পড়ে যায়। রক্ষণভাগের ফুটবলার জুলস কুন্দে জয়সূচক গোল উপহার দিয়ে বনে যান বার্সার নায়ক। লুকা মদরিচের পাস কেড়ে নিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে ক্ষিপ্রগতির শটে রিয়ালের জাল কাঁপিয়ে দেন ফ্রান্সের এই তারকা ফুটবলার। তার এই গোলে ম্যাচের সঙ্গে টুর্নামেন্টটির শিরোপা নিজেদের করে নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা।

তবে ম্যাচের শেষদিকে মঞ্চস্থ হয় আরেক প্রস্থ নাটক! সেটা অবশ্য লাল কার্ড দেখা নিয়ে। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে (১২৩ মিনিট) এমবাপ্পে ফ্রি-কিক না পেলে মাঠে লেগে যায় হট্টগোল। বেঞ্চ থেকে রেফারির দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন রিয়াল ডিফেন্ডার অ্যান্তোনিও রুডিগার। সতীর্থরা তাকে টেনে ধরায় যেতে পারেননি। রিয়ালের ডাগআউট থেকে কেউ একজন বরফ ছুড়ে মেরেছিল রেফারি বেনগোচেয়াকে লক্ষ করে। এ ঘটনায় রুডিগার দেখেন লাল কার্ড। কয়েক সেকেন্ড পর লুকাস ভাসকেজের ভাগ্যেও জোটে লাল কার্ড। শেষে রিয়ালের জার্সিতে লাল কার্ডের ‘হ্যাটট্রিক’ পূর্ণ করেন জুড বেলিংহ্যাম।


ম্যাচ শেষে ঘটে আরেক অবাক করা ঘটনা। রানার্সআপ পদক নেওয়ার সময় দুদিকে দাঁড়িয়ে রিয়াল ফুটবলারদের গার্ড অব অনারও দেন কাতালান খেলোয়াড়রা। একে তো এল ক্লাসিকো, তার ওপর লড়াইটা ফাইনালের। তাতে বিতর্ক আর রোমাঞ্চ যোগ হওয়ায় ম্যাচ হয়েছে আরো উপভোগ্য। সব মিলিয়ে বিতর্ক, গোল, লাল কার্ড, উত্তেজনা আর জমজমাট লড়াই দেখে দর্শক নিঃসন্দেহে বলতেই পারেনÑ পয়সা উশুল, রাত জাগা সার্থক!

একনজরে ফল
বার্সেলোনা ৩-২ রিয়াল মাদ্রিদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত