মুশফিকের জন্য মানপত্র

এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১০: ০০
মিরপুরে মুশফিকুর রহিমকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থরা

ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে কেউ কি অবাক হয়েছেন? না হননি। মুশফিক যেন এই ফরম্যাট থেকে নিজেই বিদায় নেন, সেই দুয়ার বিসিবিও খুলে রেখেছিল। ১৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা মুশফিকও জেনে গেলেন, ওয়ানডের জার্সিতে তাকে বোর্ড, অধিনায়ক, কোচ, ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচক প্যানেল কেউ আর স্বাগত জানাচ্ছে না।


একটা বিষয় নিশ্চিত জানুন, মুশফিক ওয়ানডে ক্রিকেটকে এই সময়ে বিদায় না বললে পরের সিরিজে দল থেকে বাদ পড়তেন। চারধারের পারিপার্শ্বিকতা, নিজের ফর্ম, বয়স, পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নির্বাচকদের পরিকল্পনায় তার না থাকা এবং সর্বোপরি বাস্তবতা- সব হিসাব-নিকাশ জানিয়ে দেয় জাতীয় দলের ওয়ানডে জার্সিতে মুশফিক আর স্বাগত বা শুভেচ্ছা পাচ্ছেন না!
আর তাই এই ফরম্যাটের ক্রিকেটকে গুডবাই বলার সঠিক সিদ্ধান্তই নিলেন মুশফিক। একটাই আফসোস রইল তার, বিদায়টা রানে ভরা উজ্জ্বল হলো না! শেষ তিন ওয়ানডে ইনিংসে মুশফিকের জোগাড় সিঙ্গেল ডিজিট। এর মধ্যে একটি আবার শূন্য! দেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ২৭৪টি ম্যাচ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক মুশফিক। সেঞ্চুরি আছে ৯টি। হাফসেঞ্চুরি ৪৯টি। গড় ৩৬.৪২। বাংলাদেশের উইকেটকিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৪৩টি ক্যাচ। স্ট্যাম্পিং ৫৬। এমন অনেক কিছুতেই গড়েছেন একচ্ছত্র রেকর্ড। এমন একজন ক্রিকেটারের রঙিন পোশাকের ক্রিকেট থেকে বিদায়টা হলো বড্ড সাদামাটা!

বিজ্ঞাপন


টি-টোয়েন্টিকে আগেই বিদায় বলেছিলেন ২০২২ সালে। এবার ওয়ানডে ক্রিকেটের জার্সিও তুলে রাখলেন। এখন শুধু টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিককে দেখা যাবে। টেস্টে এখনো বাংলাদেশ দলে প্রায় অপরিহার্য ক্রিকেটার মুশফিক। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার। সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেট মুশফিকের পারফরম্যান্সে এখন আরো রঙিন হোক, সেই আশায় রয়েছেন এমআর-ফিফটিনের সমর্থকরা।


মুশফিক হয়তো ন্যাচারাল প্রতিভার বিচারে সেরা নন। তবে ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন, শৃঙ্খলা, অনুশীলনে নিয়মানুবর্তিতা, একাগ্রতা এবং প্রতিদিনই শেখার চেষ্টা তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকনিক মর্যাদা দিয়েছে। সবার আগে অনুশীলনে আসাকে মুশফিক যেন তার নিজস্ব নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। সবাই অনুশীলন শেষে বিশ্রাম নিচ্ছেন, আর মুশফিক তখনো নেটে ব্যাট হাতে নিজের শটকে আরো নিখুঁত করার চেষ্টায় ব্যস্ত। প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া, ছাপিয়ে যাওয়ার ও নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করা এবং তা জয়ের চোয়ালশক্ত প্রতিজ্ঞা মুশফিককে মানসিকভাবে অনেক শক্তপোক্ত ক্রিকেটারে পরিণত করেছে।


বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক হাসি-আনন্দ, আবার এই ক্রিকেটীয় লম্বা সফরে একই সঙ্গে দুঃখ-বেদনা, যন্ত্রণা এবং কাছে এসেও সামান্যতম ব্যবধানে হারের কষ্টের ভাগীদার হয়েছেন মুশফিক। দুই হাত উঁচিয়ে ব্যাট তুলে বাতাসে সাঁই সাঁই শব্দে ঘুসি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন মুশফিক। আবার ঠিক অন্য আরেকটি দৃশ্যপটে শেষ ওভারে দলকে নিজের ভুলের জন্য জেতাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরছেন- এমন ছবিও আছে মুশফিকের ক্যারিয়ারে। জয় আনন্দে হাসছেন বল্গাহারা হাসিতে। আবার দলের হারে কষ্টের কান্নায় চোখ বেয়ে নামছে অশ্রুধারা। সেই কান্নার প্রতি ফোঁটায় তৈরি হচ্ছে- পরের লড়াই জেতার জেদ।
মুশফিকের ১৯ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের হাইলাইটস এমনই! সেই অধ্যায়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের শেষটা হলো তার ধূসর, বিবর্ণ। ক্রিকেট যতখানি দেয়, কখনো কখনো কেড়েও নেয় তার চেয়ে বেশি। মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষাংশে সেই গানের সুরই বাজছে!

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত