ইলেকশনের নামে সিলেকশনে বিসিবিতে নতুন কমিটি

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ০০
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৩
বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল

বিসিবির এই নির্বাচনে ক্যাটাগরি-৩ ছাড়া বাকি সব পদে কারা জিতবেন তা সবাই জানত। কারণ, সেই পদে যারা লড়ছিলেন তাতে কোনো প্রতিপক্ষই যে ছিল না। ক্লাব কোটার ১২টি পরিচালক পদে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭। তবে এই তালিকার তিনজন তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন ভোট শুরুর অনেক আগেই। বাকি দুজন ছিলেন ‘ডামি প্রার্থী’। আর তাই ক্যাটাগরি-২ থেকে ‘ডার্টি ডজন’ কারা হচ্ছেন সেই তালিকা সবারই জানা ছিল।

বিজ্ঞাপন


উত্তাপহীন বিসিবির এই নির্বাচনে ক্যাটাগরি-১ ও ২ থেকে সেই তারাই জিতেছেন যাদের জেতার কথা জানত সবাই। ক্যাটাগরি-৩-এ খালেদ মাসুদ পাইলট ও দেবব্রত পালের মধ্যে ভোটের লড়াই জমবে বেশ, এমন একটা সম্ভাবনা যারা দেখছিলেন তারা ঠকেছেন। ৩৫-৭ ভোটের ব্যবধানে এই ক্যাটাগরিতে জিতেছেন মাসুদ। বড় ব্যবধানে হেরে দেবব্রত পাল অভিযোগ করেছেন, ‘এই নির্বাচন প্রভাবিত ছিল।’


পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিসিবির এই নির্বাচন ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে খানিকটা উত্তাপ সৃষ্টির চেষ্টা ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের। কিন্তু দিনভর সেই উত্তাপ আর তৈরি হয়নি। প্রার্থীদের যেখানে চিন্তাময় একটি দিন কাটার কথা ছিল, সেখানে তাদের দেখা গেছে বেশ হাসিখুশি। নির্বাচনের আগেই ফল জেনে যাওয়ায় নির্ভার আর শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। এই নির্বাচনে মোট ১৫৬ ভোটারের মধ্যে ১১৫ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ, মোট ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। ক্যাটাগরি-১ অর্থাৎ, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে ৩০টি, ক্যাটাগরি-২ অর্থাৎ, ঢাকার ক্লাব থেকে ৪২টি ও ক্যাটাগরি-৩ অর্থাৎ, বিভিন্ন সংস্থা, সাবেক ক্রিকেটার ও অন্যদের মধ্যে পড়েছে ৪৩ ভোট। এর মধ্যে একটি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।


নির্ধারিত দিনে তামিম ইকবাল-মাসুদুজ্জামানসহ ১৫ প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তখন থেকে একরকম উত্তাপহীন হয়ে পড়ে বিসিবি নির্বাচন। শুরুর দিনে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল- তা আগেই গুটিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন পরিণত হয়েছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতায়। বিশেষ করে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ক্যাটাগরি-১ ও ২-এ যে ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা ছিল তা হয়নি। তবে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্যাটাগরি-৩ নিয়ে ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস ছিল। তবে বাস্তবে সেখানে হয়নি কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট সংখ্যার মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ক্যাটাগরি-৩-এ মোট ৪৩ ভোট পড়েছিল। এর মধ্যে একটি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়। জয়ী প্রার্থী খালেদ মাসুদ পাইলট ৩৫ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেবব্রত পাল পেয়েছেন ৭ ভোট।


মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পেরোনোর পর জানা গিয়েছিল ক্যাটাগরি-১ থেকে মোট ১০ পরিচালকের মধ্যে ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ফলে এই ক্যাটাগরি থেকে কোন চারজন নির্বাচিত হন তা নিয়ে ছিল আগ্রহ। তবে গত পরশু নির্বাচন থেকে ঢাকা বিভাগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাতে আরো পানসে হয়ে পড়ে বিসিবির এবারের নির্বাচন। ফলে ঢাকা বিভাগ থেকে একরকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে এসেছেন বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। দুজনে পেয়েছেন ১৫টি করে ভোট। রাজশাহী থেকে মুহাম্মদ মুখলেসুর রহমান বিসিবিতে পরিচালক হিসেবে আসবেন। রংপুর বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন- খুলনা থেকে জুলফিকার আলী খান ও আব্দুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম থেকে আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, সিলেট থেকে রাহাত শামস ও বরিশাল থেকে মো. শাখাওয়াত হোসেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিসিবি পরিচালক হয়েছেন ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিক।


নিজের পছন্দের কাউন্সিলার ঠিক করা, ই-ব্যালটে পাতানো নির্বাচনের ছক, ছিটেফোঁটাহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কারা জিতবেন আগেই জানা থাকা, একপেশে এবং প্রত্যাখ্যান ও প্রত্যাহারের বিসিবির এই ইলেকশন সত্যিকার অর্থে সিলেকশন হলো। যে প্রক্রিয়ায় ভোট হলো তার ৯৯.৯৯ ভাগ জুড়েই অভিনয় আর অভিনয়! সুন্দর অভিনয়ের জন্য বর্তমান ক্রীড়া প্রশাসন এবং বিসিবি যুগ্মভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের দাবি করতেই পারে!
এমন কায়দায় জিতে আসা বিসিবির নতুন পরিষদকে অভিনন্দন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত