কড়াকড়ি নিরাপত্তার মাঝেই মিরপুর প্রস্তুত হচ্ছে উৎসবের জন্য। এই উৎসব যাকে কেন্দ্র করে তিনি মুশফিকুর রহিম। শততম টেস্ট খেলার রোমাঞ্চ সম্ভবত তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যেহেতু অনুশীলন চলাকালে সরাসরি তাকে এই প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি, তাই দূর থেকে দেখেই এই ভাবনা। তাকে ঘিরে এই ভাবনার একমাত্র কারণ- শততম টেস্টের আগে তার ধারাবাহিক রুটিনে ছিল না কোনো পরিবর্তন। অন্যান্য দিনের মতো সবার আগে মাঠে এসে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহিম। করেছেন বাড়তি অনুশীলন। মুশফিকের আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার যে গল্প শোনা যায়, তার ছিটেফোঁটার দেখাও মেলেনি গতকাল মিরপুরে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে। তাতে খানিকটা আন্দাজ করা যায়, নিজেকে সামলে নিয়ে আগামীকাল নিজের শততম টেস্টে নামতে প্রস্তুত তিনি।
মুশফিকের দ্রুত অনুশীলনে আসার গল্প তো সবাই জানে। কিন্তু তার অনুশীলন শেষের ওই গল্পটা হয় না। গতকাল ইনডোরের নেটে ব্যাটিং শেষ করে মুশফিক বিশ্রাম নিয়ে দলীয় অনুশীলনের ওই বাকি সময়টা কাটিয়ে দেননি। বরং, নতুন উদ্যোমে মূল মাঠে এসে করেছেন অনুশীলন। নিজের প্রিয় শট সুইপ ও রিভার্স সুইপের প্রাকটিশ করলেন লম্বা সময় ধরে।
মিরপুরে হওয়া ২৮ টেস্টের ২৭টিতেই খেলা মুশফিকের চেয়ে এখানকার উইকেট সম্পর্কে সবটুকু তথ্য তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। সে কারণেই টিম বয় রমজানকে সঙ্গে নিয়ে মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে শুধুই সুইপ আর রিভার্স সুইপ অনুশীলন করে গেছেন মুশফিক। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের মনমতো হয়নি, ততক্ষণ অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। অনুশীলনে এমন একাগ্রতা আর চেষ্টাই মুশফিককে সবার চেয়ে আলাদা করেছে। তার এই অনুশীলন দেখে বারবারই মনে হচ্ছিল, শততম টেস্ট খেলার সেই রোমাঞ্চ তাকে ছুঁয়ে যায়নি একটিবারের জন্যও।
সেঞ্চুরি টেস্ট খেলার দ্বারপ্রান্তে থাকা মুশফিকের এমন অনবদ্য পেশাদারিত্বের কথা জানে আইরিশরাও। তার এমন পেশাদারিত্বে অভিভূত আয়ারল্যান্ড কোচ হেনরিখ মালান। সংবাদ সম্মেলনে মুশফিককে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভোরে উঠি এবং প্রতিদিন সকালে হোটেলে তাকে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে নাশতা করতে দেখি। তারপর সে সবার আগে বাসে ওঠে, মাঠে যায় এবং অন্য খেলোয়াড়রা আসার আগেই সে তার ওয়ার্মআপ, স্ট্রেচিং এবং ব্যাটিং অনুশীলন করে। আমার মনে হয় আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে এমন সময় দেন যখন আলো নেই, তবে আলো জ্বলে উঠলে পারফর্ম করার মতো পুঁজি আপনার থাকে, যা সে সময়ের সঙ্গে প্রমাণ করেছে।’ পাশাপাশি তাকে অভিনন্দন জানাতেও ভোলেননি মালান। তিনি বলেন, ‘আশা করি এই পাঁচ দিন সে ভালো না খেলুক, তবে ১০০তম টেস্ট খেলার জন্য তাকে অভিনন্দন।’
দারুণ এই অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকের জন্য আগামীকাল থাকছে বিশেষ আয়োজন। ম্যাচ শুরুর আগে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে বিশেষ ক্রেস্ট। মাঠে উপস্থিত থাকবেন মুশফিকের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর করা একটি বিশেষ জার্সিও তুলে দেওয়া হবে মুশফিকের হাতে।

