গাজামুখী নৌবহরে ইসরাইলি হামলা, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা কী বলল

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১৫
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২২

গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরে ইসরাইলি হামলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ। সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে থাকা ৪৪৩ অভিবাসীসহ ৪০টি জাহাজ আটক করেছে ইসরাইলি সেনারা। এ সময় অনেক অভিবাসীর ওপর জলকামান দিয়ে আক্রমণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ইসরাইলের দাবি, সবাই "নিরাপদ ও সুস্থ" আছেন।

বিভিন্ন সংস্থাসহ কোন দেশ কী বলল

বিজ্ঞাপন

গাজায় ত্রাণ বহনকারী নৌবহরে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন দেশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে অনেক দেশ উদ্বেগ জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেওয়ার জন্য ইসরাইলের সমালোচনা করেছে।

জাতিসংঘ: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক ইসরাইলকে "দ্রুত গাজার অবরোধ তুলে নিতে এবং সব সম্ভাব্য সব উপায়ে জীবন রক্ষাকারী উপকরণের প্রবেশাধিকার দেওয়ার" আহ্বান জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি যোগ করেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই নিরপেক্ষ মানবিক সহায়তার যে প্রকল্প রয়েছে সেগুলো "কোনো বাধা ছাড়াই" সহজতর করতে সম্মত হতে হবে।

যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা নৌকায় থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে "আমরা আশা করি পরিস্থিতি নিরাপদভাবে সমাধান হবে"।

বাংলাদেশ: সুমুদ ফ্লোটিলাকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটকানোর ঘটনায় গভীর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি দখলদার বাহিনী এ ফ্লোটিলাকে আটক করে। বাংলাদেশের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইসরাইলকে গাজা ও পশ্চিম তীরের অবৈধ দখলদারিত্ব সমাপ্ত করতে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে এবং গাজায় চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও মানবিক অবরোধ অবিলম্বে বন্ধ করতে আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ জোর দিয়ে বলেছে, এ মানবিক সহায়তা বহরটি দখলকৃত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বৈশ্বিক সংহতির প্রতীক। গাজার বেসামরিক জনগণ দীর্ঘদিন ধরে জীবনের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও জীবিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর কারণে। তাই এ সহায়তার বহরকে গাজায় প্রবেশের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে অটল সংহতি প্রকাশ করেছে। এই ভয়াবহ দুর্দশা ও অব্যাহত কষ্টের মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ড: আইরিশ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এই প্রতিবেদনগুলোকে "উদ্বেগজনক" বলেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত সাতজন আইরিশ নাগরিক আছেন, তাদের মধ্যে সিন ফেইন সেনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুজও রয়েছেন।

কলম্বিয়ার: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো তার দেশে থাকা সব ইসরাইলি কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছেন। তিনি এই বাধা দেওয়াকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন "নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক অপরাধ" বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল–এর মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজার ওপর ইসরাইলের অবরোধ 'অবৈধ' এবং "বহু দশক ধরে ইসরাইল যেভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়মুক্তি পাচ্ছে তার শেষ হতে হবে।"

ইতালি: ইতালির ইউনিয়নগুলো শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এবং দেশটিতে ১০০রও বেশি মিছিল বা গণসমাবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি অবশ্য গাজায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি এখনো বিশ্বাস করি, এসব কিছুই ফিলিস্তিনি জনগণের কোনো উপকারে আসে না।"

তুরস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান ইসরাইলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে ইসরাইল সরকারের শান্তির আশা তৈরি হতে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকা: দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা অবিলম্বে নৌবহরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকানদের মুক্তি দেয়, যার মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি নকোসি জুয়েলেভেলিল ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।

স্পেন: গাজাগামী ত্রাণবহর আটকের পর স্পেন ইসরাইলি চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে।

বেলজিয়াম: স্টেডফাস্টনেস ফ্লোটিলা জাহাজে থাকা সাত বেলজিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বেলজিয়াম ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকেও তলব করেছে।

পাকিস্তান, বলিভিয়া এবং মালয়েশিয়া ও ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা গেছে। এছাড়া নিন্দা জানাতে ডাবলিন, প্যারিস, বার্লিন এবং জেনেভার রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন। বুয়েনস আইরেস, মেক্সিকো সিটি এবং করাচিতেও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত