ভারতের সংসদে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিতর্কের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেছেন, গত শতাব্দীতে মুসলিম লীগের চাপে কংগ্রেস গানটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এ বিষয়ে তিনি সরাসরি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করেন।
মোদির বক্তব্যের জবাবে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিতর্ক তোলা হয়েছে। তার অভিযোগ, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ তোলার সুযোগ খুঁজছে বর্তমান সরকার।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ‘বন্দে মাতরম’ এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছে। সেই সূত্রে সংসদে আলোচনা শুরু হয়। মঙ্গলবার রাজ্যসভায়ও এ বিষয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বিতর্কের সূত্রপাত ১৯৩৭ সালে। গানটির প্রথম দুটি স্তবকের পর হিন্দু ধর্মীয় শব্দাবলি ও চিত্রকল্প থাকায় মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহসহ অনেকেই আপত্তি জানান। এরপর নেহরু–সুভাষচন্দ্র বসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শে গানটির প্রথম দুটি স্তবককেই কংগ্রেস সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরও ‘বন্দে মাতরম’ না ‘জন গণ মন’—কোনটি জাতীয় সংগীত হবে, তা নিয়ে বহুবার বিতর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত ‘জন গণ মন’ জাতীয় সংগীত এবং ‘বন্দে মাতরম’ জাতীয় গান হিসেবে গৃহীত হয়।
লোকসভায় আলোচনা শুরুর সময় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের বিরোধিতার মুখে কংগ্রেস ‘বন্দে মাতরম’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দেয়। তার দাবি, নেহরু মুসলিম তোষণ করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
জবাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘এই বিতর্ক অদ্ভুত—যে গান মানুষের হৃদয়ে আছে, তাকে নিয়ে নতুন বিতর্কের কী প্রয়োজন?’ তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পশ্চিমবঙ্গে ভোটকে সামনে রেখে এই ইস্যু উসকে দিচ্ছে।
গবেষকদের মতে, গানটির প্রথম দুটি স্তবক নিয়ে সর্বস্তরের আপত্তির সুযোগ নেই। তবে পরবর্তী স্তবকগুলোর ধর্মীয় ভাববস্তুর কারণেই ঐতিহাসিকভাবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে কংগ্রেস শুধু প্রথম দুটি স্তবক গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অবশেষে ১৯৫০ সালে সংবিধান সভার সভাপতির ঘোষণায় ‘জন গণ মন’ জাতীয় সংগীত এবং ‘বন্দে মাতরম’ জাতীয় গান হিসেবে মর্যাদা পায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা


কারাবন্দিদের যোগাযোগে আসছে স্মার্ট সুবিধা
রাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসনপ্রতি লড়বে ৬৮ ভর্তিচ্ছু