রয়টার্স-এএফপিসহ বিশ্ব মিডিয়ার খবর

আপা আর ফিরছেন না, নেতৃত্বের বাইরে শেখ পরিবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৩২
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৫৪
সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দুটি সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স ও দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং ফ্রান্সভিত্তিক এএফপিকে দেয়া এসব সাক্ষাতকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, জুলাই গণহত্যার জন্য তার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বিজ্ঞাপন

রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হলে যেই ক্ষমতায় আসুক, তিনি দেশে ফিরবেন না। ভবিষ্যতে সরকারে কিংবা বিরোধী দলে শেখ পরিবারের নেতৃত্ব দেওয়া অপরিহার্য নয়। ভাচ্যুয়ালি এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার সামনে ফাঁসির রজ্জু ঝুলছে। জুলাই গণহত্যায় তার সরাসরি নির্দেশনা ও সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য-প্রমাণ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাতে। ইতোমধ্যে শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর ঠিক হবে- কবে সাবেক এই ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় হবে।

সাক্ষাৎকারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন এই স্বৈরাচারী নেত্রী। তার ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে বেশিরভাগ মানুষই ভোট দেবেন না।

এদিকে হাসিনার এসব সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার খুনের বিষয়ে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ, জাতিসংঘ ও আলজাজিরার প্রতিবেদনে তার গুম-খুনের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো মাথায় রাখতে হবে।

২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর ভারত শেখ হাসিনার জন্য শুধু নিরাপদ আশ্রয়ই নিশ্চিত করেনি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার নানান ছকেরও বাস্তবায়ন করেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কার্ড দেশ-বিদেশে এখনও খেলে যাচ্ছে তারা। বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ক্রমেই কঠিন করে তোলার জন্য নানা বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দিল্লি।

পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও পুনর্বাসন করেছে তারা। দলীয় কার্যালয় খোলার সুযোগ করে দিয়েছে দিল্লি ও কলকাতায়। লিফলেট ছাপিয়ে সেমিনার করার সুযোগও করে দিয়েছে। এমনকি হাসিনার কাছাকাছি থাকা সেনা কর্মকর্তারাও নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছেন ভারতে। অন্তত তিনজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এখন দিল্লি ও কলকাতায় অবস্থান করছেন।

শেখ হাসিনা এতদিন পর্যন্ত শুধু সামাজিক মাধ্যমে অডিওতে বক্তব্য দেয়ার মধ্যেই তার কার্যক্রম সীমিত রেখেছিলেন। তবে এখন তাকে আরো বৃহত্তর পরিসরে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে ভারত। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় দি ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পত্রিকাটির ভাষায় সাবেক কর্তৃত্বপরায়ন শাসক হাসিনা বলেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তপাতের জন্য তিনি দায়ী নন। তার অনুপস্থিতিতে যে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা ‘লজ্জাজনক’। এমনকি তিনি ওই বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের কারণে ঘটে যাওয়া হতাহতের জন্য ক্ষমা চাইবেন না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। এমন একটি সময়ই এমন মন্তব্য করলেন তিনি। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের হিসাব অনুসারে, ছাত্র-জনতার ওই বিক্ষোভে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন।

তবে অভ্যুত্থানে নিহত ও তাদের পরিবারের জন্য তিনি সহানুভূতিশীল, শোকাভিভূত। যদিও পুলিশকে যে তিনি গুলি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন- সেটা তিনি নাকচ করেছেন।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বেআইনিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শেখ হাসিনা এ সময় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে অনির্বাচিত, বেআইনি ও অবৈধ সরকার হিসেবে অভিহিত করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল ফাঁসির রায় দিলেও তিনি বিস্মিত হবেন না বলেও মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে স্বজন হারানোর বেদনা এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসেন তিনি।

রয়টার্সের কৃষ্ণা এন দাস ও রুমা পালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানান কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কোটি কোটি আওয়ামী লীগ সমর্থক এই নির্বাচন বয়কট করবে। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রী বলেছেন, আ.লীগকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তিনি দেশে ফিরবেন না। তিনি ভারতের থেকে যাবেন।

তিনি বলেন, আ.লীগ নিষিদ্ধ করা শুধু অন্যায্যই নয়, আত্মঘাতীও। তিনি বলেন, পরবর্তী সরকারের নির্বাচনি বৈধতার প্রয়োজন হবে। কোটি কোটি মানুষকে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে রাজনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর হবে না।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত