যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত গাইডেড বোমার (জিবিইউ) প্রযুক্তি এখন ইরানের হাতে। এরই মধ্যে মিত্র ইরানকে মার্কিন জিবিইউ-৩৯বি বোমার ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ সরবরাহ করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
এই প্রযুক্তি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিকে আরো উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি শত্রুর হাতে চলে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গত মাসে ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণে হিজবুল্লাহর ঊর্ধ্বতন কমান্ডার হাইথাম আলী তাবাতাবাই নিহত হওয়ার পর একটি অত্যাধুনিক মার্কিন জিবিইউ-৩৯বি অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে।
হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ইউনিট দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বোমাটির ছবি তোলে, সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে এবং এর অত্যাবশ্যকীয় ইলেকট্রনিক উপাদানগুলো রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (বিপরীত প্রকৌশল) জন্য ইরানে পাঠায়।
এই ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর লেবানন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বোমার ধ্বংসাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
হিব্রু মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, পেন্টাগন কর্মকর্তারা পরিস্থিতিটিকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে দেখছেন। কারণ বোমার অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর তথ্য ফাঁস যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক অস্ত্র ভাণ্ডারের তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারে।
এর আগে ইরান আরো একটি বিশাল আকারের মার্কিন বোমার প্রযুক্তি হাতে পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সময় মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো ১৩ টন ওজনের বিশাল জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করেছিল। এগুলোর মধ্যে একটি বোমা অবিস্ফোরিত থেকে যায় এবং তা ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের হাতে আসে।
ইরানের সূত্র নিশ্চিত করেছে, তেহরান সফলভাবে এই বিশাল আকারের যুদ্ধাস্ত্রের রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিপরীত প্রকৌশল) সম্পন্ন করেছে। যদিও ১৩ টন ওজনের জিবিইউ-৫৭ বোমার ব্যাপক ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, হিজবুল্লাহর মাধ্যমে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত হালকা জিবিইউ-৩৯বি বোমার (প্রায় ১০০ কেজি) প্রযুক্তি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মতবাদের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ।
ইরান জিবিইউ-৩৯বি বোমার ভেদন ক্ষমতা এবং পথনির্দেশক প্রযুক্তিকে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। ইরানের সামরিক প্রকৌশলীরা বর্তমানে জিবিইউ-৫৭-এর মতো একটি ওয়ারহেড তৈরি করতে সফল হয়েছেন, যা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এছাড়া ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য আরো আধুনিক সংস্করণ তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই নতুন ইরানি ওয়ারহেডগুলো চাঙ্গা কংক্রিট এবং ভূগর্ভস্থ প্রতিরক্ষা প্রাচীর ভেদ করে ২০ মিটার পর্যন্ত গভীরে প্রবেশ করতে পারে। যদিও মার্কিন সংস্করণটি ৬০ মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে পারে।
ইরানের সামরিক অস্ত্রাগারের বেশির ভাগই দেশে তৈরি। এর কিছু নকশা এখন অন্যান্য দেশও অনুকরণ করছে, যার মধ্যে শাহেদ-১৩৬ ড্রোনটি সবচেয়ে বেশি অনুকরণ করেছে বেশ কয়েকটি অস্ত্র প্রস্তুতকারক। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও আছে।
তেহরান অতীতেও দখল করা অস্ত্র রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। ২০২১ সালে সাইবার যুদ্ধের মাধ্যমে ভূপাতিত করা লকহিড মার্টিন আরকিউ-১৭০ ড্রোন এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
এই বোমা স্থানান্তরের গুজব নিয়ে ইরান বা হিজবুল্লাহর কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। ওয়াশিংটনের বোমাটি ফেরত চাওয়ার দাবিতে লেবাননে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জের মতো লেবাননের কাছে তাদের বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাটি ফেরত চাইছে, যাতে তারা সেটি ব্যবহার করে আরো মানুষ হত্যা করতে পারে। সূত্র : তেহরান টাইমস


গাল্ফ উপসাগরে ইরানের মহড়া, মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে সতর্কবার্তা
নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-কাতারের গোপন বৈঠক
ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা