টানা ১২ দিন সংঘাতের পর ইরান-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু যে কারণে এ লড়াই, অর্থাৎ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার বিষয়টি কতটা অর্জিত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের তিনটি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তাদের কর্মসূচি ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে আমেরিকা ‘উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে’।
তবে ১২ দিনের এই সংঘাতে ইরান ও ইসরাইল উভয় পক্ষই যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খবর বিবিসি বাংলার।
সংঘাতের এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর রূপ নেবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে এর জবাবে ইরান কাতারে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালালেও কোনো হতাহতের ঘটনা হয়নি। আমেরিকাও নতুন করে আর কোনো আক্রমণ করেনি।
বরং এর পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকাই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন।
কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি কতদিন থাকবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
আর এই সংঘাতের পর ইরান এখন সামনে কী করতে যাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের মনে।
পরমাণু কর্মসূচির কী হবে? ইরান কি পারমাণবিক বোমা বানাবে?
ইরান পারমাণবিক বোমা বানাবে কিনা এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। কারণ দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে এরকম কোনো ঘোষণা দেয়নি।
তবে পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প কি আছে নাকি ধ্বংস হয়েছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফোর্ডোসহ ইরানের তিনটি প্রকল্পে বোমা হামলা চালানোর পর দাবি করেছেন ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যদিও পেন্টাগনের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে কতটা ধ্বংস হয়েছে তা নিয়ে সংশয়ের খবর প্রকাশ হয়।
এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে আমেরিকা ‘উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে’।
তবে বাস্তবে কতটা কী ক্ষতি হয়েছে সেটা পরিদর্শন এবং সঠিক তথ্য ছাড়া বোঝা মুশকিল।
কিন্তু ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন না। এর কয়েকটি কারণ আছে।
প্রথমত— ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোর্দো- কেবল এই তিনটিই তাদের পরমাণু প্রকল্প নয়। এর বাইরেও ইরানের কর্মসূচি আছে।
দ্বিতীয়ত— ইরান যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন হয়েছে সেটা কেউ নষ্ট করতে পারবে না। তাদের প্রকল্প ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা সেটা আবার শুরু করতে পারবে।
তৃতীয়ত—ইরানের গোপন কোনো পরমাণু প্রকল্প আছে কিনা সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না।
লন্ডনে দ্য গার্ডিয়ানের জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক জুলিয়ান বার্গার বলেন, ইরান এখন পরমাণু বোমা বানানোর দিকেও যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ইরানের বড় সফলতা হচ্ছে যে তারা টিকে গেছে। এটা ঠিক যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা কেউ কেড়ে নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ইরান প্রায় চারশত কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম যেটা দিয়ে ১০টা পরমাণু বোমা বানানো যাবে সেটা লুকিয়ে ফেলেছে। তাদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে এখন তারা এটা ভাবতেই পারে যে শুধু এই পারমাণবিক বোমা থাকলেই সেটা তাদেরকে এরকম হামলা থেকে রক্ষার গ্যারান্টি দেবে। যেমনটা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে। নাহলে তাদের পরিণত হবে ইরাক, লিবিয়ার মতো।’
তবে ইরানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, পরমাণু কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে সরে আসার জন্য পশ্চিমা শক্তিগুলোর নতুন চাপ মোকাবিলা করা।


পরমাণু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনাকে গুজব বললো ইরান