আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

দুর্বল হচ্ছে আটলান্টিকের স্রোত

ইউরোপে তীব্র খরার শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউরোপে তীব্র খরার শঙ্কা
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর গোলার্ধের জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক আটলান্টিক মহাসাগরের মূল স্রোতপ্রবাহ ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে আটলান্টিকের স্রোতপ্রবাহ হ্রাসে ইউরোপে চরম মাত্রায় খরার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসাগরীয় স্রোতপ্রবাহের পতন হয়, তাহলে দক্ষিণ ইউরোপে ইতোমধ্যেই চলমান তীব্র মাত্রার শুষ্ক গ্রীষ্মকাল আরো খারাপ হতে পারে। পাশাপাশি তীব্র খরা ও দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ক মৌসুম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এই জলবায়ু বিপর্যয় আগামী এক হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।

বিজ্ঞাপন

গবেষকরা এই প্রথম আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (এএমওসি) তথা আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত বলয় পতনের ফলে উদ্ভূত সম্ভাব্য জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ইউরোপের গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টির পরিমাণ কেমন হবেÑতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন।

বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, মানব-সংশ্লিষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বিদ্যমান বৃহৎ পরিবেশ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই পরিবর্তন পরিবেশ ব্যবস্থাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দিতে পারে বলেও সতর্ক করেন তারা।

এএমওসি মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের একটি প্রধান স্রোতব্যবস্থা, যা দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে উত্তর গোলার্ধে উত্তাপ নিয়ে আসে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ইউরোপের আবহাওয়া কেমন হবে, তা অনেকাংশেই এর ওপর নির্ভরশীল। এর পতনের ফলে পুরো ইউরোপজুড়ে শীতকালীন তাপমাত্রা অনেক বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি ইউরোপে প্রচুর আর্দ্রতাও নিয়ে আসে।

এএমওসি নিয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রধান নেদারল্যান্ডসের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞানের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক রেনে ভ্যান ওয়েস্টেন বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘লাইভ সায়েন্স’কে বলেন, এএমওসি মূলত আমাদের বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থাকে রূপ দেয়।

ইউরোপের জলবায়ু তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত উভয় দ্বারা প্রভাবিত হয় উল্লেখ করে ভ্যান ওয়েস্টেন বলেন, এই স্রোতের কারণেই উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের জলবায়ু একই অক্ষাংশে অবস্থিত দক্ষিণ কানাডার চেয়ে তুলনামূলকভাবে মৃদু।

নতুন এই গবেষণায় গবেষকরা আটটি সিমুলেশন পরিচালিত করেন। এগুলোর ব্যাপ্তিকাল এক হাজার বছরেরও বেশি। এর মধ্যে চারটি সিমুলেশনে প্রাক-শিল্পযুগের গ্রিনহাউস গ্যাসের স্তরের অনুকরণ করা হয়।

অন্য দুটি সিমুলেশনে আরসিপি ৪.৫ মডেল পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে মানুষের কার্বন নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর হ্রাস পেতে শুরু করে এবং আটলান্টিক মহাসাগরে কম-বেশি পরিমাণে মিঠা পানি প্লাবিত হয়; তাহলে এর প্রভাবে বৃষ্টির অবস্থা কী হবে, তা এই মডেলে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

শেষ দুটি সিমুলেশন একটি উচ্চ নির্গমনের দৃশ্যকল্পের মডেল তৈরি করে; যেখানে কার্বন নির্গমন বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি। এক্ষেত্রে এএমওসি মিঠা পানির উভয় পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে।

সাধারণত সমুদ্রে যখন প্রচুর পরিমাণে মিঠা পানি প্লাবিত হয় (উদাহরণস্বরূপ বরফের টুকরো গলে যাওয়ার ফলে), তখন পানির লবণাক্ততা, ঘনত্ব ও পানি কীভাবে শক্তি বহন করেÑএটি তা পরিবর্তন করে। আরসিপি ৪.৫ মডেলে মিঠা পানির পরিমাণ অত্যধিক হলে তা শেষ পর্যন্ত এএমওসিকে ভেঙে ফেলে। অন্যদিকে মিঠা পানির পরিমাণ অল্প হলে তা এএমওসিকে পুনরুদ্ধার করে।

জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী কার্স্টেন হাউস্টেইন ভবিষ্যৎ জলবায়ুর স্থিতিশীল অবস্থার বিশ্লেষণকে স্বাগত জানান। তিনি লাইভ সায়েন্সকে বলেন, এই সিমুলেশনগুলোর সৌন্দর্য হলো এগুলো সবকিছু পরিবর্তন হওয়ার শত শত বছর পরের পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করে।

হাউস্টেইন বলেন, আমরা পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য যে ক্ষণস্থায়ী পরিস্থিতির পরিকল্পনা করি, তা স্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে আলাদা। আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরে আমাদের আবহাওয়া অনেক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এ অবস্থা চিরকাল এভাবেই থাকবে। এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আরো বলেন, স্থিতিশীল পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি এই গবেষণাপত্রকে ‘খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ও আকর্ষণীয়’ করে তুলেছে। কারণ, আমাদের কাজ করার জন্য এটি আরো অনেক বেশি কিছুর জোগান দেয়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন