আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বাংলাদেশ-বিদ্বেষ

বিজেপির শুভেন্দুর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কলকাতার বিশিষ্টজনের

আমার দেশ ডেস্ক
বিজেপির শুভেন্দুর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কলকাতার বিশিষ্টজনের

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশ নিয়ে লাগাতার বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছেন। এক্ষেত্রে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মন্দির ভাঙা, সীমান্তে হিন্দুদের জড়ো হওয়ার মতো ভুয়া সংবাদকে হাতিয়ার করছেন তিনি।

দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে শত্রুতা চাইছেন বিজেপির এই নেতা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পতনের পরপরই ‘ঢাকা থেকে তিন লাখ হাতে টানা রিকশা কলকাতা দখলের জন্য রওনা দিয়েছে’ এমন ভিত্তিহীন গুজবও রটিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

তবে আশার কথা হলো, কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার নাগরিক সমাজ শুভেন্দু অধিকারীর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তাদের কথা,­­ ভোটের জন্য আর কত নিচে নামবে বিজেপি! শুভেন্দু বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ঠিক করছেন না। যাদবপুর থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্ট্রিট থেকে মুর্শিদাবাদ, বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দুদের বাংলাদেশ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।

কিছুদিন আগে যাদবপুরে এ বিষয়ে সেমিনার করেন সাংবাদিক অর্ক দেব, অত্রি ভট্টাচার্যরা। তারা তুলে ধরেন মোদি, হাসিনা, আদানির যোগসাজশ। অর্ক দেব, অর্ক ভাদুড়ি, স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য লাগাতার বিভিন্ন টকশোর আয়োজন করে কলকাতার মানুষের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছেন। বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে স্বস্তি বিরাজ করছে, সেই খবর তুলে ধরেছেন তারা। তারপরও শুভেন্দুরা রাজনৈতিক ফায়দা লাভের আশায় বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত আইএএস ও সাবেক সংসদ সদস্য জহর সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি (শুভেন্দু) না করলে এসব আর কে করবেন! ভোটের জন্যই করছেন। আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এই অংশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক এবং দাঙ্গাবাজ। তাদের কথায় কান দেবেন না।

আমেরিকায় বসবাসকারী লেখিকা সুব্রতা ঘোষ রায় বলেন, শুভেন্দু একটা নরাধম। তিনি অশান্তি ছড়াতে চান। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। আমরা দুই বাংলার সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক চাই।

চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বরাবরই বিজেপির মূল এজেন্ডা বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার ভাষায়, যে পঞ্চশীল নীতি নিয়ে ভারতবর্ষ পড়শিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে কিছুটা সফলতা পেয়েছিল, সেই পঞ্চশীল নীতিতে আরএসএস-বিজেপি বিশ্বাস করে না। হিন্দু জঙ্গি জাতীয়তাবাদ আদর্শ নিয়ে এক আগ্রাসী ভারত গড়ে তুলতে চায় তারা।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে মোদি আশ্রয় দিয়েছেন আদানি-আম্বানির কথা ভেবেই। কারণ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে গুজরাটি শিল্পপতি আর ব্যবসায়ীর বিরাট টাকা লগ্নি করা অর্থ যে আজ বিপন্ন। তাই তো তড়িঘড়ি হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া। বাংলাদেশে আরএসএস-বিজেপির হিন্দু জঙ্গি জাতীয়তাবাদের কাউন্টার ন্যারেটিভ গড়ে উঠেছে। আজহার মাসুদকে আশ্রয় দেওয়া যদি পাকিস্তানের জন্য অন্যায় হয়, তাহলে বাংলাদেশের ঘোষিত অপরাধী হাসিনাকে ভারতবর্ষ আশ্রয় দেবে কেন?

পরিচালক ও সাংবাদিক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এভাবেই বিজেপির স্বার্থান্বেষী ও বিদ্বেষের রাজনীতির সমালোচনা করেছেন।

ডকুমেন্টারি পরিচালক সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে কলকাতার মানুষের মনে অযথা বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা চলছে। অথচ আমি বাংলাদেশ ঘুরে এলাম। সেখানে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে না, যেটা ভারতে সর্বদা ঘটছে। একই মত বিশিষ্ট নাগরিক বুদ্ধিজীবী মানিক ফকিরের। ইতোমধ্যে তিনি একাধিকবার বাংলাদেশ নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন সচেতনতা গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, বিজেপি ক্ষেপে গেছে। শুভেন্দুরা ঢাকা নিয়ে যা বলছে তার সবই নির্জলা মিথ্যা। আগামী বছর এখানে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলাদেশকে সামনে রেখেই মেরূকরণের চেষ্টা। নানা তর্জনগর্জন, ফেক নিউজের রমরমা দেখা যাবে গোদি মিডিয়া রিপাবলিকে। এদের হাঁড়ি হাটে ভেঙে দিতে হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন