আমার দেশ অনলাইন
নদী ও কূপগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেটি বন্দরে বসবাসকারী মুহাম্মদ ইয়াকুব বালুচ ও তার পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে প্রায় বাধ্য হয়েছিলেন। খাওয়ার পানি পাওয়া কঠিন ছিল, আর বারবার ফসল নষ্ট হচ্ছিল।
ইয়াকুব বালুচ একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘দিল্লি, মুম্বাই আর চীন থেকে মানুষ আমাদের চাল, গম ও শাকসবজি কিনতে আসত। কিন্তু আমাদের ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।’
অনেক মানুষ তাদের পৈতৃক জমি ছেড়ে চলে যান, আর ইয়াকুব বালুচও প্রায় তা-ই করতে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই সরকার একটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট চালু করে, যা আরব সাগর থেকে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন শুরু করে।
এখন এলাকায় যারা রয়ে গেছেন, তারা কেউ কেউ সেচ খাল- যেখানে এখন লবণাক্ত পানি প্রবাহিত হয় – সেখানে কাঁকড়া চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, পাশাপাশি যা সম্ভব তা চাষ করছেন।
পাকিস্তান বিশ্বের বহু দেশের একটি যারা সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করার পরিমাণ বাড়িয়েছে। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন খাওয়ার পানিকে ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য করে তুলছে।
কিছুদিন আগেও এই পদ্ধতি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ও শুষ্ক দেশগুলোয় সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। পানি শিল্পের বাজার সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করা গ্লোবাল ওয়াটার ইন্টেলিজেন্স – জিডব্লিউআই'র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় পাঁচটির মধ্যে চারটি দেশ পানীয় ও অন্যান্য কাজে সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করে ব্যবহার করছে, আর এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে, কুয়েত, ওমান ও সৌদি আরবে এখন সরবরাহকৃত মোট পানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে লবণমুক্তকরণ থেকে—হয় তা সমুদ্রের পানি অথবা আধা-লবণাক্ত ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো হামলার সময় উপসাগরের পানি দূষিত হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন কাতারের কর্মকর্তারা। কারণ এটিই এখন কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের পানির প্রধান উৎস।
সমস্যাটা হলো, পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এর মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য মিঠা পানি। বাড়তি তাপমাত্রা ও খরার কারণে সেটাও আবার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
গ্লোবাল কমিশন অন দ্য ইকনমিক্স অব ওয়াটারের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে পানির সরবরাহে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা পৌঁছাবে ৯৭০ কোটিতে। পানিসম্পদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাও অনেক দেশে চরম পানি সংকটের জন্য দায়ী।
বিশ্বের মোট পানির ৯৫ শতাংশের বেশি সাগরে থাকায় অনেকেই মনে করেন, সমুদ্রের পানি একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে, যদিও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মোট পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর মাত্রা খুবই নগণ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ২০ হাজারেরও বেশি স্থানে লবণমুক্তকরণ (ডিস্যালিনেশন) প্ল্যান্ট রয়েছে, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যতম শীর্ষ পানি সরবরাহকারী ও লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ ভিওলিয়ার প্রধান নির্বাহী এস্টেলে ব্র্যাকলিয়ানোফ বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে লবণমুক্তকরণ বাজারের প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে, যার প্রধান চালিকা শক্তি হবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপের কিছু দেশ।’
গ্লোবাল ওয়াটার ইন্টেলিজেন্স -জিডব্লিউআইর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে এখন সমুদ্রের পানি প্রক্রিয়াজাত করার জন্য লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে। গড়ে উৎপাদিত পানির প্রায় ৬০ শতাংশ জনসাধারণের পানীয় জল সরবরাহে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট – আইডব্লিউডব্লিউআইর উপমহাপরিচালক র্যাচেল ম্যাকডোনেল বলেন, ‘লবণমুক্তকরণ ইতোমধ্যেই অনেক দেশকে দীর্ঘস্থায়ী পানি সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করছে। সব খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য কোনো সমাধান না হলেও খরা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার মুখে পানি নিরাপত্তা জোরদার করতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
জিডব্লিউআই অনুমান করছে, এই খাত প্রতিবছর ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, গত ১৫ বছরে বিশ্বের সব অঞ্চলের ৬০টিরও বেশি দেশে খাবার পানির লবণমুক্তকরণ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অনেক দেশেই উৎপাদন দ্বিগুণ, তিনগুণ বা চারগুণ বেড়েছে (যেমন সিঙ্গাপুরে বেড়েছে ৪৬৭ শতাংশ), আবার কিছু দেশে ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
জিডব্লিউআইর হিসেবে, সৌদি আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লবণমুক্ত সমুদ্রের পানি উৎপাদন করে। প্রতিদিন হিসেব করলে এর পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন লিটার। এই পরিমাণ পানি দিয়ে ৫ হাজার ২০০টি অলিম্পিকমানের সুইমিং পুল ভরাট করা সম্ভব।
সমুদ্রের পানি ছাড়াও আধা-লবণাক্ত পানি প্রক্রিয়াজাত করতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, বিশেষ করে সেসব অঞ্চলে যেখানে সমুদ্রের পানি ঢুকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করেছে। ভূগর্ভস্থ আধা-লবণাক্ত পানি প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আফগানিস্তানও এটি ব্যবহার করছে, যদিও সেখানকার পানির লবণাক্ততার কারণ ভিন্ন।
প্রথম ও সবচেয়ে প্রচলিত এবং শক্তি-সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো রিভার্স অসমোসিস বা বিপরীত অভিস্রবণ। এর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে পানি অর্ধেক ভেদ করা যায় এমন পর্দার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়, যা লবণ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ আটকে রাখে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো তাপীয় লবণমুক্তকরণ। এতে সমুদ্রের পানি বা আধা-লবণাক্ত পানি গরম করা হয়, যা পরে বাষ্পে রূপান্তরিত হয় এবং সেই বাষ্প ঘনীভূত করে মিষ্টি পানি হিসেবে সংগ্রহ করা হয়।
গতানুগতিকভাবে লবণমুক্তকরণ ব্যয়বহুল একটি প্রযুক্তি ছিল, তবে সস্তা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উন্নত দক্ষতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর খরচ কমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৭০ সালের পর থেকে লবণমুক্ত পানি উৎপাদনের খরচ প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
আইডব্লিউডব্লিউআই'র গবেষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অনেক এলাকায় সৌরশক্তির সঙ্গে লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তি মিলিয়ে ব্যবহার করলে এটি আরও সাশ্রয়ী হতে পারে।
তবে ভিওলিয়ার হিসেবে, প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম বড় আকারের একটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। সমুদ্রের লবণমুক্ত পানি শুকনো ও দূরবর্তী অঞ্চলে পরিবহন করাও আরেকটি বড় খরচের বিষয়।
ওয়াটারএইডের জলবায়ু পরিবর্তন, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শাকিল হায়াত বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে খরচ এখনো একটি বড় বাধা। এই দেশগুলোর জন্য বড় সমুদ্রপানি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্টের তুলনায় ছোট আকারের ও সৌরশক্তি চালিত আধা-লবণাক্ত পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট বেশি কার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘অনেক (এসব) দেশের জন্য, লোনা পানিকে খাওয়ার পানিতে রূপান্তর করতে ক্ষুদ্র ও সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিশাল আকারের সমুদ্রের পানি লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তির চেয়ে বেশি কার্যকর।’
উল্লেখ্য, ওয়াটারএইড একটি বিশ্বব্যাপী দাতব্য সংস্থা। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১০০টি ছোট ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট স্থাপনে সহায়তা করেছে।
লবণমুক্তকরণ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো লবণাক্ত পানি নিষ্কাশন। লবণমুক্ত পানি আলাদা করার পর অত্যন্ত ঘনত্বযুক্ত এই লবণপানি রয়ে যায়।
এই লবণাক্ত পানি আবার সমুদ্রে ছাড়লে পানির লবণত্ব ও তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা সামুদ্রিক পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মৃত অঞ্চল (ডেড জোন) তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি-ইউএনইপি জানিয়েছে, ‘অধিকাংশ লবণমুক্তকরণ প্রক্রিয়ায়, প্রতি লিটার পানির জন্য প্রায় দেড় লিটার ক্লোরিন ও তামা দূষিত তরল উৎপন্ন হয়। যদি এটি সঠিকভাবে পাতলা করা ও ছড়ানো না হয়, তবে এটি বিষাক্ত লবণপানির ঘন মেঘ তৈরি করে যা উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটায়।’
মিসর ও সৌদি আরবের মধ্যে অবস্থিত আকাবা উপসাগরের প্রবালপ্রাচীর এবং শৈবালের উপর গবেষকরা উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে পরিবেশগত এই ব্যয় সত্ত্বেও দ্রুত উষ্ণায়নশীল ও পানির জন্য তৃষ্ণার্ত এই পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে লবণমুক্তকরণের প্রবণতা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
নদী ও কূপগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেটি বন্দরে বসবাসকারী মুহাম্মদ ইয়াকুব বালুচ ও তার পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে প্রায় বাধ্য হয়েছিলেন। খাওয়ার পানি পাওয়া কঠিন ছিল, আর বারবার ফসল নষ্ট হচ্ছিল।
ইয়াকুব বালুচ একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘দিল্লি, মুম্বাই আর চীন থেকে মানুষ আমাদের চাল, গম ও শাকসবজি কিনতে আসত। কিন্তু আমাদের ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।’
অনেক মানুষ তাদের পৈতৃক জমি ছেড়ে চলে যান, আর ইয়াকুব বালুচও প্রায় তা-ই করতে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই সরকার একটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট চালু করে, যা আরব সাগর থেকে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন শুরু করে।
এখন এলাকায় যারা রয়ে গেছেন, তারা কেউ কেউ সেচ খাল- যেখানে এখন লবণাক্ত পানি প্রবাহিত হয় – সেখানে কাঁকড়া চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, পাশাপাশি যা সম্ভব তা চাষ করছেন।
পাকিস্তান বিশ্বের বহু দেশের একটি যারা সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করার পরিমাণ বাড়িয়েছে। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন খাওয়ার পানিকে ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য করে তুলছে।
কিছুদিন আগেও এই পদ্ধতি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ও শুষ্ক দেশগুলোয় সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। পানি শিল্পের বাজার সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করা গ্লোবাল ওয়াটার ইন্টেলিজেন্স – জিডব্লিউআই'র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় পাঁচটির মধ্যে চারটি দেশ পানীয় ও অন্যান্য কাজে সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করে ব্যবহার করছে, আর এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে, কুয়েত, ওমান ও সৌদি আরবে এখন সরবরাহকৃত মোট পানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে লবণমুক্তকরণ থেকে—হয় তা সমুদ্রের পানি অথবা আধা-লবণাক্ত ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো হামলার সময় উপসাগরের পানি দূষিত হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন কাতারের কর্মকর্তারা। কারণ এটিই এখন কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের পানির প্রধান উৎস।
সমস্যাটা হলো, পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এর মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য মিঠা পানি। বাড়তি তাপমাত্রা ও খরার কারণে সেটাও আবার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
গ্লোবাল কমিশন অন দ্য ইকনমিক্স অব ওয়াটারের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে পানির সরবরাহে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা পৌঁছাবে ৯৭০ কোটিতে। পানিসম্পদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাও অনেক দেশে চরম পানি সংকটের জন্য দায়ী।
বিশ্বের মোট পানির ৯৫ শতাংশের বেশি সাগরে থাকায় অনেকেই মনে করেন, সমুদ্রের পানি একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে, যদিও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মোট পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর মাত্রা খুবই নগণ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ২০ হাজারেরও বেশি স্থানে লবণমুক্তকরণ (ডিস্যালিনেশন) প্ল্যান্ট রয়েছে, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যতম শীর্ষ পানি সরবরাহকারী ও লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ ভিওলিয়ার প্রধান নির্বাহী এস্টেলে ব্র্যাকলিয়ানোফ বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে লবণমুক্তকরণ বাজারের প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে, যার প্রধান চালিকা শক্তি হবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপের কিছু দেশ।’
গ্লোবাল ওয়াটার ইন্টেলিজেন্স -জিডব্লিউআইর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে এখন সমুদ্রের পানি প্রক্রিয়াজাত করার জন্য লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে। গড়ে উৎপাদিত পানির প্রায় ৬০ শতাংশ জনসাধারণের পানীয় জল সরবরাহে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট – আইডব্লিউডব্লিউআইর উপমহাপরিচালক র্যাচেল ম্যাকডোনেল বলেন, ‘লবণমুক্তকরণ ইতোমধ্যেই অনেক দেশকে দীর্ঘস্থায়ী পানি সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করছে। সব খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য কোনো সমাধান না হলেও খরা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার মুখে পানি নিরাপত্তা জোরদার করতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
জিডব্লিউআই অনুমান করছে, এই খাত প্রতিবছর ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, গত ১৫ বছরে বিশ্বের সব অঞ্চলের ৬০টিরও বেশি দেশে খাবার পানির লবণমুক্তকরণ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অনেক দেশেই উৎপাদন দ্বিগুণ, তিনগুণ বা চারগুণ বেড়েছে (যেমন সিঙ্গাপুরে বেড়েছে ৪৬৭ শতাংশ), আবার কিছু দেশে ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
জিডব্লিউআইর হিসেবে, সৌদি আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লবণমুক্ত সমুদ্রের পানি উৎপাদন করে। প্রতিদিন হিসেব করলে এর পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন লিটার। এই পরিমাণ পানি দিয়ে ৫ হাজার ২০০টি অলিম্পিকমানের সুইমিং পুল ভরাট করা সম্ভব।
সমুদ্রের পানি ছাড়াও আধা-লবণাক্ত পানি প্রক্রিয়াজাত করতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, বিশেষ করে সেসব অঞ্চলে যেখানে সমুদ্রের পানি ঢুকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করেছে। ভূগর্ভস্থ আধা-লবণাক্ত পানি প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আফগানিস্তানও এটি ব্যবহার করছে, যদিও সেখানকার পানির লবণাক্ততার কারণ ভিন্ন।
প্রথম ও সবচেয়ে প্রচলিত এবং শক্তি-সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো রিভার্স অসমোসিস বা বিপরীত অভিস্রবণ। এর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে পানি অর্ধেক ভেদ করা যায় এমন পর্দার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়, যা লবণ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ আটকে রাখে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো তাপীয় লবণমুক্তকরণ। এতে সমুদ্রের পানি বা আধা-লবণাক্ত পানি গরম করা হয়, যা পরে বাষ্পে রূপান্তরিত হয় এবং সেই বাষ্প ঘনীভূত করে মিষ্টি পানি হিসেবে সংগ্রহ করা হয়।
গতানুগতিকভাবে লবণমুক্তকরণ ব্যয়বহুল একটি প্রযুক্তি ছিল, তবে সস্তা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উন্নত দক্ষতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর খরচ কমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৭০ সালের পর থেকে লবণমুক্ত পানি উৎপাদনের খরচ প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
আইডব্লিউডব্লিউআই'র গবেষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অনেক এলাকায় সৌরশক্তির সঙ্গে লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তি মিলিয়ে ব্যবহার করলে এটি আরও সাশ্রয়ী হতে পারে।
তবে ভিওলিয়ার হিসেবে, প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম বড় আকারের একটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। সমুদ্রের লবণমুক্ত পানি শুকনো ও দূরবর্তী অঞ্চলে পরিবহন করাও আরেকটি বড় খরচের বিষয়।
ওয়াটারএইডের জলবায়ু পরিবর্তন, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শাকিল হায়াত বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে খরচ এখনো একটি বড় বাধা। এই দেশগুলোর জন্য বড় সমুদ্রপানি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্টের তুলনায় ছোট আকারের ও সৌরশক্তি চালিত আধা-লবণাক্ত পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট বেশি কার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘অনেক (এসব) দেশের জন্য, লোনা পানিকে খাওয়ার পানিতে রূপান্তর করতে ক্ষুদ্র ও সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিশাল আকারের সমুদ্রের পানি লবণমুক্তকরণ প্রযুক্তির চেয়ে বেশি কার্যকর।’
উল্লেখ্য, ওয়াটারএইড একটি বিশ্বব্যাপী দাতব্য সংস্থা। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১০০টি ছোট ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট স্থাপনে সহায়তা করেছে।
লবণমুক্তকরণ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো লবণাক্ত পানি নিষ্কাশন। লবণমুক্ত পানি আলাদা করার পর অত্যন্ত ঘনত্বযুক্ত এই লবণপানি রয়ে যায়।
এই লবণাক্ত পানি আবার সমুদ্রে ছাড়লে পানির লবণত্ব ও তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা সামুদ্রিক পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মৃত অঞ্চল (ডেড জোন) তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি-ইউএনইপি জানিয়েছে, ‘অধিকাংশ লবণমুক্তকরণ প্রক্রিয়ায়, প্রতি লিটার পানির জন্য প্রায় দেড় লিটার ক্লোরিন ও তামা দূষিত তরল উৎপন্ন হয়। যদি এটি সঠিকভাবে পাতলা করা ও ছড়ানো না হয়, তবে এটি বিষাক্ত লবণপানির ঘন মেঘ তৈরি করে যা উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটায়।’
মিসর ও সৌদি আরবের মধ্যে অবস্থিত আকাবা উপসাগরের প্রবালপ্রাচীর এবং শৈবালের উপর গবেষকরা উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে পরিবেশগত এই ব্যয় সত্ত্বেও দ্রুত উষ্ণায়নশীল ও পানির জন্য তৃষ্ণার্ত এই পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে লবণমুক্তকরণের প্রবণতা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্পনগরী এলাকা কানপুর। গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সৈয়দ নগরে ঈদে মিলাদুন্নবি উদ্যাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
৩২ মিনিট আগেসম্প্রতি বায়ু দূষণ কমানোর জন্য রাজধানীতে পেট্রোলচালিত মোটরবাইকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভিয়েতনাম প্রশাসন। যা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে, পরিকল্পিত এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার হারাবে বলে আশঙ্কা করছে জাপান সরকার এবং দেশের কিছু শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা।
৪৪ মিনিট আগেগাজায় সাফল্য অর্জনের জন্য যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিল ট্রাম্পের প্রধান কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ ও তার দল, সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তৈরি করা কঠিন হতে পারে, কারণ এই যুদ্ধ প্রায় চার বছর ধরে চলছে।
১ ঘণ্টা আগেইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, তারা মঙ্গলবার গভীর রাতে ব্রায়ানস্ক সীমান্ত অঞ্চলে একটি রাশিয়ান রাসায়নিক কারখানায় যুক্তরাজ্যের সরবরাহকৃত স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছে।
২ ঘণ্টা আগে