রকীবুল হক
ধর্মীয় মাহফিলে ওয়াজ করার অপরাধে একের পর এক গ্রেপ্তার, রিমান্ড আর কারাবন্দিত্বের শিকার হন অধ্যাপক মাওলানা তৈয়েবুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ারও প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে তাকে। ওয়াজ মাহফিল শেষে গ্রেপ্তার এড়াতে বেশিরভাগ সময় আত্মগোপনে যেতেন বা পোশাক পরিবর্তন করে এলাকা ছাড়তেন তিনি।
ফাঁকা মাঠ বা বাজারেও রাত কাটিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় এই বক্তা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিজের বাসায়ও ঠিকমতো থাকতে পারতেন না। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী-শিশুসন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও ব্যাপক নির্যাতন চালায় যশোর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের এই অধ্যাপককে।
এভাবেই বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে চরম জুলুম-নির্যাতনের মুখোমুখি হন বিশিষ্ট এই আলেম। জনপ্রিতার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াত পেলেও তাতে ঠিকমতো অংশ নিতে পারতেন না তিনি।
এমনকি বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের লোকেরা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমানকে। নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়ে মাওলানা তৈয়েবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক কানসাট ময়দানে মাহফিল ছিল। মাহফিলের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন ওই এলাকার তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি গোলাম রব্বানীর ঘনিষ্ঠ একজন।
দিনের বেলায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে আনুমানিক ৬০ হাজার লোকের উপস্থিতি হয়। সে সময় সেখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একজন করে মোট তিনজন নির্বাচন করছিলেন। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে ওয়াজের কোনো কথার বিরুদ্ধে যাওয়ার অভিযোগে মাহফিল শেষে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ থেকে একদল গোলাম রব্বানির কাছে ছুটে গিয়ে অভিযোগ দেয়।
তারা বলে, তোমার ভাইয়ের নির্বাচন শেষ। কারণ সাতক্ষীরার লোক নিয়ে এসেছ, সে তো জামায়াতের লোক, সে তাদের কথা বলেছে। সে তো পাস করে যাবে। তিনি এ কথা শুনে বললেন, তাকে ধরে নিয়ে আয়, গুলি করে দে।
সে সময় আমি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম, সেখানে তিন গাড়ি র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে অ্যাটাক করে। ভোরের দিকে আমাকে, বাড়িওয়ালাকে আর বিএনপির একজনকে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের শিবগঞ্জ থানা হাজতে ঢোকায়।
তিনি বলেন, মাহফিল শেষে ওই বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রামে ছিলাম। তখন রাত হয়ে গেছে। তখনই আমাদের ওপর আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসেই আমার হাতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়, টুপিটা খুলে ফেলে। আমাকে অনেক হেনস্তা করে। পৈশাচিকভাবে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। সারারাত ঘুরিয়ে ভোররাতে হাজতে ঢোকায়।
তৈয়েবুর রহমান বলেন, আটকের পরের দিন অনেকগুলো অস্ত্র রেখে আমাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। আমি বললাম, এখানে অস্ত্র কেন, আমি তো এসব অস্ত্র চিনিও না। এক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, কথা বললে অস্ত্র আরও বাড়বে। গুলিও বাড়বে। সেখানে রাসায়নিক কিছু দ্রব্যও ছিল। একপর্যায়ে ৮-১০ জন সাংবাদিক এসে তার ছবি তুলে নিয়ে যান। সেখানে রাখা অস্ত্রগুলো উদ্ধারকৃত অস্ত্র হিসেবে দেখানো হয়।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার প্রাইভেট কারটিও নিয়ে যায় পুলিশ। আজও সেই গাড়ি দেয়নি, থানায় পড়ে আছে।
রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করা হয় এই আলেমের ওপর। তারা হাঁটুতে পিটায় আর বলে, তোদের সাতক্ষীরার নেতাদের নাম বল। তোদের উসকানি দেয়, কারা দেয়? কে তোকে মাহফিলে পাঠায়?
জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি কোন দল করি না। কোরআনের কথা বলি। তারা তাকে অত্যাচার করে সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক তাকে পাঠিয়েছে কি না, সেই স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা চালায়। তিনি মিথ্যা স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় খুব মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, শিবগঞ্জ থানায় শহীদুল ইসলাম নামের এক পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমাকে রিমান্ডে নিয়ে পেটানোর জন্য। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, এতবড় আলেমের গায়ে আমি কীভাবে আঘাত করব। তিনি স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে চলে যান। তিনি আমার গায়ে হাত দেননি। পরে একজন হিন্দু অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই আমাকে কঠিনভাবে পেটায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামে গালাগাল করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেন, তুই সাঈদীর নাম বলিস, রাজাকারদের নাম বলিস। সে মানুষ হত্যা করে। তুই ভারতবিদ্বেষী। তুই আর মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবি না, তোর সেই কাজ করে দেব। এভাবে রিমান্ডের প্রথম দিন খুব বেশি মারধর করে। পরের দিনগুলোয় মারধর না করলেও মানসিকভাবে চাপ দেয়, এমনিক ডিম নিয়ে এসে ঢোকানোর হুমকি দেয়।
শুধু মাওলানা তৈয়েবুর রহমানকে গ্রেপ্তার-নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। তিনি যখন গ্রেপ্তার হয়ে শিবগঞ্জের কারাগারে, ঠিক তখনই তার যশোরের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার মতো অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানের সময় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তখন ওই বাড়িতে তার স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিল না।
পুলিশ যখন তার সন্তান ও স্ত্রীকে ধরে নিয়ে আসে, তখন লুসাইবা নামে তার সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটা ভয়ে পানি খাওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকে। পাশের একজন চায়ের দোকানদার তাকে পানি দিতে চাইলে পুলিশ তাকে বাধা দিয়ে বলে, ওরা জঙ্গি।
তাদের জঙ্গি বলে বিস্ফোরকসহ আটকানো হয়। বাসার বাইরে থেকে তার জামাই, দুই ভায়রা, তাদের স্ত্রীসহ আটজনকে আটক করে। তাদের পরিবারের দেখার মতো কেউ ছিল না। তাদের যশোর কারাগারে রাখা হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি লাভ করেন তারা। একইভাবে জামিন নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে দেড় মাস পর মুক্তি পান মাওলানা তৈয়েবুর রহমান।
তিনি জানান, কারামুক্তির পরও তাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে, বাসায় থাকতে পারতেন না। টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে কখনও বাসায় থাকতেন। তিনি বলেন, যশোরে আবুল বাশার নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা দিতে দিতে শেষ হয়ে গেছি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরেছি।
বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বাধা-হয়রানি প্রসঙ্গে তৈয়েবুর রহমান বলেন, মাহফিলে গেলে বা মাহফিল শেষে ফেরার সময় পুলিশ আটকিয়ে হয়রানি করত। পুলিশের ভয়ে মাহফিল শেষে জামা-কাপড় বদলিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে আসতেন। এমনও হয়েছে যে, পুলিশের কারণে মশার কামড় খেয়ে সারারাত বাজারে শুয়ে থেকেছেন। চারপাশে পুলিশ থাকায় বের হতে পারেননি।
একদিন মাহফিল শেষে যশোরের সীমান্তে সামান্তা এলাকায় সারারাত শুয়েছিলেন তিনি। তাকে ধরতে বিজিবির সদস্যরা সারারাত গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছিল। সেদিন সারারাত বাগানে পালিয়ে থেকে গ্রেপ্তার এড়ান তিনি।
২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জে নাজেহালের ঘটনা জানিয়ে মাওলানা তৈয়বুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাই তাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অথচ স্থানীয় এমপি তাকে ধরার নির্দেশনা দেয়। তাকে আটক করে কটিয়াদী থানা হাজতে ঢোকায় পুলিশ। রাত ৯-১০টার দিকে তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার জন্য র্যাবের গাড়ি আসে। গাড়িতে ওঠানোর মুহূর্তে মোটরসাইকেলে একজন চেয়ারম্যান আসেন।
তিনি ওসির কানে একটি মোবাইল ধরিয়ে দেওয়ার পর তাকে আর র্যাবের গাড়িতে ওঠায়নি। পরে তিনি জানতে পারেন, স্থানীয় এমপির বোনজামাই তাকে রক্ষা করেন। হুজুরকে না ধরতে তার স্ত্রী বিষয়টি তার ভাইকে (এমপি) জানালে সে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তিনি এরকম বহু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বিগত সময়ে।
২০১৮ সালের একটি নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করে তৈয়েবুর রহমান বলেন, গাজীপুরের মনোহরদীতে একটি মাহফিল করেন তিনি। মাহফিল শেষে বিদায়ের জন্য একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেখানে গেলেই তারা দরজা আটকিয়ে তার মোবাইল-টাকা কেড়ে নেয়।
এছাড়া গালাগাল করে বলে, সাঈদীর নাম কেন বললি? আওয়ামী লীগের লোকেরা এসে তাকে মারার উদ্যোগ নেয়। তারা অস্ত্রও বের করে। এ সময় একজন তাকে মেরে নদীতে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখায়। এতে চরম অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।
একপর্যায়ে বাঁচার চেষ্টার অংশ হিসেবে চিৎকার করে খাটে ঠেলে ওঠেন এই আলেম। তার চিৎকার শুনে বাইরে থেকে বিএনপির একজন ছুটে এসে কী হয়েছে জানতে চায়। সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালের সঙ্গে তার গলা চেপে ধরে। তাকেও গালাগাল করে। একপর্যায়ে সে ওই রুমের অ্যাটাচড বাথরুমে ঢুকে মোবাইলে জামায়াত-শিবিরের লোকদের খবর দেয়। তখন গাজীপুর থেকে মাহফিলে আসা শিবির কর্মীদের একটি গাড়ি ঘুরিয়ে সেখানে পৌঁছায়। তারা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
ধর্মীয় মাহফিলে ওয়াজ করার অপরাধে একের পর এক গ্রেপ্তার, রিমান্ড আর কারাবন্দিত্বের শিকার হন অধ্যাপক মাওলানা তৈয়েবুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ারও প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে তাকে। ওয়াজ মাহফিল শেষে গ্রেপ্তার এড়াতে বেশিরভাগ সময় আত্মগোপনে যেতেন বা পোশাক পরিবর্তন করে এলাকা ছাড়তেন তিনি।
ফাঁকা মাঠ বা বাজারেও রাত কাটিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় এই বক্তা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিজের বাসায়ও ঠিকমতো থাকতে পারতেন না। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী-শিশুসন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও ব্যাপক নির্যাতন চালায় যশোর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের এই অধ্যাপককে।
এভাবেই বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে চরম জুলুম-নির্যাতনের মুখোমুখি হন বিশিষ্ট এই আলেম। জনপ্রিতার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াত পেলেও তাতে ঠিকমতো অংশ নিতে পারতেন না তিনি।
এমনকি বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের লোকেরা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমানকে। নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়ে মাওলানা তৈয়েবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক কানসাট ময়দানে মাহফিল ছিল। মাহফিলের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন ওই এলাকার তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি গোলাম রব্বানীর ঘনিষ্ঠ একজন।
দিনের বেলায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে আনুমানিক ৬০ হাজার লোকের উপস্থিতি হয়। সে সময় সেখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একজন করে মোট তিনজন নির্বাচন করছিলেন। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে ওয়াজের কোনো কথার বিরুদ্ধে যাওয়ার অভিযোগে মাহফিল শেষে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ থেকে একদল গোলাম রব্বানির কাছে ছুটে গিয়ে অভিযোগ দেয়।
তারা বলে, তোমার ভাইয়ের নির্বাচন শেষ। কারণ সাতক্ষীরার লোক নিয়ে এসেছ, সে তো জামায়াতের লোক, সে তাদের কথা বলেছে। সে তো পাস করে যাবে। তিনি এ কথা শুনে বললেন, তাকে ধরে নিয়ে আয়, গুলি করে দে।
সে সময় আমি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম, সেখানে তিন গাড়ি র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে অ্যাটাক করে। ভোরের দিকে আমাকে, বাড়িওয়ালাকে আর বিএনপির একজনকে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের শিবগঞ্জ থানা হাজতে ঢোকায়।
তিনি বলেন, মাহফিল শেষে ওই বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রামে ছিলাম। তখন রাত হয়ে গেছে। তখনই আমাদের ওপর আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসেই আমার হাতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়, টুপিটা খুলে ফেলে। আমাকে অনেক হেনস্তা করে। পৈশাচিকভাবে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। সারারাত ঘুরিয়ে ভোররাতে হাজতে ঢোকায়।
তৈয়েবুর রহমান বলেন, আটকের পরের দিন অনেকগুলো অস্ত্র রেখে আমাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। আমি বললাম, এখানে অস্ত্র কেন, আমি তো এসব অস্ত্র চিনিও না। এক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, কথা বললে অস্ত্র আরও বাড়বে। গুলিও বাড়বে। সেখানে রাসায়নিক কিছু দ্রব্যও ছিল। একপর্যায়ে ৮-১০ জন সাংবাদিক এসে তার ছবি তুলে নিয়ে যান। সেখানে রাখা অস্ত্রগুলো উদ্ধারকৃত অস্ত্র হিসেবে দেখানো হয়।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার প্রাইভেট কারটিও নিয়ে যায় পুলিশ। আজও সেই গাড়ি দেয়নি, থানায় পড়ে আছে।
রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করা হয় এই আলেমের ওপর। তারা হাঁটুতে পিটায় আর বলে, তোদের সাতক্ষীরার নেতাদের নাম বল। তোদের উসকানি দেয়, কারা দেয়? কে তোকে মাহফিলে পাঠায়?
জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি কোন দল করি না। কোরআনের কথা বলি। তারা তাকে অত্যাচার করে সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক তাকে পাঠিয়েছে কি না, সেই স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা চালায়। তিনি মিথ্যা স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় খুব মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, শিবগঞ্জ থানায় শহীদুল ইসলাম নামের এক পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমাকে রিমান্ডে নিয়ে পেটানোর জন্য। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, এতবড় আলেমের গায়ে আমি কীভাবে আঘাত করব। তিনি স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে চলে যান। তিনি আমার গায়ে হাত দেননি। পরে একজন হিন্দু অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই আমাকে কঠিনভাবে পেটায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামে গালাগাল করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেন, তুই সাঈদীর নাম বলিস, রাজাকারদের নাম বলিস। সে মানুষ হত্যা করে। তুই ভারতবিদ্বেষী। তুই আর মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবি না, তোর সেই কাজ করে দেব। এভাবে রিমান্ডের প্রথম দিন খুব বেশি মারধর করে। পরের দিনগুলোয় মারধর না করলেও মানসিকভাবে চাপ দেয়, এমনিক ডিম নিয়ে এসে ঢোকানোর হুমকি দেয়।
শুধু মাওলানা তৈয়েবুর রহমানকে গ্রেপ্তার-নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। তিনি যখন গ্রেপ্তার হয়ে শিবগঞ্জের কারাগারে, ঠিক তখনই তার যশোরের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার মতো অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানের সময় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তখন ওই বাড়িতে তার স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিল না।
পুলিশ যখন তার সন্তান ও স্ত্রীকে ধরে নিয়ে আসে, তখন লুসাইবা নামে তার সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটা ভয়ে পানি খাওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকে। পাশের একজন চায়ের দোকানদার তাকে পানি দিতে চাইলে পুলিশ তাকে বাধা দিয়ে বলে, ওরা জঙ্গি।
তাদের জঙ্গি বলে বিস্ফোরকসহ আটকানো হয়। বাসার বাইরে থেকে তার জামাই, দুই ভায়রা, তাদের স্ত্রীসহ আটজনকে আটক করে। তাদের পরিবারের দেখার মতো কেউ ছিল না। তাদের যশোর কারাগারে রাখা হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি লাভ করেন তারা। একইভাবে জামিন নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে দেড় মাস পর মুক্তি পান মাওলানা তৈয়েবুর রহমান।
তিনি জানান, কারামুক্তির পরও তাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে, বাসায় থাকতে পারতেন না। টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে কখনও বাসায় থাকতেন। তিনি বলেন, যশোরে আবুল বাশার নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা দিতে দিতে শেষ হয়ে গেছি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরেছি।
বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বাধা-হয়রানি প্রসঙ্গে তৈয়েবুর রহমান বলেন, মাহফিলে গেলে বা মাহফিল শেষে ফেরার সময় পুলিশ আটকিয়ে হয়রানি করত। পুলিশের ভয়ে মাহফিল শেষে জামা-কাপড় বদলিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে আসতেন। এমনও হয়েছে যে, পুলিশের কারণে মশার কামড় খেয়ে সারারাত বাজারে শুয়ে থেকেছেন। চারপাশে পুলিশ থাকায় বের হতে পারেননি।
একদিন মাহফিল শেষে যশোরের সীমান্তে সামান্তা এলাকায় সারারাত শুয়েছিলেন তিনি। তাকে ধরতে বিজিবির সদস্যরা সারারাত গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছিল। সেদিন সারারাত বাগানে পালিয়ে থেকে গ্রেপ্তার এড়ান তিনি।
২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জে নাজেহালের ঘটনা জানিয়ে মাওলানা তৈয়বুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাই তাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অথচ স্থানীয় এমপি তাকে ধরার নির্দেশনা দেয়। তাকে আটক করে কটিয়াদী থানা হাজতে ঢোকায় পুলিশ। রাত ৯-১০টার দিকে তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার জন্য র্যাবের গাড়ি আসে। গাড়িতে ওঠানোর মুহূর্তে মোটরসাইকেলে একজন চেয়ারম্যান আসেন।
তিনি ওসির কানে একটি মোবাইল ধরিয়ে দেওয়ার পর তাকে আর র্যাবের গাড়িতে ওঠায়নি। পরে তিনি জানতে পারেন, স্থানীয় এমপির বোনজামাই তাকে রক্ষা করেন। হুজুরকে না ধরতে তার স্ত্রী বিষয়টি তার ভাইকে (এমপি) জানালে সে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তিনি এরকম বহু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বিগত সময়ে।
২০১৮ সালের একটি নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করে তৈয়েবুর রহমান বলেন, গাজীপুরের মনোহরদীতে একটি মাহফিল করেন তিনি। মাহফিল শেষে বিদায়ের জন্য একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেখানে গেলেই তারা দরজা আটকিয়ে তার মোবাইল-টাকা কেড়ে নেয়।
এছাড়া গালাগাল করে বলে, সাঈদীর নাম কেন বললি? আওয়ামী লীগের লোকেরা এসে তাকে মারার উদ্যোগ নেয়। তারা অস্ত্রও বের করে। এ সময় একজন তাকে মেরে নদীতে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখায়। এতে চরম অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।
একপর্যায়ে বাঁচার চেষ্টার অংশ হিসেবে চিৎকার করে খাটে ঠেলে ওঠেন এই আলেম। তার চিৎকার শুনে বাইরে থেকে বিএনপির একজন ছুটে এসে কী হয়েছে জানতে চায়। সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালের সঙ্গে তার গলা চেপে ধরে। তাকেও গালাগাল করে। একপর্যায়ে সে ওই রুমের অ্যাটাচড বাথরুমে ঢুকে মোবাইলে জামায়াত-শিবিরের লোকদের খবর দেয়। তখন গাজীপুর থেকে মাহফিলে আসা শিবির কর্মীদের একটি গাড়ি ঘুরিয়ে সেখানে পৌঁছায়। তারা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৯ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে