বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দেশে বহু আকাঙ্ক্ষিত বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত চালু হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাণিজ্যিক এ আদালতে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত যে কোনো মামলা দায়ের করার ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান থাকছে। এছাড়া মামলা দায়ের করার পূর্বে মধ্যস্থতার বিধান রাখা হচ্ছে। জেলা পর্যায় হতে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত দ্রুততর সময়ে বাণিজ্য বিরোধের মামলাগুলো সম্পন্ন হলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বর্তমানে বিদ্যমান কাঠামোতে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট আদালত না থাকায় সহকারী জজ থেকে জেলা জজ আদালত বিভিন্ন বিরোধ মামলাগুলো বছরের পর বছর ঘুরে নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে বাণিজ্যিক নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় ঝুলে থাকছে। আর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয় অর্থ ঋণ আদালতে। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিসংক্রান্ত বিরোধ হলে তা আন্তর্জাতিক সালিশি (আরবিট্রেশন) বা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশি কেন্দ্রের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছে অ্যাডমিরালটি ও কোম্পানি বেঞ্চ। তবে জেলা আদালতগুলোতে বিভিন্ন মামলার চাপ থাকায় বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় ব্যবসায়ীদের।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতে জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত রয়েছে। আর শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট পর্যায়ে বিশেষ আদালতের কার্যক্রম চলমান।
দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি জানান, বাণিজ্যিক আদালতসংক্রান্ত আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্টের একটি দক্ষ গবেষক দল। পরে সংশ্লিষ্টদের নিবিড় পরামর্শ, ব্যবসায়িক আইন বিশেষজ্ঞ ও বাণিজ্যিক অংশীজনদের মতামতের মাধ্যমে তা সমৃদ্ধ করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক আদালতে মামলাগুলো অন্তত ৫০ লাখ বা তার ওপরে হতে হবে। তবে পরবর্তীতে সরকার তা বাড়াতে-কমাতে পারবে। তবে বাণিজ্যিক আদালত বিদ্যমান অর্থঋণ আদালতের ওপর কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না। প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালতসমূহে ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লেনদেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ ও লাইসেন্সিং চুক্তি, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা, অংশীদারত্ব ও যৌথ উদ্যোগ চুক্তিসহ আধুনিক বাণিজ্যের বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিষেবা খাত সম্পর্কিত সাবস্ক্রিপশন ও বিনিয়োগ চুক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিরোধও বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া এ সব মামলার মামলাজট কমাতে সর্বোচ্চ তিনবার সময় প্রার্থনা করার বিধান থাকছে। আর মামলার আবেদনের পনেরো দিনের মধ্যে শুনানি শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এ মামলায় দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ষাট দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে। আর আপিল দায়েরের ছয় মাসের মধ্যে তা নিষ্পন্ন করতে হবে। ফলে মামলাজট হ্রাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা শাহ গ্রুপ এবং টোটাল এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কেএম মজিবুল হক আমার দেশকে বলেন, আইনটি খুবই সময়োপযোগী। তবে আদালতগুলো যেন যথাযথভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হবে। কারণ এখানে অর্থসংক্রান্ত নানা বিষয় জড়িত রয়েছে। তাই বিচারকদেরও নানা বিষয়ে ব্যুৎপত্তিগত জ্ঞান জরুরি।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে বাণিজ্যিক আদালতের এ সব মামলা পরিচালনা করা গেলে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ উপকৃত হবেন বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী পারভেজ হোসেন। আইনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা শেষ করার বিধানটি খুবই কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে বলে তিনি আশা করেন। অ্যাডভোকেট পারভেজ বলেন, পৃথক বাণিজ্যিক আদালত তৈরি হলে তা বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে। বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচারপ্রাপ্তির ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর জনসংযোগ ও প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান এবং মোটেকস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ কবির আমার দেশকে বলেন, আইনটি খুবই সময়বান্ধব। কিন্তু এ আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নীতিমালাও আধুনিক যুগোপযোগী করা দরকার। তবেই আইনটির সুফল পাওয়া সহজ হবে। এছাড়া পুরো বিচার ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন গ্রাহক হয়রানি লাঘবে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


ইউরোপীয় ৫ নাগরিকের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা ম্যাক্রোঁর
কাপ্তাই হ্রদের পানি না কমায় ১৩ হাজার কৃষক বিপাকে