এমরান এস হোসাইন
বিশ্বশক্তিগুলোর নীরবতার সুযোগে ফিলিস্তিনের ওপর নৃশংসতা গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্ব ব্যর্থ। ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্বশক্তিগুলোর বিবেককে জাগাতে হবে।
নিরপরাধ ফিলিস্তিনির মুসলমানদের ওপর আগ্রাসী ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলা ও গণহত্যার বিষয়ে গতকাল সোমবার আমার দেশকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞসহ বিশিষ্টজনেরা এসব মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলির নৃশংসতায় বিশ্বের সাধারণ মানুষ সোচ্চার হলেও বিশ্বশক্তিগুলো নীরব রয়েছে। পরাশক্তিগুলোর নির্লিপ্ততার সুযোগ ইসরাইল নিচ্ছে। মানবতার ফেরিওয়ালাদের নির্লিপ্ততা বিশ্বব্যাপী নতুন সমস্যার জন্ম দেবে। ফিলিস্তিনের ওপর গণহত্যার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের ভূমিকায় নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মাস দুই স্থিতিশীলতার পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরাইলি স্থল ও বিমানবাহিনী। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরে বিগত কয়েকদিনের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ২১০ জন গণমাধ্যমকর্মী।
ইসরাইলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফাহ শহরকে ঘিরে ফেলা।
ইসরাইলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাহকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বিশ্ববাসী জেগে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টরস অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইডের আহ্বানে গতকাল বৈশ্বিক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে গতকাল গর্জে উঠেছে।
সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইল নিরীহ গাজাবাসীর ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে আমার দেশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিস স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইসরাইল একতফাভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এই গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছে। তারা যেটা করছে, তা সভ্যযুগে চলতে পারে না। এর নিন্দা জানানোর ভাষা বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরা হারিয়ে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অসংখ্যা নারী ও শিশু ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি গাজায় যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারাও ইসরাইলির টাগের্টে পরিণত হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু বিশ্বশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। বিশ্বের সাধারণ মানুষের বিবেক যেভাবে জাগ্রত হয়েছে, বিশ্বশক্তিগুলোতেও তার বিবেক জাগাতে হবে।
বিশ্বশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ ছাড়া ইসরাইলকে থামানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
গাজায় নিরীহ মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের নৃশংস হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এ ধরনের বর্বর, অমানবিক হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা চোখের সামনে দেখতে হবে তা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে।
তিনি বলেন, খুব দুঃখের ব্যাপার হলো, গাজায় এভাবে নারী-শিশু হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, তা বন্ধে মুসলিম বিশ্ব কি করছে? তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি না। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশা এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা নিজেদের গদি রক্ষার জন্য প্রকারান্তরে ইসরাইলের প্রতি প্রকাশ্য সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটাই অবাক লাগে যে, একদিকে গাজার মুসলমানরা মার খাচ্ছে আর বিশ্বের মুসলিম বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না। অন্য যেসব রাষ্ট্র আছে তারাও জাতিসংঘের সনদে সই করেই দায় সেরেছে।
ড. মাহবুব উল্লাহ আরো বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ হয়, আজও (সোমবার) হয়েছে। এ প্রতিবাদ থামবে না। তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলার বিষয়ে আমেরিকা, তথা ট্রাম্পের বর্তমান যে ভূমিকা, এত বর্বর তারা এর আগে ছিল না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষের কর্তব্য হলো, আরো জোর প্রতিবাদ করা এবং ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রগুলো যেন গাজার পাশে দাঁড়ায় সেই দাবি তুলতে হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেভাবে বিক্ষোভ হয়নি। মুসলিম বিশ্বও সেভাবে বিক্ষোভ করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ইসরাইলের আগ্রাসন ও বর্বরতার বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তাহলে কীসের মুসলিম উম্মাহ? মুসলিম উম্মাহর অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। নতুন করে এর অর্থ খুঁজতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ফিলিস্তিনে এখন যা ঘটছে, তা খুবই হতাশাজনক। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বসম্প্রদায় একপ্রকার নীরব। এর সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল। আমরা আশা করেছিলাম সৌদি আরব, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তেমনটা দেখা যায়নি। ফিলিস্তিনের পক্ষে কিছুটা সরব হলেও ইরানের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। হামাস প্রায় বিলুপ্ত এবং হিজবুল্লাহ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, কূটনৈতিক চাপ ছাড়া ইসরাইলকে থামানোর কোনো পথ আছে বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব যদি রাশিয়া ও চীনের সহায়তা নিতে পারে, তাহলে কিছুটা ফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরাইলের সাধারণ মানুষের ভেতরেও এই গণহত্যার বিরুদ্ধে এক ধরনের মনোভাব তৈরি হচ্ছে। এটা যদি আগামী দিনে আরো সক্রিয় হয়, তাহলে নেতানিয়াহু এ ধরনের চাপ অনুভব করবেন। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আমি হতাশ।
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলিরা বর্বরতার চরমসীমা অতিক্রম করে গাজাবাসীর ওপর একের পর এক আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করছে। সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদও জানাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মার্কিন প্রশাসন ও তাদের মিত্ররা এ বিষয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তাচ্ছিল্য অথবা সময়ক্ষেপণ করছে। মানবতার ফেরিওয়ালাদের এ ধরনের নির্লিপ্ততা বিশ্বব্যাপী নতুন করে সমস্যার জন্ম দেবে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের কালোহাত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্বাধীন দেশগুলোতে তারা আগ্রাসন চালাচ্ছে। প্যালেস্টাইনের সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যাটা জিইয়ে রেখে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নানা খেলায় মেতে উঠেছে। বড় ধরনের একটি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। প্রতিবার গাজাবাসী তাদের রক্তের বিনিময়ে ঋণ পরিশোধ করছে।
সারা বিশ্বের শান্তি ও মুক্তিকামী মানুষ গাজার মানুষের পক্ষে আছে উল্লেখ করে এ মানবাধিকারকর্মী বলেন, এটা কেবল মানবাধিকতারের বিষয় নয়, মানবিকতার বিষয়। এভাবে শিশু-কিশোর-নারীদের নির্বিচারে হত্যা করা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী জেগে উঠেছে। তাদের এই প্রতিবাদ গাজাবাসীর পক্ষে সমর্থন হিসেবে কাজ করবে। ফিলিস্তিনবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই বেগবান হবে। অনেক বিবেকমান জনতা তাদের সঙ্গে যোগ দেবে।
জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহজাহান সাজু বলেন, ফিলিস্তিদের ওপর চরম নৃশংসতা চলছে। নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। বিশ্বের সব সাধারণ মানুষ ইসরাইলিদের এই নৃশংসতাতে তীব্রভাবে ঘৃণা জানাচ্ছে। তবে কেন জানি না বিশ্বশক্তিগুলো এক্ষেত্রে অনেটাই নীরব। বিশ্বের সবাইকে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও প্রতিবাদ জানানো দরকার।
বিশ্বশক্তিগুলোর নীরবতার সুযোগে ফিলিস্তিনের ওপর নৃশংসতা গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্ব ব্যর্থ। ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্বশক্তিগুলোর বিবেককে জাগাতে হবে।
নিরপরাধ ফিলিস্তিনির মুসলমানদের ওপর আগ্রাসী ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলা ও গণহত্যার বিষয়ে গতকাল সোমবার আমার দেশকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞসহ বিশিষ্টজনেরা এসব মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলির নৃশংসতায় বিশ্বের সাধারণ মানুষ সোচ্চার হলেও বিশ্বশক্তিগুলো নীরব রয়েছে। পরাশক্তিগুলোর নির্লিপ্ততার সুযোগ ইসরাইল নিচ্ছে। মানবতার ফেরিওয়ালাদের নির্লিপ্ততা বিশ্বব্যাপী নতুন সমস্যার জন্ম দেবে। ফিলিস্তিনের ওপর গণহত্যার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের ভূমিকায় নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মাস দুই স্থিতিশীলতার পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরাইলি স্থল ও বিমানবাহিনী। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরে বিগত কয়েকদিনের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ২১০ জন গণমাধ্যমকর্মী।
ইসরাইলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফাহ শহরকে ঘিরে ফেলা।
ইসরাইলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাহকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বিশ্ববাসী জেগে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টরস অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইডের আহ্বানে গতকাল বৈশ্বিক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে গতকাল গর্জে উঠেছে।
সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইল নিরীহ গাজাবাসীর ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে আমার দেশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিস স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইসরাইল একতফাভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এই গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছে। তারা যেটা করছে, তা সভ্যযুগে চলতে পারে না। এর নিন্দা জানানোর ভাষা বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরা হারিয়ে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অসংখ্যা নারী ও শিশু ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি গাজায় যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারাও ইসরাইলির টাগের্টে পরিণত হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু বিশ্বশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। বিশ্বের সাধারণ মানুষের বিবেক যেভাবে জাগ্রত হয়েছে, বিশ্বশক্তিগুলোতেও তার বিবেক জাগাতে হবে।
বিশ্বশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ ছাড়া ইসরাইলকে থামানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
গাজায় নিরীহ মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের নৃশংস হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এ ধরনের বর্বর, অমানবিক হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা চোখের সামনে দেখতে হবে তা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে।
তিনি বলেন, খুব দুঃখের ব্যাপার হলো, গাজায় এভাবে নারী-শিশু হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, তা বন্ধে মুসলিম বিশ্ব কি করছে? তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি না। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশা এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা নিজেদের গদি রক্ষার জন্য প্রকারান্তরে ইসরাইলের প্রতি প্রকাশ্য সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটাই অবাক লাগে যে, একদিকে গাজার মুসলমানরা মার খাচ্ছে আর বিশ্বের মুসলিম বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না। অন্য যেসব রাষ্ট্র আছে তারাও জাতিসংঘের সনদে সই করেই দায় সেরেছে।
ড. মাহবুব উল্লাহ আরো বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ হয়, আজও (সোমবার) হয়েছে। এ প্রতিবাদ থামবে না। তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলার বিষয়ে আমেরিকা, তথা ট্রাম্পের বর্তমান যে ভূমিকা, এত বর্বর তারা এর আগে ছিল না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষের কর্তব্য হলো, আরো জোর প্রতিবাদ করা এবং ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রগুলো যেন গাজার পাশে দাঁড়ায় সেই দাবি তুলতে হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেভাবে বিক্ষোভ হয়নি। মুসলিম বিশ্বও সেভাবে বিক্ষোভ করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ইসরাইলের আগ্রাসন ও বর্বরতার বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তাহলে কীসের মুসলিম উম্মাহ? মুসলিম উম্মাহর অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। নতুন করে এর অর্থ খুঁজতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ফিলিস্তিনে এখন যা ঘটছে, তা খুবই হতাশাজনক। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বসম্প্রদায় একপ্রকার নীরব। এর সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল। আমরা আশা করেছিলাম সৌদি আরব, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তেমনটা দেখা যায়নি। ফিলিস্তিনের পক্ষে কিছুটা সরব হলেও ইরানের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। হামাস প্রায় বিলুপ্ত এবং হিজবুল্লাহ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, কূটনৈতিক চাপ ছাড়া ইসরাইলকে থামানোর কোনো পথ আছে বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব যদি রাশিয়া ও চীনের সহায়তা নিতে পারে, তাহলে কিছুটা ফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরাইলের সাধারণ মানুষের ভেতরেও এই গণহত্যার বিরুদ্ধে এক ধরনের মনোভাব তৈরি হচ্ছে। এটা যদি আগামী দিনে আরো সক্রিয় হয়, তাহলে নেতানিয়াহু এ ধরনের চাপ অনুভব করবেন। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আমি হতাশ।
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলিরা বর্বরতার চরমসীমা অতিক্রম করে গাজাবাসীর ওপর একের পর এক আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করছে। সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদও জানাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মার্কিন প্রশাসন ও তাদের মিত্ররা এ বিষয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তাচ্ছিল্য অথবা সময়ক্ষেপণ করছে। মানবতার ফেরিওয়ালাদের এ ধরনের নির্লিপ্ততা বিশ্বব্যাপী নতুন করে সমস্যার জন্ম দেবে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের কালোহাত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্বাধীন দেশগুলোতে তারা আগ্রাসন চালাচ্ছে। প্যালেস্টাইনের সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যাটা জিইয়ে রেখে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নানা খেলায় মেতে উঠেছে। বড় ধরনের একটি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। প্রতিবার গাজাবাসী তাদের রক্তের বিনিময়ে ঋণ পরিশোধ করছে।
সারা বিশ্বের শান্তি ও মুক্তিকামী মানুষ গাজার মানুষের পক্ষে আছে উল্লেখ করে এ মানবাধিকারকর্মী বলেন, এটা কেবল মানবাধিকতারের বিষয় নয়, মানবিকতার বিষয়। এভাবে শিশু-কিশোর-নারীদের নির্বিচারে হত্যা করা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী জেগে উঠেছে। তাদের এই প্রতিবাদ গাজাবাসীর পক্ষে সমর্থন হিসেবে কাজ করবে। ফিলিস্তিনবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই বেগবান হবে। অনেক বিবেকমান জনতা তাদের সঙ্গে যোগ দেবে।
জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহজাহান সাজু বলেন, ফিলিস্তিদের ওপর চরম নৃশংসতা চলছে। নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। বিশ্বের সব সাধারণ মানুষ ইসরাইলিদের এই নৃশংসতাতে তীব্রভাবে ঘৃণা জানাচ্ছে। তবে কেন জানি না বিশ্বশক্তিগুলো এক্ষেত্রে অনেটাই নীরব। বিশ্বের সবাইকে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও প্রতিবাদ জানানো দরকার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৪ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে