বাক্সবন্দি ২ কোটির যন্ত্র, দায় নিচ্ছে না কেউ

আজাদুল আদনান
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৫
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩১

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সেবা বৃদ্ধির জন্য গত বছর প্রায় ২ কোটি টাকায় কেনা হয় নেগেটিভ প্রেসার মেশিন। তবে সরবরাহের প্রায় এক বছর হলেও এখনো যন্ত্র বাক্সবন্দি। কেনার দুই সপ্তাহের মধ্যে ইনস্টল করার কথা থাকলেও এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঘটছে বিভিন্ন অংশ চুরির ঘটনাও। কবে চালু হবে তা বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ক্রয় ও ইনস্টলের (চালু) সঙ্গে জড়িত সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি)। না হওয়ার পেছনে একে অপরকে দুষছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১০ শয্যা করে আইসিইউ এইচডিইউ (হাই ডিপেডেন্টি ইউনিট) রয়েছে। তিনটি নেগেটিভ প্রেসার যন্ত্রের মাধ্যমে এগুলো থেকে বাইরে বাতাস বের করা হয়। নতুন করে চালু হচ্ছে সিসিইউ। তবে রোগীদের চাপ থাকায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে আইসিইউ-১ ও আইসিইউ-২-এর জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেগেটিভ প্রেসার মেশিন ক্রয়ের টেন্ডার আহ্বান করে নিমিউ অ্যান্ড টিসি। পরে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ কোটি ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় কেনা হয় যন্ত্রটি। চলতি বছরের শুরুতে যন্ত্র হাসপাতালে সরবরাহ করে সায়েন্স হাউজ। তবে এখন পর্যন্ত বাক্সবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

Box

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ তলায় যন্ত্রটির ১১টি পার্ট বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পড়ে থাকায় এরই মধ্যে নানা অংশ চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির একাধিক কর্মচারী।

দীর্ঘদিন এই হাসপাতালে বায়োমেডিকেল টেকনিশিয়ানের দায়িত্ব পালন করেছেন শরীফ হোসেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকার বাইরে একটি হাসপাতালে বদলি হয়েছে। আমার দেশকে শরীফ বলেন, ‘আইসিইউ ও এইচডিইউতে প্রেসার মেশিন আছে। মাঝে মধ্যে সামান্য সমস্যা করলেও টেকনিশিয়ানরাই ঠিক করেন। এর মধ্যেই নতুন মেশিন আনা হয়েছে। আমার জানা মতে আইসিইউ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা থেকে এগুলো কেনা হয়েছিল। কিন্তু সেটি আগে না করেই যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে সেগুলো পড়ে আছে। নিমিউ অ্যান্ড টিসিকে কয়েকবার এসে দেখেও গেছে, কিন্তু তারা চালু করতে খুব একটা আগ্রহী নয় মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে যন্ত্র পড়ে থাকলে কার্যকারিতা যেমন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, একইভাবে কোম্পানিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীরাও বঞ্চিত হচ্ছে সেবা থেকে।’

তবে চালু না হওয়ার পেছনে একে অপরকে দুষছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নিমিউ অ্যান্ড টিসি। কুর্মিটোলা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ সাব্বির আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘আইসিইউ ও এইচডিইইয়ের মাঝে একটা জায়গায় রয়েছে। সেখানে আইসিইউ বৃদ্ধি করার কথা। এজন্য যন্ত্রটি আনা হয়েছে। সমস্যা হলো একেকজন পরিচালক একেক পরিকল্পনা নেন। বর্তমানে এই যন্ত্র অস্ত্রোপচার কক্ষে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছেও বলে জেনেছি। ওখানে দিলেই নাকি ভালো হবে। কিন্তু কেন এখনো ইনস্টল হয়নি সেটি নিমিউ অ্যান্ড টিসি বলতে পারবে। কারণ, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তারাই দেখেন। ইনস্টল না করায় আমরা এখনো সেটি গ্রহণ করিনি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যেভাবে রেখেছে, সেভাবেই রয়েছে। দ্রুত যাতে চালু হয় সেজন্য প্রয়োজনে চিঠি দেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে নিমিউ অ্যান্ড টিসির টেকনিক্যাল ম্যানেজার (রিপেয়ার) ড. ইঞ্জি. মো. আনোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘চালু না হওয়ার জন্য আমরা নই, নিমিউ দায়ী। আমরা সরবরাহ করেছি। তারা জায়গা দিতে পারছে না তাই ইনস্টল হচ্ছে না। এখানে আমাদের কিছু নেই। আমরা চাই দ্রুত চালু হোক। কারণ পড়ে থাকায় কোম্পানিও টাকা পাচ্ছে না।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত