হোম > আমার দেশ স্পেশাল

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল

এম এ নোমান

সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে সঙ্গে আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ‘বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া’ রায়টিও বাতিল করে দেয়। এ রায়ের মাধ্যমে ‘পুনঃস্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে’ বলে আদালত তার সংক্ষিপ্ত আদেশে উল্লেখ করে। আপিল বিভাগের এ ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে ১৪ বছর পর পুনরায় ফিরে আসছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এক জনাকীর্ণ আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার যুগান্তকারী এ রায় ঘোষণা করে। উচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে আগামী চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীদের আইনজীবীরা। তারা বলেন, উচ্চ আদালত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে-সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। পরবর্তী জাতীয় সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রয়োগের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কথা বলেছে।

উচ্চ আদালতের এ রায়ে সন্তোষ ও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকও। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের প্রতারণামূলক রায়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়। আপিল বিভাগের গতকালের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মতো একটি গ্রহণযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে বাতিলের বিষয়ে বিচারিক প্রতারণা করেছেন। তিনি তার বিচারিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিস্ট হতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন।

উচ্চ আদালতের রায়কে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘উচ্চ আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ থেকে এটি চালু হবে।’

সংক্ষিপ্ত রায়ে যা বলেছে আপিল বিভাগ

গতকাল সকাল ৯টায় আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে পুরো আদালত কক্ষ জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতি এজলাসে আসন নেওয়ার পর বেঞ্চ অফিসার কার্যতালিকার এক নম্বর আইটেম হিসেবে এ মামলাটির নথি উপস্থাপন করেন। আপিল বিভাগের অপর ছয় সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এসএম ইমদাদুল হক, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

প্রধান বিচারপতি সংক্ষিপ্ত রায় পাঠ করেন, যাতে উল্লেখ রয়েছে-‘আপিলগুলো সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হলো। একইভাবে সিভিল রিভিউগুলোও নিষ্পত্তি করা হলো।’

আদালত তার রায়ে আরো উল্লেখ করে, ‘আদালত এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পর্যালোচনাধীন আপিল বিভাগের (বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া) রায়টি নথিদৃষ্টে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এটি একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ। তাই পর্যালোচনাধীন রায়টি এ রায় দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো।’

বিচারপতি খায়রুল হকের রায় বাতিলের ফলাফল তুলে ধরে আপিল বিভাগ তার সংক্ষিপ্ত রায়ে আরো উল্লেখ করে যে, ‘উক্ত রায় বাতিলের ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ২ক-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলি, যা সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬-এর ধারা-৩ দ্বারা সন্নিবেশিত হয়েছিল, তা এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। যদিও এ ধরনের পুনরুজ্জীবন পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলির স্বয়ংক্রিয় পুনঃস্থাপন নিশ্চিত করে, তবে পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ (১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ (২)-এর বিধানাবলির প্রয়োগসাপেক্ষে উহা কার্যকর হবে।’

রায়ে আরো বলা হয়েছে, ‘পুনঃস্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলি শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে।’ এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পরে দেওয়া হবে বলেও সংক্ষিপ্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাসিনার পতন, পলায়ন ও তত্ত্বাবধায়ক মামলা

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের উদ্যোগ নেন। সবার মতামত উপেক্ষা করে ২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিষয়ে একটি রায় দেয়।

বিচারপতি খায়রুল হক বর্তমানে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার ওই রায়কে প্রতারণামূলক হিসেবে উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলেন, খায়রুল হক উন্মুক্ত আদালতে যে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন, সেখানে পরবর্তী দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও অবসরে যাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলে তাতে ‘পরবর্তী দুই মেয়াদে সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে’ কথাগুলো বাদ দেন। তার এ প্রতারণামূলক রায়ের ওপর ভিত্তি করে হাসিনা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বিলুপ্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রকাশ করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর শেখ হাসিনা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি ভুয়া ও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা সাড়ে ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে থাকেন। এ সময় শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, আয়নাঘরের মতো গোপন কারাগার তৈরি করে বিরোধী দল ও মতের নাগরিকদের গুম করে রাখার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওইদিন বিকালে তিনি পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।

খায়রুল হকের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ বিশিষ্ট পাঁচ নাগরিক। আবেদনকারী অপর সদস্যরা হলেনÑমরহুম তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।

এরপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথকভাবে আরো দুটি রিভিউ আবেদন করেন। সবগুলো আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি গ্রহণ শেষে আপিল বিভাগ গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসংক্রান্ত বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেয়। সেই সঙ্গে পুনরায় এ বিষয়ে আপিল শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

গত ২১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে আপিলের শুনানি শুরু হয়। পরপর দুদিন বদিউল আলম মজুমদারসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব‍্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আপিলের ওপর ১০ দিন শুনানি শেষে ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করা হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ গতকাল সর্বসম্মতভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকরব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় দেয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কার্যকর

আপিল বিভাগের রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এখন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তবে এটা কার্যকর হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে যে সংসদ গঠন করা হবে, ওই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তারপর ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, দীর্ঘদিন সংগ্রাম করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়া গিয়েছিল। এটি ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখা গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো। এটা স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর এর সুযোগ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে বাতিল করে দেয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছিলেন, সেটা বাতিল হয়েছে।

আর রাতে ভোট হবে না : অ্যাটর্নি জেনারেল

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে শেখ হাসিনা যেসব নির্বাচন করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি দেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন। এ ব্যবস্থা ফিরে আসায় দেশ এখন গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে। দেশের মানুষ ভবিষ্যতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। দিনের ভোট রাতে হবে না, মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবেন না।

তিনি বলেন, আপিল বিভাগের এ রায় দেশের মানুষের স্বার্থ, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন রক্ষা করবে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্বহাল করবে।

এ রায়ের মাধ্যমে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, এটা কার্যকর হবে পরবর্তী সংসদ ভাঙার পরের ১৫ দিনের মধ্যে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা হয়েছিল। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে তা সাংবিধানিক হিসেবেই রায়ে ঘোষিত হলো।

খায়রুল হক ফৌজদারি অপরাধ করেছেন

কারাগারে আটক সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে খায়রুল হক ও তার দোসররা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় গুরুতর অপরাধ করেছেন। খায়রুল হক দেশের বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছেন বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, রায়ে খায়রুল হকের রায়কে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি (খায়রুল হক) বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করে গেছেন। এ অপরাধে তার বিচার হওয়া উচিত।

ঈদের দিনের মতো লাগছে : জয়নুল আবেদীন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘আজ আমাদের কাছে ঈদের দিনের মতো লাগছে। আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে বিতর্কিত বিচারপতি খায়রুল হকের রাজনৈতিক রায়টি বাতিল করে দিয়েছে। দেশের জন্য এটি একটি মাইলফলক। কারণ, বিচারপতি খায়রুল হকের বিতর্কিত ওই রায়ের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। সংবিধান সংশোধন করেছে।’

তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ফলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। এ রায়ের ফলে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। দেশের মানুষ এতদিন ভোট দিতে পারেননি, তারা এখন ভোট দিতে পারবেন।

খায়রুল হক নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন

রিভিউ আবেদনকারী সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনিব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। ফলে গত তিনটি নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।

তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হকের রায় একটি অসাংবিধানিক রায়। আমরা সেটার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলাম। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসায় আমরা সন্তুষ্ট।

আপিলকারী বিশিষ্ট নাগরিকদের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেÑখায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায়টিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হলো। তার নেতৃত্বে দেওয়া রায়টি ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। রায়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা হয়েছিল।

যা বললেন শিশির মনির

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের আইনজীবী শিশির মনির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসম্পর্কিত বিধানাবলি এ রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। এটি চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে কার্যকর হবে।

তিনি আরো বলেন, রায়ে বলা হয়েছে-সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে। এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই এ বিধান আপাতত কার্যকর হবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি কার্যকর হবে না। এটি ভবিষ্যতে কার্যকর হবে।

শেখ পরিবার বিদেশে আয়েশে বিপর্যস্ত আ.লীগের তৃণমূল

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান অনেকেই

বিমানের পাইলট নিয়োগে বহাল ৩০% পোষ্য কোটা

রাতের ভোট বাস্তবায়নে আট হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি

নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালে হাসিনার ফাঁসির রায়

২৩০ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত কোনো নারী সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ড

গণহত্যায় হাসিনার ফাঁসির দণ্ড

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার হিড়িক

‘টিম জাবেদের’ নির্দেশনায় আগের রাতে বাক্স ভর্তি

উপদেষ্টাদের এপিএস-পিওদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে ভাটা