ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের ৬৩৯টি থানায় সৎ, নিরপেক্ষ, দক্ষ ও প্রশাসনিকভাবে যোগ্য ওসি নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। এজন্য রেঞ্জ ডিআইজিদের কাছে যোগ্য পুলিশ পরিদর্শকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গত ১৬ নভেম্বর অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) একে এম আওলাদ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটি পুলিশের আটটি রেঞ্জের ডিআইজিদের কাছে পাঠানো হয়। একজন রেঞ্জ ডিআইজি চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে থানার ওসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি থানায় সৎ, নিরপেক্ষ ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ করা হলো। চিঠির অনুলিপি ডিএমপি কমিশনার, অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) ও অ্যাডিশনাল আইজিপির (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে থানাগুলোতে যেসব ওসি দায়িত্ব পালন করেছে, ত্রয়োদশ নির্বাচনে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কেউ যাতে কোনোভাবে লবিং করে নির্বাচনে দায়িত্বে আসতে না পারেন সেদিকেও নজর রাখছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট ওসিদের বিরুদ্ধে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে কোনো অভিযোগ আছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা বা শাস্তিমূলক কোনো রেকর্ড থাকলে তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচিত ওসিদের নিজ জেলায় দায়িত্ব না দেওয়ার নীতিও কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। এছাড়াও কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, সংশ্লিষ্ট ওসিদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সংকটকালীন মুহূর্তে তারা কোন কোন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন তা দেখা হচ্ছে। রেঞ্জ ডিআইজিরা এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ওসিদের নামের তালিকা ভাগ করেছেন। এ ক্যাটাগরির কোনো ওসির বিরুদ্ধেও নেতিবাচক তথ্য পাওয়া গেলে তাহলে তাদের নির্বাচনকালীন দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
এদিকে ওসি মূল্যায়নে অনেকের বিষয়ে সঠিক তথ্য না-ও উঠে আসতে পারে। কারণ, কোনো জেলার ওসির সঙ্গে সঙ্গে রেঞ্জ ডিআইজির সুসম্পর্ক থাকলে তার মূল্যায়ন যথাযথ না-ও হতে পারে। আবার রেঞ্জ ডিআইজি তার ইচ্ছামত তালিকা দিতে পারে। এমন বিষয়টিও আমলে রেখেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এজন্য কনফিডেনশিয়াল শাখাকে মাঠপর্যায়ে গোপনে তথ্য যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অতীত তিনটি নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। রাতে ব্যালট ভরার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠে এসেছে। এসব বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে এবার একটি মডেল, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার নির্দেশ মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইজিপি বাহারুল আলম আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আপাতত কিছু বলবো না।