হোম > আমার দেশ স্পেশাল

বেপজার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী

কাওসার আলম

সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরী বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট জোনস অথরিটির (বেপজা) নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। চামড়া শিল্পনগরীতে স্থাপিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) মান উন্নয়নের পাশাপাশি রপ্তানিতে চামড়া খাতের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে সাভারের চামড়া শিল্পকে বেপজার অধীনে নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, রপ্তানি খাতে সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্পের বিষয়ে পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, বরং চামড়াশিল্পকে প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ খাতকে উজ্জীবিত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এরই অংশ হিসেবে চামড়া শিল্পনগরীকে বেপজার অধীনে নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মেজর জেনারেল (অব.) নজরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, দুটি কারণে আমরা সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বেপজার অধীনে নিয়ে আসার বিষয়টি বিবেচনা করছি। এর একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অন্যটি পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি। এর মাধ্যমে রপ্তানিতে চামড়া শিল্পখাতে নতুন গতির সঞ্চার ঘটবে।

তিনি আরো বলেন, সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপি রয়েছে। আর সিইটিপি পরিচালনার ক্ষেত্রে বেপজার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বেপজার অধীনে নেওয়া হলে এটি অনেক বেশি কার্যকর হবে। রাষ্ট্র চাইছে দেশের চামড়া শিল্প বেঁচে থাকুক। আমরা এটিকে তারই একটা প্রয়াস হিসেবে দেখছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিসিকসহ দেশের ছয়টি বিনিয়োগ সংস্থাকে একীভূতকরণে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির প্রথম বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা বিসিককে অন্যান্য বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূতকরণে আপত্তি জানান। সিইটিপি পরিচালনায় বেপজার অভিজ্ঞতা থাকায় ওই বৈঠকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বেপজার অধীনে নিয়ে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেজার সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) নজরুল ইসলামকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে বেপজার অধীনে চামড়া শিল্পনগরীকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতাসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বেপজার অধীনে শিল্পনগরীকে নেওয়ার বিষয়ে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, বিসিক এবং বেপজা দুটি ভিন্ন আইনে পরিচালিত হয়। এখন চামড়া শিল্পনগরীকে বিসিকের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেপজার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া আর্থিক কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীতে যারা প্লট নিয়েছেন, তাদের ব্যাংকের ঋণ রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে শিল্পমালিকরা যে হারে সিইটিপির জন্য অর্থ ব্যয় করছেন বেপজার অধীনে গেলে তার হার কেমন হবে আবার এসব কারখানায় কর্মরতদের আর্থিক সুবিধাদির বিষয়ও এর সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া প্রশাসনিক দিক থেকেও দুটি সংস্থার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখন বিসিক থেকে বেপজার অধীনে নেওয়া হলে এসব সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কমিটির ওই সদস্য আরো বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আইনগত বিষয়ে এ দুজন সদস্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করবেন।

সাভারের চামড়া শিল্পনগরী ও সিইটিপিকে বেপজার অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, চামড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং সিইটিপি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিসিকের সক্ষমতা নিয়ে আমরা শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম। যদি চামড়া শিল্পনগরী এবং সিইটিপিকে বেপজার অধীনে নিয়ে আসা হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটবে এবং চামড়া খাতে রপ্তানির একটা গতিশীলতা তৈরি হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার চামড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়। বেপজার অধীনে নেওয়া হলে এ খাতটি রপ্তানিতে আরো বেশি অবদান রাখবে বলে মনে করি। বেপজার অধীনে নিয়ে আসার পাশাপাশি বেশকিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বিটিএর চেয়ারম্যান আরো বলেন, বিসিকের কাছ থেকে শিল্প উদ্যোক্তারা লিজের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, অন্যদিকে বেপজার আইনে ভাড়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে একটা সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে সাভারে যেসব উদ্যোক্তা কারখানা চালু করেছেন অধিকাংশই তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। ব্যাংকঋণে জর্জরিত তারা। এখন তাদের নতুন করে মূলধন জোগান দিতে হবে। এছাড়া সলিড ওয়েস্ট (কঠিন বর্জ্য) ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন একটি সিইটিপি স্থাপন করা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৫টি শিল্প প্লট রয়েছে। এসব শিল্প প্লটে ৫২-৫৩টি প্লট লিজ নিয়েছেন চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তারা। এসব উদ্যোক্তা ১৭০ থেকে ১৮০টি কারখানা স্থাপন করলেও সেগুলো পুরোদমে চালু নেই। এসব কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ৯০০ মিলিয়ন বর্গফুট হলেও কারখানাগুলো উৎপাদন করতে পারছে মাত্র ২০০ মিলিয়ন বর্গফুটের মতো। এ হিসাবে সক্ষমতার ৩০ শতাংশেরও কম উৎপাদনশীলতায় চলছে কারখানাগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাভারে চামড়া কারখানাগুলোর বর্জ্য শোধনাগারে ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিইটিপি স্থাপন করা হলেও এটি পুরোপুরি কার্যকর নয়। ফলে চামড়ার দূষিত পানি যাচ্ছে সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে। এদিকে সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। ফলে এর প্রভাব পড়ছে সার্বিক রপ্তানিতে।

এ বিষয়ে ঢাকা ট্যানারি এস্টেট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ আমার দেশকে বলেন, দুই বছর আগে এ প্ল্যান্টে যখন যোগদান করি, তখন এর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সিইটিপি চালু থাকলেও এটি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কার্যকর ছিল। এ সময়ে আমরা বেশকিছু নতুন মেশিন ক্রয় করেছি। আরো কিছু উদ্যোগের ফলে বর্তমানে সিইটিপি ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ কার্যকর রয়েছে। সিইটিপি থেকে যেসব উপজাত তৈরি হয়, সেগুলো ব্যবহার করে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩০ শতাংশ উপজাত ব্যবহার করতে সক্ষম। আরো ৭০ শতাংশ উপজাত ব্যবহারের জন্য কিছু শিল্প উদ্যোক্তার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

তিনি আরো বলেন, চীনের একটি কোম্পানি সিইটিপি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু সিইটিপি নির্মাণের সময় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়ে যায়, এ কারণে সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এছাড়া যে ধারণক্ষমতার কথা বলা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে ধারণক্ষমতা অনেক কম। ফলে কোরবানি ঈদের সময় থেকে পরবর্তী তিন মাসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। নতুন সিইটিপি নির্মাণের বিষয়ে ইতালির একটি কোম্পানিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ডিজাইন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৫০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাজধানীর হাজারীবাগ ছিল ট্যানারি শিল্পের বৃহৎ ঠিকানা। কিন্তু ট্যানারি শিল্প এলাকায় ছিল না আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আবার লোকালয়ের কাছে হওয়ায় এর দূষণ বিপর্যস্ত করছিল স্থানীয়দের, দূষিত হচ্ছিল বুড়িগঙ্গা। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরাতে ২০০৩ সালে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প হাতে নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। মোট ১২ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এক হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় এ নগরী।

বাংলাদেশে হাসপাতাল বানাচ্ছে তুরস্ক

জেলখানা থেকে ছোট সাজ্জাদের ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’

গুলির সময় পালায় পুলিশ, লাশ তুলতে আসে পরে

মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে সন্তুষ্টি

ন্যানো প্রযুক্তির যুগে প্রবেশের আগেই থেমে গেল বাংলাদেশ

জিয়া হত্যায় এরশাদকেই সন্দেহ চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসির

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

জটিলতার মেঘ কেটে যাচ্ছে

আবদুচ ছালামের নেওয়া প্রকল্প এখন সিডিএর গলার কাঁটা

ডেঙ্গুর আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন, বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু