গত দুইদিনে ভারত থেকে আমদানি করা তিন হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে ঢুকেছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজও বাজারে এসেছে। এরপরও রাজধানীর বাজারে সরবরাহ কমে আবারও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি করা ৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকায়।
এছাড়া পেঁয়াজের বাজারে ব্যাপক কারসাজি চলছে; অসৎ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে টাকা লুটে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে স্থানীয় বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট কেটে শত কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। যথাযথ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় চলছে এ ধরনের কারসাজি।
আজ মঙ্গলবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, এতোদিন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানির অনুমতি দেয়া হলে ৪০-৫০ টাকায় পেঁয়াজ খাওয়াবেন। অথচ তারা এখন অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছেন।
এই কর্মকর্তার দাবি, ভারত থেকে আমদানি করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসা পর্যন্ত কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকার মতো দাম হতে পারে। অথচ আমদানিকারকরা ৬০-৭০টাকা লাভে বিক্রি করছেন। এটা পুরোটাই অরাজকতা ছাড়া আর কিছু নয়। বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছে তা করছেন; দেখার কেউ নেই।
তিনি আরো বলেন, এতোদিন তো দাম বাড়ার কারণে বাড়তি টাকা কৃষকের পকেটে যেত; এখন আমদানির ফলে লুটেরাদের পকেটে যাচ্ছে। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা ও মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর না হলে এটা রোধ করা যাবে না।
তবে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি ও মেসার্স রায়হান ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম শহীদ আমার দেশকে বলেন, প্রতিদিন মুখ চিনে মাত্র ৫০জনকে আইপি দেওয়া হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসা পর্যন্ত কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০-৫৫ টাকার মতো হতে পারে। কিন্তু সেই আমদানি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০টাকায় বিক্রি করে অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি গত আগস্টেও কোনো আইপি পাইনি, এখনো আমাকে কোনো আইপি দেয়নি। মুখ চিনে চিনে অনলাইনে আইপি দেয়া হচ্ছে। আইপি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সরবরাহ বেড়ে পেঁয়াজের দাম কমতে পারে।
সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী আমার দেশকে বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় মাঝপথে অনেক কিছু ঘটছে। আইপি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে।
একই ধরনের কথা বেনাপোল স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন।
এদিকে গত দুইদিনে ভারত থেকে আমদানি করা তিন হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে ঢুকেছে। এরপরও রাজধানীর পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে আবারও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখি হয়েছে। গত রোব নতুন পেঁয়াজের বিপুল সরবরাহে দাম কমে অর্ধেকে নেমে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও মঙ্গলবার সকালে সরবরাহ কমে তা বিক্রি হয়েছে ৯০টাকা কেজি দরে।
পুরাতন পেঁয়াজের দামও আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মঙ্গলবার সকালে পাইকারিবাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা কেজি।
এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর খুঁচরা বাজারেও। আগের দুইদিনের তুলনায় মঙ্গলবার সকালে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পুরাতন পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। খুঁচরা বাজারে ইন্ডিয়ান আমদানি পেঁয়াজের ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের আমার দেশকে বলেন, ১৪০ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করেও আমাদেরকে ২-৩ টাকা কেজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়তির দিকে রয়েছে বলে জানান তিনি। মতি ব্যাপারীও জানান সরবরাহ কমে দাম বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং পুরাতন পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের দুইদিনের তুলনায় দাম একটু বাড়তির দিকে।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ কম তাই দাম বাড়ছে। এ জন্য তারা বেশি করে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, নতুন পেঁয়াজের পাশাপাশি সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের আড়তদার পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন মঙ্গলবার সকালে আমার দেশকে বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঊর্ধ্বমুখি বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বিক্রি হলেও শনিবার ভোর থেকে রোববার নাগাদ চাহিদা কমে ক্রেতা কম ছিল। এরপর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোমবারের চিত্র ভিন্ন, এদিন চাহিদা বাড়লেও বাজারে পেঁয়াজ কম ছিল। মঙ্গলবার সকালে সরবরাহ আরো কমে দাম বেড়েছে। এ দিন আমরা ৯০টাকা এবং ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, রোববার পেঁয়াজের ক্রেতা কম থাকায় সোমবার মোকামের বাজারে কৃষকরা পরিমাণে কম পেঁয়াজ নিয়ে আসেন। এতে চাহিদা বেড়ে মোকামেই দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ খুব কম; দামও চড়া।
কয়েকদিনে বাজারের উঠানামা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পাশাপাশি আমদানির খবরে শনিবার রাত থেকে দাম কমতে শুরু করে রোববার দুপুর নাগাদ আগের দিনের তুলনায় পুরাতন পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকা হলেও নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে ফের পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকার মতো বেড়ে গেছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে বলে তিনি জানান