দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রত্যয়ে ইথিওপিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-আফ্রিকা ট্রেড শো ও বিজনেস সামিট ২০২৫। ১২–১৪ নভেম্বর' ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের আয়োজনে অংশ নেন দুই অঞ্চলের ব্যবসায়িক নেতা, সরকারি প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা।
বাংলাদেশ দূতাবাস (ইথিওপিয়া) এবং আফ্রিকা বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (এবিবিএফ) যৌথভাবে আয়োজিত এই সামিট আফ্রিকা–বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে।
১২ নভেম্বর উদ্বোধনী দিন বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন মেস্কেল স্কয়ার, আদওয়া মিউজিয়াম, ফ্রেন্ডশিপ পার্ক এবং এনটটো পার্কসহ ইথিওপিয়ার বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ হাউসে রাষ্ট্রদূতের আয়োজিত রিসেপশন ডিনার ও আইস-ব্রেকিং সেশন দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
১৩ নভেম্বর আদ্দিস আবাবার ডি লিওপোল ইন্টারন্যাশনাল হোটেল-এ অনুষ্ঠিত হয় সামিট ও ট্রেড শো।
এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় Kingmansa.com—আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বিটুবি মার্কেটপ্লেস। প্ল্যাটফর্মটি পেমেন্ট, লজিস্টিকস, সাপ্লাই চেইন ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ দূর করে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য সহজতর করার লক্ষ্য নিয়ে চালু করা হয়।
সামিটে বাংলাদেশ থেকে আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট, প্লাস্টিক, কেমিক্যালসহ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতের মোট ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রদর্শনীতে প্রায় ১ হাজার দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মি. ইয়িদেনেকাচিউ ওয়ার্কু, স্টেট মিনিস্টার, মিনিস্ট্রি অব ট্রেড অ্যান্ড রিজিওনাল কোঅপারেশন – ইথিওপিয়ার অর্থনৈতিক রূপান্তর ও বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরেন।
অ্যাম্বাসাডর দেওয়ানো কেদার, ডিরেক্টর জেনারেল (মিডল ইস্ট, এশিয়া ও প্যাসিফিক) – ইথিওপিয়ার কৌশলগত ভূমিকাকে আফ্রিকার ব্যবসায়িক প্রবেশদ্বার হিসেবে বর্ণনা করেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল সিতওয়াত নাঈম, ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত – বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের অবস্থান ও সুযোগ তুলে ধরেন। জহিরুল হক, সভাপতি, এবিবিএফ– টেকসই আফ্রিকা–বাংলাদেশ বাণিজ্য সহযোগিতার ভিশন উপস্থাপন করেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম শরিফুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা সংযুক্তি, বাংলাদেশ দূতাবাস, ইথিওপিয়া – বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি সম্ভাবনা নিয়ে উপস্থাপনা করেন, যার পরেই ইথিওপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট কমিশনের সিইওর প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সামগ্রিকভাবে, বক্তারা প্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি, উৎপাদন ও বাণিজ্য খাতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
১৪ নভেম্বর প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন কিলিন্টো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং গাদা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল – যেখানে তারা ইথিওপিয়ার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া, লজিস্টিকস সুবিধা ও রপ্তানি অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করেন।
এছাড়াও বিশোফ্তু ও কুরিফ্তু ওয়াটার পার্ক পরিদর্শনের মাধ্যমে তারা ইথিওপিয়ার পর্যটন, অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
তিন দিনের এই সামিট বাংলাদেশ ও আফ্রিকা অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো, বিনিয়োগ সহজীকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেছেন, এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাজার প্রবেশাধিকার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।