হাসিনা-জয় ও পুতুলের দণ্ড
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, কোনো আবেদনপত্র ছাড়াই এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের নামে প্লট বরাদ্দ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেছেন।
এ রায়কে ঘিরে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশ, বিজিবিসহ ব্যাপকসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পর এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় দ্বিতীয় রায় হলো।
তবে শেখ হাসিনা, তার ছেলে ও মেয়ে সকলে পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই এই মামলার বিচার হয়েছে।
এ মামলার ২৩ জন আসামির মধ্যে কেবলমাত্র রাজউকের একজন কর্মকর্তা খুরশিদ আলম কারাগারে রয়েছেন।
মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে আত্মসর্মপণ করেন তিনি। আসামি আলমের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
২৩ জনের মধ্যে এই একজন আসামিই শুধু কারাগারে রয়েছেন। রায়ের দিন সকালে বৃহস্পতিবার তাকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
আসামিদের যে সাজা দিয়েছে আদালত
তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩ আসামির মধ্যে সাজা পেয়েছেন ২১ জন। বাকি একজনকে আগেই চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার আরেক আসামি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারকে তিন মামলা থেকেই খালাস করে রায় দিয়েছে আদালত।
রায়ের পরে এক ব্রিফিংয়ে দুদকের আইনজীবী মইনুল হাসান জানান, শেখ হাসিনা তিন মামলাতেই আসামি।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয় পৃথক দুই মামলার আসামি। অন্য আসামিরা তিন মামলাতেই রয়েছেন।
হাসান বলেন, "আদালত বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন আসামিদের সাজা প্রদান করেছেন। এই তিনটি মামলায় যারা কমন আসামি আছেন, আমি একত্রে তাদের সাজা জানাচ্ছি।"
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন মামলায় মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
"এই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। তিন মামলাতেই উনি আসামি হিসেবে আছেন। উনার সাজা হচ্ছে সাত বছর করে ২১ বছর। উনার জরিমানা হচ্ছে এক লাখ করে তিন লাখ টাকা। অনাদায়ে ছয় মাস করে তিন মামলায় ১৮ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।"
"সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যে মামলার প্রধান আসামি তার সাজা পাঁচ বছর। উনি একটি মামলারই আসামি, তাই তার সাজা পাঁচ বছর," বলেন হাসান।
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় যে মামলার প্রধান আসামি তার সাজার মেয়াদ পাঁচ বছর এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, জানান মইনুল হাসান।
তিন মামলায় সাজা হওয়া আসামিদের পৃথকভাবে তিন মামলাতেই সাজা খাটতে হবে বলে জানান দুদকের আইনজীবী।
হাসান বলেন, "এভাবে তিন মামলায় ২১ জন আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। যারা তিন মামলায় কমন আসামি রয়েছেন, তাদের ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে তিন মামলায় সাজা খাটবেন, আলাদা আলাদা সাজা খাটবেন।"
সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে এক মামলায় ছয় বছর করে মোট ১৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকারকে তিন মামলায় মোট ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তিন মামলায় ১৮ বছরের একই সাজা দেওয়া হয়েছে ওই মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিয়াকে তিন মামলাতেই মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রাজউকের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে তিন মামলাতে মোট নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আরেক সাবেক কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার তিন মামলার আসামি।
এক মামলায় এক বছর করে মোট তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা তাকে দিয়েছে আদালত।
রাজউকের কর্মকর্তা খুরশিদ আলম তিন মামলারই আসামি। এক বছর করে মোট তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এক মামলায় ছয় বছর করে দুই মামলায় তার মোট সাজা ১২ বছর।
সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সাজা না হওয়ায় আপিল করবেন কি না এমন প্রশ্নে দুদকের আইনজীবী বলেন, সাজার বিষয়ে কমিশনের সাথে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
"কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্রনায়ক থাকবেন বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকবেন তাদের কাছে এ রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে," বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী মইনুল হাসান।
রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে
দুদকের আইনজীবী জানান, মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা।
একইসাথে প্লট নেওয়ার জন্য যে হলফনামা দেওয়া হয়েছিল তাতে নোটারি করা ছিল না বিধায় সেই হলফনামা জাল নথি ছিল বলে রায়ে উল্লেখ করেছে আদালত।
একইসাথে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজউকের বিধিমালা বা কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে আদালত।
রায়ের পরে ব্রিফিং এ দুদক আইনজীবী হাসান বলেন, "সেই পর্যবেক্ষণে উনি (বিচারক) উল্লেখ করেছেন যে, একজন দেশের প্রধানমন্ত্রী তথ্য গোপন করতে পারেন, মিথ্যা হলফনামা দিতে পারে এটা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় নাই। তিনি অবাক হয়ে গেছেন। একটা দেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে মিথ্যা হলফনামা ও তথ্য গোপন করে জনগণের সম্পদ মিথ্যাভাবে নিয়ে নিয়েছেন!"
রাজউক এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিষয়েও তাদের আইন পরিবর্তনের জন্য কিছু অবজারভেশন দিয়েছে আদালত।
দুদকের আইনজীবী বলেন, "তাদের বিদ্যমান কিছু আইন পরিবর্তন এবং আরো কিছু নতুন আইন অ্যাডাপ্ট করার জন্য পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং রাজউকের প্লট বরাদ্দের যে বিধিবিধান তার সাপেক্ষে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে এবং সরাসরি প্রকাশ্য মিডিয়ায় আনয়ন করে প্লট বরাদ্দে লটারি সিস্টেম করার জন্য পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।"
রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজউকের জন্য যেসব সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।সেগুলো হলো:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্লট বরাদ্দ বা অনুমোদন করার ক্ষেত্রে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাকে বিভাগীয় ও ফৌজদারি কার্যক্রম চলাকালীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
সিভিল সোসাইটির সদস্য, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং দুর্নীতি দমন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার সময় একটি বিস্তারিত ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করতে হবে।
প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রাজউককে একটি ডিজিটাল লটারি সিস্টেম চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে সরাসরি সম্প্রচার, অডিট পরিচালনা এবং এনক্রিপ্টেড নির্বাচন ব্যবস্থা থাকবে, যাতে কোনো ধরনের বিশেষ বিবেচনা অথবা হস্তক্ষেপের সুযোগ না থাকে।
বরাদ্দ অনুমোদনকারী কর্মকর্তারা অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তাদের চাকরিচ্যুতি ও ফৌজদারি বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের সংশোধনের জন্যও বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মহানগর দায়রা জজ আদালত।
আদালত বলেছে, রাজউকের কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করতে এই মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে; রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত মন্ত্রণালয়কে 'স্পেশাল ক্যাটাগরি'তে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কোনো সুপারিশ বা নির্দেশনা জারি করা অবিলম্বে বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।
দুর্নীতির যে অভিযোগে বিচার হয়েছে
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে এ বছরের জানুয়ারিতে মোট ছয়টি মামলা করে দুদক।
প্লট দুর্নীতির ছয় মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলারই বিবরণই প্রায় একরকম।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ডিসেম্বরে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এরপর এ বছরের ১২ই জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক।
পরদিন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। পরে ১৪ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
পরে পৃথকভাবে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা তিন মামলার একসাথে সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচার হয়েছে।
এসব মামলায় পূর্বাচলে রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পে মোট ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তদন্ত শেষে গত ১০ই মার্চ এসব মামলায় শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলসহ ২৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সংস্থাটি।
আর গত ৩১শে জুলাই শেখ হাসিনাসহ সব আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এই তিনটি মামলাতেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসামি।
তার বিরুদ্ধে করা মামলায় মোট আসামি ১২জন। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ - পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে করা মামলার আসামি ১৮ জন।
এ মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এছাড়া প্লট দুর্নীতির অভিযোগে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও বাদী এস এম রাশেদুল হাসান। গত ১১ই অগাস্ট মামলায় বাদীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
ওইদিন শুনানির পরে দুদকের আইনজীবী খান মো. মইনুল হাসান পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, " বাদী হিসেবে তারা যে প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছেন সেখানে তিনজন বাদীই বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি দ্য ঢাকা টাউন আইনের বিধি লঙ্ঘন করে মিথ্যা হলফনামা প্রদান করে প্লটগুলো নিজের কাছে এবং ছেলে ও মেয়ের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।"
ঢাকায় তাদের নামে একাধিক বাড়ি, প্লট রয়েছে এবং সুধা সদন তাদের নামে নামজারি করা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন দুদক আইনজীবী।
রাজউকের বিধি অনুযায়ী, ঢাকা বা আশেপাশে নারায়ণগঞ্জেও যদি নিজেদের নামে, নির্ভরশীল বা পোষ্য কারো নামে কোনো প্লট, ফ্ল্যাট থাকে তবে তারা প্লট পাবে না বলে উল্লেখ করেছিলেন দুদকের আইনজীবী।
বিচার চলাকালে চার মাসে এসব মামলায় ৯১ জন সাক্ষ্য দিয়েছে।
তবে সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে গত ২৯শে অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রাজউক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম।
এরপর তিন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া সব সাক্ষীকে রিকল করে জেরা করেন তার আইনজীবী।
গত ২৩শে নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
কিন্তু পলাতক থাকায় আইনানুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি শেখ হাসিনা, জয়, পুতুল এবং পলাতক বাকি আসামিরা।
পরে ওইদিনই দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে ২৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রায় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এসব মামলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ছাড়াও এসব মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা।
এছাড়া রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি
মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ও বহাল থাকা অবস্থায় নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
তিনি পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়া ও অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের অতি মূল্যবান কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার নয় নম্বর প্লট নিজ নামে দখল ও রেজিস্ট্রি করেছেন।
শেখ হাসিনা নিজের পুত্র - কন্যার নামে, নিজ বোন ও বোনের পুত্র - কন্যার নামে পৃথক প্লট বরাদ্দ করিয়ে ও তাদের পৃথক নামে রেজিস্ট্রিমূলে বাস্তব দখলসহ গ্রহণ করিয়ে প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ, প্রদান ও অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গ এবং বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০০৮ সালে রাজউক এ প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। পরে ২০০৯ সালের ১২ই এপ্রিল সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এছাড়া বাকি তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা তার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আরেক মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে বিচার কাজ শেষ হয়েছে। আগামী পহেলা ডিসেম্বর এই মামলার রায় দেওয়া হবে।